কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নক্ষত্রসমূহের প্রকৃতি,বিপরীত বস্তুর উপস্থিতি ও বিচার দিবসে মহাশূন্যের সবকিছুর পরিসমাপ্তি

নক্ষত্রসমূহের প্রকৃতি

আর আমি (আল্লাহ) নিকটবর্তী আসমানকে সুসজ্জিত করেছি
‘মাসাবিহ’ (প্রদীপমালা) দিয়ে। (ফুসসিলাত, ৪১ : ১২, মূলক,
৬৭ : ০৫)
কুরআন মাজিদ মানুষকে আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহে চিন্তা-ভাবনা
করার দাওয়াত দেয়। উল্লিখিত আয়াতসমূহ নক্ষত্ররাজিকে একটি বিশেষ
পারিভাষিক শব্দ ‘মাসাবিহ’-এর মাধ্যমে নির্দেশ করছে। যার অর্থ
‘প্রদীপসমূহ’। এ ক্ষেত্রে চিন্তা করে দেখা উচিত, এটা কি নক্ষত্ররাজির
কেবল এক বাহ্যিক বর্ণনা নাকি কুরআন মাজিদ আমাদেরকে নক্ষত্রসমূহের
আনবিক ও রাসায়নিক প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে? মহাকাশ বিজ্ঞানের
সাম্প্রতিক উনড়বয়ন, বিশেষত বিগত দুই দশকের অগ্রগতি দেখিয়েছে যে,
নক্ষত্রগুলিতে এক ধরনের জ্বালানি জ্বলে আলো ও তাপ বিকিরণ করে,
যেমনটি হয়ে থাকে একটি প্রদীপে।
এটা এখন জ্ঞাত বিষয় যে, নক্ষত্রগুলো অসংখ্য অণুর সমন্বয়ে গঠিত। এই
অণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেক্ট্রনগুলো আবর্তিত হয়। ফলে নক্ষত্রগুলির
রয়েছে একটি নির্দিষ্ট Volume। আরও আছে বিচ্ছুরিত আলো ও শক্তি।
একটি নক্ষত্রের মৃত্যু মানে তার সেই আলোর শক্তি নিঃশেষিত হওয়া, যা
তার Volume নিয়ন্ত্রণ করে। মহাকাশে দুই ধরনের মহাকাশীয় অবস্থান
রয়েছে। যাদের নাম ‘শুভ্র গহ্বর’ বা কাউসার এবং কৃষ্ণ গহ্বর। প্রথমটি
অভাবনীয় পরিমাণ শক্তির উৎস। পরবর্তী অবস্থানটি হল সেই শূন্যস্থান যা
নক্ষত্রের মৃত্যুর ফলে সৃষ্টি হয়। যখন কোনো নক্ষত্রের মৃত্যু হয় তখন তা
তার মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সংকুচিত হয়ে যায়। মৃত নক্ষত্রটি আয়তনে
যত বড় হয়, তার মধ্যাকর্ষীয় সংকোচন ততই নিবিড় হয়, এমনকী তা তার
নিউক্লিয় স্তরে গিয়েই ক্ষান্ত হয় না; বরং আরো সংকুচিত হয়ে এমন এক
অবস্থায় উপনীত হয়, যাকে বলা হয় Singularity. এটি একটি কৃষ্ণ
গহ্বর তৈরি করে যা কোনোভাবেই দেখা যায় না। নক্ষত্রের আলো বিচ্ছুরণ
এবং পতনের সমগ্র প্রক্রিয়া নির্ভর করে তার শক্তির মাত্রা বা
Energy Level-এর ওপর। এটিকে সেই কারণ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে,
যার ফলে কুরআন মাজিদ এগুলিকে ‘প্রদীপসমূহ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিপরীত বস্তুর উপস্থিতি

পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সবকিছু জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন,
পৃথিবী যা উৎপন্ন করে তা থেকে, তাদের (মানুষের) নিজেদের
মধ্য থেকে এবং সেসব কিছু থেকেও যা তারা জানে না। (ইয়াসিন,
৩৬ : ৩৬)
বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবী বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উৎপাদন করে।
বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রত্যেক খনিজ পদার্থই হয়ত
ধনাত্মক কিংবা ঋনাত্মক আধান (Charge) বিশিষ্ট অতি পারমাণবিক
কণিকা দ্বারা গঠিত। কুরআন মাজিদে এই সত্যটি অবতীর্ণ হয়েছে এই বলে,
পৃথিবী থেকে উৎপাদিত সকল বস্তুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
খনিজ পদার্থের পাশাপাশি এমনকি পানিও যা পৃথিবী উৎপাদন করে, তাও
বিপরীতধর্মী যৌগমূল দ্বারা গঠিত। পানি গঠিত হয় দুটি বিপরীতধর্মী
উপাদনা দ্বারা। একটি ধনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট হাইড্রোজেন অনু এবং
অপরটি ঋনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট অক্সিজেন অনু।
অধিকন্তু পৃথিবী থেকে উৎপন্ন জোড়া জোড়া বস্তুসমূহ আরও অন্তর্ভুক্ত করতে
পারে সেসব সমজাতীয় জোড়া, যা তাদের দৈহিক ও রাসায়নিক ধর্মের
ক্ষেত্রে ভিনড়ব ভিনড়ব। যেমন- ধাতু ও অধাতু। অনুরূপ বিপরীতধর্মী
উপাদানবিশিষ্ট জোড়া যেমন, ধনাত্মক ও ঋনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট আয়ন
থেকে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক বৈদ্যুতিক উপাদানসমূহ চৌম্বকীয় বিপরীতধর্মী
জোড়া, যেমন- চুম্বকের উত্তরপ্রান্ত ও দক্ষিণপ্রান্ত, আকর্ষণ ও বিকর্ষণ শক্তি,
তেমনিভাবে কেন্দ্রনির্গত শক্তির মাধ্যমে মধ্যাকর্ষণ ভারসাম্য ইত্যাদি।
মানবিক জোড়ার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে- পুরুষ ও মহিলার লিঙ্গভেদ,
পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রকাশক গুণ, যেমন- নিষ্ঠুরতা ও পরদুঃখ কাতরতা, সাহস
ও ভয়, উদারতা ও কৃপণতা ইত্যাদি। অতঃপর যে কেউ সহজে উপসংহারে
আসতে পারে যে, জোড়ার রহস্য পুরুষ ও মহিলা কিংবা বিপরীত বৈদ্যুতিক
উপাদান ও বিপরীতধর্মী গুণ মানব জাতিসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক বিষয় ও
শক্তিসমূহের মধ্যে বিদ্যমান। এ কথা উপরোক্ত কুরআনি আয়াতে
পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। এখন আমরা নিজেদেরকে আরো একবার প্রশ্ন
করি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত একজন মানুষ যিনি
না লিখতে পারতেন, না পড়তে। এমনকি যিনি নিজের নামটি পর্যন্ত স্বাক্ষর
করতে পারতেন না, তিনি কি কুরআন মাজিদের গ্রন্থকার হতে পারেন? না
তা এমন একটি গ্রন্থ যা সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর
ওপর অবতীর্ণ হয়েছে?
বিচার দিবসে মহাশূন্যের সবকিছুর পরিসমাপ্তি

আর (যখন) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। আসমানসমূহে (মহাশূন্যে)
যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলে বেহুঁশ হয়ে পড়বে,
তবে আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ইচ্ছে করেন। অতঃপর আবার
যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
(যুমার, ৩৯ : ৬৮)
যখন কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছিল তখন কেউ জানত না, মানুষ
একদিন আকাশে উড়বে, এমনকি মহাকাশে স্টেশন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করবে।
একজন নাস্তিক এ কথা বলে কুরআন মাজিদকে নিয়ে বিদ্রুপ করেছিল যে,
যখন বিচার দিবস কায়েম হবে, পৃথিবীতে যারা আছে তারা মৃত্যু বরণ
করবে; কিন্তু যারা মহাশূন্যে আছে তারা এই প্রলয় থেকে নিরাপদ থাকবে।
কুরআন মাজিদ এই আয়াতে দু’টি বিষয়ের ভবিষ্যতবাণী করেছে। প্রথমত,
এমন একদিন আসবে যেদিন মানুষ আকাশে উড়বে এবং মহাশূন্যে বসবাস
করবে। দ্বিতীয়ত, যখন বিচার দিবস কায়েম হবে, যারা মহাশূন্যে থাকবে
তারা মৃত্যু বরণ করবে, যারা পৃথিবী-পৃষ্ঠে থাকবে তাদের মতোই। আবারও
আমরা কুরআন মাজিদের প্রতিটি শব্দে বিস্ময়কর জ্ঞানগভীরতা প্রত্যক্ষ
করি।
অতিক্রান্ত পৃষ্ঠাগুলি প্রাকৃতিক রহস্যের বহু প্রত্যক্ষণ প্রদান করে। এই
প্রত্যক্ষণগুলি মানব-জাতির পূর্ববর্তী প্রজন্মের কাছে রহস্য বলে বিবেচিত
হত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চৌদ্দশ বছরের অগ্রগতি ও উন্নতি এই
প্রত্যক্ষণগুলিকে এখন প্রকৃতির রহস্য নয়, বরং বাস্তব সত্য হিসেবে
প্রমাণিত করেছে। স্মর্তব্য, এই প্রত্যক্ষণগুলি মানবজাতির কাছে প্রদত্ত
হয়েছে একজন নিরক্ষর মানুষ তথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর মাধ্যমে, যিনি লিখতে পড়তে জানতেন না। নাস্তিকরা বলে, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন মাজিদে এ সকল প্রত্যক্ষণ
লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর তীব্র কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। পক্ষান্তরে
ইহুদি ও খৃস্টানরা অভিযোগ করে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এসব বিষয় বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) ও নতুন নিয়ম
(New Testament) থেকে নকল করেছেন।
তবে বাস্তবতা হল এই প্রত্যক্ষণগুলি, এমনকি সেই সময়ের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট
নয়, যখন কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছিল। অধিকন্তু এই প্রত্যক্ষণগুলো
না পুরাতন নিয়মে বিদ্যমান, আর না নতুন নিয়মে। অতএব কারও মনে
প্রশ্ন জাগতে পারে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই
জ্ঞানের উৎস কী? তিনি কি এ সকল প্রত্যক্ষণ তাঁর তীব্র চিন্তা ও
কল্পনা শক্তি ব্যবহার করে রচনা করেছিলেন, নাকি তা সর্বজ্ঞাতা ও
সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল?
তার যথার্থ উত্তর হল,আল্লাহ তাআলা এসব সত্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ করেছেন।

‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে চাক্ষুষ নিদর্শনাবলি এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ
থেকে। অতএব যে দেখবে (সত্য) তবে তা হবে তার নিজের (কল্যাণের)
জন্যেই। আর যে অন্ধ সাজবে তবে তা (তার অনিষ্টতা) তার ওপরই
(বর্তাবে)। আর বলুন, (হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি
(এখানে) তোমাদের ওপর সংরক্ষক নই। (চাই তোমরা এই সত্যকে গ্রহণ
কর কিংবা প্রত্যাখ্যান কর)।’ (আনআম, ০৬ : ১০৪)
মূলঃ আল-কুর’আনের ১৬০ মুজিজা ও রহস্য

বিজ্ঞান ও কুরআনে মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর

কুরআন শরীফ মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনা করেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
অর্থাৎ, আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরুপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুনরুপে দাড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টি কর্তা কতই না কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনুন: ১২-১৪)
আরবী ” الْعَلَقَةَ ” (আলাকা) শব্দের তিনটি অর্থ রয়েছে।
১. জোক
২. সংযুক্ত জিনিস
৩. রক্তপিন্ড
আমরা যদি জোককে গর্ভস্থ সন্তানের সাথে মেলাতে যাই তাহলে,আমরা দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই। নিচের ১ নং ছবিতে সেটা স্পষ্ট। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) এ অবস্থায় জোক যেমন অন্যের রক্ত খায় তেমনি উক্ত ভ্রুন তার মায়ের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। (কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৬)
দ্বিতীয় অর্থের আলোকে আমরা যদি তাকে “সংযুক্ত জিনিস” অর্থে নিই তাহলে দেখতে পাই যে,গর্ভস্থ ভ্রুন মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে আছে। (২নং ও ৩ নং চিত্র দ্রষ্টব্য)
তৃতীয় অর্থের আলোকে আমরা উক্ত শব্দের “রক্তপিন্ড” অর্থ গ্রহণ করলে দেখতে পাব যে, তার বাহ্যিক অবস্থা ও তার সংরক্ষিত খাচা (আবরণ) রক্ত পিন্ডের মতই দেখায়। উক্ত অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বর্তমান থাকে।(কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৭ ও ৩৮) (৪র্থ চিত্র দ্রষ্টব্য)
এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত হয় না। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ,পৃষ্ঠা-৬৫) সুতরাং, বলা যায়- এ অবস্থা রক্তপিন্ডের মতই।
চিত্র-১
1
চিত্রে জোক ও মানব ভ্রুনকে একই রকম দেখা যাচ্ছে।
(জোকের ছবিটি কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য, গ্রন্থের ৩৭ নং পৃষ্ঠা থেকে নেয়া হয়েছে যা হিলমান ও অন্যান্যদের প্রণিত “পুর্ণাংগ মৌলিক জীব” গ্রন্থ থেকে সংশোধিত হয়েছে এবং মানব দেহের চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৭৩ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-২
2
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে উক্ত ভ্রুনটি মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে রয়েছে। (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৬৬ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-৩
3
এ চিত্রে দেখা যাচ্ছে B চিহ্নিত ভ্রুনটি মাতৃগর্ভে লেপ্টে আছে। এর বয়স মাত্র ১৫ দিন। আয়তন-০.৬ মি.মি. (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৩য় সংস্করণ, ৬৬ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে যা সংকলিত হয়েছে লেসন এন্ড লেসনের হিস্টোলজী গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে)
চিত্র-৪
4
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে ভ্রুন ও তার আবরণকে প্রচুর রক্ত থাকার কারণে রক্ত পিন্ডের মতই দেখাচ্ছে। (চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৬৫ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
উক্ত “আলাকা” শব্দের তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুনের বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে।
কুরআন শরীফের আয়াতে উল্লেখিত ভ্রুনের ২য় স্তর হল-” مُضْغَةً” (মুদগাহ)। مُضْغَةً হল চর্বিত দ্রব্য। যদি কেউ ১ টুকরা লোবান নিয়ে দাতে চর্বন করার পর তাকে ভ্রুনের সাথে তুলনা করতে যায় তাহলে, দেখতে পাবে দাতে চর্বন করার পর উক্ত দ্রব্য যেমন দেখায় সেটার সাথে ভ্রুনের হুবহু মিল রয়েছে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) (৫ ও ৬ নং চিত্র দ্রষ্টব্য)
আজ বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে এগুলো আবিস্কার করেছে কুরআন নাযিল হওয়ার দেড় হাজার বছর পর। তাহলে, এত কিছু জানা মুহাম্মদ(সাঃ)এর জন্য কেমন করে সম্ভব ঐ সময়ে যখন এ সবের কিছুই আবিস্কৃত হয়নি?
চিত্র-৫
5
এই চিত্রটি ২৮ দিন বয়সের (মুদগাহ স্তরের) ভ্রুনের চিত্র। উক্ত চিত্রটি দাত দ্বারা চর্বিত লোবানের মতই দেখাচ্ছে।(চিত্রটি “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, ৭২ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
চিত্র-৬
6
চিত্রে চর্বিত লোবান ও ভ্রুনের চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। আমরা উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই।উপরের চিত্র A তে আমরা ভ্রুনের গায়ে দাতের মত চিহ্ন এবং চিত্র B তে চর্বিত লোবান দেখতে পাচ্ছি।
১৬৭৭ খৃষ্টাব্দে হাম ও লিউয়েনহোক নামক দুই বিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষের বীর্যের মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব (Spermatozoma) খুজে পান রাসুল(সাঃ) এর যুগের এক সহস্রাধিক বছর পর। এ দুইজন বিজ্ঞানীই আগে ভূলক্রমে বিশ্বাস করেছিলেন যে, মানুষের বীর্যের মধ্যে উক্ত কোষের রয়েছে অতি সামান্য প্রক্রিয়া। নারীর ডিম্বানুতে আসার পর তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৯)
আর প্রফেসর কেইথ এল. মুর বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ ভ্রুন বিজ্ঞানী এবং “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি” গ্রন্থের লেখক;যা বিশ্বের আটটি ভাষায় ছাপা হয়েছে।এটা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই।এ বইটি আমেরিকার বিশিষ্ট্য একটি গবেষণা বোর্ড কর্তৃক কোন একক লেখকের শ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
কেইথ এল.মুর হচ্ছেন কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা ও কোষ বিভাগের প্রফসর।তিনি ওখানে মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অধীনে মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী ডীন হিসেবে এবং আট বছর শরীরবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি কানাডায় শরীরবিদ্যা বিভাগের উপর কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখার জন্য কানাডার শরীরবিদ্যা বোর্ডের পক্ষ থেকে J.C.B পুরস্কার পেয়েছিলেন।এছাড়া তিনি “কানাডিয়ান এন্ড এমেরিকান এসোসিয়শন এবং দি কাউন্সিল অফ দি ইউনিয়ন অফ বাইয়োলজিকাল সাইন্স” সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮১ সালে সউদীর দাম্মামে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল সেমিনারে তিনি বলেন:আমার জন্য এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে, আমি মানব শরীরের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে কুরআন শরীফের সহায়তা নিতাম।আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,এ বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।কেননা,এ সকল বিষয়ের প্রায় সব কিছুই তার ইন্তেকালের কয়েকশত বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে।এ ব্যাপারটি প্রমাণ করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহ তায়ালার সত্য নবী।(“হাজিহী হিয়াল হাকিকাহ তথা এটাই সত্য” নামক ভিডিও ডকুমেন্টারী থেকে সংগৃহীত)
এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হল- তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায়-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী? তিনি জবাব দিলেন:”আমি এ কথা মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করি না।”
প্রফেসর মুর একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন:”কুরআন ও হাদীসে মানবভ্রুনের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সময়কার বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভিন্ন নামে ভাগ করেছে।”এর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত চমৎকার ও বিস্তৃত অর্থ নির্দেশ করে থাকে।যা আধুনিক শরীর বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে সংগতিপূর্ণ।বিগত চার বছরে সপ্তম শতাব্দীতে নাযিলকৃত কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানবভ্রুন নিয়ে গবেষণা করে বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে।
এরিস্টোটল ভ্রুন বিদ্যার জনক হওয়া সত্বেও খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মুরগীর ডিমের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে,মুরগীর বাচ্চার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্তরে।তবে, তিনি স্তরগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেন নি।ধরে নেয়া যায় যে,কুরআন নাযিলের সময় খুব কমই জানা ছিল ভ্রুনের স্তরগুলো সম্বন্ধে;যা সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কোন কিছুর উপর নির্ভর করে তা জানার সুযোগ ছিল না।
এখানে এসে শুধু একটি মাত্র নির্ভরযোগ্য ফলাফলে আসা যায় যে, এসমস্ত জ্ঞান মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসেছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। কারণ, তিনি ছিলেন নিরক্ষর তার এগুলো জানার কথা ছিল না। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে তার মত নিরক্ষর লোককে যে ট্রেনিং দেয়া হবে তাও ছিল অসম্ভব। (ভিডিও ডকুমেন্টারী “হাজিজি হিয়াল হাকীকাত” থেকে)
অনুবাদ : মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ
সম্পাদনা : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান: শেখ আবদুর রহিম গ্রীন


