সালাহ/নামায লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সালাহ/নামায লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

প্রসঙ্গঃ তারাবীর সালাত

তারাবীহর সলাত


প্রশ্ন ১২৭ : তারাবীহ অর্থ কি? এ সলাতকে কেন তারাবীহ নামকরণ করা হল?
উত্তর : তারাবীহ শব্দের অর্থ বিশ্রাম করা। তারাবীহ বহু দীর্ঘায়িত একটি সলাত। প্রতি চার রাকআত শেষে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে সেজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে তারাবীহ।

প্রশ্ন ১২৮ : রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র তারাবীহর সালাত কী ধরণের বৈশিষ্ট মণ্ডিত ছিল?
উত্তর : লম্বা ও অনেক আয়াত এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে তিনি তারাবীহ পড়তেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ রাতের একাকী সকল সালাতই ছিল অতি দীর্ঘ। এমনকি কিয়াম, রুকু, সাজদা সবই ছিল খুব লম্বা ও ধীরস্থির।
আসসায়িব ইবনে ইয়াযিদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন :
كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئْيِنَ يَعْنِي بِمِئَاتِ الآيَاتِ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعَصَى مِنْ طُوْلِ الْقِيَامِ
অর্থাৎ ইমাম (পাঠক) সাহেব তারাবীহতে শত শত আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাড়ানোর কারণে আমরা লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। (মুয়াত্তা)

প্রশ্ন ১২৯ : তারাবীহ সর্বপ্রথম কোথায় চালু হয়।
উ: আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মসজিদে নববীতে তারাবীহর সালাত সুন্নাত হিসেবে চালু করেন।

প্রশ্ন ১৩০ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নিয়মিত প্রত্যহ জামা‘আতের সাথে তারাবীহ পড়তেন?
উত্তর : না। সাহাবায়ে কিরাম দুই বা তিন রাত্রি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র ইমামতিতে তারাবীহ পড়েছিলেন। উম্মাতের উপর এ সলাত ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে জামাআতের সাথে মসজিদে তারাবীহ পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,
وَلَمْ يَمْنَعْنِيْ مِنَ الْخُرُوْجِ إِلَيْكُمْ إِلاَّ أَنِّيْ خَشِيْتُ أَنْ تُفْتَرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِيْ رَمَضَانَ
অর্থাৎ (তারাবীহর সালাতে মসজিদে তোমরা একত্রিত হয়ে আমার জন্য যেভাবে অপেক্ষা করছিলে তা সবই আমি দেখেছি) কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল (আমি নিয়মিত এ সলাত আদায় করলে) তা তোমাদের জন্য ফরয হয়ে যেতে পারে। সে কারণে আমি (এ সালাতের জন্য) ঘর থেকে বের হইনি। আর এ ঘটনাটি ছিল রমযান মাসের ( কোন এক রাতে)। (বুখারী ও মুসলিম)

