কালোত্তীর্ণ রচনাবলী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কালোত্তীর্ণ রচনাবলী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কালোত্তীর্ণ রচনাবলী ১- ঈমান ও এর প্রভাব

আরব অনারব সকলেই অত্যন্ত বিকৃত জীবন যাপন করছিল। এমন প্রতিটি সত্তা যা মানুষের সেবার জন্যে পয়দা করা হয়েছিল, অস্তিত্ব লাভ করেছিল কেবল তার জন্য এবং যা ছিল তারই অধীন, যেভাবে চাইবে ব্যবহার করবে, আদেশ নিষেধ, শাস্তি দান কিংবা পুরষ্কার প্রদানের একবিন্দু ক্ষমতা নেই যার, সে সবের তারা পূজা অর্চনা করতে শুরু করেছিল। তারা একেবারেই ভাসাভাসা ও বিক্ষিপ্ত একটি ধর্মে বিশ্বাসী ছিল। জীবন জিন্দেগীতে যার কোন প্রভাব কিংবা তাদের স্বভাব-চরিত্রে, হৃদয় মনে ও আত্মার উপর যার কোন ক্ষমতা ছিল না

চরিত্র ও সমাজ আদৌ এই ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব তাদের দৃষ্টিতে এমন ছিল যেমন একজন শিল্পী কিংবা কারিগর তার কাজ শেষ করে সরে পড়েছে এবং নির্জনতা বেছে নিয়েছে। তাদের ধারণায়, আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাম্রাজ্য সেই সব লোকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন যাদেরকে তিনি রুবুবিয়তের খেলাত দ্বারা ধন্য করেছিলেন। এখন তারাই ক্ষমতাসীন এবং সাম্রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক। জীবিকা বন্টন, রাজ্যের আইন শৃংখলা রক্ষা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা তাদের এখতিয়ারাধীনে। মোটের উপর একটি সুসংহত ও সুশৃংখল হুকুমতের যতগুলো শাখা ও বিভাগ থাকে তার সবই তাদের ব্যবস্থাপনাধীনে।

আল্লাহ তায়ালার উপর তাদের ঈমান এক ঐতিহাসিক অবহিতির চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। আল্লাহকে প্রভূ প্রতিপালক মনে করা, তাঁকে আসমান যমীনের স্রষ্টা মানা তেমনই ছিল যেমন ইতিহাসের কোন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই প্রাচীন ইমারতটি কে নির্মাণ করেছিলেন? ছাত্রটি উত্তরে কোন বাদশাহর নাম বলল। বাদশাহর নাম বলায় তাঁর দিলের উপর যেমন কোনরুপ ভয়-ভীতি যেমন দেখা দেবে না, তেমনি তার মস্তিস্কের উপর কোন প্রভাবও পড়বে না। এসব লোকের হৃদয় আল্লাহ তায়ালার ভয়, বিনয়মিশ্রিত ভক্তি-শ্রদ্ধা ও দোয়া থেকে শূন্য ছিল। আল্লাহর গুনাবলী সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞ বেখবর ছিল। এজন্য তাদের দিলে তাঁর প্রতি অনুরাগ, তাঁর আজমত ও বড়ত্বের কোন চিত্র ছিল না। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তাদের খুবই অস্পষ্ট, ভাসা ভাসা ধারণা ছিল যার ভেতর কোন গভীরতা ও শক্তি ছিল না।
গ্রীক দর্শন আল্লাহ তায়ালার সত্তার পরিচিতির ধারাবাহিকতায় বেশির ভাগ নেতিবাচকতার আশ্রয় নিয়েছে। সে তাঁর (আল্লাহর) গুণাবলীকে অস্বীকার করেছে এবং এর দীর্ঘ ফিরিস্তি কায়েম করেছে যার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কোন হ্যাঁ-বাচক প্রশংসা এবং কোন ইতিবাচক গুণ নেই। তাঁর কুদরতের উল্লেখও এতে নেই, নেই এতে তাঁর রবূবিয়তের কথা কিংবা আলোচনা। তাঁর সীমাহীন অনুদান, তাঁর অপরিমেয় দয়া দাক্ষিণ্যের কথাও এতে নেই। এই দর্শন ‘প্রথম সৃষ্টি’ তো প্রমাণ করেছে। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও এখতিয়ার এবং ইচ্ছা ও গুণাবলীকে অস্বীকার করেছে এবং নিজের পক্ষ থেকে এমন সব মূলনীতি তৈরি করেছে যা সেই মহান সত্তাকে খাটোকরণ ও তাঁর সৃষ্টিজগতের ওপর অনুমান নির্ভর করে প্রণিত। আর এ কথা তো স্পষ্ট, শত শত নেতিবাচক মিলেও একটই ইতিবাচকের সমান হতে পারে না।
আমাদের জানা মতে আজ পর্যন্ত এমন কোন সুশৃংখল নীতি কিংবা বিধান, এমন কোন সভ্যতা-সংস্কৃতি ও এমন কোন সমাজ জন্ম নেয়নি যা কেবল নেতিবাচক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রীক দর্শনের প্রভাবাধীন মহলে ধর্ম ও মহাদর্শ ভয় ভীতি মিশ্রিত বিনয় ও শ্রদ্ধা, আকস্মিক দুর্ঘটনা ও বিপর আপদের মূহুর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে মনোনিবেশ, প্রেম ও ভালোবাসার রুহ থেকে একদম শূণ্য ছিল। ঠিক তদ্রুপ সেই যুগের বিভিন্ন ধর্মও প্রাণ হারিয়ে ফেলেছিল এবং কতগুলো নিষ্প্রাণ আচার অনুষ্ঠান ও প্রাণহীন অনুকরণসর্বস্ব প্রথা-পার্বণেই পর্যবসিত হয়েছিল।
মুসলিম উম্মাহ ও আরব জাতিগোষ্ঠী এই অসুস্থ, অস্পস্ট ও নিস্প্রাণ পরিচিতির আবহ থেকে বেরিয়ে এমন এক সুস্পষ্ট ও গভীর আকীদা-বিশ্বাস অবধি গিয়ে পৌঁছে যায় যার নিয়ন্ত্রণ ছিল হৃদয় মন ও অংগ প্রত্যঙ্গের উপর, যা সমাজকে প্রভাবিত করার মত জীবন জিন্দেগী ও জীবনের নানা অনুষঙ্গের উপর জেঁকে বসা। ওই সব লোক এমন এক পবিত্র সত্তার উপর ঈমান এনেছিলেন যাঁর রয়েছে সর্বোত্তম নাম, সর্বোচ্চ শান। তাঁরা এমন রাব্বুল আলামীনের ওপর ঈমান এনেছিলেন যিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু, কিয়ামত দিবসের নিরংকুশ মালিক-মুখতার ও রাজাধিরাজ।

