লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনাঃ চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদনাঃ চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
প্রখ্যাত আলেমে দীন রশীদ রেজা রহ. বলেছেন, মীলাদুন্নবী উদযাপন হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজের একটি। বিশেষ করে যেখানে থাকে গানের আসর, মদের আডডা, নৃত্য। যেখানে একত্র হয় নারী ও পুরুষেরা। অনেক সময় এ ধরনের অনুষ্ঠান হয় কবর ও মাযারকেন্দ্রিক।
যদি মীলাদুন্নবীর এ অনুষ্ঠানে অশ্লীলতা, নাচ-গান, মদের আসর না-ও থাকে তবুও তা একটি মারাতœক খারাপ কাজ। কারণ এতে থাকে শিরক। নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অপবাদ-তিনি দীনের পূর্ণতা দিয়ে যাননি- তা ছাড়া ইসলামী শরীয়ত পরিপূর্ণ নয় এধরনের ধারনা সৃষ্টি হয় এ সকল মীলাদ অনুষ্ঠান উদযাপন করার মাধ্যমে। আর এ মীলাদুন্নবী উদযাপন করা হয় ভিত্তিহীন ধারনা, জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে।
এ মীলাদুন্নবীর অসুস্থ ধারাসমূহের সার-সংক্ষেপ নিচে উল্লেখ কার হল :
১- গান-বাজনা, বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার ও যুবক-যুবতীতের একত্র হওয়া।
২- আল্লাহর কিতাবের অবমাননা করা। যেমন তার কালামের তেলাওয়াত শোনার পরপরই বিভিন্ন গান-বাজনা শুরু করে দেয়া। অথচ আল্লাহ বলেন,
২- আল্লাহর কিতাবের অবমাননা করা। যেমন তার কালামের তেলাওয়াত শোনার পরপরই বিভিন্ন গান-বাজনা শুরু করে দেয়া। অথচ আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ يَقُولُونَ رَبَّنَا آَمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
‘
আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্র“তে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য জেনেছে। তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন’। সূরা মায়েদা, আয়াত ৮৩
৩- মীলাদুন্নবীর রাতে কবর যিয়ারত করা হয়। মেয়েরা গোরস্থানে ভীড় করে থাকে।
৪- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে অনেক কবিতা ও নাত পেশ করা হয়। যাতে শিরকী কথা-বার্তা থাকে। তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। নিজের অবস্থার উন্নতির জন্য তার কাছে আরজী জানানো হয়।
৫- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী। তিনি অন্যসব মানুষের মত নন। এ ধরনের বাতিল কথা বার্তা প্রচার করা হয় মীলাদ অনুষ্ঠানে। বরং আল্লাহ তাআলা আল কুরআনের বহু স্থানে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হল তোমাদের মত একজন মানুষ। যেমন তিনি বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ
‘তুমি বলে দাও, আমি একজন মানুষ তোমাদের মতই।’ সূরা কাহাফ, আয়াত ১১০
তিনি আল্লাহর একজন বান্দা ও রাসূল। যেমন আল্লাহ নিজে তার সম্পর্কে বলেন-
তিনি আল্লাহর একজন বান্দা ও রাসূল। যেমন আল্লাহ নিজে তার সম্পর্কে বলেন-
وَأَنَّهُ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللَّهِ يَدْعُوهُ
আর যখন আল্লাহর বান্দা দাড়ান, তিনি তাঁকে ডাকেন।
তিনি আরো বলেন
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى
‘তিনি তার বান্দার কাছে যা অহী করার তা অহী করেন।’ সূরা নাজম, আয়াত ১০
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন-
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন-
إنما أنا عبد، فقولوا عبد الله ورسوله
‘আমি একজন বান্দা। তোমরা বলবে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’ তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য মানুষের মত একজন রক্ত মাংসের মানুষ। এ কথা বিশ্বাস না করা একটি কুফুরী।
৬- মীলাদ অনুষ্ঠানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানে দাড়িয়ে যাওয়া। এটা একটি গর্হিত কাজ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানে দাড়াতে নিষেধ করেছেন। অনেকে মনে করেন মীলাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রূহ বা আত্না উপস্থিত হয়ে থাকে। তাই তার সম্মানে দাড়াতে হবে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে, তিনি এভাবে সম্মানার্থে দাড়াতে নিষেধ করেছেন।
সাহাবী আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন লাঠিতে ভর করে আমাদের কাছে আসছিলেন। আমরা তাকে দেখে দাড়িয়ে গেলাম। তিনি বললেন,
لا تقوموا كما تقوم الأعاجم يعظم بعضهم بعضاً
‘অনারব লোকেরা একজনের সম্মানার্থে অন্যজন যেমন দাড়িয়ে যায় তোমরা এ রকম দাড়াবে না।’বর্ণনায় : আহমাদ, হাদীস নং ২১৬৭৭ ও আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৩০
আনাস রা. বলেন, আমরা যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখতাম তখন দাড়াতাম না। কারণ তিনি এটাকে অপছন্দ করতেন। বর্ণনায়: আহমাদ, হাদীস নং ১১৯৩৬
তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
لا تقوموا كما تقوم الأعاجم يعظم بعضهم بعضاً
‘অনারব লোকেরা একজনের সম্মানার্থে অন্যজন যেমন দাড়িয়ে যায় তোমরা এ রকম দাড়াবে না।’বর্ণনায় : আহমাদ, হাদীস নং ২১৬৭৭ ও আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২৩০
আনাস রা. বলেন, আমরা যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখতাম তখন দাড়াতাম না। কারণ তিনি এটাকে অপছন্দ করতেন। বর্ণনায়: আহমাদ, হাদীস নং ১১৯৩৬
তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ
‘নিশ্চয় তুমি মৃত্যুবরণ করবে আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে।’ সূরা যুমার, আয়াত ৩০
৭- এক সাথে সমস্বরে দরুদ পাঠ করা। এটা একটা কুসংস্কার। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তার সাহাবায়ে কেরাম কখনো এমনটি করেননি। তাদের পর কেহ এমন করেছে বলেও শোনা যায়নি।
৮- মীলাদুন্নবী বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন করা হল খৃষ্টানদের সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কাজ। খৃষ্টানেরা নবী ঈসা আ. এর জন্ম দিবস পালন করে। তাই এটা মুসলমানেরা অনুসরণ করতে পারে না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।
৯- বার রবিউল আওয়াল তারিখের রাত-কে শবে কদরের রাতের চেয়ে মর্যাদাবান বলে ধারনা করা, এ কথা প্রচার করা হয়। এটি একটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা।
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিঃ
কোন ব্যক্তির জন্ম দিবস পালন করা ইসলাম সম্মত নয়। এটা হল খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সহ বিভিন্ন অমুসলিমদের রীতি। ইসলাম কারো জন্ম দিবস পালন অনুমোদন করে না, বরং তা নিষেধ করে।
এর প্রমাণসমুহ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
কোন ব্যক্তির জন্ম দিবস পালন করা ইসলাম সম্মত নয়। এটা হল খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সহ বিভিন্ন অমুসলিমদের রীতি। ইসলাম কারো জন্ম দিবস পালন অনুমোদন করে না, বরং তা নিষেধ করে।
এর প্রমাণসমুহ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
(ক) দ্বীনে ইসলাম আজ পর্যন্ত অবিকৃত আছে এবং ইনশাআল্লাহ থাকবে। ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান নির্ধারিত ও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস বা মীলাদ পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবী প্রেমের নজীরবিহীর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাহাবায়ে কিরামদের মধ্যে কেহ এ ধরণের কাজ করেননি। তাই ঈদে-মীলাদ পালন করা বিদআত। আর বিদআত জঘন্য গুনাহের কাজ।
(খ) ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবী, তারপর খুলাফায়ে রাশেদীন ও অসংখ্য সাহাবা, মনীষী আওলিয়ায়ে কিরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালন ইসলামে সমর্থিত হয় বা সওয়াবের কাজ হত তাহলে বছরের কোন একটি দিন অবসর পাওয়া যাবে না, প্রতিদিন শত শত জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে হবে।
(গ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন ইসলামী সন যখন চালু করা হয় তখন উমর রাঃ সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন। কোন এক স্মরণীয় ঘটনার দিন থেকে একটা নতুন সন প্রবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল। কেহ কেহ প্রস্তাব করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করা যেতে পারে। উমর রাঃ এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে বললেন, এ পদ্ধতি খৃষ্টানদের। উমর রাঃ এর এ সিদ্ধান্তের সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষন করলেন। এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত থেকে ইসলামী সন গণনা আরম্ভ করলেন।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবী প্রেমিক ও তার অনুসারী। নবী প্রেমের বে-নজীর দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। তারা কখনো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিনে ঈদ বা অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা করা ভাল হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন। আর জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিলনা তা বলা যায় না। কেননা তাদের সামনেই তো খৃষ্টানরা ঈসা আঃ এর জন্মদিন ( বড়দিন) উদযাপন করত।
(ঙ) জন্ম দিবস কেন্দ্রিক উৎসব, অনুষ্ঠান খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। যেমন বড়দিন, জন্মাষ্ঠমী, বৌদ্ধপূুর্ণিমা ইত্যাদি। তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই ভাল দেখাকনা কেন তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। এ কথার সমর্থনে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি –
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
من تشبه بقوم فهو منهم
“যে ব্যক্তি কোন জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।”
আজানের প্রচলনের সময় কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রস্তাব করলেন, সালাতের সময় হলে আগুন জ্বালানো যেতে পারে। কেউ প্রস্তাব করলেন ঘন্টাধনি করা যেতে পারে। কেউ বললেন বাঁশী বাজানো যেতে পারে। কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন আগুন জ্বালানো অগ্নি পুজারী পারসিকদের রীতি। ঘন্টা বাজানো খৃষ্টানদের ও বাঁশী বাজানো মুশরিকদের রীতি।
মদীনার ইহুদীরা আশুরার দিনে একটি রোযা পালন করত। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা না হয়। হিজরী সনের প্রবর্তনের সময় অনেকে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন থেকে সন গণনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়, খৃষ্টানদের অনুকরণ হওয়ার কারণে।