সন্তানদের জন্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সন্তানদের জন্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সন্তানের প্রতি লোকমান হাকীমের উপদেশাবলি


প্রথমে লোকমান আ. তার ছেলেকে যেভাবে উপদেশ দিয়েছেন,
তা আলোচনা করা হল। কারণ, লোকমান আ. তার ছেলেকে যে
উপদেশ দিয়েছেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণ যোগ্য যে, মহান আল্লাহ
তা‘আলা তা কুরআনে করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত
অনাগত উম্মতের জন্য তিলাওয়াতে উপযোগী করে দিয়েছেন
এবং কিয়ামত পর্যন্তের জন্য তা আদর্শ করে রেখেছেন।
লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন তা নিম্নরূপ:
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟُﻘْﻤَﺎﻥُ ﻟِﺎﺑْﻨِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌِﻈُﻪُ ﴾
অর্থ,
“আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে
গিয়ে বলেছিল…।”
এ উপদেশগুলো ছিল অত্যন্ত উপকারী, যে কারণে মহান আল্লাহ
তা‘আলা কুরআনে করীমে লোকমান হাকিমের পক্ষ থেকে
উল্লেখ করেন।
প্রথম উপদেশ: তিনি তার ছেলেকে বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﴾
অর্থ,
“হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক
হল বড় যুলুম।”
এখানে লক্ষণীয় যে, প্রথমে তিনি তার ছেলেকে শিরক হতে
বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। একজন সন্তান তাকে অবশ্যই
জীবনের শুরু থেকেই আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাসী হতে হবে।
কারণ, তাওহীদই হল, যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশুদ্ধতা ও
নির্ভুলতার একমাত্র মাপকাঠি। তাই তিনি তার ছেলেকে
প্রথমেই বলেন, আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরিক করা
হতে বেচে থাক। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা অথবা
অনুপস্থিত ও অক্ষম লোকের নিকট সাহায্য চাওয়া বা প্রার্থনা
করা ইত্যাদি। এছাড়াও এ ধরনের আরও অনেক কাজ আছে,
যেগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দোআ
হল ইবাদত” ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻫﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ সুতরাং আল্লাহর মাখলুকের নিকট দোআ
করার অর্থ হল, মাখলুকের ইবাদত করা, যা শিরক।
মহান আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বাণী, ﴿ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒِﺴُﻮﺍْ ﺇِﻳﻤَﺎﻧَﻬُﻢ ﺑِﻈُﻠْﻢٍ
﴾ অর্থাৎ “তারা তাদের ঈমানের সাথে যুলুমকে একত্র করে
নি।”
এ আয়াত নাযিল করেন, তখন বিষয়টি মুসলিমদের জন্য কষ্টকর হল,
এবং তারা বলাবলি করল যে, আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে
তার উপর অবিচার করে না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের আলোচনা শোনে বললেন,
} ﻟﻴﺲ ﺫﻟﻚ ، ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺸﺮﻙ ، ﺃﻟﻢ ﺗﺴﻤﻌﻮﺍ ﻗﻮﻝ ﻟﻘﻤﺎﻥ ﻻﺑﻨﻪ : ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ
ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﴾ .
অর্থাৎ, “তোমরা যে রকম চিন্তা করছ, তা নয়, এখানে আয়াতে
যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, শিরক। তোমরা কি লোকমান আ. তার
ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছে, তা শোন নি? তিনি তার
ছেলেকে বলেছিলেন,
} ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﴾ .
অর্থ,
হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক
হল বড় যুলুম।”
দ্বিতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে যে
উপদেশ দিয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ ﻭَﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﺣَﻤَﻠَﺘْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻭَﻫْﻨًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻫْﻦٍ ﻭَﻓِﺼَﺎﻟُﻪُ ﻓِﻲ ﻋَﺎﻣَﻴْﻦِ ﺃَﻥِ ﺍﺷْﻜُﺮْ ﻟِﻲ
ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻚَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ ﴾ .
