“আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এবং এর পরিপন্থী বিষয় বর্জনের অপরিহার্যতা”
শীর্ষক এ ছোট্ট পুস্তিকাটি আমি তখনি অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম যখন
দেখলাম এ যুগের কিছু সংখ্যক লোক মানবরচিত আইন(গণতন্ত্র, সেকুলারিজম)
বিশেষজ্ঞ ও তাদের অনুসারী গায়রুল্লাহর বিধান এবং কুরান-সুন্নাহ পরিপন্থী
আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কেউ অজ্ঞতার কারণে, কেউ আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি
বিদ্রোহ, পোষণ করার কারণে।
আমি আশা করি আমার উপদেশাবলি অজ্ঞদের জ্ঞান প্রদান, গাফেলদের সতর্ক করা
এবং আল্লাহর বান্দাদের সিরাতে মুস্তাকীমের উপর টিকে থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক
হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন:
তিনি আরও এরশাদ করেন:
আল্লাহ যেন এ নছীহতের মাধ্যমে আমাদের উপকৃত করেন। মুসলিমদেরকে তাঁর শরীয়তের অনুসরণ, তাঁর কিতাব অনুযায়ী শাসন পরিচালনা এবং তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণের তাওফিক দেন।
তিনি আরও বলেন :
আমি জবাব দিলাম : “আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন।”
তিনি বলেন:
আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো, যারা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না তাদেরকে শাস্তি না দেওয়া।”
আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এ বিষয়ে কি আমি লোকদেরকে সুসংবাদ দিব?”
তিনি বললেন :
ওলামায়ে কিরাম ইবাদতের বিভিন্ন অর্থ করেছেন, তবে সবগুলো কাছাকাছি। সবগুলো অর্থের সমন্বয় হয়েছে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া প্রদত্ত ইবাদতের সংজ্ঞায়। তিনি বলেছেন:
“ইবাদত যাবতীয় প্রকাশ্য ও গোপনীয় কথা ও কাজের নাম, যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।”
এতে একথাই প্রমাণিত হয় যে, ইবাদতের দাবী হলো, আক্বীদাহ. বিশ্বাস, কথা ও কাজে আল্লাহর আদেশ নিষেধের পরিপূর্ণ অনুগত হওয়া। মানুষের জীবন আল্লাহর শরীয়ত বা বিধানের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শুধু তাই হালাল মনে করবে। যা হারাম করেছেন শুধু তাই হারাম মনে করবে, সে তার নৈতিকতা, আচার-আচরণ সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর শরীয়ত তথা তাঁর আইনকে অনুসরণ করবে। তার প্রবৃত্তি তার ইচ্ছা ও আকাঙ্খার মোটেই পরোয়া করবে না। এ কথা যেমন একজন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য অনুরূপ তা সমষ্টির জন্য প্রযোজ্য। পুরুষের জন্য যেভাবে প্রযোজ্য নারীর জন্য সেভাবে প্রযোজ্য। ঐ ব্যক্তি কখনো আল্লাহর বান্দাহ ও গোলাম হতে পারবে না যে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে তার প্রভুর অনুগত আর কোন কোন ক্ষেত্রে মাখলুকের অনুগত। এ কথাটি আল্লাহ বলিষ্ঠভাবে বলেছেন:
আরও এরশাদ করেন:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:
অতএব একজন ব্যক্তির ইমান ততক্ষণ পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে, ছোট-বড় সব বিষয়ে তাঁর হুকুমকে মেনে নিবে এবং জীবন, সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর আইনকে প্রয়োগ করবে। যদি তা না হয় তাহলে সে আল্লাহর গোলাম না হয়ে অন্যের গোলাম হবে। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেছেন :
সুতরাং যে আল্লাহর অনুগত হবে তাঁর অহী অনুযায়ী যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করবে সে আল্লাহর বান্দাহ ও গোলাম। আর যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো অনুগত হবে এবং অন্য কোন বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে সে হবে তাগুতের গোলাম।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও এরশাদ করেন:
তাগুতের দাসত্ব ও অনুসরণ থেকে মুক্ত হয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত বা দাসত্ব কালেমায়ে শাহাদাতের অনিবার্য দাবী। কালেমায়ে শাহাদাতের মধ্যদিয়ে একজন লোক এ ঘোষণাই দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, কোন বিষয়ে কেউ তাঁর শরীক নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। শাহাদাতের এ ঘোষণার অর্থ হলো একমাত্র আল্লাহই মানুষের রব এবং তাদের ইলাহ। তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাদেরকে নির্দেশ দিবেন ও নিষেধ করবেন। জীবন মৃত্যুর মালিক একমাত্র তিনি। তিনিই হিসেব নিবেন। কাজের প্রতিদান দিবেন। অতএব আনুগত্য ও দাসত্বও একমাত্র তারই অধিকার, অন্য কারো জন্য নয়।
আল্লাহ এরশাদ করেছেন:
যেহেতু তিনিই এককভাবে সৃষ্টি করেছেন সেহেতু আইন ও বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই। অতএব তাঁর আইন বিধানের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে আলোচনায় বলেছেন যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে পীর পুরোহিতদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছেন। তাদেরকে রব বানানোর অর্থ হলো তারা যা হালাল বলে তাই হালাল আর তারা যা হারাম বলে তাই হারাম। ইয়াহুদীরা তাদের আলেমদের ও দরবেশ বা পুরোহিতদের এভাবে অনুসরণ করার কারণে আল্লাহ বলেছেন যে, তারা (ইয়াহুদীরা) তাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন:
আদী ইবন হাতিম মনে করতেন আহবার ও রোহবানের ইবাদত হলো তাদের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা, তাদের জন্য মানত মানা, তাদের জন্য রুকু সিজদা করা ইত্যাদি। তাই তিনি যখন মুসলিম হয়ে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে উপরোল্লিখিত আয়াত শুনলেন তিনি বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো তাদের ইবাদত করতাম না।”
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন:
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন:
উল্লেখিত আলোচনায় এ কথা সুস্পষ্ট হলো যে. আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করা, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” এ সাক্ষ্যের অনিবার্য দাবী। সুতরাং তাগুত, শাসক, গনৎকার ইত্যাদির ফায়সালা মেনে নেয়া মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের পরিপন্থী। আর তা কুফরী, জুলুম ও ফাসেকী।
আল্লাহ এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন:
তিনি আরও এরশাদ করেন:
তিনি আরও এরশাদ করেন:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা না করা জাহেলী শাসন। আল্লাহর আইন থেকে বিমুখ হওয়া তাঁর এমন শাস্তি ও পাকড়াওয়ের কারণ যা যালিম কওম থেকে অপসারিত হয় না। তিনি বলেন:
এ আয়াতের পাঠক একটু চিন্তা করলে দেখতে পাবে যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী শাসন পরিচালনার নির্দেশকে আটটি উপায়ে তাকীদ করা হয়েছে।
প্রথম: আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসনের নির্দেশ প্রদান
দ্বিতীয়: কোন অবস্থাতেই যেন মানুষের প্রবৃত্তি, ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করার পথে প্রতিবন্ধক না হয়।
তৃতীয়: কম বেশী ও ছোট বড় সকল বিষয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন না করার ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান থাকার নির্দেশ
চতুর্থ : আল্লাহর আইন থেকে বিমুখ হওয়া বড় ধরনের অপরাধ এবং কঠিন শাস্তির কারণ:
পঞ্চম: আল্লাহর আইন থেকে বিমুখদের আধিক্য দেখে অহমিকা প্রদর্শনের ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান করা হয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কৃতজ্ঞদের সংখ্যা কমই হয়ে থাকে।
ষষ্ঠ: আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইন অনুযায়ী শাসন করাকে জাহেলী শাসন বলা হয়েছে।
সপ্তম: আল্লাহর আইন ও বিধান সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান ও সবচেয়ে ইনসাফপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