কুরআন হচ্ছে শেষ ওহী এবং একটি প্রমাণ, যা শুধু চৌদ্দশত বৎসর আগের আরবদের জন্য নয়, আজকের বিজ্ঞানীদের জন্যও। যারা বিংশ শতাব্দীতে বাস করছে-যা খুব শীগগিরই একবিংশ শতাব্দী হয়ে যাবে, তাদের জন্য কুরআনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হয়তোবা এটা যে, আধুনিক বিজ্ঞানের অধিকাংশ আবিষ্কার ও কুরআন পরস্পর সঙ্গতিপূর্ণ, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আগের ধারণাকৃত বহু বিষয় গত বিশ বৎসরে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রণী পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মরিস বুকাইলী, যিনি গভীর অধ্যয়নের ফলস্বরূপ ‘বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক একটি বই লিখেছেন। এ বইয়ে তিনি প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে প্রাপ্ত বাইবেল ও কুরআনের বক্তব্য তুলনা করেছেন। বিচার-বিশ্লেষণের পরে তাঁর সিদ্ধান্ত হচ্ছে: 

“পূর্ববর্তী দুটি ঐশীবাণী অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিলের পর কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের বাণীসমূহ যে শুধুমাত্র স্ববিরোধিতা থেকেই মুক্ত তা নয়, বাইবেলের মত এতে মানুষের কোন হস্তক্ষেপের প্রমাণ নেই। কেউ যদি নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর বক্তব্যসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চায়, তাহলে দেখতে পাবে যে তা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তদুপরি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বক্তব্য ও বাণী সেখানে রয়েছে। তারপরও এটা অচিন্তনীয় যে মুহাম্মাদের সময়ের একজন মানুষ এর রচয়িতা হতে পারে।
এতকাল যাবত যে সব আয়াতের বক্তব্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না, আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমাদেরকে সে সবের অর্থ বোঝার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। একই বিষয়ে বাইবেল ও কুরআনের বক্তব্যের তুলনা করলে কিছু মৌলিক পার্থক্য ধরা পড়ে। বাইবেলের বর্ণনা যেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, সেখানে কুরআনের বর্ণনা আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রাপ্ত জ্ঞান ও তথ্যের আলোকে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণ হিসাবে সৃষ্টিতত্ত্ব  মহাপ্লাবনের বিষয নেওয়া যেতে পারে। ইহুদীদের মিসর-ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় কুরআন বাইবেলের সম্পূরক। যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে দেখা গেছে, মূসার আমলকে চিহ্নিত করা যায় এমন সব নিদর্শন কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনার মিল প্রমাণ করছে। এছাড়া অন্য সব বিষয়ে এই দুই গ্রন্থের পার্থক্য বিরাট। যা আসলে এতদিন যাবত মুহাম্মাদ সম্পর্কে চলে আসা এই অভিযোগকেই খণ্ডন করছে যে তিনি কুরআন রচনা করেছেন বাইবেল থেকে নকল করে, কোন প্রমাণ দেওয়া ছাড়াই এসব অভিযোগ করা হতো।
মুহাম্মাদের আমলের জ্ঞানের উৎকর্ষতার আলোকে এটা ধারণাতীত যে কুরআনের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বক্তব্য কোন মানুষের করা। সুতরাং এটা স্বীকার করে নেওয়া অত্যন্ত যথাযথ যে কুরআন শুধু অবতীর্ণ কিতাব নয়, বরং এর সঠিকত্বের নিশ্চয়তার জন্য এবং এতে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তথ্যের জন্য একে বিশেষ মর্যাদার স্থান দেওয়া উচিত, কারণ কুরআনের অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা একথাই প্রমাণ করে যে এর কোন মানবিক ব্যাখ্যা অসম্ভব।”
আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত কিছু বক্তব্য
  • ১। ভ্রূণসৃষ্টি ও এর বিকাশ সম্পর্কিত যথাযথ বর্ণনা:নবী মুহাম্মাদের সময়ে এ সম্পর্কে বিরাজমান তত্ত্বের ভিতরে এরিস্টটলের এই ধারণা অন্তর্ভুক্ত ছিলো যে একটি শিশু রক্তের জমাট বাঁধা অবস্থা থেকে সৃষ্ট, যেভাবে পনীর তৈরী হয়। আঠারশ শতাব্দীতে হার্টসিকার দাবী করেন যে তিনি আদি মাইক্রোস্কোপ-এর সাহায্যে স্পার্ম এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে গঠিত মানুষ দেখতে পেয়েছেন। কুরআন এসব কিছুই বলছে না, বরং মানবের ভ্রূণাবস্থার বিকাশের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা দিচ্ছে:

    “আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি, পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট রক্তে, অতঃপর জমাট রক্তকে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিপিঞ্জরে, অতঃপর অস্থিপিঞ্জরকে মাংস দ্বারা ঢেকে দিই, অবশেষে তাকে রূপ দান করি। সুনিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।” (সূরা আল মু’মিনুন, ২৩, ১২-১৬)

    নবী (সঃ) আরো ব্যাখ্যা করেন যে “নুতফা” পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণু উভয়টিকেই বোঝায়। “আলাকা” শব্দটির তিনটি অর্থ আছে আরবীতে: (১) আঁকড়ে থাকা বস্তু, (২) জমাট রক্তবিন্দু, (৩) জোঁকের মত বস্তু। তিনটি অর্থই বিকাশমান ভ্রূণের প্রথম ধাপকে সঠিকভাবে বর্ণনা করে। নিষিক্ত ডিম্বাণু এমন হয় যে তা জরায়ূর দেওয়াল আঁকড়ে ধরে রাখে। তারপর আকার ও আচরণের দিক থেকে সেটা জোঁকের সাদৃশ্য অবলম্বন করে। জোঁক এবং ভ্রূণ উভয়েই রক্ত শোষণ করে। এটা জমাট রক্তবিন্দুর মতও হয়ে থাকে। পরবর্তী স্তরে এটা চিবানো-বস্তুর মত হয় দেখতে, এটাও সঠিক। এটাও সত্যি যে পেশী ও মাংসের পূর্বে অস্থি তৈরী হয়। রাসূলের হাদীসে এসেছে:

    “যখন বিয়াল্লিশ দিন পার হয়, আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান যখন সে ভ্রূণকে আকার দান করে, এর কান, চোখ, চামড়া, মাংস এবং হাড় তৈরী করে। তারপর সে জানতে চায়, “হে রব, এটা কি পুরুষ অথবা নারী? এবং তোমাদের প্রভু স্থির করেন যা তিনি চান এবং তখন ফেরেশতারা তা লিখে নেয়।”
    এই যথাযথ তথ্য বর্ণিত দিকগুলির বিকাশের সঠিক সময় জানাচ্ছে এবং ভ্রূণের লিঙ্গ ঠিক বিয়াল্লিশ দিনের পূর্বে সুনিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব নয়। মাত্র কয়েক দশক পূর্বেও শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের আগে এটা জানা সম্ভব ছিল না। শীর্ষস্থানীয় ভ্রূণতত্ত্ববিদগণের অন্যতম কিথ মুর, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, কুরআনের এই সমস্ত বক্তব্য ও সহীহ হাদীসের বক্তব্য সম্পর্কে বলেন,