অর্থ,
“আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে [সদাচরণের]
নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে
গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং
আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর।
প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।” [সূরা লোকমান: ১৪]
তিনি তার ছেলেকে কেবলই আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে
ইবাদতে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করার সাথে সাথে মাতা-
পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দেন। কারণ, মাতা-
পিতার অধিকার সন্তানের উপর অনেক বেশি। মা তাকে
গর্ভধারণ, দুধ-পান ও ছোট বেলা লালন-পালন করতে গিয়ে অনেক
জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্ট সইতে হয়েছে। তারপর তার পিতাও
লালন-পালনের খরচাদি, পড়া-লেখা ও ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে
তাকে বড় করছে এবং মানুষ হিসেবে ঘড়ে তুলছে। তাই তারা
উভয় সন্তানের পক্ষ হতে অভিসম্পাত ও খেদমত পাওয়ার
অধিকার রাখে।
তৃতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে মাতা-
পিতা যখন তোমাকে শিরক বা কুফরের নির্দেশ দেয়, তখন
তোমার করণীয় কি হবে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﻥ ﺟَﺎﻫَﺪَﺍﻙَ ﻋَﻠﻰ ﺃَﻥ ﺗُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻲ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪِ ﻋِﻠْﻢٌ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﻄِﻌْﻬُﻤَﺎ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒْﻬُﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻣَﻌْﺮُﻭﻓًﺎ
ﻭَﺍﺗَّﺒِﻊْ ﺳَﺒِﻴﻞَ ﻣَﻦْ ﺃَﻧَﺎﺏَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣَﺮْﺟِﻌُﻜُﻢْ ﻓَﺄُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴾
অর্থ,
“আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর
চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন
তাদের আনুগত্য করবে না। এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে করবে
সদ্ভাবে। আর আমার অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী
হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি
তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।” [সূরা
লোকমান: ১৫]
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘যদি
তারা উভয়ে তোমাকে পরি-পূর্ণরূপে তাদের দ্বীনের আনুগত্য
করতে বাধ্য করে, তাহলে তুমি তাদের কথা শুনবে না এবং
তাদের নির্দেশ মানবে না। তবে তারা যদি দ্বীন কবুল না করে,
তারপরও তুমি তাদের সাথে কোন প্রকার অশালীন আচরণ করবে
না। তাদের দ্বীন কবুল না করা তাদের সাথে দুনিয়ার জীবনে
তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতে কোন প্রকার
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তুমি তাদের সাথে ভালো
ব্যবহারই করবে। আর মুমিনদের পথের অনুসারী হবে, তাতে কোন
অসুবিধা নাই।’
এ কথার সমর্থনে আমি বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর বাণীও বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট ও শক্তিশালী
করেন, তিনি বলেন,
« ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻷﺣﺪ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ »
“আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলবে না।
আনুগত্য-তো হবে একমাত্র ভালো কাজে।”
চতুর্থ উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে কোন প্রকার
অন্যায় অপরাধ করতে নিষেধ করেন। তিনি এ বিষয়ে তার
ছেলেকে যে উপদেশ দেন, মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তার
বর্ণনা দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺇِﻥ ﺗَﻚُ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝَ ﺣَﺒَّﺔٍ ﻣِّﻦْ ﺧَﺮْﺩَﻝٍ ﻓَﺘَﻜُﻦ ﻓِﻲ ﺻَﺨْﺮَﺓٍ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
ﻳَﺄْﺕِ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻄِﻴﻒٌ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﴾ .