প্রশ্ন ১৩১ : তারাবীহর সলাত কত রাক‘আত?
উত্তর : এটি একটি ইখতিলাফী অর্থাৎ মতবিরোধ পূর্ণ মাস্আলা। কেউ কেউ বলেছেন বিতরসহ তারাবীহ ৪১ রাক‘আত। অর্থাৎ বিতর ৩ রাকআত হলে তারাবীহ হবে ৩৮ রাক‘আত। অথবা বিতর ১ রাকআত ও তারাবীহ ৪০ রাকআত। এভাবে তারাবীহ ও বিতর মিলে :
কেউ বলেছেন ৩৯ রাকআত (তারাবীহ ৩৬ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ২৯ রাকআত (তারাবীহ ২৬ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ২৩ রাকআত (তারাবীহ ২০ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ১৯ রাকআত (তারাবীহ ১৬ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ১৩ রাকআত (তারাবীহ ১১ + বিতর ৩)
কেউ বলেছেন ১১ রাকআত (তারাবীহ ৮ + বিতর ৩)
(ক) বিতর ছাড়া ২০ রাক‘আত তারাবীহ সলাতের পক্ষে দলীল হল মুসান্নাতে আঃ রায্যাক হতে বর্ণিত ৭৭৩০ নং হাদীস, যেখানে বর্ণিত হয়েছে :
أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَي بنِ كَعَبٍ وَعَلَى تَمِيْمِ الدَّارِيْ عَلَى إِحْد‘ى وَعِشْرِيْنَ مِنْ رَكْعَةِ يَقْرَؤُنَ بِالْمَئِيين
উমার (রাযি.) রমযানে উবাই ইবনে কাব ও তামীম আদদারীকে ইমামতিতে লোকদেরকে একুশ রাকআত সলাতের প্রতি জামাআতবদ্ধ করেছিলেন। (অর্থাৎ তারাবীহ ২০ ও বিতর ১ রাকআত)
(খ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন যে,
كَانَتْ صَلاَةُ النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- ثَلاَثَ عَشَرَةَ رَكْعَةً يَعْنِيْ مِنَ اللَّيْلِ
“নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র রাতের সালাত ছিল ১৩ রাক‘আত।” (বুখারী ও মুসলিম)
(গ) মা আয়িশাহ  বলেন,
مَا كَانَ يَزِيْدُ فِيْ رَمَضَانَ وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْد‘ى عَشَرَةَ رَكْعَةً
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্য সময়ে (রাতে) ১১ রাকআতের অধিক সলাত আদায় করতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)
(ঘ) ইবনে ইয়াযিদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,
أَمَرَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أُبَيْ بْنِ كَعَبٍ وَتَمِيْمَا الدَّارِيِّ أَن يَّقُوْمَ لِلنَّاسِ بِإحْد‘ى عَشَرَةَ رَكْعَةٍ
‘উমার ইবনু খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু (তার দুই সঙ্গী সাহাবী) উবাই ইবনে কাব তামীম আদদারীকে এ মর্মে নির্দেশ দিলেন যে, তারা যেন লোকদেরকে নিয়ে (রমযানের রাতে) ১১ রাকআত কিয়ামুল্লাইল (অর্থাৎ তারাবীহর সলাত) আদায় করে। (মুয়াত্তা মালেক)
উল্লেখ্য যে, সৌদী আরবের মসজিদগুলোতে তারাবীহ ও বিতর মিলে ১১ বা ১৩ রাকআত পড়লেও মাক্কার হারামে ও মাদীনার মসজিদে নববীতে তারাবীহ ২০ এবং বিতর ৩ মিলিয়ে মোট ২৩ রাকআত পড়ে থাকে।

প্রশ্ন ১৩২ : তারাবীহর সংখ্যার মতবিরোধের মধ্যে কোনটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য?
উত্তর : মালেকী মাযহাবের ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন, একশ বছরেরও বেশী সময় ধরে লোকেরা ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়েছে। শাফেঈ মাযহাবের ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন যে, তিনি তারাবীহ মদীনায় ৩৬ এবং মাক্কায় ২০ রাকআত পড়তে দেখেছেন। সৌদী আরবের গ্র্যান্ড মুফতী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) ১০ ও আট রাকআতের মাসআলাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
এজাতীয় মত পার্থক্যের সমাধানকল্পে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহ.) বলেছেন, অধিক সংখ্যক রাকআত পড়াই উত্তম। আর যদি কেউ কম সংখ্যক রাকআত পড়তে চায় তাহলে তার উচিত হবে তিলাওয়াত, কিয়াম, রুকু ও সিজদা দীর্ঘ করা। তিনি আরো বলেছেন যে, তারাবীহকে রাকআত সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং সময় ব্যয়ের পরিমাণ দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ১১ রাকআতের মধ্যে ৫ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করেছেন। সালাতের কিয়ামে এত দীর্ঘ সময় কেটে যেত যার কারণে সাহাবীগণ লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
সবশেষে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) আরেকটি মত ব্যক্ত করে বলেছেন যে, সার্বিক বিশ্লেষণে তারাবীহ ২০ রাকআত পড়াই উত্তম। কারণ এটা ১০ ও ৪০ রাকআতের মাঝামাঝি এবং বেশির ভাগ মুসলমানের আমলও এরই উপর।
তবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, আমাদের দেশে তারাবীহ যেভাবে তাড়াহুড়া করে পড়া হয় তা পরিহার করে বিশুদ্ধ ও ধীরস্থির তিলাওয়াত, রুকু থেকে উঠার পর এবং দু’ সিজদার মাঝে আরো একটু সময়ক্ষেপণ করা, সুন্নাত মোতাবিক ও ধীরস্থিরভাবে রুকু-সিজদাহ ইত্যাদি সুন্দর করে তারাবীহ আদায় করা অত্যাবশ্যক। যে পদ্ধতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সলাত আদায় করতেন আমাদেরও উচিত সে তরীকামত আদায় করা।

