ইসলাম ও মুসলিম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইসলাম ও মুসলিম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

তাহাজ্জুদ নামাজ :বান্দাদের প্রতি আল্লাহ পাকের অসাধারণ একটি উপহার

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হরহামেশা এ নামাজ নিয়মিতিভাবে পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) কে তা নিয়মিত আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে । যেহেতু উম্মতকে নবীর অনুসরণ করার হুকুম করা হয়েছে সে জন্যে তাহাজ্জুদের এ তাকীদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্য করা হয়েছে।
এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে থাক। এ তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন (বনি ইসরাইল :৭৯)
যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে কুরআনে তাদেরকে মুহসেন ও মুত্তাকী নামে অভিহিত করে তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং আখেরাতে চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
নিশ্চয়ই মুত্তাকী লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভূ পরোয়ারদিগার তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। (কারণ) নিসন্দেহে  তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো।(কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাইতো)। (সূরা যারিয়াত:১৫-১৮)
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামায মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করার এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্যে অপরিহার্য ও কার্যকর পন্থা।
বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ। (সূরা মুয্যাম্মিল-৬)
এসব বান্দাদেরকে আল্লাহ সুবহানাওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দা বলেছেন এবং নেকী ও ঈমানদারীর সাক্ষ্য দিয়েছেন।(সুবহানাল্লাহ)
আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। (সূরা ফুরকান:৬৩-৬৪)
মুমিনদের এ বিশেষ গুণ তাদেরকে কুফরের প্রবল আক্রমণের মুকাবিলায় অটল রাখতো এবং বিজয় মালায় ভূষিত করতো। বদরের ময়দানে হকের আওয়াজ বুলন্দকারী নিরস্ত্র মুজাহিদগণের অতুলনীয় বিজয়ের বুনিয়াদী কারণগুলোর মধ্যে এটিও ছিলো একটি যে, তাঁরা রাতের শেষ সময়ে আল্লাহর সামনে চোখের পানি ফেলে কাঁদতেন এবং গুনাহ থেকে মাফ চাইতেন।
এসব লোক অগ্নি পরীক্ষায় অটল অচল, সত্যের অনুরাগী, পরম অনুগত, আল্লাহর পথে মাল উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান -১৭)
স্বয়ং নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের ফযীলত সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় তাশরীফ আনেন তখন প্রথম যে কথাগুলো তাঁর মুখ থেকে শুনি তা হলো :
হে লোক সকল ! ইসলামের প্রচার ও প্রসার করো, মানুষকে আহার দান করো,আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে তখন তোমরা রাতে নামায পড়তে থাকবে। তাহলে তোমরা নিরাপদে বেহেশতে যাবে(হাকেম,ইবন মাজাহ,তিরমিযী)
হযরত সালমান ফারসী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-
তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যবস্থাপনা কর, এ হচ্ছে নেক লোকের স্বভাব, এ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট করে দেবে, গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দিবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে
অন্য আরেক সময় তিনি বলেন,
ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামায হল রাতে পড়া তাহাজ্জুদ নামায(সহীস মুসলিম, আহমদ)।
তিনি আরো বলেন,
রাতের শেষ সময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার দিকে নাযিল হন এবং বলেন,