অষ্টম: আল্লাহর প্রতি ইয়াকীন ও বিশ্বাসের অনিবার্য দাবী হলো এ কথা অনুধাবন করা যে, আল্লাহর আইন সর্বশ্রেষ্ঠ, পরিপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশী ইনসাফপূর্ণ। এ আইনকে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করা এবং এর প্রতি অনুগত হওয়া অত্যাবশ্যক।
অনুরূপ বক্তব্য কুরআনের আরও অনেক আয়াত এবং রাসূলের অনেক হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন এরশাদ হয়েছে।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন:
ইমাম নাওয়ায়ী বলেছেন, উক্ত হাদীস (ছহীহ)। আমি কিতাবুল হুজ্জাতে ছহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদী বিন হাতিমকে (রা) বলেছেন: ( أليس يحرمون ما أحل الله فتحر مونه ويحلون ما حرم فتحلونه )
“তারা (আহবার ও রোহবান) আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল ঘোষণা দেয় অতঃপর তোমরা কি তাকে হালাল মনে কর না? অনুরূপ আল্লাহর হালাল করা বিষয়কে তারা হারাম ঘোষণা দেয় অতঃপর তোমরা কি তা হারাম মনে কর না? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: “ইহাই তাদের ইবাদত”।
এর অর্থ হলো বান্দার দায়িত্ব হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বক্তব্যের সামনে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁদের কথাকে অন্য সকলের কথার উপর প্রাধান্য দেয়া। দ্বীনের ব্যাপারে এটাই চূড়ান্ত কথা।
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
“উপদেশ দাও, কেননা উপদেশ প্রদান মুমিনদেরকে উপকৃত করবে” (আয-যরিয়াত:৫৫)।তিনি আরও এরশাদ করেন:
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ
“স্মরণ কর ঐ সময়ের কথা যখন আল্লাহ ঐ সব লোকদের থেকে প্রতিশ্রুতি
নিচ্ছিলেন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, যে তোমরা অবশ্যই মানুষের সামনে তা
প্রকাশ করবে এবং তা মোটেও গোপন রাখবে না” ( সূরা আলে ইমরান: ১৮৭)।আল্লাহ যেন এ নছীহতের মাধ্যমে আমাদের উপকৃত করেন। মুসলিমদেরকে তাঁর শরীয়তের অনুসরণ, তাঁর কিতাব অনুযায়ী শাসন পরিচালনা এবং তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণের তাওফিক দেন।
অনুচ্ছেদ
আল্লাহ মানুষ এবং জীনকে তাঁর দাসত্ব ও গোলামীর জন্য সৃষ্টি করেছেন।তিনি এরশাদ করেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমি মানুষ এবং জ্বীনকে শুধুমাত্র ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” (আয-যারিয়াত ৫৬)। তিনি আরও বলেন:
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
“তোমার প্রভু এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো
দাসত্ব ও গোলামী করবেনা এবং পিতামাতার সাথে উত্তম আচরণ করবে” (বনী ইসরাইল:
২৩)।তিনি আরও বলেন :
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
“তোমরা আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামী কর, তার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবেনা
এবং পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ করবে” (আন্-নিসা: ৩৬)। মু‘আয ইবন জাবাল
(রা) বর্ণনা করেন: আমি গাধার পিঠে রাসূল (সা) পিছনে বসা ছিলাম। তিনি আমাকে
বললেন:
((يا معاذ أتدري ما حق الله علي العباد وما حق العباد علي الله ؟))
“হে মু‘আয তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর হক কি, এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি?আমি জবাব দিলাম : “আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন।”
তিনি বলেন:
(( حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئاًََ و حق العباد علي الله أن لا يعذب من لا يشرك به شيئاً ))
“বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো তারা শুধুমাত্র তাঁরই দাসত্ব ও গোলামী করবে। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো, যারা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না তাদেরকে শাস্তি না দেওয়া।”
আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এ বিষয়ে কি আমি লোকদেরকে সুসংবাদ দিব?”