প্রশ্ন ১৩২ : তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের ফযীলত জানতে চাই।
উত্তর : (ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَاتَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সাওয়াবের আশায় রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্ববতী (সগীরা) গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
إِيْمَانًا ঈমান অবস্থায় অর্থ হল, এমন বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তাকে এ কাজের বদলা দিবেন এবং اِحْتِسَابًا অর্থ হল, এমনভাবে সাওয়াব আশা করবে যে, রাতের এ সালাত আদায় কোন মানুষকে দেখাবার বা শুনাবার জন্য নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য এবং তা শুধুমাত্র আল্লাহরই কাছ থেকে পুরস্কার লাভের আশায়।
(খ) অন্য হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
أََفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ
ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত)। (মুসলিম)

প্রশ্ন ১৩৩ : তারাবীহ সলাতের জামাআতে নারীদের শরীক হওয়া কি জায়েয?
উত্তর : ফিতনা-ফ্যাসাদের আশঙ্কা না থাকলে মাসজিদে তারাবীহর জামা‘আতে হাজির হওয়া মেয়েদের জন্য জায়েয আছে।
আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لاَ تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ
“তোমরা আল্লাহর বান্দা নারীদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না।”


প্রশ্ন ১৩৪ : নারীরা মাসজিদে গেলে তাদের চালচলন ও পোষাক আশাক কী ধরনের হওয়া উচিত?
উত্তর : সম্পূর্ণ শরীয়াতসম্মত পর্দা করে মসজিদে যাবে। বাহারী ও রঙ বেরঙের বোরকা ও টাইট-ফিট পোষাক পরবে না। গল্পগুজব ও আওয়াজ করে কথা বলবে না। মেয়েদের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে সালাত আদায় করবে। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পরপরই মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাবে।


প্রশ্ন ১৩৫ : জামাআতে সালাত আদায় করলে নারীদের কোথায় দাঁড়ানো উত্তম?
উত্তর : নারীরা পিছনে দাঁড়াবে। এটাই সুন্নাত। তারা যত পিছনে দাঁড়াবে ততই উত্তম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
خَيْرُ صُفُوْفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوْفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا
পুরুষদের উত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার আর নিকৃষ্ট হলো শেষ কাতার। পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য উত্তম হলো শেষ কাতার আর নিকৃষ্ট হলো প্রথমকাতার। (মুসলিম)

____________________________________________________
[রামাদ্বান মুসলিম জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসের আমল গুলো পূর্ণ ভাবে করতে চাই সঠিক সুন্নাহ ভিত্তিক জ্ঞান। আপনাদের কাছে সেই জ্ঞান ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে রামাদ্বান সম্পর্কিত আর্টিকেল,ফতোয়া, বই, অডিও লেকচার দিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের রামাদ্বানের পাথেয় সেকশনটি, এখানে রমযান সম্পর্কিত আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন আশা করছি। নিজে পড়ুন, শুনুন এবং আপনাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই রামাদ্বান কে পরিনত করুন আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমযানে, এই রামাদ্বান মাস কে পরিণত করুন আপনার জীবনের সেরা সময়ে ইনশাআল্লাহ্‌।]
____________________________________________________
উৎস:
প্রশ্নোত্তরে
সিয়াম

মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭

“নামায-ন্যায়পরায়ণতার প্রোগ্রামিং পর্ব ২”

মন নিয়ন্ত্রন রাখার উপায়ঃ
আমাদের মন ঘুরে বেড়ায় কেন?এর কারণ হল আমাদের মন আসলে খালি।আর এই মন খালি থাকতে পারে না। সে জন্যে মন ঘুরে বেড়ায়।আমরা যে সূরাগুলো নামাযে পড়ে থাকি বেশিরভাগ মুসলিম তা জানেন।সূরা ফাতিহা, পবিত্র কুর’আনের কিছু আয়াত,কয়েক্টা ছোট ছোট সূরা-এগুলো আমরা নামাযে পড়ি।আমরা মুসলিমরা এগুলো এত যান্ত্রিকভাবে পড়ি যে, আপনি যদি কোন মুসলিমকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সূরা ফাতিহা বলতে বলেন,সে এই কাজটা একশ মেইল স্পীড এ করতে পারবে।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আলহামদুলিল্লাহি রাবিইল আ’আলা-মীন।
আর-রাহমা-নীর রাহীম।
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি্ন।
ইয়্যা কানা বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন।
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম।
সিরাতাল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম।
গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দ-ল্লিন।

আমীন।

একেবারেই যান্ত্রিকভাবে উচ্চারণ করি।আমাদের মনের খুব সামান্য একটা অংশ এখানে ব্যস্ত থাকে।আমরা বেশিরভাগ মুসলমান অনারব।আমরা আরবী ভাষার কথাবার্তা বুঝতে পারিনা।আর সেহেতু আমরা নামাযে যেটা পড়ছি সেটা বুঝতে পারছিনা।তখনই এই সম্ভাবনা দেখা দেয় যে আমাদের মন অন্য চিন্তা করবে।তাই মন যাতে এসব চিন্তা না করতে পারে সেজন্য আরবীটা পড়ব আর একইসাথে আমরা এই আরবী আয়াতগুলোর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করব।যদি ইংরেজি জানেন তবে ইংরেজি অনুবাদটা মনে করেন।উর্দু জানলে উর্দু অনুবাদটা মনে করেন।বাংলা জানলে বাংলা অনুবাদটা মনে করেন।যে ভাষাটা আপনি সবচেয়ে বেশি ভাল বোঝেন সেই ভাষায় অনুবাদটা মনে করেন।যেমন ধরেন আমরা যখন সূরা ফাতিহা পড়ি-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে)
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন(সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগতস্মূহের প্রতিপালক)
আর রাহমানীর রাহীম(যিনি করুণাময় ও পরম দয়ালু)
মালিকি ইয়াওমিদ্দিন(তিনি বিচার দিনের মালিক)
ইয়্যা কানা বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন(আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি)
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম(আমাদেরকে সরল পথ দেখাও)
সিরাতাল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম(তাদের পথ যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ)
গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দ-ল্লিন(তাদের পথ নয় যারা ক্রোধে নিপাতিত ও পথভ্রষ্ট)