“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনি পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; ওরা যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র, মহান। তিনিই আল্লাহ, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা হাশর ৫৯; ২২-২৪]
যিনি এই বিশাল জগত ও বিশ্ব কারাখানার স্রষ্টা, মালিক ও পরিচালনাকারী, যাঁর কুদরতী কব্জায় তামাম বিশ্ব জাহানের বাগডোর। যিনি আশ্রয় দেন, আর তাঁর মুকাবিলায় কেউ কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না। জান্নাত তাঁর পুরষ্কার ও জাহান্নাম তাঁর শাস্তি। তিনি যাকে ইচ্ছা রিযিকে প্রশস্ততা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা রিযিক সংকুচিত করেন। আসমান যমীনের সকল গুপ্ত বিষয় তিনি জানেন। চোখের গোপন চাহনি ও দিলের নিভৃত কন্দরে লুক্কায়িত রহস্য তিনিই সম্যক অবগত। তিনি সৌন্দর্য, পূর্ণতা, ভালোবাসা ও দয়ামায়ার আধার।
এই গভীর, বিশাল-বিস্তৃত ও সুস্পষ্ট ঈমান দ্বারা ঐ সমস্ত লোকের মন-মানসিকতার আশ্চর্য রকমের পরিবর্তন ঘটে। কেউ যখন আল্লাহর উপর ঈমান আনত এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দিত অমনি তাঁর জীবনে এক বিরাট বিপ্লব সংঘটিত হতো। তার ভেতর ঈমান অনুপ্রবিষ্ট হতো, ইয়াকিন তার শিরা উপশিরায় সঞ্চারিত হতো এবং তার শরীরে রক্ত ও প্রাণ সঞ্জীবনীর ন্যায় দ্রুত সঞ্চালিত হতো । জাহেলিয়াতের জীবাণুগুলো খতম করে দিত এবং মূলে উৎখাত করে ছাড়ত। মন মস্তিস্ক এর ফয়েজ দ্বারা মন্ডিত হতো এবং সেই লোকটি আর পূর্বের ন্যায় থাকতো না। এই লোক দ্বারা ধৈর্য, শৌর্যবীর্য ও ঈমান-য়াকীনের এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা সংঘটিত হতো যে, আক্কেল গুড়ুম হবার মত এবং দর্শন ও নৈতিকতার ইতিহাস বিস্ময়ে বোবা বনে যাবে। ঈমানী শক্তি ছাড়া এর আর কোন হেতু বা ব্যাখ্যা হতে পারে না।
মূলঃ মা’যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন
মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো ? – মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী(র)