    “উনিশ শতক পর্যন্ত, মানবীয় বিকাশের ধাপগুলি সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না। উনিশ শতকের শেষ দিকে বর্ণমালার প্রতীকের উপর ভিত্তি করে মানব ভ্রূণের বিকাশের বিভিন্ন ধাপ চিহ্নিত করা হয়। বিশ শতকে সংখ্যার সাহায্যে এর ২৩টি ধাপ বর্ণনা করা হয়। এই সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করা সহজ নয় এবং একটি ভালো পদ্ধতি হবে অঙ্গসংস্থান বিদ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা পদ্ধতি। সামপ্রতিককালে কুরআনের অধ্যয়নের ফলে ভ্রূণবিকাশের বিভিন্ন ধাপ চিহ্নিতকরণের আর একটি পদ্ধতি প্রকাশিত হয়েছে যা এর সহজবোধ্য আকৃতির পরিবর্তন ও নড়াচড়ার উপর ভিত্তি করে তৈরী। এখানে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আল্লাহ জিবরাইলের মাধ্যমে রাসূল (সঃ) কে জানিয়েছেন এবং তা কুরআনে লিপিবদ্ধ হয়েছে…. এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে এসব বক্তব্য নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছ থেকে মুহাম্মাদ (সঃ) এঁর কাছে এসেছে কারণ এই জ্ঞানের প্রায় সবটুকুই অবিষ্কৃত হয়েছে এর বহু শতক পরে। এটা আমার কাছে প্রমাণ করছে যে মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল।”
    ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান এবং ফিলাডেলফিয়ার টমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল বাও ইনস্টিটিউটের পরিচালক মার্শাল জনসন বলেন,

    “বিজ্ঞানী হিসাবে আমি সেসব বস্তু নিয়ে কাজ করি যা আমি নির্দিষ্টভাবে দেখতে পারি। আমি ভ্রূণতত্ত্ব এবং ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বুঝতে পারি। আমি কুরআনে যে শব্দগুলি আমার কাছে অনুবাদ করে দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে পারি। আমাকে যদি আমার আজকের জ্ঞান ও বর্ণনার যোগ্যতা সহকারে সেই যুগে স্থানান্তর করা হয়, আমি ব্যাপারগুলি যেভাবে বর্ণনা করা আছে সেভাবে বর্ণনা করতে পারব না। আমি এটা প্রত্যাখ্যানের কোন কারণ দেখি না যে মুহাম্মাদ এই তথ্য অন্য কোথাও থেকে পেয়েছেন, সুতরাং আমি এই ধারণার সাথেও সাংঘর্ষিক কিছু দেখতে পাই না যে তিনি যা বলেছেন তাতে ঐশী হস্তক্ষেপ রয়েছে।”
  • ২। মহাকাশবিজ্ঞান:

    “অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম; এবং জীবন্ত সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” (সূরা আল আম্বিয়া, ২১:৩০)
    এই আয়াতটি বিশ্বের উৎপত্তির সাধারণ তত্ত্ব বর্ণনা করছে, যে সত্য আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার সূচনার আগে আবিষ্কৃত হয়নি। এখানে যে পৃথক করার বলা হয়েছে তা বিজ্ঞানীদের কথিত “বিগ-ব্যাং” তত্ত্বের অনুরূপ। তাছাড়া, সমস্ত জীবিত প্রাণী প্রটোপ্লাজম দিয়ে তৈরী যার ৮০-৮৫% ভাগই পানি।

    “অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আমার আদেশ পালনের জন্য ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় প্রস্তুত হও।’ তারা বলল, ‘আমরা তো অনুগত থাকতে পস্তুত আছি।” (সূরা আল ফুসসিলাত, ৪১:১১)
    এখানে ধূম্রপুঞ্জ শব্দটি বিশ্বের আদিম অবস্থার সঠিক বর্ণনা দিচ্ছে, যা ছিল গরম গ্যাসের পিণ্ড যাতে বস্তুকণা দ্রুত ছোটাছুটি করছে, ধোঁয়ার মত। এ থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও পৃথিবী তৈরী হয়।

    “আমি আমার ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমিই একে সমপ্রসারিত করছি।” (সূরা আয যারিয়াত, ৫১:৪৭)
    এটা একটা স্বীকৃত সত্য যে আমরা যে বিশ্বে বাস করছি তা সমপ্রসারণশীল। “আল্লাহই দিন এবং রাত তৈরী করেছেন, এবং চাঁদ ও সূর্য। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গতিতে কক্ষপথে সাঁতার কাটছে/ঘুরছে।”
    নিজ গতিতে চলার জন্য যে আরবী শব্দ ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে সাবাহাহ্‌ (এই আয়াতে ইয়াসবিহুনা)। এটা এমন গতি নির্দেশ করছে যা বস্তুর নিজের। যদি এটা পানিতে ঘটত, তাহলে এটা হত সাঁতার কাটা; এটা সেই নড়াচড়া যা একজনের পায়ের মাধ্যমে হয়। মহাশূন্যে নড়াচড়ার সময় এটা হবে নিজের অক্ষের উপর ঘুরে যাওয়া। সূর্য নিজের কক্ষপথে পৃথিবীর চারপাশে নয়, বরং ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘোরে, সুতরাং এখানে কোন বৈপরীত্য নেই, কারণ কুরআন সূর্যের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করেনি।

    “তুমি কি দেখ না আল্লাহ রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করেন?” (সূরা আল লুকমান, ৩১:২৯) “তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।” (সূরা আয যুমার, ৩৯:৫)
    পেঁচানো বা জড়ানো আরবী শব্দ কাওওয়াররার অনুবাদ। এর মূল অর্থ হচ্ছে মাথার চারপাশে পাগড়ী পেঁচিয়ে বাঁধা। অবিরত পেঁচানোর পদ্ধতি-যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, কুরআনে এমনভাবে বলা হয়েছে যে মনে হয় সে সময়ে পৃথিবীর গোলাকৃতি হওয়ার ধারণার সাথে মানুষ পরিচিত ছিল, যা স্পষ্টতঃই সত্য নয়।

    “তিনিই সূর্যকে তেজষ্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার তিথি নির্দিষ্ট করেছেন…” (সূরা ইউনুস, ১০:৫)
    কুরআনে সূর্যকে “সিরাজ” হিসাবে বলা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে “মশাল” যা নিজের তাপ ও আলো উৎপন্ন করে যেখানে চন্দ্রকে “নূর” বা আলো হিসাবে বলা হয়েছে যার অর্থ অন্য উৎস থেকে নেয়া আলোর আভা।
  • ৩। ভূতত্ত্ব:

    “আমি কি ভূমিকে বিছানা ও পর্বতকে কীলক সদৃশ করিনি?” (সূরা আন নাবা’, ৭৮:৬-৭)“আল্লাহই পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যাতে এ তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে।” (সূরা আল লুকমান, ৩১:১০)
    সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে যে পর্বতমালার মূল ভূত্বকের ভিতরে চলে গেছে যা সাতটি টেকটোনিক প্লেট দিয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলির নড়াচড়াই ভূমিকম্পের কারণ। এটা ধারণা করা হচ্ছে যে এই মূল ও পর্বতের ওজন ভূত্বকের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ৪। প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত: কুরআনের ষষ্ঠতম পারায় বলা আছে যে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি; যদিও এটা সাধারণ ধারণা যে মৌমাছিরা সৈনিক এবং তারা রাজার অধীন। কুরআনে আরো বলা আছে যে উদ্ভিদের মাঝেও স্ত্রীপুরুষ রয়েছে এবং বায়ুর সাহায্যেও উদ্ভিদের প্রজনন ঘটে থাকে।

    “আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি।” (সূরা আল হিজর, ১৫:২২)
    এগুলি সবই সামপ্রতিককালে আবিষ্কৃত হয়েছে।
  • ৫। পরমাণু বিজ্ঞান: গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (৪৬০-৩৬১ খৃ.পূ.) এই তত্ত্বের উদ্‌গাতা যে বস্তু ছোট অবিভাজ্য কণা দিয়ে তৈরী, যার নাম এটম। আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে এটম আছে, তবে তা বিভাজ্য। কুরআন বলছে:

    “তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অণু-পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু যাঁর অগোচর নয়।” (সূরা সাবা, ৩৪:৩)
  • ৬। ত্বক বিজ্ঞান:

    “মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না? বস্তুত আমি তার অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” (সূরা আল ক্বিয়ামাহ, ৭৫:৩-৪)
    কোন দুটি আঙ্গুলের ছাপ একরকম নয়। [সংকলক – দুইটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ এক রকম না হওয়ায়, এই বৈশিষ্ট্যকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকাশন নামে অন্যতম সিকিউরিটি অথেন্টিক্যাশেন মেথড হিসেবে বর্তমানে ব্যবহত হচ্ছে।] এই আয়াতে আমাদের পুনর্জীবিত করার আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে যা সবচেয়ে একক ও স্বতন্ত্র অঙ্গ পর্যন্ত করা হবে।

