আরব
অনারব সকলেই অত্যন্ত বিকৃত জীবন যাপন করছিল। এমন প্রতিটি সত্তা যা মানুষের
সেবার জন্যে পয়দা করা হয়েছিল, অস্তিত্ব লাভ করেছিল কেবল তার জন্য এবং যা
ছিল তারই অধীন, যেভাবে চাইবে ব্যবহার করবে, আদেশ নিষেধ, শাস্তি দান কিংবা
পুরষ্কার প্রদানের একবিন্দু ক্ষমতা নেই যার, সে সবের তারা পূজা অর্চনা করতে
শুরু করেছিল। তারা একেবারেই ভাসাভাসা ও বিক্ষিপ্ত একটি ধর্মে বিশ্বাসী
ছিল। জীবন জিন্দেগীতে যার কোন প্রভাব কিংবা তাদের স্বভাব-চরিত্রে, হৃদয় মনে
ও আত্মার উপর যার কোন ক্ষমতা ছিল না।
আমাদের জানা মতে আজ পর্যন্ত এমন কোন সুশৃংখল নীতি কিংবা বিধান, এমন কোন সভ্যতা-সংস্কৃতি ও এমন কোন সমাজ জন্ম নেয়নি যা কেবল নেতিবাচক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রীক দর্শনের প্রভাবাধীন মহলে ধর্ম ও মহাদর্শ ভয় ভীতি মিশ্রিত বিনয় ও শ্রদ্ধা, আকস্মিক দুর্ঘটনা ও বিপর আপদের মূহুর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে মনোনিবেশ, প্রেম ও ভালোবাসার রুহ থেকে একদম শূণ্য ছিল। ঠিক তদ্রুপ সেই যুগের বিভিন্ন ধর্মও প্রাণ হারিয়ে ফেলেছিল এবং কতগুলো নিষ্প্রাণ আচার অনুষ্ঠান ও প্রাণহীন অনুকরণসর্বস্ব প্রথা-পার্বণেই পর্যবসিত হয়েছিল।
মুসলিম উম্মাহ ও আরব জাতিগোষ্ঠী এই অসুস্থ, অস্পস্ট ও নিস্প্রাণ পরিচিতির আবহ থেকে বেরিয়ে এমন এক সুস্পষ্ট ও গভীর আকীদা-বিশ্বাস অবধি গিয়ে পৌঁছে যায় যার নিয়ন্ত্রণ ছিল হৃদয় মন ও অংগ প্রত্যঙ্গের উপর, যা সমাজকে প্রভাবিত করার মত জীবন জিন্দেগী ও জীবনের নানা অনুষঙ্গের উপর জেঁকে বসা। ওই সব লোক এমন এক পবিত্র সত্তার উপর ঈমান এনেছিলেন যাঁর রয়েছে সর্বোত্তম নাম, সর্বোচ্চ শান। তাঁরা এমন রাব্বুল আলামীনের ওপর ঈমান এনেছিলেন যিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু, কিয়ামত দিবসের নিরংকুশ মালিক-মুখতার ও রাজাধিরাজ।
এই গভীর, বিশাল-বিস্তৃত ও সুস্পষ্ট ঈমান দ্বারা ঐ সমস্ত লোকের মন-মানসিকতার আশ্চর্য রকমের পরিবর্তন ঘটে। কেউ যখন আল্লাহর উপর ঈমান আনত এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দিত অমনি তাঁর জীবনে এক বিরাট বিপ্লব সংঘটিত হতো। তার ভেতর ঈমান অনুপ্রবিষ্ট হতো, ইয়াকিন তার শিরা উপশিরায় সঞ্চারিত হতো এবং তার শরীরে রক্ত ও প্রাণ সঞ্জীবনীর ন্যায় দ্রুত সঞ্চালিত হতো । জাহেলিয়াতের জীবাণুগুলো খতম করে দিত এবং মূলে উৎখাত করে ছাড়ত। মন মস্তিস্ক এর ফয়েজ দ্বারা মন্ডিত হতো এবং সেই লোকটি আর পূর্বের ন্যায় থাকতো না। এই লোক দ্বারা ধৈর্য, শৌর্যবীর্য ও ঈমান-য়াকীনের এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা সংঘটিত হতো যে, আক্কেল গুড়ুম হবার মত এবং দর্শন ও নৈতিকতার ইতিহাস বিস্ময়ে বোবা বনে যাবে। ঈমানী শক্তি ছাড়া এর আর কোন হেতু বা ব্যাখ্যা হতে পারে না।
মূলঃ মা’যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন
মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো ? – মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী(র)