যখন এই সূরা ফাতিহা পড়বেন বা আরবীতে অন্য আয়াত পড়বেন একইসাথে অর্থটাও মনে করুন।আর আপনার মন তখন ঘুরে বেড়াবে না।কারন এতে করে আপনি নামাযে যে আয়াত পড়ছেন সেটার অর্থ মনে রাখতেই আপনার মন ব্যস্ত থাকছে।কিন্তু কয়েকদিন পরে বা কয়েক মাস পরে এটাও একেবারে যান্ত্রিক হয়ে যাবে।আমাদের মন খুব শক্তিশালী।এখানেও সম্ভাবনা থাকে যে মন অন্য চিন্তা করবে।কিন্তু এই সম্ভাবনাটা কম।কারণ মনের এক অংশ তখন আরবী পড়ায় ব্যস্ত থাকবে আর আরেক অংশ তখন অর্থ মনে করবে।অন্য চিন্তা করার সম্ভাবনা কম।তারপরও মন চিন্তা করতে পারে।মনের এই চিন্তাগুলো দূর করার জন্য আপনি আরবীতে আয়াতগুলো পড়বেন আর সেগুলোর অর্থ মনে করবেন।আপনি মনোযোগ দিয়ে আয়াতগুলো পড়বেন আর অর্থ মনে করবেন।একটা মানুষ দুইটা জিনিসের উপর একসাথে ১০০ ভাগ মনোযোগ দিতে পারেনা।দুইটা জিনিসের উপর ৫০ ভাগ মনোযোগ দেয়া যায়বা ৮০ ভাগ,২০ ভাগ।কিন্তু ১০০ ভাগ দুইটা আলাদা জিনিসের উপর মনোযোগ কেউই দিতে পারবে না।তাহলে যত বেশি মনোযোগ দেবেন আপনার মন তত কম ঘুরাঘুরি করবে।অর্থাৎ,মনের এই ঘুরাঘুরি বন্ধ করতে আমরা আরবী আয়াতগুলো পড়ব এবং একইসাথে সেগুলোর অর্থ বুঝে মনে করার চেষ্টা করব।তাহলে ইনশা’আল্লাহ আমাদের মন ঘুরাঘুরি করবেনা।আমার লেকচারের প্রথমে পবিত্র কুর’আনের একটি আয়াত বলেছিলাম।সূরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-
“পড় সেই কিতাব হতে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয় এবং নিয়মিত নামায কায়েম কর।কারণ অবশ্যই নামায তোমাদের অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে।“
পবিত্র কুর’আন বলছে যে,নামায আপনাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে।য়ামি আগেও বলেছি নামায হল এক ধরনের প্রোগ্রামিং।এই প্রোগ্রামিংটা হল ন্যায় নিষ্ঠার জন্য।আর আমরা মুসলিমরা দিনে পাঁচ বার নামাযের মাধ্যমে প্রোগ্রামড হই।আমরা আল্লাহর কাছে এই সময়ে নির্দেশনা চাই।ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম-আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।আর আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা এর উত্তর দেন।তিনি আমাদেরকে ন্যায়পরায়ণতার পথে প্রোগ্রামড করেন।যেমন ধরেন কোন ঈমাম সূরা ফাতিহার পরে পড়তে পারেন-
সূরা মায়িদার ৯০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
তর্জমাঃ “হে মুমিনগণ!নিশ্চই মদ ও জুয়া ঘৃণ্য বস্তু।মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর,এইগুলি সব শয়তানের কাজ।তোমরা এগুলো বর্জন কর,যাতে সফলকাম হতে পার।“
এখানে নামাযে আমাদের প্রোগ্রামিং করা হচ্ছে যে,মদপান করা,জুয়া খেলা,বিভিন্ন মূর্তির পূজা,ভাগ্য গণনা করা আমাদের বাদ দিতে হবে।কারণ এগুলো সব শয়তানের কাজ।
ঈমাম সূরা ফাতিহার পরে পড়তে পারেন সূরা মায়িদা’র ৩ নং আয়াত-
তর্জমাঃ
“তোমাদের জন্য যেসব হারাম করা হয়েছে-মৃত পশু,রক্ত,শূকরের মাংস খাওয়া এবং যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে।“

এ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,এখানে আমাদেরকে প্রোগ্রাম করা হচ্ছে খাবারের মধ্যে হারাম বিষয়গুলি সম্বন্ধে।আর এই হারাম খাবারগুলো হল মৃত জন্তু,রক্ত,শূকরের মাংস এবং যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে।আমাদের প্রোগ্রামিং করা হচ্ছে ন্যায়পরায়ণতার জন্য।
চলবে ইনশা’আল্লাহ।