    “যারা আমার আয়াতকে অবিশ্বাস করে তাদের আগুনে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আন নিসা, ৪:৫৬)
    যেসব স্নায়ুপ্রান্ত বেদনা বোধ করে তা চামড়ায় রয়েছে। যখন চামড়া মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়, তখন স্নায়ুপ্রান্ত ধ্বংস হয়ে যায় ও বেদনা আর টের পাওয়া যায় না। জাহান্নামে আল্লাহ পুনরায় চামড়া সৃষ্টি করবেন যাতে তার অধিবাসীরা স্থায়ীভাবে তীব্র ব্যথা অনুভব করে।

    “নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য; গলিত তাম্রের মত তা উদরে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত।’ ‘আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। তোমরা তো এ শাস্তি সম্পর্কে সন্দিহান ছিলে।’ (সূরা আদ দুখান, ৪৪:৪৩-৫০)
    “…এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভুড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।” (সূরা মুহাম্মাদ, ৪৭:১৫)
    অন্ত্রে তাপ বহনকারী ধারক থাকে না। এটা জানা আছে যে, যদি নাড়িভুঁড়ি কেটে যায় তাহলে এর ভিতরের উপাদানসমূহ উচ্চ সংবেদনশীল পেরিটোনিয়া ক্যাভিটিতে চলে যায়, যেখানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এটা বর্তমানের প্রচলিত জ্ঞান নয়, মুহাম্মাদের সময়ের তো নয়ই। সে যাই হোক, কুরআনের রচয়িতা এসব সত্যের সাথে সুপরিচিত!
  • ৭। পানি চক্র: কুরআনে সঠিকভাবে পানি চক্রের বর্ণনা দেওয়া আছে এবং ভূগর্ভের ঝরণার পানির উৎস হিসাবে বৃষ্টির পানিকে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক প্রতীয়মান হলেও গ্রীক দার্শনিকগণ এটা মনে করতেন না, তাঁরা ভাবতেন মাটির তলার ঝর্ণাধারা তৈরী হত সমুদ্রের পানির ধারা গুহায় জমে গিয়ে, যা বিরাট পাতালের সমুদ্রে গহ্বরের মাধ্যমে সরবরাহ হতো। আসলে অষ্টাদশ শতকের পূর্বে পানি চক্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ কুরআন এদিকে বলছে,

    “তুমি কি দেখনা, আল্লাহ আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করেন, অতঃপর ভূমিতে স্রোতরূপে প্রবাহিত করেন?” (সূরা আয যুমার, ৩৯:২১)
    সংক্ষিপ্ত রাখতে গিয়ে আমি শুধু কয়েকটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছি এবং বিজ্ঞান বিষয়ক কুরআনের বক্তব্যের ও হাদীসের বর্ণনার সীমাবদ্ধ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছি। কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রির এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান টি.ভি.এন পারসাদ বলেছেন,

    “মুহাম্মাদ একজন সাধারণ লোক ছিলেন, তিনি পড়তে জানতেন না, লিখতে পারতেন না, আসলে তিনি নিরক্ষর ছিলেন…আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করছি তা হল যে চৌদ্দশত বছর পূর্বে কিছু নিরক্ষর লোক গভীর কিছু উচ্চারণ করেছিল ও বক্তব্য দিয়েছিল যা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে পারি না এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা কিভাবে হতে পারে, এতে অসংখ্য অত্যন্ত সঠিক ব্যাপার রয়েছে… আমার মনে কোন সংশয় নেই এই সত্য স্বীকার করতে যে কোন ঐশী প্রেরণা বা ওহী তাঁকে এই বক্তব্যগুলি দিতে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা যেন ড. মরিস বুকাইলির কথাগুলি ভুলে না যাই যে এই সত্যগুলো “মানবীয়ভাবে ব্যাখ্যার ব্যাপারে একটি চ্যালেঞ্জ।”
    এবং প্রফেসর পারসাদ এর বিবৃতি যে এটা হঠাৎ ঘটে যেতে পারে না, এখানে অসংখ্য সঠিক তথ্য রয়েছে! মুহাম্মাদের জন্য অনুমান করা এবং প্রতিটি সঠিক হওয়ার সম্ভাব্যতা আসলেই বিস্ময়কর। এ সমস্ত বিজ্ঞানীরা, যাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপরিচিত, সেই আরবদের মত যারা তাদের ভাষা পাণ্ডিত্য সহকারে আয়ত্ব করেছিল মুহাম্মাদের সময়ে, স্পষ্ট প্রমাণ চিনতে পারেন এবং কুরআনের প্রকৃতির অলৌকিকত্ব অনুধাবন করতে পারেন। “আমরা তাদেরকে আমাদের নিদর্শন দেখাবো দূর দিগন্তে এবং তাদের মধ্যে যতক্ষণ না তারা জানতে পারে যে এটাই সত্য।”
কুরআন বাহ্যিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং আভ্যন্তরীণের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য রয়েছে আসলে মানুষের কাজের প্রকৃতিতে, তা তারা বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাধু অথবা সূফী যাই হোক না কেন। এটা ঐশী ওহীর জন্য সত্য হতে পারে না, যেমন কুরআন বলছে, “তারা কি সতর্কতার সাথে কুরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না, যদি এটা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছ থেকে হতো, তারা এতে বহু অসামঞ্জস্য খুঁজে পেতো।

কুরআন মাজিদে সন্দেহের একটি ছায়া খুঁজে দেখাও


এই সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকিদের (যারা
আল্লাহর প্রতি তাদের করণীয়সমূহ সম্পর্কে সচেতন তাদের) জন্য
হেদায়াত। (বাকারা, ০২ : ০২)

আর আমি আমার বান্দার ওপর (কুরআন মাজিদে) বিভিন্ন সময়ে
যা নাজিল করেছি যদি তোমরা সে সম্পকের্ সন্দেহে থাক তবে
তোমরা তার মত একটি ‘সুরা’ নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া
তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক; যদি তোমরা (তোমাদের সন্দেহের
ক্ষেত্রে) সত্যবাদী হও। (বাকারা, ০২ : ২৩)

এই কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা
করতে পারবে; বরং এটি যা (যে ওহি) তার সামনে, তার সত্যায়ন
এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, যা
সৃষ্টিকুলেন রবের পক্ষ থেকে। (ইউনুস, ১০ : ৩৭)