সরকারের অনুগত দুনিয়ালোভী আলেম

► সরকারের অনুগত দুনিয়ালোভী আলেম
জেনে রাখুন, শান শওকত আর মান মর্যাদার কামনা বাসনা অনিবার্যভাবে একটি ব্যাপক ক্ষতির কারণ ।এই মান মর্যাদা আর শান শওকত অর্জনের জন্যে আপনাকে যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তখন থেকেই এই ক্ষতির সূত্রপাত হয়। আর মান মর্যাদা, শান শওকত অর্জনের পরেও এই ক্ষতি হতেই থাকে, কারণ এবার আপনার পরিশ্রম ব্যয় হবে তা ধরে রাখার সুতীব্র বাসনার পিছনে , যা জন্ম দিবে অবিচার, ঔদ্ধত্য, বেপরোয়া মনোভাব আর বাদবাকী অন্যায় কাজ
আবু বকর আল-আজুরি,
যিনি ছিলেন চতুর্থ শতকের শুরুর দিকের একজন অন্যতম বিচক্ষণ আলেম, তিনি আলেমদের আচার-আচরণ এবং সংবেদনশীলতা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন, আর তাঁর রচিত এ প্রবন্ধটি এ বিষয়ের উপর লেখা বাছাইকৃত সেরা কিছু কাজের মধ্যে একটি।
যদি কেউ এটি পড়ে থাকেন তাহলে তিনি জানতে পারবেন সত্যনিষ্ঠ (সালাফ) আলেমগণের অনুসৃত পথ সম্পর্কে, আরও জানতে পারবেন অভিশপ্ত নব আবিষ্কৃত বিষয়াদি, বিদ’আত পথভ্রষ্টতা যা তাদের পথের বিপরীত সে সম্পর্কে। তাই তিনি সবিস্তারে দুনিয়ালোভী আলেমদের কথা বর্ণনা করেছেন, তার রচনার নির্বাচিত অংশ উল্লেখ করা হলঃ
“দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও মোহ, প্রশংসা, সম্মানের আকাঙ্ক্ষা, মানুষের মাঝে সুমর্যাদা ইত্যাদি কারণে তিনি (দুনিয়ালোভী আলেম) ধোঁকার শিকার হয়েছেন। একজন সুন্দরী নারী যেভাবে অলংকার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে এই দুনিয়ার জন্যে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে ঠিক সেভাবে একজন দুনিয়ালোভী আলেম গহনা হিসেবে ব্যবহার করে তার ইলম-জ্ঞানকে, কিন্তু সে আলেম তার অর্জিত জ্ঞানের উপর আমল করে না। (ইলমের উপর) আমলের সৌন্দর্য দিয়ে সে নিজেকে সজ্জিত করে না”।
এরপর তিনি একটি দীর্ঘ বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন,
“কাজেই এই স্বভাব আর অনুরূপ আচরণসমূহ তার অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে ফলে সে তার অর্জিত ইলম থেকে উপকৃত হয় না, সে তার মর্যাদা, উপাধি ইত্যাদি বহন করে আর তার নফস বহন করে সম্মান, খ্যাতি, মর্যাদার প্রতি মোহ- (আর এ সম্মান ও খ্যাতির প্রতি মোহের কারণে) সে পছন্দ করে রাজাদের সাথে ও রাজপুত্রদের সাথে উঠাবসা করতে। এরপর সে তাদের মত বিলাসী জীবন যাপনের দিকে আকৃষ্ট হয়, তাদের মত জৌলুসপূর্ণ সাজপোশাক পরে, আরামদায়ক বাহনের ব্যবস্থা করে, চাকর বাকর, মিহি কাপড়, বিলাসবহুল শয়নকক্ষ ও খাদ্য ইত্যাদির দিকে মোহগ্রস্ত হয়। সে আরও পছন্দ করে লোকেরা যেন তার দরজায় ভিড় করে থাকে, যাতে তার প্রতিটি কথা শোনা হয়, যাতে তার কথা মান্য করা হয়- আর এগুলোর শেষেরটি (মান্য করা) পূরণ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে যদি সে কাজীর(বিচারক) পদটি লাভ করতে পারে- তাই সে এ পর্যায়ে এসে এদিকে ধাবিত হয়।
কিন্তু এরপরও সে এগুলো (বিলাস,দুনিয়া) অর্জন করতে পারে না যতক্ষণ না সে নিজের দীনকে বিক্রি করে, তাই সে নিজের স্থানচ্যুত করে শাসকদের কাছে আর তার দোসরদের কাছে, তাদের সেবায় নিয়োজিত করে নিজেকে আর তাদের কাছে স্মারক হিসেবে উপঢৌকন পাঠাতে শুরু করে। যখন সে শাসকদের দরবারে, প্রাসাদে প্রবেশ করে সেখানকার মন্দ কাজ দেখতে পায় তখন সে চুপ করে থাকে ।
এর চেয়েও নিকৃষ্ট ব্যাপার হল সে শাসকদের কাছে নিজের অবস্থানকে আরও উঁচুতে নেয়ার জন্যে তাদের মন্দ কাজগুলোর প্রশংসা শুরু করে, এমনকি কিছু কিছু মন্দ কাজকে ভালো কাজ বলেও অপব্যাখ্যা দান করে। তাই, যখন সে নিজেকে একটি দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরণের আচরণে অভ্যস্ত করে নেয় তখন বাতিল তার ভিতরে শিকড় গেঁড়ে বসে- তখন এগুলো দেখে সেই শাসকেরা তাকে বিচারক (কাজী) পদে নিয়োগ দেয় আর এভাবেই তারা সেই আলেমকে জবাই করে, যে জবাই করতে কোন ছুরি লাগে না” ।
[প্রসংগত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি হাদীস, “যাকে বিচারক নিযুক্ত করা হয়েছে তাকে যেন ছুরি ছাড়াই যবেহ করা হয়েছে”, আহমাদ, আবু দাউদ ৩৫৩৩,৩৫৩৪ইফা; তিরমিযি]
এবারে (বিচারকের আসন দান করে) শাসকেরা তাকে এমন একটি অনুগ্রহ করেছে যার কারণে সেই আলেমকে আনুগত্য প্রদর্শন করতে হয় এবং কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হয়। কাজেই এবার তাকে প্রচুর কষ্ট স্বীকার করতে হয় যেন সে নিশ্চিত হতে পারে যেন শাসকদের রাগিয়ে দেয়ার মত কিছু না ঘটে যায়, যাতে শাসকেরা তাকে তার অবস্থান থেকে সরিয়ে না দেয়।
একদিকে যখন সে শাসকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার জন্যে একের পর এক কষ্ট স্বীকার করে চলে, অপরদিকে সে ভুলে যায় আরেকজন ক্ষমতাশালী, সর্বশক্তিমান, বিশ্ব জাহানের শাসক, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কথা, তাঁর সন্তুষ্টি, তিনি যেন রাগান্বিত না হন, সেদিকে সে বেমালুম ভুলে যায়। কাজেই সে এতিমদের সম্পদের সুষম বন্টন করে না, বিধবা, ফকির মিসকিন, ওয়াকফ সম্পত্তি যারা জিহাদে নিয়োজিত রয়েছে, মক্কা ও মদীনার সম্ভ্রান্ত লোকেরা, আর সর্বোপরি যে সম্পদ মুসলিমদের কল্যাণে ব্যয় হবার কথা-বরং সে সম্পদ ব্যয় করে তার কর্মচারীদের পিছনে, সভাসদ, চাকরদের পিছনে। কাজেই সে যা খায় তাও হারাম এবং যা খাওয়ায় তাও হারাম,আর যা বৃদ্ধি করতে থাকে তা হল নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী। কাজেই তার জন্যে দুর্ভোগ, তার জন্যে অভিশাপ যার ইলম থাকা সত্ত্বেও সে এ ধরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পতিত হয়।
নিশ্চয়ই এটাই সে ইলম,
যা থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, এবং আমাদের প্রতিও আদেশ করেছেন যেন আমরাও এ ধরণের ইলম থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। এ ধরণের ইলমের প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কেয়ামতের দিন সব থেকে ভয়াবহ আযাব যাকে দেয়া হবে সে হচ্ছে এমন আলেম যার ইলম দ্বারা তাকে আল্লাহ উপকৃত করেন নি।” [বর্ণনায় ইবন আব্দুল বার্র,জামি’ বাইয়্যানিল ‘ইলম(১/১৬২), তাবারানী, দারেমী]
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়শই এই দু’আ করতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি অসার জ্ঞান হতে, অশ্রুত দো’আ হতে,এবং এমন প্রবৃত্তি হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না,এমন অন্তর হতে যা বিগলিত হয় না” (আবু দাউদ, সহীহ)
তিনি আরও দু’আ করতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আস’আলুকা ইলমান নাফি’আন, ওয়া আউযুবিকা মিন ইলমিন লা ইয়ানফা’উ” ।
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এমন জ্ঞান যা কাজে লাগে, আর আমি আপনার নিকট এমন জ্ঞান হতে আশ্রয় চাই যা কোন কাজে আসে না” [ইবন মাজাহ ৩৪৮৩]
ইমাম আবু বকর আল-আজুরি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার উক্তি এখানেই শেষ হলো, যিনি তার ইহকালের জীবন কাটিয়েছিলেন চতুর্থ শতাব্দীর শেষভাগে (মৃত্যু ৩৬০হিজরী) আর সেই সময় থেকেই ফিতনা, ফাসাদ দুর্নীতি বাড়তে লাগল-এরপর তা বহুগুণে বেড়েই চলেছে – লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
মূলঃ The Evil scholar
লেখকঃ হাফিয ইবন রজব আল হাম্বলী রাহিমাহুল্লাহ
সৌজন্যেঃ Kalamullah.Com