ডাকার জন্যে কেউ আছে কি যার ডাক আমি শুনব,  চাওয়ার জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেব,  গুনাহ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি মাফ করব? (সহীহ বুখারী)।
_________________________________
তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত
তাহাজ্জুদের অর্থ হল ঘুম থেকে উঠা। কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের মসনূন সময় এই যে,এশার নামায পর লোকে ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো মধ্য রাতে,কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায পড়তেন। ঘুম থেকে উঠার পর তিনি নিম্নের আয়াতগুলো পড়তেন।
বস্তুত আসমান যমীনের সৃষ্টি ও রাত দিনের আবর্তনের মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে ঐসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্যে যারা দাঁড়ানো, বসে থাকা এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি নৈপূণ্যের উপর চিন্তা গবেষণা করে। অতঃপর তারা আপনা আপনি বলতে থাকে, হে আমাদের রব । এসব কিছু তুমি অযথা পয়দা করনি। বেহুদা কাজ থেকে তুমি পাক, পবিত্র ও মহান।  অতএব, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাও। তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ কর তাকে প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত লাঞ্ছনার মধ্যেই ফেল। তারপর এসব যালেমদের আর কোন সাহায্যকারী থাকবে  না। হে প্রভু ! আমরা একজন আহবানকারীকে শুনলাম, যে ঈমানের দিকে আহবান করে নিজেদের রবকে মেনে নিতে বলে। আমরা তার দাওয়াত কবুল করলাম। হে আমাদের প্রভূ! আমাদের গুনাহ মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব মন্দ কাজ আছে তা তুমি দূর করে দাও এবং আমাদের শেষ পরিণতি নেক লোকদের সাথে কর। হে আল্লাহ ! তুমি যেসব ওয়াদা তোমার রাসূলদের মাধ্যমে করেছো, তা পূরণ করো এবং কিয়ামতের দিনে লাঞ্ছনায় ফেলো না। নিশ্চয়ই তুমি ওয়াদার বরখেলাপ করো না। (সূরা আল ইমরান)
তাহাজ্জুদের রাকায়াতসমূহ
_________________________________
তাহাজ্জুদের রাকায়াতসমূহ
অন্ততপক্ষে দুই এবং ঊর্ধতম সংখ্যা আট। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অভ্যাস ছিল দুই দুই করে আট রাকায়াত পড়া। সে জন্যে আট রাকায়াত পড়াই ভালো, তবে তা জরুরী নয়। অবস্থা ও সুযোগের প্রেক্ষিতে যতটা পড়া সম্ভব ততটা পড়লেই চলবে।

ইসলাম ও মুসলিম পর্ব-১

ইসলাম
‘ইসলাম’ একটি আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, কারো কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্মসমর্পণ করা।
শরীয়তের পরিভাষায় ‘ইসলাম’ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দ্বীনের নাম। যা আমাদের রাসূল (সাঃ) মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
অনেকে বলেন ইসলাম অর্থ ‘শান্তি’ কিন্তু এ কথাটি সঠিক নয়।  سَلْم (সাল্ম) ও سلام (সালাম) অর্থ শান্তি। অনেক মুসলমান অজ্ঞতার ভিত্তিতে ইসলাম মানে শান্তি বলে। ইংরেজরা যখন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে, তখন তৎকালীন ইংরেজ গভর্ণর ড. ম্যাকলিকে মাদ্রাসার সিলেবাস তৈরী করার দায়িত্ব দেয়। এই সুযোগে তারা ইসলামের অনেক মৌলিক পরিভাষা; যেমন ইসলাম, ইলাহ, রব, তাওহীদ, শিরক, তাগুত, জিহাদ ইত্যাদি পরিবর্তন করে। তন্মধ্যে ইসলামের জিহাদ তথা বাতিলের সাথে ইসলামের অনিবার্য দ্বন্দ ও সংঘাতকে এড়ানো জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের অর্থ শান্তি করে থাকে। অথচ বিখ্যাত আভিধানিক ‘হান্সভে’ (যিনি একজন খ্রিষ্টান) তার বিখ্যাত আরবী-ইংরেজী অভিধানে اسلام (ইসলামের) অর্থ করেছেঃ Submission, resignation to the will of God.