এ কিতাব সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এতে কোনো
সন্দেহ নাই। (সাজদাহ, ৩২ : ০২)
লক্ষণীয় বিষয় হল, এই আয়াতগুলি কাফিরদেরকে কুরআন মাজিদের ভুলত্রুটি,
অসঙ্গতি কিংবা অনৈক্য খুঁজে বের করতে বলে না, বরং কুরআন
মাজিদে একটি সাধারণ সন্দেহের ছায়া খুঁজে বের করতে বলে। মানব
ইতিহাসে এমন কোনো বইয়ের নজির নেই যার লেখক এই দাবি করতে
পেরেছেন। কুরআন মাজিদই একমাত্র গ্রন্থ যা এই দাবি করেছে।
এখন আমরা সেসব বিবিধ সন্দেহের বিশ্লেষণ করি যা কোনো বই সম্পর্কে
একজন মানুষের হতে পারে। তা এমন একজন ব্যক্তির দ্বারা লিখিত, রচিত
বা প্রচারিত হতে পারে, যিনি মানব সমাজে অপরিচিত কিংবা তা এমন
একজন ব্যক্তির দ্বারা লিখিত, রচিত বা প্রচারিত হতে পারে, যার চরিত্র,
আচরণ কিংবা ন্যায়পরায়নতা সন্দেহপূর্ণ। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর জীবন ইতিহাসের এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা যে, তাঁর জীবনের
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ পর্যন্ত সংরক্ষিত, লিখিত এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে এক প্রজন্ম
থেকে আরেক প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়ে এসেছে। বস্তুত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ই মানব ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি যার জীবন বৃত্তান্ত
বিগত চৌদ্দশ বছরের প্রত্যেক যুগের মুসলমানরাই লিপিবদ্ধ করেছে।
অধিকন্তু এ সকল বিবরণ এতই ব্যাপক যে, তারা কেবল তার জীবন-বৃত্তান্ত
লিখেই ক্ষান্ত হয় নি, বরং তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক,
আদান-প্রদান, কথা বলার ধরণ, হাঁটা-চলা, নিদ্রা যাওয়া, প্রাকৃতিক ডাকে
সাড়া দেওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং তাঁর দেহাবয়বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের
ওপরও আলোকপাত করেছে। যেমন- তাঁর দাড়িতে শুভ্র চুলের পরিমাণ
কত ইত্যাদি। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য,
আচার-আচরণ ও ন্যায়পরায়নতা সম্পর্কে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, মক্কায়
তাঁর ঘোর শত্রুরাও তাঁকে ‘সিদ্দিক’ (সত্যবাদী) এবং ‘আল-আমিন’
(বিশ্বাসী) উপাধিতে ভূষিত করে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
এর জীবন-ইতিহাস, চারিত্রিক ন্যায়পরায়নতা ও আচার-আচরণ সম্পর্কিত
বাস্তব ঘটনাবলি এমন নির্ভুলভাবে সংরক্ষণের পর সেই ব্যক্তি সম্পর্কে
কোনো সংশয় থাকতে পারে না যিনি মানব জাতির কাছে কুরআনের বাণী
প্রচার করেছেন। তিনি ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বই নন, বরং
একজন প্রখ্যাত ও স্বতঃসিদ্ধ সত্যের প্রচারক।
অতএব এ থেকে বুঝা যায়, কুরআন মাজিদের উৎসের ক্ষেত্রে কোনো
ধরণের সন্দেহের অবকাশ নেই।
দ্বিতীয় প্রকার সন্দেহ, যা একটি গ্রন্থে সৃষ্টি হতে পারে তা, তার অন্তর্নিহিত
সঙ্গতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যদি একটি গ্রন্থের কিছু বর্ণনা অন্য বর্ণনার সঙ্গে
অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে তা একটি গ্রন্থের অন্তর্নিহিত সঙ্গতি কিংবা
সামঞ্জস্যের ক্ষেত্রে সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে। পুরো কুরআন মাজিদে
৬,২৩৬টি আয়াত এবং ৮৬,৪৩২টি শব্দ রয়েছে।
তথাপি কুরআন মাজিদের একটি সাধারণ আয়াত, প্রবাদ-প্রবচন, বাগধারা
কিংবা শব্দ অন্য অংশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। পক্ষান্তরে প্রত্যেকটি আয়াত
ও শব্দ সমগ্র কুরআন মাজিদের টেক্সটের সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাঠক
এই বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবেন, যদি বর্তমান বাইবেল সম্পর্কে কেবল
দু’টি উদ্ধৃতি দেয়া হয়। প্রটেস্টেন্ট খ্রিস্টানদের বাইবেলের কপিতে বই
সংখ্যা ৬৬টি, যার মধ্যে ৩৯টি বই পুরাতন সমাচার থেকে এবং ২৭টি বই
নতুন সমাচার থেকে। অপরপক্ষে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের বাইবেলের
কপিতে বই সংখ্যা ৭৩টি; ৬৬টি বই প্রটেস্টেন্ট খ্রিস্টানদের কপি থেকে
এবং ৬টি অতিরিক্ত বই যেগুলি Apocrypha (অ্যাপোক্রাইফা) নামে
পরিচিত।
বাইবেলের এই দুই ধরনের ভার্সনের অস্তিত্ব থাকার কারণে পুরো
বাইবেলের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর সুস্পষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন জাগে
গ্রন্থটির কোন ভার্সনটি গ্রহণ করা যাবে, প্রটেস্টেন্ট ভার্সন না ক্যাথলিক
ভার্সন?
 
বাইবেলের একটি বিস্ময়কর অসঙ্গতি হল, এটি যীশু খ্রিস্টের (ঈসা
আলাইহিস সালাম-এর) দু’টি ভিন্ন ভিন্ন বংশ তালিকা প্রদান করে। বাইবেল
অনুসারে, তার একজন পূর্বপুরুষের নাম হল যোসেফ। মেথিউ ১ : ১-৭
অনুসারে যোসেফের পিতার নাম জ্যাকব। পক্ষান্তরে লূক ৩ : ২৩ অনুসারে
যোসেফের পিতার নাম হেলি।
আল হামদুলিল্লাহ। কুরআন মাজিদের কেবল একটি ভার্সনই সদা বিদ্যমান
থেকেছে এবং এর টেক্সটও সবধরনের অসঙ্গতিরহিত। সেহেতু সন্দেহের
দ্বিতীয় রূপ অর্থাৎ গ্রন্থের আভ্যন্তরীণ সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য অনুসারেও কুরআন
মাজিদে কোনো ধরনের সন্দেহ নেই।
একটি গ্রন্থে তৃতীয় প্রকার যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় তা তার বাহ্যিক সঙ্গতির
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তার অর্থ, গ্রন্থটিতে এমন কোনো বর্ণনা থাকবে না, যা
গ্রন্থটির বাইরের জগতের স্বতঃসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
হবে। বিগত পৃষ্ঠাগুলি তার কিছু নমুনা প্রদান করে যে, কুরআন মাজিদের
বর্ণনা শরীরবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, ভ্রূণবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা,
ব্যবচ্ছেদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়সহ কোনো মানবজ্ঞান
জগতের সঙ্গেই অসঙ্গতি রাখে না। অধিকন্তু কুরআন মজিদ মানব জ্ঞানের
সকল স্তর থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা রাখে, চাই তা প্রাচীন, সাম্প্রতিক কিংবা
অতি সাম্প্রতিকই হোক না কেন।
এভাবে কুরআন মজিদ বাহ্যিক সঙ্গতির পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ।
কোনো মানুষই এমন কোনো গ্রন্থ রচনা করতে পারে নি যা চিরকাল বাহ্যিক
সঙ্গতির বিষয়টি রক্ষা করতে পেরেছে। প্রত্যেক বই-ই সময়ের সঙ্গে একটি
ধাপ পেরিয়ে গেলে সেকেলে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। কুরআন
মাজিদই একমাত্র গ্রন্থ যা সফলতার সঙ্গে বিগত চৌদ্দশ বছর যাবৎ বাহ্যিক
সঙ্গতির চ্যালেঞ্জ মুকাবেলা করেছে। মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞাতা আল্লাহ
তাআলাই এমন একটি গ্রন্থ অবতীর্ণ করতে পারেন, যা এমন সর্বব্যাপী জ্ঞান
ধারণ করে যা সকল যুগের মানুষের জ্ঞানকে পরিব্যাপ্ত করে এবং সকল
জ্ঞান জগতের ওপর নিরংকুশ শ্রেষ্ঠত্ব রাখে।
মূলঃআল কুরআনের ১৬০ মুজিজা ও রহস্য[পৃষ্ঠাঃ ১৯৬-১৯৯]
ড. মাজহার কাজি
ভাষান্তর
মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ মুজহিরী
সম্পাদনা
এম মুসলেহ উদ্দিন
মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
অন্যথা পাবলিকেশন

কোরআনে ভবিষ্যৎবাণী – হারুন হায়াহিয়া

মক্কা বিজয়ঃ
এমন কিছু গুর
ত্বপূর্ণ ঘটনার কথা কোরআন আগেই প্রকাশ করে যেগুলো পরে ভবিষ্যতে সত্যি সত্যি ঘটেছিল এটিও কোরআনের অলৌকিকত্বের একটি দিক। উদাহরণ স্বরূপ সূরা ফাতহ্ এর ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের এই সুসংবাদ দেন যে তখনকার দিনে পৌত্তলিকদের দখলকৃত মক্কা অচিরেই মুসলমানেরা জয় করে নেবে :
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন স্বপ্নটি যথাযথভাবে। অবশ্যই তোমরা আল্লাহর ই‪ছায় মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে, তখন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মাথা মুড়াতে থাকবে এবং কেউ কেউ চুল কাটতে থাকবে। তোমাদের কোন প্রকার ভয় থাকবে না । আল্লাহ জানেন যা তোমরা জান না। আর তিনি তোমাদেরকে এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত পূর্বে এক আশু বিজয় দিলেন।“(কোরআন, ৪৮ : ২৭)