আল্লাহর দেয়া অবকাশকে নিরাপদ মনে করা

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “অবশেষে তাদের যা দেয়া হল যখন তারা তাতে মত্ত হল এবং নিজেদের নিরাপদ মনে করে খুশি হল তখন আমার আযাব তাদের পাকড়াও করল যা তাদের কল্পনায়ও ছিল না”।
হযরত হাসান (রহ) বলেন; যাকে আল্লাহ প্রশস্ততা বা সুযোগ দিয়েছেন সে যদি বুঝতে না পারে যে, তাকে অবকাশ দেয়া হয়েছে তবে বুঝতে হবে যে, তার কোন দূরদর্শিতা নেই এবং যাকে দৈন্য বা অভাব অনটন দেয়া হয়েছে সে যদি বুঝতে না পারে যে, আল্লাহ তার প্রতি সুদৃষ্টি প্রদান করবেন তবে মনে করতে হবে যে, তারও কোন দুরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা নেই। এরপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ “তাদের যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল-তখন তাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। অবশেষে তাদের যা দেয়া হল যখন তাতে তারা মত্ত হল তখন অকস্মাৎ তাদের ধরলাম ফলে তখনই তারা নিরাশ হল”। [সূরা আন-আমঃ ৪৪]
তিনি আরোও বলেন, কোন সম্প্রদায়ের সাথে মকর(বা অবকাশ দেয়ার মানে) হল তাদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে এরপর তা নিয়ে যাওয়া। হযরত উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা দেখবে যে, আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে এমন কিছু দিচ্ছেন যা তার কাম্য এবং সে সকল বিপদ-আপদ মুক্ত তখন মনে করতে হবে যে, এটা তার জন্যে একটা অবকাশ মাত্র এবং এ অবস্থার অবসান অবশ্যম্ভাবী। [তাবারানী]
এরপর তিনি তিলাওয়াত করেনঃ “অর্থাৎ তাদের যেসব উপদেশ দেয়া হয়েছিল যখন তারা তা ভুলে গেল আমি তাদের জন্য পার্থিব উন্নতির সকল পথ উন্মুক্ত করে দিলাম। তারা এসব পেয়ে আনন্দে মত্ত হল, তখন আমি তাদের পাকড়াও করলাম। তখন তারা নিরাশ হয়ে গেল”। বিপদের সময় দিশেহারা বা মুক্তি লাভের আশা ত্যাগ করাকে বলা হয় মুবলীস বা নিরাশ হওয়া।
হযরত মুয়ায (রহ) বলেছেনঃ চিন্তিত এবং হায় হুতাশ করাকে বলা হয় মুবলিস বা হতাশা। হাদীসের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ যখন ইবলিসকে পাকড়াও করলেন তখন ইবলিশ ফেরেশতাদের সাথেই ছিল। তখন জিবরাঈল (আ) ও মিকাঈল (আ) উভয়েই কাঁদতে লাগলেন। আল্লাহ বললেন, তোমাদের আবার কি হল? তোমরা কাঁদছ কেন? তারা দু’জন বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা কি নিজেদের আপনার পাকড়াও মুক্ত ভাবতে পারি? আল্লাহ বললেনঃ “তার মত হলে তোমরাও আমার পাকড়াও হতে রক্ষা পাবে না”।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দোয়াটি পাঠ করতেনঃ “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী ! আমাদের অন্তরসমূহকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন”। এরপর প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনি কি আমাদের বিগড়ে যাবার আশংকা করছেন? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বান্দার অন্তরগুলো করুণাময় আল্লাহর দু’টি আঙ্গুলের মধ্যে অবস্থিত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে এগুলো আবর্তন করতে পারেন”।