ইসলামের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে – আল্লাহর ইচ্ছার কাছে বশ্যতা স্বীকার করা ও পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা (A Dictionary of Modern Written Arabic)।  তবে এ কথা ঠিক যে ইসলাম মানলে অবশ্যই শান্তি আসবে। দুনিয়াতে সুখ ও শান্তি লাভ করা যাবে। আর আখেরাতেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের চিরস্থায়ী শান্তি ভোগ করা যাবে।

মুসলিম
‘মুসলিম’ হলো যিনি আলøাহর আদেশ মেনে চলে এবং তাঁর আদেশ লংঘন করে না। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ
“… তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম। (হজ্জ, ২২: ৭৮)
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
“স্বরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেন: অনুগত হও। সে বলল: আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। (বাকারা, ২ : ১৩১)
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
“তারা কি আল্লাহ দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে  স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। (আল ইমরান, ৩ ঃ ৮৩)
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
“যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে  স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে। (লোকমান, ৩১ : ২২)
قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَسْلَمَ
“আপনি বলে দিন: আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, সর্বাগ্রে আমিই আজ্ঞাবহ হব। (আনআম, ৬ : ১৪)
فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ
“অতএব তোমাদের আল্লাহ্ তো একমাত্র আল্লাহ্ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও। (হজ্জ, ২২ : ৩৪)
وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূবে। (যুমার, ৩৯ : ৫৪)
আল্লাহ তাআলার আদেশ দুই প্রকারঃ
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলিম বলা হয় ‘যে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, আল্লাহর আদেশ দুই প্রকারঃ
(তাকভিনী (সৃষ্টিগত)
(তাশরিয়ী (শরীয়ত গতআদেশ
তাকভিনী (সৃষ্টিগত) বাধ্যতামূলকভাবে আদেশ নিষেধ পালন করাই হলো তাকভিনী (সৃষ্টিগত) ইসলাম। যেমন সূর্যের প্রতি আল্লাহর আদেশ হচ্ছে উদয় হওয়া, অস্ত যাওয়া, আলো ও উষ্ণতা দেয়া ইত্যাদি। সূর্যের শক্তি নেই এই আদেশ অস্বিকার করার। সেরূপে বায়ুর প্রতি আদেশ প্রাণী জগতকে জীবিত রাখা। পানির প্রতি আদেশ তৃষ্ণার্তকে পানি দিবে। এরূপ মানুষের প্রতি সৃষ্টিগত আদেশ হলো জিহ্ববা কথা বলবে, কান কথা  শুনবে, চোখ দেখবে। মানুষের ক্ষমতা নেই জিহ্ববা দ্বারা দেখার বা কান দিয়ে কথা বলার অর্থাৎ এই আদেশ লংঘন করার। আর এটাই হলো তাকভিনী (সৃষ্টিগত) ইসলাম।
তাশরিয়ী (শরীয়তগত: যে সব আদেশ নিষেধ যা পালনের জন্মগত বা সৃষ্টিগত কোন বাধ্যবাধকাত নেই তাই হচ্ছে তাশরিয়ী আহাকম। যা স্বাধীন ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। যেমন মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত করবে না অন্য কারো ইবাদাত করবে তা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। শুধুমাত্র মানুষ ও জ্বীনকে এই ধরনের স্বাধীনতা আলøাহ তা’আলা দান করেছেন।
সুতরাং আনুগত্য করার নাম হলো ইসলাম। ইসলাম ও মুসলিম হবার বিষয়টি শুধুমাত্র মানুষ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম কোন এক বিশেষ সৃষ্টির নয়, গোটা সৃষ্টি জগতের দ্বীন হলো ইসলাম। সূর্য, চন্দ্র, সবই আল্লাহর আহকাম পুরোপুরি মেনে চলে। অতএব সূর্য সেও মুসলিম, চন্দ্র সেও মুসলিম। তারকারাজি, বায়ু, পানি সবাই মুসলিম।
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
“(সত্য অস্বীকারকারীর দল কি) আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীনের অনুসন্ধান করে? অথচ আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে তারা সকলেই আল্লাহর দ্বীনের অনুগত।” (সূরা আলে ইমরান : ৮৩)
অতএব জ্বীন ও মানুষ ব্যতীত সব সৃষ্টি আল্লাহর মুসলিম (আনুগত্য) তাদের সকলের দ্বীন হলো ইসলাম।
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا
“সাত আসমান পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তাআলার তাসবীহ পাঠ করে। এ সৃষ্টিজগতে এমন কোন বস্তু নেই যা তাঁর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ও মহত্ত¡ বর্ণনা করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তসবীহ (পবিত্রতা ও মহত্ত¡ বর্ণনা) বুঝতে পারোনা।” (সূরা বনী ইসরাঈল : ৪৪)
وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهً
“আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচছায় অথবা অনিচছায়। (রা’দ, ১৩ : ১৫)
ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ
“অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচছায় অথবা অনিচছায়। তারা বলল, আমরা  স্বেচ্ছায় আসলাম। (ফুসসিলাত, ৪১ : ১১)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ
“তোমরা কি লক্ষয করনি যে, বস্তুত : আল্লাহই এক সত্তা যাকে সেজদা করে সকলেই, যারা আছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এবং সেজদা করে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও বহুসংখ্যক মানুষ। (হজ্জ, ২২ : ১৮)
[সেজদা করার প্রকৃত মর্ম, তাদের প্রতি আল্লাহর আরোপিত আইন, কানুন, বিধি, ব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেনে চলা।]
আবার অনেক সময় একই সাথে উপরোক্ত দু’ ধরনের আহকামের উপস্থিতি দেখা দেয়। যেমনঃ (মানুষের ÿেত্রে) মানুষ চোখ দ্বারা দেখবে কিন্তু কোন নিষিদ্ধ বিষয় বা কাজ দেখবে না, আবার কান দ্বারা শুনবে কিন্তু নিষিদ্ধ কথা শুনবে না। এখানে দেখা যাচ্ছে প্রথম অংশটি তাকভিনী যা বাধ্যতামূলক এবং পরের অংশটি তাশরিয়ী (শরীয়তগত) যা মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
এখন আসল কথা হলো যারা আহকামে এলাহী মানে না তাদের জন্য “মুসলিম” শব্দটি ব্যবহার করা চলবে না। অথচ তারা তাকভিনী (সৃষ্টিগত) আহকাম মেনে চলছে।
সকল নবীর দ্বীন ছিল ‘ইসলাম’ এবং সকল উম্মতের পরিচয় ছিল ‘মুসলিম’
مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلا نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
“ইব্রাহীম না ছিলেন ইয়াহুদ আর না ছিলেন নাসারা (খৃষ্ঠান)। বরং সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহর একনিষ্ঠ মুসলিম ছিলেন তিনি। (আল ইমরান, ৩ : ৬৭)
فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ (38) وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
“অতপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত পৌঁছে তাহলে যে আমার হেদায়াত মেনে চলবে তার জন্য চিন্তার কোন কারণ থাকবে না এবং সে আশংকিত ও ব্যথিত হবে না। যে হেদায়েত অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিবে সে হবে দোযখের অধিবাসী। (সূরা বাকারা, ২ : ৩৮, ৩৯)
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَإِنْ مِنْ أُمَّةٍ إِلا خَلا فِيهَا نَذِيرٌ
“এমন কোন জাতি ছিল না যাদের কাছে কোন সাবধানকারী (নবী) আসেনি।” (সূরা ফাতের, ৩৫ : ২৪)
উপরের এ দুটি আয়াত একথারই সুস্পষ্ট ঘোষণা করে যে, এ দুনিয়ার মানুষের বসবাস এবং শরীয়তের আহকাম একত্রেই শুরু হয়েছে। সেই আদিকাল থেকে মানবজগত কখনো ‘দ্বীন’ ও ‘শরীয়ত’ শূন্য হয়ে পড়েনি। এমন জাতি নেই যে, আল্লাহ তা‘আলার হেদায়েত থেকে বঞ্চিত ও অনবহিত রয়েছে। এটা এ জন্য যে, মানুষ ছিল একটা স্বাধীন এখতিয়ার সম্পন্ন সৃষ্টি।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তার বংশধর হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ) প্রমুখ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ (131) وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلا تَمُوتُنَّ إِلا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (132) أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَهَكَ وَإِلَهَ آَبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
“স্মরণ কর, সে সময়ের কথা যখন ইব্রাহীমকে তাঁর প্রভু বলেছিলেন ‘মুসলিম হও অর্থাৎ আমার অনুগত হয়ে যাও।” তখন তার জবাবে তিনি বলেছিলেন ‘আমি জগতসমূহের প্রভুর মুসলিম অর্থাৎ অনুগত হয়ে গেলাম। অতঃপর এ বিষয়ে অসিয়ত করলেন ইব্রাহীম তার পুত্রদেরকে এবং ইয়াকুব তাঁর পুত্রদেরকে এই বলে, হে আমার সন্তানগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই বিশেষ দ্বীনটি পছন্দ করেছেন। অতএব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমরা মুসলিম হয়ে থেকো। .. .. তারা বললোঃ আমরা আপনার ইলাহর বন্দেগী করব এবং আমরা তাঁরই মুসলিম (অনুগত) হয়ে থাকবো।” (বাকারা, ২ : ১৩১-১৩৩)
কোরআন পাকে এ ধরনের বিশেøষণ হয়রত লূত (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত সুলায়মান (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) প্রমুখ নবীগণের সম্পর্কেও দেয়া হয়েছে। অতপর সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, তাঁরা এবং তাদের অনুসারীগণ সকলেই ছিলেন ‘মুসলিম’ এবং সকলেরই দ্বীন ছিল ইসলাম।

ইসলাম ও মুসলিম পর্ব ২

ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন
ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন। ইসলাম ছাড়া আর কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এর প্রমাণ হলো আল্লাহ পাক তাঁর কিতাব কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلامُ
‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীম দ্বীন হলো ইসলাম।’ (আল ইমরান, ৩ : ১৯)
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ
‘কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (আল ইমরান, ৩ : ৮৫)
ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা
ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন :
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلامَ دِينًا
‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম। আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণতা দিলাম আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (মায়েদা, ৫ : ৩)
সুতরাং যে দ্বীনকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলের মাধ্যমে যে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন তার ভিতরে নতুন কিছু সংযোজন করার অধিকার কারও নেই। যদি করা হয় তা হবে বিদআ’ত। আর বিদআ’তের ব্যাপারে রাসূল সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম বলেছেন, كل بدعة ضلالة বিদআ’ত সবই গোমরাহী। এ কারণেই হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেনঃ
من ابتدع بدعة فيراها حسنة فقد زعم ان محمدا صلى الله عليه وسلم خان فى الرسالة لان الله تعالى يقول اليوم اكملت لكم دينكم فما لم يكن يومئذ دينا فليس اليوم دينا (الاعتصام )
“যে ব্যক্তি কোন বিদআ’ত আবিস্কার করে আবার সেটাকে বিদআ’তে হাসানাহ বা ভালো বিদআ’ত মনে করে সে যেনো দাবী করলো যে, হযরত মুহাম্মদ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম রিসালাতের ভিতরে খিয়ানত করেছেন, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ اليوم اكملت لكم دينكم “আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। সুতরাং যে সব কাজ তখন দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত ছিল না তা বর্তমানেও দ্বীন নয়।
পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গরূপেই গ্রহণ করতে হবে
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
“হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা, ২ : ২০৮)
পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গরূপেই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং কিছু মানবো কিছু মানবো না, এমন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না।
وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلا تَمُوتُنَّ إِلا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (132)
“এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আলøাহ্ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না। (বাকারা, ২ : ১৩২)
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
“তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দাংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দাংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শা¯িÍর দিকে পৌঁÍছে দেয়া হবে। আলøাহ্ তোমাদের কাজ-কর্ম স¤পর্কে বে-খবর নন। (বাকারা, ২ : ৮৫)
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا (150) أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا (151
“যারা আলøাহ্ ও তার রসূলের প্রতি অ¯¦ীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আলøাহ্ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি কিন্তূ কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবল¤¦ন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব। (নিসা, ৪ : ১৫০-১৫১)

ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বা মতবাদ বাতিল
বর্তমানে কিছু আধুনিক শিÿিত এবং তথাকথিত পীরদেরকে বলতে শুনা যায় যে, “পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয়” যেমন ‘আল্লাহ কোন পথে?’ নামক বইয়ের ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে, পৃঃ ১১৩-১১৪ ও ১২৫-১২৬ এবং ‘মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও কেরামত’ নামক বইয়ের পঞ্চদশ প্রকাশ : জুলাই -২০০২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২ তে বলা হয়েছে পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আবশ্যকতা আছে বলে মনে করি না। বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান যে কোন ধর্মের লোক নিজ নিজ ধর্মে থেকে সাধনা করে মুক্তি পেতে পারে। তাদের এই কথিত ‘তাওহীদে আদইয়ান বা সকল ধর্মের ঐক্য’ এর স্বপÿে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করে থাকে :
إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ
অর্থাৎ যারা মু’মিন, যারা ইয়াহুদী, এবং খৃষ্টান ও সাবিঈন- (এদের মধ্যে) যারাই আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। (সূরা বাকারা, ২ : ৬২)
অথচ এ আয়াতে যে কোন ধর্মের লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ঈমান আনলে এবং নেক কাজ করলে তারা পরকালে মুক্তি পাবে। আর একথা স্পষ্ট যে, ইসলাম ধর্ম আগমনের পর রাসূল সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম কে আখেরী নবী না মানলে তার ঈমান পূর্ণ হবে না। আর রাসূল সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম কে আখেরী নবী মানলে অন্যান্য সব ধর্মের বিধানকে রহিত মানতে হয়। তাহলে অন্য কোন ধর্মে থেকে মুক্তির অবকাশ রইল কোথায়?
কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِين
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কসি¥ণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্র¯Í। (আল ইমরান, ৩ : ৮৫)
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
“তারা কি আল্লাহদ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে ¯ে¦চছায় হোক বা অনিচছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। (আল ইমরান, ৩ : ৮৩)
অমুসলিমরা ইসলাম না গ্রহণ করে যত ভাল কাজই করুক না কেন, পরকালে তারা মুক্তি পাবে না। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে :
وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآَنُ مَاءً حَتَّى إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِنْدَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ (39) أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ
অর্থাৎ যারা কাফের, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকা সমতুল্য, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। কিন্তু সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অত:পর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রæত হিসাব গ্রহণকারী। অথবা (তাদের আমলসমূহ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতি নেই। (সূরা আন-নূর, ২৪ : ৩৯-৪০)
এর জ্বলন্ত প্রমাণ আবু তালেব। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)- এর আপন চাচা। হযরত আলী (রাঃ) এর আব্বাজান। যিনি সারা জীবন রাসূল (সাঃ) কে ভাতিজা হিসাবে দেখা-শুনা করেছেন, সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন। এমনকি তিন বৎসর পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মৃত্যুর পরেও তার জন্য দোয়া করতে থাকলেন, ফলে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করে দিলেন :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
“নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে, যদিও তারা আতœীয় হোক একথা সু¯পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী। (তাওবা, ৯ : ১১৩)
আরো বলা হলো :
إِنَّكَ لا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“আপনি যাকে পছন্তদ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আলøাহ্ তা’আলাই যাকে ইচছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে স¤পর্কে তিনিই ভাল জানেন। (কাসাস, ২৮ : ৫৬)
এ বিষয়টি হাদীস শরীফে আরো স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে :
عن جابر رضى الله عنه، عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اناه عمر فقال : انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا، أفترى أن نكتب بعضها؟ فقال : (( أمتهوكون أنتم كما تهوّكت اليهود والنصارى؟! لقد جئتكم بها بيضاء نقيّة، لو كان موسى حيا ما وسعه إلا اتباعى )) رواه أحمد، والبيهقى فى كتاب ((شعب الإيمان))
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত উমার (রাঃ) একবার আল্লাহর রাসূলের কাছে এসে বললেনঃ (ইয়া রাসূলালøাহ) আমরা ইহুদীদের কাছে এমন কিছু কথা-বার্তা শুনতে পায়, যা আমাদের নিকট ভাল লাগে, আমরা তাদের (তাওরাতের) কিছু কথা লিখে রাখবো? আল্লাহর (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি বিভ্রান্তির মধ্যে আছো?! যেমনিভাবে বিভ্রান্তিতে আছে ইয়াহুদী এবং খৃষ্টানরা। নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছি স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার (একটি দ্বীন), যদি হযরত মুসা (আঃ) (তাওরাত যার উপর নাজিল হয়েছে) তিনি জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না।
عن جابر، ان عمر بن الخطاب رضى الله عنهما، أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التوراة، فقال : يا رسول الله! هذه نسخة من التوراة، فسكت فجعل يقرأ و وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير . فقال أبو بكر : ثكلتك الثواكل! ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم؟! فنظر عمر إلى وجه رسول صلى الله عليه وسلم فقال : أعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله، رضينا بالله ربّا، وبالاسلام دينا، وبمحمد نبيا . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ((والذى نفسى محمد بيده، لو بدا لكم موسى فاتبعتموه وتركتمونى لضللتم عن سواء السبيل، ولو كان حيّا وأدرك نبوتى لاتبعنى )). رواه الدارمى