চরিত্র ও সমাজ আদৌ এই ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব তাদের দৃষ্টিতে এমন ছিল যেমন একজন শিল্পী কিংবা কারিগর তার কাজ শেষ করে সরে পড়েছে এবং নির্জনতা বেছে নিয়েছে। তাদের ধারণায়, আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাম্রাজ্য সেই সব লোকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন যাদেরকে তিনি রুবুবিয়তের খেলাত দ্বারা ধন্য করেছিলেন। এখন তারাই ক্ষমতাসীন এবং সাম্রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক। জীবিকা বন্টন, রাজ্যের আইন শৃংখলা রক্ষা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা তাদের এখতিয়ারাধীনে। মোটের উপর একটি সুসংহত ও সুশৃংখল হুকুমতের যতগুলো শাখা ও বিভাগ থাকে তার সবই তাদের ব্যবস্থাপনাধীনে।
আল্লাহ তায়ালার উপর তাদের ঈমান এক ঐতিহাসিক অবহিতির চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। আল্লাহকে প্রভূ প্রতিপালক মনে করা, তাঁকে আসমান যমীনের স্রষ্টা মানা তেমনই ছিল যেমন ইতিহাসের কোন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই প্রাচীন ইমারতটি কে নির্মাণ করেছিলেন? ছাত্রটি উত্তরে কোন বাদশাহর নাম বলল। বাদশাহর নাম বলায় তাঁর দিলের উপর যেমন কোনরুপ ভয়-ভীতি যেমন দেখা দেবে না, তেমনি তার মস্তিস্কের উপর কোন প্রভাবও পড়বে না। এসব লোকের হৃদয় আল্লাহ তায়ালার ভয়, বিনয়মিশ্রিত ভক্তি-শ্রদ্ধা ও দোয়া থেকে শূন্য ছিল। আল্লাহর গুনাবলী সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞ বেখবর ছিল। এজন্য তাদের দিলে তাঁর প্রতি অনুরাগ, তাঁর আজমত ও বড়ত্বের কোন চিত্র ছিল না। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তাদের খুবই অস্পষ্ট, ভাসা ভাসা ধারণা ছিল যার ভেতর কোন গভীরতা ও শক্তি ছিল না।গ্রীক দর্শন আল্লাহ তায়ালার সত্তার পরিচিতির ধারাবাহিকতায় বেশির ভাগ নেতিবাচকতার আশ্রয় নিয়েছে। সে তাঁর (আল্লাহর) গুণাবলীকে অস্বীকার করেছে এবং এর দীর্ঘ ফিরিস্তি কায়েম করেছে যার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কোন হ্যাঁ-বাচক প্রশংসা এবং কোন ইতিবাচক গুণ নেই। তাঁর কুদরতের উল্লেখও এতে নেই, নেই এতে তাঁর রবূবিয়তের কথা কিংবা আলোচনা। তাঁর সীমাহীন অনুদান, তাঁর অপরিমেয় দয়া দাক্ষিণ্যের কথাও এতে নেই। এই দর্শন ‘প্রথম সৃষ্টি’ তো প্রমাণ করেছে। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও এখতিয়ার এবং ইচ্ছা ও গুণাবলীকে অস্বীকার করেছে এবং নিজের পক্ষ থেকে এমন সব মূলনীতি তৈরি করেছে যা সেই মহান সত্তাকে খাটোকরণ ও তাঁর সৃষ্টিজগতের ওপর অনুমান নির্ভর করে প্রণিত। আর এ কথা তো স্পষ্ট, শত শত নেতিবাচক মিলেও একটই ইতিবাচকের সমান হতে পারে না।
আমাদের জানা মতে আজ পর্যন্ত এমন কোন সুশৃংখল নীতি কিংবা বিধান, এমন কোন সভ্যতা-সংস্কৃতি ও এমন কোন সমাজ জন্ম নেয়নি যা কেবল নেতিবাচক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রীক দর্শনের প্রভাবাধীন মহলে ধর্ম ও মহাদর্শ ভয় ভীতি মিশ্রিত বিনয় ও শ্রদ্ধা, আকস্মিক দুর্ঘটনা ও বিপর আপদের মূহুর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে মনোনিবেশ, প্রেম ও ভালোবাসার রুহ থেকে একদম শূণ্য ছিল। ঠিক তদ্রুপ সেই যুগের বিভিন্ন ধর্মও প্রাণ হারিয়ে ফেলেছিল এবং কতগুলো নিষ্প্রাণ আচার অনুষ্ঠান ও প্রাণহীন অনুকরণসর্বস্ব প্রথা-পার্বণেই পর্যবসিত হয়েছিল।