বুখারী শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, “কোন লোক হয়ত এমন আমল করতে থাকে যার দ্বারা সে জান্নাতী হতে পারে এবং সে নেক কাজ করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তার মধ্যে এবং জান্নাতের মধ্যে কেবল এক হাত দূরত্ব রয়েছে। এমন সময় তার তাকদীর প্রাধান্য লাভ করে। সে তখন এমন কাজ করে বসে যার জন্যে তাকে জাহান্নামে যেতে হয়”।
বুখারী শরীফে হযরত সাহল ইবন সাদ আল সায়িদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন কোন লোক জাহান্নামীদের আমল করে যাচ্ছে অথচ সে জান্নাতী আবার কেউ কেউ জান্নাতীর আমল করে যাচ্ছে অথচ সে জাহান্নামী। বস্তুত কোন ব্যক্তির শেষ জীবনের আমলই চূড়ান্ত বিবেচ্য”। আর যে কোন সময়েই আমাদের জীবনের শেষ মুহুর্ত চলে আসতে পারে।


আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বাল’আমের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তার জ্ঞান, প্রজ্ঞার পরে তার ঈমান ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে সীস নামক আবেদ ব্যক্তিও কাফের হয়ে মারা গেছে। বর্ণিত আছে যে, মিসরে এক ব্যক্তি সর্বদা মসজিদে থাকত এবং সে নামায পড়ত ও আযান দিত। তার চেহারায় ইবাদত ও আনুগত্যের আলোকচ্ছটা প্রকাশ পেয়েছিল। একদিন সে চিরাচরিত নিয়মে আযানের জন্যে মিনারায় আরোহণ করল, মিনারের নিচে ছিল এক খৃষ্টান যিম্মির বাড়ি। সে এ বাড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করলে খৃষ্টান বাড়িওয়ালার এক সুন্দরী কন্যাকে দেখতে পেল। এরপর সে এ মেয়েটির মোহে পড়ে গেল এবং আযান ছেড়ে দিয়ে এ বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হল। মেয়েটি তাকে দেখে বলল, তুমি কেন এখানে এসেছো এবং কি চাচ্ছো? সে বলল, তোমাকে চাচ্ছি। মেয়েটি বলল, অনিশ্চয়তা ও সংশয় নিয়ে তো তোমার ডাকে সাড়া দেয়া যায় না। সে তাকে বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করব। মেয়েটি বলল, তা কি করে হয়? তুমি তো মুসলমান, তোমার সাথে বিয়ে দিতে আমার আব্বা সম্মত হবেন না। সে বলল, আমি খৃষ্টান হয়ে যাব। মেয়েটি বলল, যদি তা হয় তাহলে আসো। এরপর সে এই মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করল আর তাকে বিয়ে করে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। এরপর সে এ দিনই ঘরের ছাদে উঠল এবং সেখান থেকে পড়ে মারা গেল। নির্মম পরিহাস, সে না দ্বীন নিয়ে কবরে যেতে পারল আর না সে এ মহিলাকে উপভোগ করে যেতে পারল। আমরা আল্লাহর কাছে তার মকরবাজির শিকার হওয়া ও অশুভ পরিণতি ও অবাঞ্ছিত পরিসমাপ্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।


আব্দুল্লাহ (রা) সূত্রে সালিম থেকে বর্ণিত, নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সময় “হে অন্তর পরিবর্তনকারী” বলে কসম করতেন।[বুখারী] অর্থাৎ, বিচিত্র মানুষের মন ও মনন। বাতাসের গতির চেয়েও দ্রুত মানুষের মনের পরিবর্তন হয়। তাই তো দেখা যায়, হঠাৎ করে সে কোন বস্তু গ্রহণ করছে, কোনটা অপেক্ষা করছে। কোনটা কামনা করছে, কোনটা সে অপছন্দ করছে। তাই তো আল্লাহ বলেছেন, “জেনে রাখ যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও অন্তরের অন্তবর্তী স্থানে অবস্থান করেন”। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত মুজাহিদ(রহ) বলেন, আল্লাহ মানুষ ও তার বিবেকের মাঝে বাধার সৃষ্টি করেন এমনকি সে জানে না যে, তার হাতের আঙ্গুলগুলো কি করে।
“যার বিবেক রয়েছে তার জন্যে এর মধ্যে উপদেশ রয়েছে”। ইমাম তাবারী (রহ) বলেন, এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি সুসংবাদ যে, তিনি বান্দার অন্তরের মালিক এবং তিনি বান্দা ও মনের মাঝে অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত বান্দা কিছুই করতে পারে না।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই বলতেন, “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! তুমি আমার অন্তরকে তোমার আনুগত্যের মাঝে স্থির রাখো”। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনি তো প্রায়ই এ দোয়া পাঠ করে থাকেন, আপনারও কি ভয় হচ্ছে? তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমিও নিরাপদ নই। মানুষের আত্মা করুণাময় আল্লাহর দুটি আঙ্গুলের মধ্যে অবস্থান করে। তিনি যে দিকে চান ফিরিয়ে দেন। যখন হেদায়েত উন্মুক্ত ও সর্বজন পরিচিত, হেদায়াতের উপর টিকে থাকা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। পরিণাম ও পরিণতি অজ্ঞতা এবং ইচ্ছাশক্তি অপরাজিত তখন তুমি তোমার ঈমান, নামায, রোযা এবং প্রতিপালকের সৃষ্টি এবং তার আত্মাভিমান করো না। এগুলো সবই তোমার প্রতিপালকের সৃষ্টি এবং তার অনুগ্রহ। তুমি যদি এর জন্যে গর্ববোধ কর তাহলে তা হবে পরের সামগ্রী নিয়ে গর্ব করার নামান্তর, অনেক সময় তা কেড়ে নেয়া হয়, তখন তোমার কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়। তুমি তোমার অন্তর থেকে গাধাটিকে বের করে দাও।
মূলঃ কবীরা গুনাহ –ইমাম আযযাহাবী (রহ)
লেখাটি পড়া শেষে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার মাধ্যমে শুরু হওয়া পরবর্তী প্রত্যেকের ভালো কাজের সওয়াব ও পুরষ্কারের অধিকারী হবেন ইনশাল্লাহ !
“কেহ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে,তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা, আর কেহ ভ্রান্ত পথে ডাকলে যতজন তার অনুসারী হবে প্রত্যেকের গুনাহের সমান ভাগ সে পাবে, তবে অন্যদের গোনাহে কোন প্রকার কমানো হবেনা”।
{সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪}