তিনি বললেন :
((لا تبشرهم فيتكلوا))
“না, সুসংবাদ দিবে না, এতে করে তারা এ্রর উপরই ভরসা করে থাকবে।”ওলামায়ে কিরাম ইবাদতের বিভিন্ন অর্থ করেছেন, তবে সবগুলো কাছাকাছি। সবগুলো অর্থের সমন্বয় হয়েছে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া প্রদত্ত ইবাদতের সংজ্ঞায়। তিনি বলেছেন:
“ইবাদত যাবতীয় প্রকাশ্য ও গোপনীয় কথা ও কাজের নাম, যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।”
এতে একথাই প্রমাণিত হয় যে, ইবাদতের দাবী হলো, আক্বীদাহ. বিশ্বাস, কথা ও কাজে আল্লাহর আদেশ নিষেধের পরিপূর্ণ অনুগত হওয়া। মানুষের জীবন আল্লাহর শরীয়ত বা বিধানের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শুধু তাই হালাল মনে করবে। যা হারাম করেছেন শুধু তাই হারাম মনে করবে, সে তার নৈতিকতা, আচার-আচরণ সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর শরীয়ত তথা তাঁর আইনকে অনুসরণ করবে। তার প্রবৃত্তি তার ইচ্ছা ও আকাঙ্খার মোটেই পরোয়া করবে না। এ কথা যেমন একজন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য অনুরূপ তা সমষ্টির জন্য প্রযোজ্য। পুরুষের জন্য যেভাবে প্রযোজ্য নারীর জন্য সেভাবে প্রযোজ্য। ঐ ব্যক্তি কখনো আল্লাহর বান্দাহ ও গোলাম হতে পারবে না যে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে তার প্রভুর অনুগত আর কোন কোন ক্ষেত্রে মাখলুকের অনুগত। এ কথাটি আল্লাহ বলিষ্ঠভাবে বলেছেন:
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا
شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا
قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“না কক্ষনো না। তোমরা প্রভুর শপথ, তারা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না
তারা নিজেদের বিরোধমূলক বিষয়ে তোমাকে ফায়সালাকারী মানে। অত:পর তুমি যে
সিদ্ধান্ত দিয়েছ, সে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাদের মনে বিন্দুমাত্র অসন্তোষ
থাকবে না বরং তা ভালভাবেই গ্রহণ করে নিবে” (আন-নিসা ৬৫)।আরও এরশাদ করেন:
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
তারা কি জাহেলী আইন ও শাসন চায়? বিশ্বাসী কওমের জন্য আল্লাহর আইন ও শাসনের চেয়ে কার আইন ও শাসন উত্তম হতে পারে” (আল- মায়েদাহ: ৫০)।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:
(لا يؤمن أحدكم حتي يكون هواه تبعا لما جئت به )
তোমাদের কেউ ইমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ না আমি যে আদর্শ নিয়ে এসেছি তার প্রবৃত্তি সে আদর্শের অনুসারী হয়’।অতএব একজন ব্যক্তির ইমান ততক্ষণ পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে, ছোট-বড় সব বিষয়ে তাঁর হুকুমকে মেনে নিবে এবং জীবন, সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর আইনকে প্রয়োগ করবে। যদি তা না হয় তাহলে সে আল্লাহর গোলাম না হয়ে অন্যের গোলাম হবে। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেছেন :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে এই বাণী সহকারে রাসূল পাঠিয়েছি যেন তোমরা
আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামী কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।” ( আন-নাহল : ৩৬)।সুতরাং যে আল্লাহর অনুগত হবে তাঁর অহী অনুযায়ী যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করবে সে আল্লাহর বান্দাহ ও গোলাম। আর যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো অনুগত হবে এবং অন্য কোন বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে সে হবে তাগুতের গোলাম।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও এরশাদ করেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا
بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ
يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ
وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
“তুমি কি সেই-সব লোকদের দেখ নি যারা ধারণা করে যে, আমরা ঈমান এনেছি সেই