“নামায-ন্যায়পরায়ণতার প্রোগ্রামিং”পর্ব-১

জাকির নাইকঃ
শ্রদ্ধেয় গুরুজনেরা এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, স্বাগত জানাই ইসলামিক সম্ভাষণে,আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।আল্লাহ তা’আলার শান্তি,দয়া আর রহমত বর্ষিত হোক আপনাদের সবার প্রতি।আজকের এই বক্তব্যের বিষয়-“নামায-ন্যায়পরায়ণতার প্রোগ্রামিং”।বেশির ভাগ মানুষ সালাহ শব্দটার বাংলা অনুবাদ করে প্রার্থনা করা। এই প্রার্থনা শব্দটা দ্বারা আরবী সালাত শব্দেটি পুরোপুরি প্রকাশ করে না।প্রার্থনা করা মানে অনুরোধ করা।বিনীতভাবে কিছু চাওয়া।যেমন,আদাওতে গেলে আপনি প্রার্থনা করেন।প্রার্থনা করা মানে মিনতি করা।সাহায্যের আবেদন করা।দোয়া করা।সেটাই হল আবেদন বা প্রার্থনা।তবে নামাযের মানে শুধু প্রার্থনা নয়।প্রার্থনার চেয়ে বেশি কিছু।কারণ নামাযে আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি তাঁর গুণগান করি।আমরা তাঁর কাছ থেকে নির্দেশণা পাই।আর এসবের পাশাপাশি নামায হল এক ধরণের প্রোগ্রামিং।এটা একটা শর্তাধীন অবস্থা।অথবা একজন সাধারণ মানুষের ভাষায় এটা হল ব্রেইন ওয়াশিং।তবে কেউ যদি নামায পড়তে যায়,আর কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আর সে যদি বলে ব্রেইন ওয়াশিং এ যাচ্ছে অথবা প্রোগ্রামিং এ যাচ্ছে এটা শুনতেই অদ্ভুত লাগবে।সেজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু মনে করিনা যদি মানুষ আরবী সালাত শব্দটাকে বাংলায় প্রার্থনা বলে।কিন্তু তাদের এটা মনে রাখতে হবে যে,নামায আসলে প্রার্থনার চাইতে অনেক বেশি কিছু।যখনই আপনারা প্রোগ্রামিং কথাটা শোনেনে তখন আপনারা কম্পিউটারের কথা ভাবেন।যদি আপনি ধরে নেন যে, মানুষ একটা যন্ত্র তাহলে আমি বলব এ যন্ত্রটা হল পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল যন্ত্র।পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত কম্পিউটারের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি জটিল।আর আমরা মানুষ জাতি আশরাফুল মাখলুকাত।আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।আর পবিত্র কুর’আনে সূরা তীন এর ৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-

তর্জমাঃ “নিশ্চই আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।”

মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের বলেন যে আমাদের মন পুরোপুরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।শরীর সরাসরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে।যদি আমরা হাত উঠাতে চাই,উঠাতে পারব।নামাতে চাই,নামাতেও পারব।যদি আমি এক পা সামনে আগাতে চাই,সেটাও পারব।আমাদের শরীর সরাসরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে।কিন্তু আমাদের মন সরাসরিভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়।সেজন্য আপনারা হয়ত দেখে থাকবেন আমরা যখন নামায পড়ি আমাদের মন তখন শুধু গুরে বেড়ায়।যেমন একজন ছাত্র যদি পরীক্ষা দেয়ার পর নামায পড়ে তবে সেই সময় তার পরীক্ষার খাতার কথাই চিন্তা করতে থাকে।সে তখন ভাবতে থাকে,আমি দুই নম্বর প্রশ্নের যে উত্তরটা লিখেছি সেইটা না লিখে আমার এইটা লিখা উচিত ছিল।যদি একজন ব্যবসায়ী নামায পড়ে সে চিন্তা করতে থাকে যে আজকে আমি কতখানি লাভ করলাম,কতগুলো জিনিস আজকে বিক্রি করলাম।যদি একজন গৃহিনী নামায পড়ে তখন হয়ত ভাবতে পারে যে, আমার স্বামীর জন্য কি রান্না করব,বিরিয়ানি নাকি পোলাও? এটা খুবই স্বাভাবিক যে নামাযের সময় আমাদের মন শুধু এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়।


আমাদের মন কেন ঘুরে বেড়ায়?…চলবে ইনশাআল্লাহ।