অর্থ,
“হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা [পাপ-পুণ্য] যদি সরিষা
দানার পরিমাণও হয়, অত:পর তা থাকে পাথরের মধ্যে
কিংবা আসমান সমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও
নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ।” [সূরা
লোকমান: ১৬]
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, অন্যায় বা
অপরাধ যতই ছোট হোক না কেন, এমনকি যদি তা শস্য-দানার
সমপরিমাণও হয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা‘আলা তা
উপস্থিত করবে এবং মীযানে ওজন দেয়া হবে। যদি তা ভালো
হয়, তাহলে তাকে ভালো প্রতিদান দেয়া হবে। আর যদি খারাপ
কাজ হয়, তাহলে তাকে খারাপ প্রতিদান দেয়া হবে।
পঞ্চম উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সালাত
কায়েমের উপদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা
দিয়ে বলেন, ﴿ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺃَﻗِﻢِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﴾ অর্থাৎ, “হে আমার প্রিয় বৎস
সালাত কায়েম কর”, তুমি সালাতকে তার ওয়াজিবসমূহ ও
রোকনসমূহ সহ আদায় কর।
ষষ্ঠ উপদেশ:
﴿ ﻭَﺃْﻣُﺮْ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﺍﻧْﻪَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ ﴾
অর্থাৎ “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে
মানুষকে নিষেধ কর।” বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও,
যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার
কঠোরতা করো না।
সপ্তম উপদেশ: আল্লাহ বলেন, ﴿ ﻭَﺍﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻚَ ﴾ “যে তোমাকে
কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।” আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়
যে, যারা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ ও মন্দ কাজ
হতে মানুষকে নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই কষ্টের সম্মুখীন হতে
হবে এবং অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। যখন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে
তখন তোমার করণীয় হল, ধৈর্যধারণ করা ও ধৈর্যের পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হওয়া। রাসূল সা. বলেন,
« ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﺨﺎﻟﻂ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻳﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﺫﺍﻫﻢ ، ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﺨﺎﻟﻂ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻻ
ﻳﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﺫﺍﻫﻢ ».
“যে ঈমানদার মানুষের সাথে উঠা-বসা ও লেনদেন করে এবং
তারা যে সব কষ্ট দেয়. তার উপর ধৈর্য ধারণ করে, সে— যে
মুমিন মানুষের সাথে উঠা-বসা বা লেনদেন করে না এবং
কোন কষ্ট বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না—তার থেকে উত্তম।”
﴿ ﺇِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺰْﻡِ ﺍﻟْﺄُﻣُﻮﺭِ ﴾
অর্থ,
“নিশ্চয় এগুলো অন্যতম সংকল্পের কাজ।” অর্থাৎ, মানুষ
তোমাকে যে কষ্ট দেয়, তার উপর ধৈর্য ধারণ করা অন্যতম দৃঢ়
প্রত্যয়ের কাজ।
অষ্টম উপদেশ:
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺼَﻌِّﺮْ ﺧَﺪَّﻙَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﴾
অর্থ, “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো
না।”
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, ‘যখন তুমি কথা বল অথবা
তোমার সাথে মানুষ কথা বলে, তখন তুমি মানুষকে ঘৃণা করে
অথবা তাদের উপর অহংকার করে, তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে
রাখবে না। তাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে কথা বলবে। তাদের
জন্য উদার হবে এবং তাদের প্রতি বিনয়ী হবে।’
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺗﺒﺴﻤﻚ ﻓﻲ ﻭﺟﻪ ﺃﺧﻴﻚ ﻟﻚ ﺻﺪﻗﺔ .
“তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তাও
সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।”
নবম উপদেশ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﻻ ﺗَﻤْﺶِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﺮَﺣﺎً ﴾
“অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাটা চলা করবে
না।” কারণ, এ ধরনের কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ
করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﻛُﻞَّ ﻣُﺨْﺘَﺎﻝٍ ﻓَﺨُﻮﺭٍ ﴾
“নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।”
অর্থাৎ যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের উপর বড়াই
করে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের পছন্দ করে না।
দশম উপদেশ: নমনীয় হয়ে হাটা চলা করা। মহান আল্লাহ
তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন: ﴿ ﻭَﺍﻗْﺼِﺪْ ﻓِﻲ ﻣَﺸْﻴِﻚَ ﴾ “আর তোমার
চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।” তুমি তোমার চলাচলে
স্বাভাবিক চলাচল কর। খুব দ্রুত হাঁটবে না আবার একেবারে
মন্থর গতিতেও না। মধ্যম পন্থায় চলাচল করবে। তোমার চলাচলে
যেন কোন প্রকার সীমালঙ্ঘন না হয়।
একাদশ উপদেশ: নরম সূরে কথা বলা। লোকমান হাকীম তার
ছেলেকে নরম সূরে কথা বলতে আদেশ দেন। মহান আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ﴿ ﻭَﺍﻏْﻀُﺾْ ﻣِﻦ ﺻَﻮْﺗِﻚَ ﴾ “তোমার আওয়াজ নিচু কর।”
আর কথায় কোন তুমি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা
প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু করো না। মহান আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺇِﻥَّ ﺃَﻧﻜَﺮَ ﺍﻟْﺄَﺻْﻮَﺍﺕِ ﻟَﺼَﻮْﺕُ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴﺮِ ﴾
“নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।”
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, ‘সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার
আওয়াজ। অর্থাৎ, মানুষ যখন বিকট আওয়াজে কথা বলে, তখন তার
আওয়াজ গাধার আওয়াজের সাদৃশ্য হয়। আর এ ধরনের বিকট
আওয়াজ মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট একেবারেই অপছন্দনীয়।
বিকট আওয়াজকে গাধার আওয়াজের সাথে তুলনা করা প্রমাণ
করে যে, বিকট শব্দে আওয়াজ করে কথা বলা হারাম। কারণ,
মহান আল্লাহ তা‘আলা এর জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন
করেছেন। যেমনিভাবে—
ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
» ﻟﻴﺲ ﻟﻨﺎ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺴﻮﺀ ، ﺍﻟﻌﺎﺋﺪ ﻓﻲ ﻫﺒﺘﻪ ﻛﺎﻟﻜﻠﺐ ﻳﻌﻮﺩ ﻓﻲ ﻗﻴﺌﻪ «
“আমাদের জন্য কোন খারাপ ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হতে পারে না।
কোন কিছু দান করে ফিরিয়ে নেয়া কুকুরের মত, যে কুকুর বমি
করে তা আবার মুখে নিয়ে খায়।”
খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
» ﺇﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻢ ﺃﺻﻮﺍﺕ ﺍﻟﺪﻳﻜﺔ ، ﻓﺴﻠﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻓﻀﻠﻪ ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺭﺃﺕ ﻣﻠﻜﺎً ، ﻭﺇﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻢ ﻧﻬﻴﻖ
ﺍﻟﺤﻤﺎﺭ ﻓﺘﻌﻮﺫﻭﺍ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺭﺃﺕ ﺷﻴﻄﺎﻧﺎً » .
“মোরগের আওয়াজ শোনে তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ
কামনা কর, কারণ, সে নিশ্চয় কোন ফেরেশতা দেখেছে। আর
গাধার আওয়াজ শোনে তোমরা শয়তান থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা কর। কারণ, সে অবশ্যই একজন শয়তান দেখেছে।”
দেখুন: তাফসীর ইবন কাসীর, খ. ৩ পৃ. ৪৪৬
আয়াতের দিক-নির্দেশনা:-
১। আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে সব কাজ করলে দুনিয়া ও
আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়, পিতা তার ছেলেকে সে
বিষয়ে উপদেশ দিবে।
২। উপদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তাওহীদের উপর অটল ও