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুলøাহ সালøঅলøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম এর নিকট তাওরাত লিখিত একখন্ড কাগজ নিয়ে আসলেন। অতঃপর বললেনঃ ইয়া রাসূলুলøাহ! এটা তাওরাতের থেকে লিখিত একখন্ড বাণী। অতপরঃ রাসূলুলøাহ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম চুপ থাকলেন এবং উমার (রাঃ) তা পড়তে আরম্ভ করলেন, তার পড়া শুনে রাসূলূলøাহ এর চেহারা পরিবর্তন হতে লাগল। অতপরঃ আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ হে ওমর! তুমি সড়ে যাও (চুপ হয়ে যাও), তুমি কি রাসুলুলøাহ সালøালøাম এর চেহারার অবস্থা দেখতে পাচ্ছনা? অতপরঃ উমার (রাঃ) রাসূলুলøাহ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম এর চেহারার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি থেকে পানাহ চাচ্ছি। তিনি আরো বললেনঃ আমরা আল্লাহকে রাব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। অতপরঃ রাসূল সালøালøাহু বললেনঃ সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! যদি তোমরা মুসা (আঃ) কে পেতে অতপরঃ তার অনুসরণ করতে ও আমাকে পরিত্যাগ করতে, তাহলে সঠিক পথ বা দ্বীন থেকে দুরে চলে যেতে (পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে)। যেনে রাখ! যদি মুসা (আঃ) ও জীবিত থাকত এবং আমাকে পেত; তবে আমার অনুসরণ করতো। (দারেমী, মেশকাত বা: এ’তেছাম)
মেশকাত শরীফের আরো একটি হাদীসে আছে, রাসূলুলøাহ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম বলেনঃ “সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এই উম্মাতে ইয়াহুদী ও নাসারাদের মধ্য হতে কেউ যদি আমার কথা জানে-শুনে এবং আমি যা কিছু সহ প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি ঈমান না আনে, তাহলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে।” (মেশকাত-মুসলিম)

ইসলাম ও মুসলিম পর্ব ৩

আততাওহীদ
শুধু আল্লাহ আছেন বললেই মুসলিম হওয়া যায় না, কারণ যদি আল্লাহ আছেন এ কথা বললেই মুসলিম হওয়া যায় তাহলে এ কথা মক্কার কাফেররাও স্বীকার করতো। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُونَ
“যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তবে অবশ্যই তারা বলবে, আলøাহ্, অত:পর তারা কোথায় ফিরে যাচেছ ? (যুখরূফ, ৪৩ : ৮৭)
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ
“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আলøাহ্। (যুখরূফ, ৪৩ : ৯)
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لا يَعْقِلُونَ
“যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অত:পর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আলøাহ্। বলুন, সম¯Í প্রশংসা আলøাহ্রই। কিন্তূ তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না। (আনকাবুত, ২৯ : ৬৩)
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
“যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্তদ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আলøাহ্। তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচেছ? (আনকাবুত, ২৯ : ৬১)
قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلا تَتَّقُونَ (سورة يونس 31)
“তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম স¤পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আলøাহ্! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয় করছ না? (ইউনুস, ১০ : ৩১)
قُلْ لِمَنِ الْأَرْضُ وَمَنْ فِيهَا إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (84) سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلا تَذَكَّرُونَ (سورة المومنون85)
“বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান। এখন তারা বলবে: সবই আলøাহ্র। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? (মুমিনুন, ২৩ : ৮৪-৮৫)
قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (88) سَيَقُولُونَ لِلَّهِ
المومنون
“বলুনঃ তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব ব¯Íূর কর্র্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না ? এখন তারা বলবেঃ আলøাহ্র। (মুমিনুন, ২৩ : ৮৮)
তারা হজ্জ করতো এবং তালবীয়া পাঠ করতো।
عن بن عباس قال كان المشركون يقولون لبيك لاشريك لك فيقول رسول الله صلى الله عليه وسلم ويلكم قَدٍْ قَدٍْ الا شريكا هو لك تملكه وما ملك يقولون هذا وهم يطوفون بالبيت مسلم، مشكوة- كتاب الحج