প্রকৃত ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য

যে সমাজের মানুষের ছোট থেকে বড়, ব্যক্তিগত থেকে রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক, কোর্ট-কাচারি, অর্থনীতিসহ সকল বিষয় আল্লাহর গোলামীর মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে আল্লাহর আইন দ্বারা পরিচালিত হয় সেই সমাজকেই কেবল সত্যিকার অর্থে ইসলামী সমাজ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ সমাজের মানুষের চিন্তা-চেতনা, শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, আইন-কানুন তথা সকল কাজের মধ্য দিয়েই যারা প্রমাণ করে যে, তারা একমাত্র আল্লাহরই গোলামী করে যাচ্ছে-এমন সমাজই হলো ইসলামী সমাজ। আর কালেমা শাহাদাত এ ধরনের আল্লাহর দাসত্বমূলক জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে নেয়ার মৌখিক স্বীকৃতি দেয় এবং বাস্তব জীবনে তা পালনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে।

”আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না ,উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর। যা কিছু নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আছে তা সবই তাঁর জন্য নিবেদিত। (এরপরও কি) তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে?” [সূরা আন নাহল: ৫১-৫২]
ঠিক তেমনিভাবে কোনো ব্যাক্তি যদি আল্লাহর শক্তিক্ষমতা ছাড়া অন্য কারো শক্তিক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রতিপত্তির কাছে আত্নসমর্পণ করে কিংবা কোনো ধরনের জাহেলি আদর্শের সাথে আপস করে, তাহলে সে নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর গোলামী স্বীকার করে নেয়নি। কেননা, আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন,
”তুমি বল: আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।” [সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩]
এরপর যদি কোন ব্যক্তি তার জীবনের কিছু অংশ মানুষের বানানো আইনানুসারে পরিচালনা করে তাহলে সেও আল্লাহর দাসত্ব থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে। যেমন বর্তমান সমাজের মানুষের নামায,রোযা,হজ্জ, যাকাত,বিয়ে-তালাকের ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন-কানুনের কিছু মানলেও তাদের সমাজনীতি, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন,কোর্ট-কাচারি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই নির্বাচিত কিছু লোকদের রচিত আইন-কানুন মেনে চলছে। যা প্রচ্ছন্ন শিরক। তারা এসব নির্বাচিত ব্যক্তিদেরকে আইন রচনার ক্ষমতায় সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছে। এদের লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন,
”তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা এদের জন্য এমন কোনো জীবন-বিধান প্রণয়ন করে দিয়েছে,যার অনুমতি আল্লাহ তাআলা দেননি ? ” [সূরা শূরা: ২১]
”রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” [সূরা হাশর: ৭]
এই মূলনীতি থেকে ইসলামী সমাজের সদস্যরা জীবন চলার নীতি নির্ধারণ করবে এবং সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের প্রতিফলন ঘটাবে। আকিদা-বিশ্বাস, আইন-কানুন,রীতি-নীতি,শিল্প-সংস্কৃতি-এর কোনো একটি অধ্যায়ও যদি আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি থকে বঞ্চিত হয় তাহলে ওই সমাজের ইসলাম থেকে বিচ্যুতি ঘটে। কারণ, এর প্রত্যেকটি অধ্যায়ের সাথে কালেমা শাহাদাত-এর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এ সম্পর্কের মাঝে সামান্য কোনো ফাটল সৃষ্টি হলেও তা চরম পরিণতি বয়ে আনে। সমাজের সকল স্তরে এ কালেমার শর্তহীন ও পুংখানুপুংখ বাস্তবায়ন ছাড়া ইসলামী সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়।
তাই এসব সমাজের গতানুগতিক সদস্য হয়ে এবং মুখে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে মানুষকে বোকা বানানো যেতে পারে; কিন্তু যিনি সব দেখেন, সব শোনেন,তাঁর কাছে এগুলো কোনো মূল্য বহন করে না।
যারা নিজেদের মন ও জীবনকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তি আনুগত্য থকে পুরোপুরি মুক্ত ও পবিত্র করেছে তাদেরকে নিয়ে একটি উম্মাহ গড়ে তুলতে হবে এবং তারাই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় সদস্য হওয়ার যোগ্য। তাদের সমাজই কেবল ইসলামী সমাজ হতে পারে, যাদের জীবন হবে কালেমার বাস্তবচিত্র, তারাই হবে এই সংগ্রামী কাফেলার অগ্রনায়ক।
ইসলামী প্রথম সোনালি সমাজ এ প্রক্রিয়াতেই গঠিত হয়েছিলো এবং ভবিষ্যতে হলেও এ পদ্ধতিতে হতে হবে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার এটাই শাশ্বত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন উপায়ে ইসলামী সমাজ গঠন হতে পারে না।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তির নিরঙ্কুশ ও শর্তহীন আনুগত্য-(তা পূর্নাঙ্গ আনুগত্য হোক বা আংশিক) নিঃসন্দেহে শিরক। তাই সামষ্টিকভাবে সমাজের মানুষেরা সকল অপশক্তির আনুগত্য থেকে মুক্ত হতে পারলে তারপরই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সাইয়্যেদ কুতুবের ‘মাইলস্টোন’ বই থেকে চয়ন করা হয়েছে।

শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

অনুরাগ ও আত্মোৎসর্গ

হযরত আবু বকর (রা) এর ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় একবার তাঁর উপর শত্রুরা আক্রমণ করে বসে। ওৎবা ইবন রবী’আ তাঁকে নির্দয়ভাবে প্রহার করেছিল। ফলে তাঁর চেহারা এমনভাবে ফুলে গিয়েছিল,তাঁকে দেখে চেনাই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। বনু তামীম তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে তাঁর ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল। তিনি যে তাতে নির্ঘাত মারা যাবেন তাতে কারো কোন সন্দেহ ছিল না। বেলা ডোবার পর তিনি জ্ঞান ফিরে পান। তারপর তিনি প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খবর কি ? তিনি কেমন আছেন?’ লোকে তাঁর একথা শুনতেই ক্রোধান্বিত হয়, এই অবস্থাতেও তিনি তাঁরই কথা স্মরণ করছেন যাঁর কারণে আজ তাঁর এই করুণ হাল! এজন্যে তারা তাঁকে কটুকাটব্য ও ভর্ৎসনা করতে লাগল। তারা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মা উম্মুল খায়রকে ডেকে বলল, ‘দেখুন! তাঁর কিছু খানাপিনার ব্যবস্থা করুন’। মা তাকে খাবার গ্রহণের জন্যে অনেক পীড়াপীড়ি করলেন। কিন্তু তাঁর মুখে সেই একই কথা, ‘বল ! আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথী সম্পর্কে কিছুই জানি না’।
তখন তিনি তাঁর মাকে বললেন, আপনি খাত্তাব কন্যা উম্মু জামিলের কাছে যান এবং তাঁর কুশল জেনে এসে আমাকে জানান। তিনি উম্মু জামীলের নিকট গিয়ে বললেন, আবু বকর মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহর কুশল জানতে চাচ্ছে। উম্মু জামীল বললেন, আমি আবু বকরকেও চিনি না আর মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহকেও জানি না। আপনারা যদি চান বরং আপনার সাথে গিয়ে আপনার ছেলেকে এক নজর দেখে আসতে পারি। তিনি সম্মতি জানিয়ে বললেন, ঠিক আছে, চলুন।
এরপর উভয়ে একত্রে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকটে এসে তাঁকে ঐ অবস্থায় দেখতে পেলেন। উম্মু জামীল আবু বকর(রা) এর একেবারে কাছাকাছি গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখলেন এবং বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যে সম্প্রদায় আপনার সাথে এরূপ (নিষ্ঠুর ও নির্দয়) আচরণ করেছে তারা দুরাচার ও কাফির। আমি আশা করি আল্লাহ তাদের থেকে আপনার প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। হযরত আবু বকর(রা) তাকে বললেন, ‘আগে বলুন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবস্থা কেমন? তিনি কেমন আছেন’? উম্মু জামীল বললেন, ‘আপনার মা তো শুনতে পাচ্ছেন’। তিনি বললেন, ‘তাঁর পক্ষ থেকে ভয় পাবার কিছু নেই। আপনি স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন’। উম্মু জামীল তখন বললেন, ‘তিনি সুস্থ আছেন এবং ভালো আছেন’।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তিনি এখন কোথায়? বললেন, তিনি এখন আরকামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। আবু বকর (রা) বললেন, আল্লাহর কসম ! এখন আমি আর পানাহার করতে পারি না যতক্ষণ না আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে গিয়ে হাজির হই। এরপর তাঁরা উভয়ে কিছুটা অপেক্ষা করলেন। রাত হলো এবং মানুষের চলাফেরা এবং আনাগোনা যখন কমে গেলো তখন উম্মু জামীল আবু বকর (রা) কে নিয়ে আরকামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে গিয়ে হাজির হলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখা মাত্রই যেন জীবন ফিরে পেলেন । এরপর তিনি পানাহার করলেন। (১)
জনৈক আনসারী মহিলা, যাঁর বাপ,ভাই,স্বামী ওহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে শাহাদাত লাভ করেছিলেন, নিজ আবাস থেকে বেরিয়ে লোকদের জিজ্ঞেস করতে লাগলেন; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খবর কি? তিনি কেমন আছেন? লোকেরা জওয়াবে বলল, আলহামদুলিল্লাহ! তিনি ভালো আছেন,সুস্থ আছেন ,যেমনটি তুমি চাও। মহিলাটি বলল, আমাকে দেখাও।আমি হুজুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে চাই। এরপর মহিলা হুজুর আকরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখা মাত্রই আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলে উঠলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনাকে দেখার পর আর সব বিপদ-আপদই তুচ্ছ।(২)