আরো গভীরভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, আয়াতটি কিন্তু মক্কা বিজয়ের পূর্বে আরেকটি বিজয়ের সংবাদ ঘোষণা করে। বাস্তবিকই মুসলমানরা আয়াতটির ঘোষণার মতোই মক্কা বিজয়ের পূর্বে প্রথমে ইহূদিদের দখলকৃত খাইবার দুর্গ দখল করে নেয় এবং তারপর মক্কায় প্রবেশ করে।যে ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে ঘটবে, আগে ভাগেই এদের ঘোষণা করা কোরআনের প্রাজ্ঞতার এক টুকরা উদাহরণ মাত্র। কোরআনের কথা যে অসীম জ্ঞানবান আল্লাহরই বাণী এই সাক্ষ্যও দি‪চ্ছে এই ব্যাপারটি।
বাইজেন্টাইনের পরাজয়ের কথা ভবিষ্যতে ঘটে যাওয়া অন্যান্য ঘটনার মতো একটি যা কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছিল যেগুলো সে সময়কার মানুষের পক্ষে কোন ভাবেই জানা সম্ভব ছিল না। এই ঘটনার সবচাইতে কৌতহলের ব্যাপারটি এই যে রোমানরা পৃথিবীর সবচাইতে নিম্নতম অঞ্চলে পরাজয় বরণ করে ছিল পরবর্তী পাতায় ব্যাপারটি বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে। এটি মজার যে এখানে “সর্বনিম্ন পয়েন্টের” কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে আমলের প্রযুক্তি দিয়ে এমন একটি মাপযোখ করে পৃথিবীর নিম্নতম অঞ্চল নির্ধারণ একেবারে স্পষ্টভাবেই অসম্ভব ব্যাপার ছিল। এসবই মানব জাতির উদ্দেশ্যে মহাজ্ঞানী আল্লাহ সোবহানাল্লাহ তাআলার প্রকাশিত বাণী।
বাইজেন্টাইনদের বিজয়ঃ
কোরআন নাযিলের আরেকটি আশ্চর্য ঘটনা এই যে সূরা রূমের প্রথম আয়াতে বাইজেন্টাইন সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে। পরবর্তী রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বদিকের একটি অংশই হলো বাইজেন্টাইন।উক্ত আয়াতগুলোতে উল্লেখ করা হয় যে, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য একটি পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু শীঘ্রই জয়ের মুখ দেখবে।
“আলিফ-লাম-মীম রোমকরা পরাজিত হয়েছে, এক নিম্নতমস্থানে এবং তারা তাদের এ পরাজয়ের পর অতি সত্বর জয়লাভ করবে, তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে। পূর্বের ও পরের ফয়সালা আল্লাহরই। আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে।”(কোরআন, ৩০:১-৪)

পৌত্তলিক পারস্যদের হাতে বাইজেন্টাইন খৃষ্টানদের গুর
তর পরাজয় বরণ করার ৭ বছর পরে, ৬২০ সনে উক্ত আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল। বাইজেন্টাইনরা খুব অল্প সময়ের মাঝেই বিজয় ছিনিয়ে নেবে।আয়াতগুলোতে তাই বর্ণিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি, বাইজেন্টাইনরা কেবল মারাত্মক পরাজয়ই বরণ করেনি, এমনকি এটির টিকে থাকাই যেখানে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছিল সেখানে জিতার কথা বাদই দিতে হয়। কেবল পারস্যরাই নয়, মারাত্মক ভীতির কারণ হিসেবে আরও বিদ্যমান ছিল আভারস আর লম্বার্ডরা। আভারস্ কন্সটান্টিনোপোলের দেয়াল পর্যন্ত এসে গিয়েছিল। বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াস গির্জাসমূহের স্বর্ণ, রৌপ্যগুলো গলিয়ে মুদ্রা বানিয়ে তার বাহিনীদের খরচ মেটানোর আদেশ দিলেন। এগুলোও যখন অপর্যাপ্ত মনে হলো তখন এমনকি ব্রোঞ্জের মূর্তিগুলো গলিয়ে মূদ্রা বানানো হলো। বহু গভর্ণর হেরাক্লিয়াসের বির
দ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল আর তার সাম্রাজ্য ছিল পতনের মুখে। আগের বাইজেন্টাইনের অধীনস্ত রাষ্ট্র, যেমন, মেসোপটেমিয়া, সিলিসিয়া, সিরিয়া, পেলেস্টাইন, মিসর, আর্মেনিয়া তখন মূর্তিপূজক পারস্যদের অধীনস্ত হয়ে গিয়েছিল।
স্বল্প কথায় সকলেই মনে করছিল যে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে সূরা রূমের প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়, যাতে ঘোষিত হয়েছিল যে, কয়েক বছরের মাথায় বাইজেন্টাইনরা বিজয় ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু বিজয় তখন এমনি অসম্ভব ছিল যে, বহু-ঈশ্বরবাদী আরবরা আয়াত কয়টি নিয়ে পরিহাস শুরু করে দিল। তারা ভেবেছিল যে কোরআনের এই বিজয়ের ঘটনা কখনও সত্যি হবে না।
সূরা রূমের প্রথম আয়াতখানা নাযিলের সাত বছর পরে ৬২৭ সনের ডিসেম্বরে বাইজেন্টাইন আর পারস্যদের মাঝে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ শুর
 হল নিনেভেহতে। এই সময় আশাতীতভাবে বাইজেন্টাইনরা পারস্যদের পরাজিত করল। কয়েক মাস পরে পারস্যরা বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হল, যারই ফলে তাদেরকে নিজেদের দখল করা অংশগুলো হতে হটতে বাধ্য হয়েছিল।অবশেষে আল্লাহ তাআলার ঘোষণাকৃত ”রোমকদের বিজয়” বাণীটি অলৌকিকভাবে সত্য হয়ে গিয়েছিল।
উক্ত আয়াতটির আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো ভৌগলিক বিষয় সম্বন্ধে একটি ঘোষণা যা তখনকার মানুষের পক্ষে জানতে পারা সম্ভব ছিল না।সূরা রূমের তৃতীয় আয়াতে আমরা অবগত হই যে, রোমানরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্ন এলাকায় পরাজিত হয়েছে। “আদনা আল আরব” এই অভিব্যক্তিটি বহু অনুবাদে “পাশ্ববর্তী স্থান” হিসেবে অনূদিত হয়েছে। কিন্তু এটি মূল বক্তব্যের আক্ষরিক অর্থ না হয়ে বরং আলঙ্করিক অর্থ প্রকাশ করেছে।আরবীতে “আদনা” শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে “দেনি” শব্দ থেকে যার মানে হলো “নীচু”, আর “আরদ্” শব্দের অর্থ পৃথিবী। তাই “আদনা আল আরদ্” এর প্রকাশ ভঙ্গীটির অর্থ হলো “পৃথিবীর নিম্নতম এলাকা”।
সবচেয়ে কৌতূহলের বিষয় হলো বাইজেন্টাইন আর পারস্যের যে যুদ্ধে বাইজেন্টাইনদের পরাজয় হয় আর ফলে তারা জের
জালেমের উপর অধিকার হারিয়ে ফেলে সেই যুদ্ধেরই একটি অতি সংকটপূর্ণ পর্যায় সত্যি ঘটেছিল পৃথিবীর একটি নিম্নতম এলাকায়। বিশেষ এই এলাকাটি হলো মৃত সাগরের বেসিন বা গহ্বরে যা কিনা সিরিয়া, পেলেস্টাইন আর জর্দানের ভূ-ভাগের ছেদন বিন্দুতে বিদ্যমান।সমুদ্র পৃষ্ঠের ৩৯৫ মিটার নিম্নের এই মৃত সাগরটি আসলেই ভূ-পৃষ্ঠের সর্বনিম্নাঞ্চল। তার মানে হলো যে কোরআনে যেমন উক্ত রয়েছে ঠিক তেমনভাবেই বাইজেন্টাইনরা বিশ্বের সর্বনিম্ন এলাকায় হেরে গিয়েছিল।
মজার ব্যাপারটি হলো এই যে, কেবল মাত্র আধুনিককালের পরিমাপক প্রযুক্তি দিয়েই মৃত সাগরের গভীরতা মাপা যেতে পারে। এর আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের সর্বনিম্ন এলাকাটি কোথায় বা কোনটি তা জানা সম্ভব ছিল না। কিন্তু কোরআনে উক্ত হয়েছে যে এ এটি পৃথিবীর সর্বনিম্ন এলাকা। এ ব্যাপারটি আবারো সাক্ষ্য দি‪চ্ছে যে কোরআন মহান সৃষ্টি কর্তার প্রেরিত গ্রন্থ।

কোরআনের ঐতিহাসিক অলৌকিকতা -হারুন ইয়াহিয়া

কোরআনে “হামান” শব্দ:
প্রাচীন মিসর সম্পর্কে কোরআনের কিছু তথ্য বহুল ঐতিহাসিক বিষয় উন্মোচিত করে যেগুলো কিনা সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অনুদঘাটিত ছিল। এই বিষয়গুলো আমাদের আরো নির্দেশ করছে যে এ কোরআন এক নিশ্চিৎ মহাবিজ্ঞের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।কোরআনে ফেরাউনের পাশাপাশি হামান নামক একটি চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে। ফেরাউনের একজন কাছের মানুষ হিসেবে এ নামটি কোরআন শরীফের ছয়টি ভিন্ন অংশে উক্ত হয়েছে।আশ্চর্যের বিষয় যে, তাওরাতের যে অংশে মূসার জীবনী রয়েছে, তাতে এ নামটি কখনো উল্লেখ করা হয়নি। তবে ওল্ড টেষ্টামেন্টের সর্বশেষ অধ্যায়ে ব্যাবিলনের এক রাজার সাহায্যকারী হিসেবে এ নামটি পাওয়া যায়, যে রাজা কি-না মূসার সময়ের ১১০০ বছর পরে ইসরাঈলীদের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়েছিল।