হযরত আব্দুলøাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মুশরিকরা বায়তুলøাহ শরীফ তাওয়াফ করার সময় তালবীয়া পাঠ করতো (لبيك اللهم….  ) যখন তারা لبيك لا شريك لك পর্যন্ত বলতো, তখন (সাঃ) বলতেন : ব্যস্, ব্যস্, থামো! থামো! কেননা তারা শেষ দিয়ে বলতো “তবে একজন শরীক আছে যে নিজে এবং তার অধীনস্থ সবকিছু তোমারই অধীন আছে।”
আল্লাহর নবীর বয়স যখন ৩৫ বৎসর তখন ক্বাবা পুনর্ণিমাণের প্রয়োজন হয়, তখন মক্কার কাফেররা পরামর্শে বসল যে, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে, ক্বাবা নির্মাণ করতে গিয়ে তারা কোন হারাম পয়সা লাগাবে না। সবার হালাল পয়সা জমা করে দেখা গেল, এর দ্বারা পূর্ণ ক্বাবা নির্মাণ করা সম্ভব নয়, যদি পূর্ণ ক্বাবা নির্মাণ করতে চাই তাহলে হারাম পয়সা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তারা তা করলো না বরং হালাল পয়সা দিয়ে যতটুকু সম্ভব হয়েছে ততটুকুই করেছে আর বাকীটা বাদ দিয়ে দিয়েছে, হাতিমে ক্বাবা যার সাÿ্য বহন করে। এর দ্বারা বুঝা যায় তারা আল্লাহকে কত ভয় করে।
আবরাহা বাদশা যখন ক্বাবা ধ্বংস করতে আসলো, এবং আবদুল মুত্তালিব এর কিছু দুম্বা, ভেড়া-বকরি নিয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন আবরাহার কাছে গিয়ে ক্বাবা সম্পর্কে কিছু না বলে ঐ পশুগুলো ফেরত আনার ব্যাপারে কথা বললেন। বলেছিলেনঃ
ইহুদী নাসারারাও আল্লাহকে বিশ্বাস করে
وَقَالَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى نَحْنُ أَبْنَاءُ اللَّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ
“ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহসন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। (মায়েদা : ১৮)”
ফেরাউনও আল্লাহকে বিশ্বাস করে
ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করেছেঃ
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا أَيُّهَا الْمَلا مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرِي (القصص 38)
“ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। (কাসাস : ৩৮)
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَهًا غَيْرِي لاجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ(الشعراء 29)
“ফেরাউন বলল, তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর তবে আমি অবশ্যই তোমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করব। (শুআরা : ২৯)
আবার অন্য আয়াতে সে নিজেকে রব বলে দাবী করছে, ইরশাদ হচ্ছে :
فَحَشَرَ فَنَادَى (23) فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى( النازعات:24)
সে সকলকে সমবেত করল এবং সজোরে আহবান করল। এবং বলল: আমিই তোমাদের সেরা পালনকর্তা। (নাযিআত, ৭৯ : ২৩-২৪)
অথচ এই ফেরাউন ও বহু ইলাহতে বিশ্বাসী ছিল।
وَقَالَ الْمَلا مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآَلِهَتَكَ (اعراف: 127)
“ফেরাউনের স¤প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার স¤প্রদায়কে। দেশময় হৈ-চৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য। (আরাফ, ৭ : ১২৭)
এই আয়াতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, ফেরাউন ও বিশ্বাস করতো যে, আল্লাহ আছে তবে তা অনেক।
শয়তানও আল্লাহকে বিশ্বাস করে
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ (انفال : 48)
“আর যখন সুদৃশ্য করে দিল শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনাসামনি হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পেছনে দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, আমি তোমাদের সাথে না – আমি দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্তÍ কঠিন। (আনফাল, ৮ : ৪৮)
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ (الحشر : 16)
“তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অত:পর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলে: তোমার সাথে আমার কোন স¤পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আলøাহ্ তা’আলাকে ভয় করি। (হাশর, ৫৯ : ১৬)
তাহলে পার্থক্য কোথায়?
পূর্বের আলোচনায় পরিষ্কার হলো যে, রাসূল সালøালøাহু সালøামের যুগের কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাসারা এবং ফেরাউন, এমনকি শয়তানও আল্লাহকে বিশ্বাস করে। তাহলে তাদের ও আমাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়?  কেন তারা কাফির আর আমরা মুসলিম? কেন তার আল্লাহর দুশমন এবং আমরা আল্লাহর বন্ধু? কেন তারা জাহান্নামী এবং মুসলিমরা জান্নাতী?
আমরা পরবর্তী আলোচনায় সে বিষয়গুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো। (ইনশা-আল্লাহ)