হযরত খুবায়ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শূলে চড়ানো হয়। শূলে চড়াবার পূর্বে কাফিররা তার ঈমানের পরীক্ষা নেবার জন্যে বলেছিল, আমরা তোমাকে মুক্তি দিতে পারি যদি তুমি এতে রাজি থাক, আমরা তোমাকে মুক্তি দেই আর তোমার স্থলে মুহাম্মদ(সা) কে ফাঁসি দেই। একথা শুনতেই তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! আমি তো এও পছন্দ করি না, তাঁর পায়ে একটা কাঁটা বিধুক আর আমি তার বিনিময়ে মুক্তি পাই। খুবায়ব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কথায় তারা সকলেই হেসে উঠে।(৩)
হযরত যায়িদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সাদ ইবনুর রবী’র সন্ধানে পাঠালেন এবং বললেন, যদি তুমি তাকে পাও তবে তাকে আমার সালাম বলবে এবং বলবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে চেয়েছেন তুমি এখন কেমন বোধ করছ। যায়দ (রা) বললেন, আমি নিহতদের মধ্যে ঘুরতে লাগলাম। এরপর তাঁকে পেতেই গিয়ে দেখলাম, তাঁর অন্তিম মুহুর্ত সমাগত। তাঁর শরীরে তীর, তলোয়ার ও বল্লমের সত্তরটির মতো আঘাত। আমি তাঁকে বললাম, সা’দ ! আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং জানতে চেয়েছেন, আপনার অবস্থা এখন কেমন? আপনি কেমন বোধ করছেন? উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমার সালাম বলবে এবং আরও বলবে, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি জান্নাতের খোশবু পাচ্ছি। আর আমার সম্প্রদায় আনসারদের বলবে, যদি তোমাদের অনাবধানতায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু হয়ে যায়, এমতাবস্থায় যদি তোমাদের একটি চোখও অক্ষত থাকে তাহলে আল্লাহর দরবারে তোমাদের কোন ওজর থাকবে না। এর পরক্ষণেই তাঁর প্রাণ বেরিয়ে যায়। (৪)

ওহুদ যুদ্ধের দিন সাহাবী হযরত আবু দুজানা রাদিয়াল্লাহু আনহু কাফিরদের নিক্ষিপ্ত তীর-তলোয়ারের হাত থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বাঁচাতে গিয়ে আপন পৃষ্ঠদেশকে ঢালের ন্যায় পেতে দিয়েছিলেন। নিক্ষিপ্ত তীরগুলো তাঁর পিঠে এসে লাগত আর তিনি এক চুলও নড়াচড়া করতেন না।(৫) মালিক আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষতস্থান থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত চুষে খেয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। যায়দ(রা) তাঁকে থুতু ফেলতে বলেন। কিন্তু তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম ! আমি কখনোই থুতু ফেলব না। (৬)
আবু সুফিয়ান যখন মদীনায় এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর নিজ কন্যা উম্মুল মুমীনিন হযরত উম্মু হাবীবা(রা) এর ঘরে গিয়ে উঠেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানায় বসতে উদ্যত হন। উম্মু হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা তৎক্ষণাৎ বিছানা উল্টিয়ে দেন। বিস্মিত আবু সুফিয়ান কন্যাকে বললেন, বেটি ! আমি জানি না, তুমি কি আমাকে এই বিছানার উপযুক্ত মনে করনি নাকি এই বিছানাই আমার উপযুক্ত নয় বলে মনে করেছ। উম্মু হাবীবা(রা) বলেন, না, তা নয়, বরং এ বিছানা স্বয়ং আল্লাহর রাসূলের আর আপনি মুশরিক বিধায় অপবিত্র।(অতএব, আপনি এ বিছানায় বসার উপযুক্ত নন)।(৭)
ওরওয়া ইবন মাসউদ ছাকাফী হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আপন সঙ্গী-সাথীদের বলেছিলেন, লোক সকল ! আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি রাজা-বাদশাহদের দরবারে গিয়েছি। পারস্য সম্রাট কিসরা, রোম সম্রাট কায়সার ও আবিসিনিয়ার অধিপতি সম্রাট নাজাশীর দরবারেও গিয়েছি, দেখেছি। আল্লাহর কসম ! মুহাম্মদের (সা) সাথীরা মুহাম্মদকে(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যতটা সম্মান ও সমীহ করে, ততটা সম্মান ও সমীহ কোন রাজা বাদশাহর সাথীদেরকে তাদের রাজা বাদশাহদেরকে করতে দেখিনি। আল্লাহর কসম করে বলছি, যখন তিনি থুতু ফেলেন তখন তা তাদেরই কারো হাতের উপর গিয়ে পড়ে। আর অমনি তাঁরা তা তাঁদের মুখমণ্ডল ও শরীরে মেখে নেয়। যখন তিনি কোন কাজের নির্দেশ দেন অমনি সকলে সেই নির্দেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তিনি যখন ওযু করেন তখন সেই গড়িয়ে পড়া পানি সংগ্রহের জন্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। তিনি যখন কথা বলেন, তখন তারা নিজেদের স্বর নিচু করে দেয় এবং অতিরিক্ত শ্রদ্ধাবশত তারা কখনোই তাঁর চেহারার দিকে গভীর ও পরিপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় না। (৮)
___________________________________________
(১) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবন কাসীর কৃত, ২য় খণ্ড, ৩০ পৃ
(২)ইবন ইসহাক ও বায়হাকী
(৩)আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪খ, ৬৩ পৃ
(৪)যাদুল মা’আদ, ২খ, ১৩৪
(৫)যাদুল মা’আদ,১৩০ পৃ
(৬)যাদুল মা’আদ, ২য় খ, ১৩৬ পৃ
(৭) সীরাত ইবন হিশাম
(৮) যাদুল মা’আদ, ২খ, ১২৫ পৃ
মূলঃ মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী(র)