অবিচল থাকতে এবং শিরক থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেবে।
কারণ, শিরক হল, এমন এক যুলুম বা অন্যায়, যা মানুষের যাবতীয়
সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়।
৩। প্রত্যেক ঈমানদারের উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা
ওয়াজিব। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার পর সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হল, মাতা-পিতার কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া
আদায় করা। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, কোন প্রকার
খারব ব্যবহার না করা এবং তাদের উভয়ের সাথে সু-সম্পর্ক
বজায় রাখা।
৪। আল্লাহর নাফরমানি হয় না, এমন কোন নির্দেশ যদি মাতা-
পিতা দিয়ে থাকে, তখন সন্তানের উপর তাদের নির্দেশের
আনুগত্য করা ওয়াজিব। আর যদি আল্লাহর নাফরমানি হয়, তবে
তা পালন করা ওয়াজিব নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: « ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻷﺣﺪ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ »
অর্থ: “আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে কোন মাখলুকের আনুগত্য
চলে না; আনুগত্য-তো হবে ভালো কাজে”।
৫। প্রত্যেক ঈমানদারের উপর কর্তব্য হল, আল্লাহর একত্ববাদে
বিশ্বাসী মুমিন-মুসলিমদের পথের অনুকরণ করা, আর অমুসলিম ও
বিদআতিদের পথ পরিহার করা।
৬। প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
আর মনে রাখবে কোন নেক-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন,
তাকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না এবং কোন খারাপ-কাজ তা যতই
ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না এবং তা
পরিহার করতে কোন প্রকার অবহেলা করা চলবে না।
৭। সালাতের যাবতীয় আরকান ও ওয়াজিবগুলি সহ সালাত
কায়েম করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব; সালাতে কোন
প্রকার অবহেলা না করে, সালাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী
হওয়া এবং খুশুর সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
৮। জেনেশুনে, সামর্থানুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ
হতে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। না জেনে এ কাজ
করলে অনেক সময় হিতে-বিপরীত হয়। আর মনে রাখতে হবে, এ
দায়িত্ব পালনে যথা সম্ভব নমনীয়তা প্রদর্শন করবে; কঠোরতা
পরিহার করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
« ﻣﻦ ﺭﺃﻯ ﻣﻨﻜﻢ ﻣﻨﻜﺮﺍً ﻓﻠﻴﻐﻴﺮﻩ ﺑﻴﺪﻩ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﺒﻠﺴﺎﻧﻪ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﺒﻘﻠﺒﻪ ، ﻭﺫﻟﻚ
ﺃﺿﻌﻒ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ »
অর্থ:
“তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে
দেখে, তখন সে তাকে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। আর
যদি তা সম্ভব না হয়, তবে তার মুখ দ্বারা। আর তাও যদি
সম্ভব না হয়, তাহলে সে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এ হল,
ঈমানের সর্বনিম্নস্তর।”
৯। মনে রাখতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে
বারণকারীকে অবশ্যই-অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। ধৈর্যের কোন
বিকল্প নাই। ধৈর্য ধারণ করা হল, একটি মহৎ কাজ। আল্লাহ
তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন।
১০। হাটা চলায় গর্ব ও অহংকার পরিহার করা। কারণ, অহংকার
করা সম্পূর্ণ হারাম। যারা অহংকার ও বড়াই করে আল্লাহ
তাদের পছন্দ করেন না।
১১। হাটার সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে হাটতে হবে। খুব দ্রুত
হাঁটবে না এবং একেবারে ধীর গতিতেও হাঁটবে না।
১২। প্রয়োজনের চেয়ে অধিক উচ্চ আওয়াজে কথা বলা হতে
বিরত থাকবে। কারণ, অধিক উচ্চ আওয়াজ বা চিৎকার করা হল
গাধার স্বভাব। আর দুনিয়াতে গাধার আওয়াজ হল, সর্ব নিকৃষ্ট
আওয়াজ।
.
Source:শিশুদের লালন-পালন
[মাতা-পিতার দায়িত্ব ও সন্তানের করণীয়]
মূল: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূ রহ.
অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনায়: মো: আবদুল কাদের

ইলম অর্জনে শিশুর অধিকার


লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

ইলম অর্জন, জীবন ও জগৎ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ,
ইহপরকালীন কল্যাণের পথ পথান্তর বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা
অর্জন শিশুর একটি মৌলিক অধিকার। এ অধিকার প্রদানে, এ
বিষয়ে শিশুর যথাযথ পরিচর্যায় মহানবী সা. স্থাপন করেছেন
সর্বোচ্চ আদর্শ। আমাদের সালাফে সালেহীনগণও এক্ষেত্রে
রেখেছেন উজ্জ্বল উদাহরণ।
মহানবী সা. জ্ঞান অন্বেষণ প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ বলে
ঘোষণা করেছেন। [ দ্রঃ: আল মাকাসিদুল হাসানা: ৬৬০] জ্ঞান
অন্বেষণ সর্বোত্তম ইবাদত। আর এ ইবাদত চর্চার জীবনব্যাপী
চলমান প্রক্রিয়া শুভ শুরু শিশুকাল থেকেই শুরু হয়, শুরু হওয়া
আবশ্যক; কেননা শিশুকালে লব্ধ জ্ঞান পাথরে খচিত রেখার
মতোই, যা কখনো মুছে যাবার নয়।
আবু হুরায়রা (রাযি:) হতে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:’যে ব্যক্তি শিশুকালে
কুরআন শিখল, কুরআন তার রক্তমাংসের সাথে মিশে গেল, আর যে
ব্যক্তি বৃদ্ধ বয়সে কুরআন শিখল, আর কুরাআন তার কাছ থেকে ছুটে
যাওয়া সত্ত্বেও সে লেগে রইল, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছোয়াব।
[ দায়লামি, হাকেম]
ইবনে আব্বাস (রাযি:) বলেন :’যে ব্যক্তি বয়ঃপ্রাপ্তির পূর্বেই
কুরআন শিখল তাকে প্রজ্ঞা দিয়ে ভূষিত করা হল। ‘
খতিব আল বাগদাদি ইলম শেখানোর ব্যাপারে সালাফে
সালেহীনদের উদ্যোগ-আগ্রহের একটি দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন
যার কিছু অংশ এখানে তুলে দেওয়া হল:
হাসান বলেছেন:’ আমাদের হাতে আপনাদের শিশুদের তুলে দিন,
কেননা তারা হল শূন্য হৃদয়, তারা যা শোনে তা সংরক্ষণ করে
রাখতে অধিক সক্ষম। সাঈদ ইবনে রাহমা আল আসবাহি বলেন:
আমি রাতে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের মজলিসে সবার আগে
যেতাম, আমার সঙ্গী-সাথী ছিল যারা কখনো আমার পূর্বে
যেতে পারত না। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বৃদ্ধদের সঙ্গে নিয়ে
প্রবেশ করতেন। তারা একবার আব্দুল্লাহ ইবুল মুবারককে বললেন:
এসব বাচ্চারা আমাদেরকে পরাহত করে দিয়েছে। প্রত্যুত্তরে
তিনি বললেন: আপনাদের তুলনায় এরাই আমার অধিক আশার
পাত্র। আপনারা আর কয়দিন বাঁচবেন, আর ওরা, আশা করা যায়
যে আল্লাহ তাদেরকে দীর্ঘ জীবন দেবেন। সাঈদ বলেন: তাদের
মধ্যে আমাকে ছাড়া আর কেউই আজ বেঁচে নেই।‘
ইমাম আ’মাশ বলেন: আমি ইসমাঈল ইবনে রাজাকে দেখেছি,
তিনি বাচ্চাদের মকতবে যেতেন, তাদের সাথে কথা বলতেন;
যাতে তার কথাগুলো বিস্রুত না হয়।‘
হাসান ইবনে আলী রা. তাঁর ও তাঁর বোনের ছেলেদেরকে বলতেন:
ইলম শেখ; কেননা কওমের মধ্যে তোমরা এখন ছোট, আর
আগামীকাল তোমরাই হবে বড়। তাই তোমাদের মধ্যে যে মুখস্থ
না করে সে যেন লিখে সংরক্ষণ করে।‘ [খতিব আল বগদাদি: আল
কিফায়া ফি ইলমির রেওয়ায়া]
আতা ইবনে আবি রাবাহ বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বলতেন:
তোমরা লেখ, আর যে ভাল করে লেখা জানে না তাকে আমরা
লিখে দেব, আর যার সাথে খাতা-কলম নেই, তাকে আমরা এগুলো
আমাদের কাছ থেকে দেব। [আল মুহাদ্দিসুল ফাযেল: পৃষ্ঠা ৩]
বদিউযযামান হামাদানি তার এক বোনপুত্রকে ইলম তলবে
সিরিয়াস হতে বলে চিঠি লিখে বলেন:’ যতদিন ইলম নিয়ে মশগুল
থাকবে, মাদ্রাসাকে তোমার থাকার জায়গা বানিয়ে রাখবে,
কলমকে সঙ্গী ও খাতাকে বন্ধু বানিয়ে রাখবে ততদিন তুমি
আমার সন্তান বলে স্বীকৃতি পাবে। আর যদি এ ব্যাপারে কোনো
ত্রুটি হয় তবে আমি তোমার মামা নই, অন্য কাউকে মামা
হিসেবে গ্রহণ করো। ওয়াসসালাম। [ আলহিদায়া আল
ইসলামিয়া: ২২৮]
লুকমান হাকিম একদা তার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন:’
তোমার প্রজ্ঞা অর্জন কতদূর হল? উত্তরে তিনি বললেন: আমার
জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তাতে মাথা ঘামাই না।‘ লুকমান
হাকিম বললেন: হে আমার ছেলে! আরেকটি বিষয় বাকি রয়ে
গেছে, আর তাহল, তুমি আলেমদের সাথে বসবে, ভিড় ঠেলে
হলেও তাদের কাছে যাবে। কেননা আল্লাহ তাআলা হেকমত
দ্বারা মৃত হৃদয়গুলোকে জীবিত করেন, যেমনি জীবিত করেন
বৃষ্টি বর্ষিয়ে মৃত জমিন। [ মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক: ২/১৬১]
তিনি আরো বলেন: হে আমার সন্তান! তুমি তিনটি উদ্দেশ্যে ইলম
তলব করো না। আর তিন কারণে ইলম তলব বন্ধ করো না –
(১) অযাচিত ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়ার জন্য ইলম তলব করো না, (২)
গর্ব করার উদ্দেশ্যে ইলম তলব করো না, (৩) লোক-দেখানোর
উদ্দেশ্যে ইলম তলব করো না।
(১) ইলম তলবে অনীহার কারণে ইলম তলব ছেড়ো না, (২)
লোকলজ্জায় তুমি ইলম তলব ছেড়ো না, (৩) অজ্ঞ থাকার প্রতি
রাজি হয়ে তুমি ইলম তলব ছেড়ো না।
তিনি আরো বলেন:’ আলেমদের সাথে তুমি ঝগড়া করতে যেও না,
এরূপ করলে তাদের কাছে তুমি হালকা হয়ে যাবে। তারা
তোমাকে প্রত্যাখ্যান করবেন। যারা নির্বোধ তাদের সাথেও
বিতণ্ডায় যেও না, কেননা এরূপ করলে তারা তোমার সাথে
মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করবে, তোমাকে গালি দেবে। তুমি বরং সবর
করবে, জ্ঞানে যে ব্যক্তি তোমার ঊর্ধ্বে তার জন্য, এবং যে
নিচে তার জন্যও, কারণ আলেমদের সারিতে গিয়ে তারাই যুক্ত
হতে পারে যারা তাদের জন্য ধৈর্য ধরবে, তাদের সাথে লেগে
থাকবে। সুন্দর ও বিনম্রভাবে তাদের ইলম থেকে আহরণ করবে।‘
আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান তার ছেলেদেরকে উপদেশ দিয়ে
বলেন: তোমরা ইলম শিক্ষা করো, ইলম শিক্ষা করলে তোমরা
যদি মধ্যবর্তী অবস্থানে থাক, তাহলে তোমরা নেতা হয়ে যাবে,
আর যদি নিম্নবর্তী অবস্থানে থাক তা হলে বেঁচে থাকতে সক্ষম
হবে।
উপরোল্লিখ উদ্ধৃতিগুলো থেকে সহজেই প্রতীয়মান হচ্ছে
আমাদের সালাফে সালেহীন শিশুসন্তানদেরকে ইলম শেখাতে
কতটুকু গুরুত্ব দিতেন, আগ্রহ-উৎসাহ বহন করতেন।
সালাফে সালেহীনদের পদাঙ্ক অনুসরণ আমাদের ছেলে
সন্তানদেরকে যথার্থরূপে ইলম, জ্ঞান, ও প্রজ্ঞা শেখাতে
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করেন।