মুসলিম উম্মাহ ও আরব জাতিগোষ্ঠী এই অসুস্থ, অস্পস্ট ও নিস্প্রাণ পরিচিতির আবহ থেকে বেরিয়ে এমন এক সুস্পষ্ট ও গভীর আকীদা-বিশ্বাস অবধি গিয়ে পৌঁছে যায় যার নিয়ন্ত্রণ ছিল হৃদয় মন ও অংগ প্রত্যঙ্গের উপর, যা সমাজকে প্রভাবিত করার মত জীবন জিন্দেগী ও জীবনের নানা অনুষঙ্গের উপর জেঁকে বসা। ওই সব লোক এমন এক পবিত্র সত্তার উপর ঈমান এনেছিলেন যাঁর রয়েছে সর্বোত্তম নাম, সর্বোচ্চ শান। তাঁরা এমন রাব্বুল আলামীনের ওপর ঈমান এনেছিলেন যিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু, কিয়ামত দিবসের নিরংকুশ মালিক-মুখতার ও রাজাধিরাজ।
“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনি পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; ওরা যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র, মহান। তিনিই আল্লাহ, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, সকল উত্তম নাম তাঁরই। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা হাশর ৫৯; ২২-২৪]যিনি এই বিশাল জগত ও বিশ্ব কারাখানার স্রষ্টা, মালিক ও পরিচালনাকারী, যাঁর কুদরতী কব্জায় তামাম বিশ্ব জাহানের বাগডোর। যিনি আশ্রয় দেন, আর তাঁর মুকাবিলায় কেউ কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না। জান্নাত তাঁর পুরষ্কার ও জাহান্নাম তাঁর শাস্তি। তিনি যাকে ইচ্ছা রিযিকে প্রশস্ততা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা রিযিক সংকুচিত করেন। আসমান যমীনের সকল গুপ্ত বিষয় তিনি জানেন। চোখের গোপন চাহনি ও দিলের নিভৃত কন্দরে লুক্কায়িত রহস্য তিনিই সম্যক অবগত। তিনি সৌন্দর্য, পূর্ণতা, ভালোবাসা ও দয়ামায়ার আধার।
এই গভীর, বিশাল-বিস্তৃত ও সুস্পষ্ট ঈমান দ্বারা ঐ সমস্ত লোকের মন-মানসিকতার আশ্চর্য রকমের পরিবর্তন ঘটে। কেউ যখন আল্লাহর উপর ঈমান আনত এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দিত অমনি তাঁর জীবনে এক বিরাট বিপ্লব সংঘটিত হতো। তার ভেতর ঈমান অনুপ্রবিষ্ট হতো, ইয়াকিন তার শিরা উপশিরায় সঞ্চারিত হতো এবং তার শরীরে রক্ত ও প্রাণ সঞ্জীবনীর ন্যায় দ্রুত সঞ্চালিত হতো । জাহেলিয়াতের জীবাণুগুলো খতম করে দিত এবং মূলে উৎখাত করে ছাড়ত। মন মস্তিস্ক এর ফয়েজ দ্বারা মন্ডিত হতো এবং সেই লোকটি আর পূর্বের ন্যায় থাকতো না। এই লোক দ্বারা ধৈর্য, শৌর্যবীর্য ও ঈমান-য়াকীনের এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা সংঘটিত হতো যে, আক্কেল গুড়ুম হবার মত এবং দর্শন ও নৈতিকতার ইতিহাস বিস্ময়ে বোবা বনে যাবে। ঈমানী শক্তি ছাড়া এর আর কোন হেতু বা ব্যাখ্যা হতে পারে না।
মূলঃ মা’যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন
মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো ? – মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী(র)