কিছু অমুসলিম, যারা দাবী করে যে, রাসুলুল্লাহ (দঃ) তাওরাত এবং বাইবেল থেকে নকল করে কোরআন শরীফ সাজিয়েছেন, তারা জোর গলায় বলে যে, এ প্রক্রিয়ার সময় নবী (দঃ) কিছু কিছু বিষয়ে ত্রু
টি সহকারে কোরআনে এনেছেন।কিন্তু ২০০ বছর আগে যখন মিসরীয় প্রাচীন সংকেত লিপি হাইআরোগ্লিফিক উদঘাটন করে বুঝা গেল আর প্রাচীন লিপিগুলোয় হামান শব্দটির উল্লেখ রয়েছে জানা গেল তখন এই দাবির অসারতা প্রমাণিত হলো।এই আবিষ্কারের আগে প্রাচীন মিসরীয় লিখা আর অভিলিখন (শিলার গায়ে লিখা) বুঝা যেতো না।হাইআরোগ্লিফিক বা সংকেত লিখনে লিখা প্রাচীন মিসরীয় ভাষা যুগ যুগ টিকে ছিল। তবে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দিতে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার আর অন্যান্য সংস্কৃতির প্রসারের ফলে মিসরীয়রা প্রাচীন বিশ্বাস আর হাইআরোগ্লিফিক বা সংকেত লিপি ভুলে যায়। সংকেত লিখনের সর্বশেষ জানা উদাহরণটি ৩৯৪ সনের একটি অভিলিখন ছিল। এরপর এ ভাষাটি স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছিল, আর কেউ তা লিখতে বা বুঝতে পারতো না। ২০০ বছর আগে পর্যন্ত এ অবস্থাটি বিদ্যমান ছিল।১৭৯৯ সনে “Rosetta Stone” নামের একটি ট্যাবলেট বা লিপিফলক আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন মিসরীয় সংকেতলিপি বা হাইআরোগ্লিফিক এর রহস্যের সন্ধান পাওয়া গেল ; ফলকটি ছিল খ্রীষ্টের জন্মের ১৯৬ বছর আগের। এই অভিলিখন খানির গুর
ত্ব এমনি ছিল যে, এটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে লিখা ছিল ; উপায়গুলো ছিল হাইআরোগ্লিফিক, ডেমোটিক (প্রাচীন মিসরীয় হাইআরেটিক লিখনের সহজরূপ) আর গ্রীক । গ্রীক লিখনটির সাহায্য নিয়ে প্রাচীন মিসরীয় সংকেত লিখনগুলোর অর্থ বের করা হলো ।
Jean-Francoise Chamollion নামের একজন ফরাসী লোকের সহায়তায় লিপিখানির অনুবাদ সম্পূর্ণ করা হয়েছিল। এভাবে এই ভুলে যাওয়া ভাষা এবং এর সঙ্গে জড়িত কিছু ঘটনার প্রকাশ ঘটল।এমন করে প্রাচীন মিসরের সভ্যতা, ধর্ম আর সমাজ জীবনের বিশাল এক জ্ঞানের খোঁজ পাওয়া গেল। হাইআরোগ্লিফিক এর সংকেতগুলোর গূঢ়ার্থ বুঝতে পারায় গুরু
ত্বপূর্ণ জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া গেল ,বাস্তবিকই ”হামান” শব্দটি মিসরীয় সংকেতলিপিতে লিখা ছিল। ভিয়েনার Hof Museum এ নামটির উল্লেখ রয়েছে।সমগ্র অভিলিখনগুলোর সংগ্রহের উপর নির্ভর করে তৈরী অভিধান People in the New Kingdom এ হামানকে “পাথর চূর্ণকারীদের নেতা” হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে।ফলাফলটি একটি অত্যন্ত গুর
ত্বপূর্ণ সত্যের উন্মোচন করে দিল। কোরআন বিরোধীদের মিথ্যা দাবীর বিপরীতে দেখা গেল এই সেই ব্যক্তি হামান, যে কিনা মূসার (আঃ) সময়কালে ফেরাউনের একজন অতি কাছের মানুষ হিসেবে মিসরে বসবাস করে আসছিল। কোরআনে যেমন বলা হয়েছে ঠিক তেমনি, হামান নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল।অধিকন্তু কোরআনের একটি আয়াতে একটি ঘটনায় যেমন উক্ত আছে যে ফেরাউন হামানকে একটি টাওয়ার নির্মাণের কথা বলছে, সেটি প্রত্নতত্ত্ববিদদের প্রাপ্ত তথ্যাবলীগুলোর সঙ্গে একদম মিলে যায় :


“ফেরাউন বলল : হে সভাসদবৃন্দ ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য আছে বলে আমি মনে করি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও, তারপর আমার জন্য একটি সুউ‪চ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার মা’বুদের প্রতি উঁকি মেরে দেখতে পারি। তবে আমারতো ধারণা যে, সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী।“
(কোরআন, ২৮ : ৩৮)
পরিশেষে, হামানের অস্তিত্ত্বের বিষয়টি কোরআন বিরোধীদের বানোয়াট জাল দাবিকেই শুধু গুর
ত্বহীন বলে প্রমাণ করেনি, বরং আবারো একবার প্রমাণ করে দিল যে, কোরআন এসেছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর তরফ থেকে। একরকম অলৌকিকভাবেই কোরআন সেই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছে যা নবীর (দঃ) সময়ে ঘটেনি কিংবা জানা ছিল না।
কোরআনে মিসরের শাসকগণের উপাধি:
মিসরের প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে এ তথ্যই বেরিয়ে আসে যে, সে অঞ্চলে মুসা (আঃ) ই একমাত্র নবী হয়ে আসেননি। মুসার (আঃ) সময়ের বহু আগে ইউসুফ (আঃ) মিসরে বসবাস করে গেছেন।মুসা (আঃ) এবং ইউসুফ (আঃ) এ দুজনের ঘটনাবলী পড়তে গিয়ে আমরা কিছূ সাদৃশ্যের বা তুলনার মুখোমুখি হই। কোরআনে ইউসুফ (আঃ) এর সময়কার মিসরের শাসকদের সম্বোধন করতে গিয়ে মালিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

“মালিক (বাদশাহ) বলল : ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে আমার একান্ত সহচর করে রাখব।তারপর সে যখন তার সাথে কথা বলল তখন সে বলল ঃ নিশ্চয়ই আজ আপনি আমাদের কাছে অতিশয় মর্যাদাবান ও বিশ্বস্ত।“ (কোরআন, ১২ : ৫৪)
কিন্তু মুসার (আঃ) সময়ে শাসকদের ডাকা হতো “ফেরাউন ” ।
“আর আমি তো মূসাকে নয়টি প্রকাশ্য মু’জিযা দিয়েছিলাম, আপনি বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করু
ন ; যখন সে তাদের কাছে এসেছিল তখন ফেরআউন তাকে বলেছিল : “হে মূসা!আমি তো মনে করি, অবশ্যই তুমি যাদুগ্রস্ত।“
(কোরআন, ১৭ : ১০১)
আজ যে সমস্ত ঐতিহাসিক রেকর্ড পাওয়া যা‪চ্ছে তাতে শাসকগণের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণের কারণ খুঁজে পাওয়া যা‪চ্ছে। পূর্বে প্রাচীন মিসরে রাজপ্রাসাদকে ”ফেরাউন” বলা হতো আর এখান থেকেই এসেছে এই শব্দটি। প্রাচীন রাজবংশের শাসকগণ তাদের উপাধি হিসেবে এই নামটি ব্যবহার করেননি। মিসরের ইতিহাসে ”নূতন রাজ্য” যুগের পূর্ব পর্যন্ত রাজাদের উপাধি হিসেবে এ নামটি শুরু হয়নি। এই সময়কালটি ১৮ তম রাজবংশের সঙ্গে শুরু
 হয় আর বিংশতম রাজবংশ থেকে রাজাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে এই ”ফেরাউন” শব্দটি টাইটেল হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
এখানে আরেকবার কোরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণের আরেকটি উদাহরণ পাওয়া যায় : ইউসুফ (আঃ) প্রাচীন রাজত্বে বর্তমান ছিলেন যে যুগে রাজাদের ”ফেরাউন” নয় বরং ”মালিক” বলে সম্বোধন করা হতো। উল্টো যেহেতু মুসা (আঃ) নূতন রাজ্যের যুগে বর্তমান ছিলেন, তাই তখনকার শাসকদের ”ফেরাউন” নামে ডাকা হতো।সন্দেহ নেই যে এমন পৃথক করে বলার জন্য একজনকে মিসরের ইতিহাস জানতে হবে। কিন্রু চতুর্থ শতকের মাঝেই মিসরের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায় মানুষ ; কারণ মানুষ আর মিসরের ভাষা (হাইআরোগ্লিফিক) বুঝতে পারেনি ; দীর্ঘদিন পর মিসরের ইতিহাস পুণরায় উনিশ শতকে উদ্ধার করা হয়। সুতরাং কোরআন নাযিল হওয়ার সময় মিসরের ইতিহাস সম্পর্কে কোন পুংখানুপুঙ্খ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব ছিল না। অগণিত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাঝে এটিও প্রমাণ করে যে কোরআন আল্লাহর বাণী।