কিতাবের প্রতি যা তোমাদের উপর নাযিল হয়েছে এবং যেগুলো তোমার পূর্বে নাযিল
হয়েছিল অথচ তারা নিজেদের যাবতীয় ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্য তাগুতের নিকট
যেতে চায়। যদিও তাগুতকে সম্পূর্ণ অস্বীকার ও অমান্য করার জন্য তাদেরকে আদেশ
দেওয়া হয়েছিল। মূলত: শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সত্য-সঠিক পথ হতে বহুদূর
নিয়ে যেতে চায়” ( আন-নিসা: ৬০)।তাগুতের দাসত্ব ও অনুসরণ থেকে মুক্ত হয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত বা দাসত্ব কালেমায়ে শাহাদাতের অনিবার্য দাবী। কালেমায়ে শাহাদাতের মধ্যদিয়ে একজন লোক এ ঘোষণাই দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, কোন বিষয়ে কেউ তাঁর শরীক নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। শাহাদাতের এ ঘোষণার অর্থ হলো একমাত্র আল্লাহই মানুষের রব এবং তাদের ইলাহ। তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাদেরকে নির্দেশ দিবেন ও নিষেধ করবেন। জীবন মৃত্যুর মালিক একমাত্র তিনি। তিনিই হিসেব নিবেন। কাজের প্রতিদান দিবেন। অতএব আনুগত্য ও দাসত্বও একমাত্র তারই অধিকার, অন্য কারো জন্য নয়।
আল্লাহ এরশাদ করেছেন:
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ
“জেনে রাখ, সৃষ্টি এবং নির্দেশ তাঁরই” (আল আরাফ: ৫৪)।যেহেতু তিনিই এককভাবে সৃষ্টি করেছেন সেহেতু আইন ও বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই। অতএব তাঁর আইন বিধানের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে আলোচনায় বলেছেন যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে পীর পুরোহিতদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছেন। তাদেরকে রব বানানোর অর্থ হলো তারা যা হালাল বলে তাই হালাল আর তারা যা হারাম বলে তাই হারাম। ইয়াহুদীরা তাদের আলেমদের ও দরবেশ বা পুরোহিতদের এভাবে অনুসরণ করার কারণে আল্লাহ বলেছেন যে, তারা (ইয়াহুদীরা) তাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন:
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ
دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا
لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا
يُشْرِكُونَ
“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও সংসার বিরাগীগণ এবং মরিয়মের ছেলে
মসীহকে রব বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তারা যেন
একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে। যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তাদের শির্ক থেকে
তিনি পবিত্র” (আত-তাওবাহ :৩১)।আদী ইবন হাতিম মনে করতেন আহবার ও রোহবানের ইবাদত হলো তাদের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা, তাদের জন্য মানত মানা, তাদের জন্য রুকু সিজদা করা ইত্যাদি। তাই তিনি যখন মুসলিম হয়ে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে উপরোল্লিখিত আয়াত শুনলেন তিনি বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো তাদের ইবাদত করতাম না।”
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন:
( أليس يحرمون ما أحل الله فتحرمونه ويحلون ما حرم فتحلونه )
“তারা (আহবার, রোহবান) আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম ঘোষণা দিত,
অত:পর তোমরা কি তাকে হারাম মনে করতে না? অনুরূপ আল্লাহর হারাম করা বিষয়কে
তারা হালাল ঘোষণা দিত, অত:পর তোমরা কি তাকে হালাল মনে করতে না?” তিনি (আদী
ইবন হাতিম) বললেন, “হাঁ, তাই।”রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন:
(فتلك عبادتهم )
“এটাই হলো তাদের ইবাদত” (আহমদ ও তিরমিযী)।
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا
আল্লামা ইবন কাসীর রহ. এর তাফসীরে বলেন: “তিনি যা হারাম ঘোষণা দিয়েছেন
তাই হারাম আর যা হালাল ঘোষণা দিয়েছেন তাই হালাল। তিনি যে বিধান দিয়েছেন তা
অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হতে হবে।
لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থাৎ “তিনি সকল প্রকার অংশীদার, সমকক্ষ, সাহায্যকারী,
প্রতিদ্বন্দ্বী, সন্তান ইত্যাদি থেকে পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি
ছাড়া কোন রব নেই।”[1]উল্লেখিত আলোচনায় এ কথা সুস্পষ্ট হলো যে. আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করা, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” এ সাক্ষ্যের অনিবার্য দাবী। সুতরাং তাগুত, শাসক, গনৎকার ইত্যাদির ফায়সালা মেনে নেয়া মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের পরিপন্থী। আর তা কুফরী, জুলুম ও ফাসেকী।
আল্লাহ এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন:
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
“আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী যারা শাসন করেনা তারাই কাফের ” (আল-মায়েদা : ৪৪)তিনি আরও এরশাদ করেন:
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ
وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ
وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ
كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ
هُمُ الظَّالِمُونَ
“তাওরাতে আমি ইয়াহুদীদের প্রতি এ হুকুম লিখে দিয়েছিলাম যে, জানের বদলে
জান, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের পরিবর্তে
দাঁত এবং সবরকমের জখমের জন্য সমান বদলা নির্দিষ্ট। অবশ্য কেহ কেসাস (বদলা)
না নিয়ে ক্ষমা করে দিলে তা তাঁর জন্য কাফফারা হবে। আর যারা আল্লাহর নাযিল
করা আইন অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না তারাই যালেম।” (আল-মায়েদা: ৪৫)।তিনি আরও এরশাদ করেন:
وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ
فِيهِ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ
الْفَاسِقُونَ
“ইঞ্জিল বিশ্বাসীগণ যেন উহাতে আল্লাহর করা আইন অনুযায়ী বিচার ও ফায়সালা
করে, আর যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না তারাই ফাসেক”
(আল-মায়েদা: ৪৭)।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা না করা জাহেলী শাসন। আল্লাহর আইন থেকে বিমুখ হওয়া তাঁর এমন শাস্তি ও পাকড়াওয়ের কারণ যা যালিম কওম থেকে অপসারিত হয় না। তিনি বলেন:
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا
تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا
أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ
اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ
النَّاسِ لَفَاسِقُونَ أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ
أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
“তুমি আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী লোকদের যাবতীয় পারস্পরিক
ব্যাপারে ফয়সালা কর এবং তাদের প্রবৃত্তির চাহিদার অনুসরণ করো না। সাবধান
থাক, তারা যেন তোমাকে ফেতনায় নিক্ষেপ করে আল্লাহর নাযিল করা বিধান থেকে এক
বিন্দু পরিমাণ বিভ্রান্ত করতে না পারে। আর তারা যদি বিভ্রান্ত হয় তবে জেনে
রাখ যে, আল্লাহ তাদের কোন কোন গুনাহের শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে কঠিন বিপদে
নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। বস্তুত অনেক লোকই ফাসেক। তারা কি
জাহেলী আইন কানুন চায়? যারা খোদার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে তাদের নিকট
আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম ফয়সালাকারী আর কে হতে পারে? (আল মায়েদা : ৪৯ ও ৫০)।এ আয়াতের পাঠক একটু চিন্তা করলে দেখতে পাবে যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী শাসন পরিচালনার নির্দেশকে আটটি উপায়ে তাকীদ করা হয়েছে।
প্রথম: আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসনের নির্দেশ প্রদান
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ
“তুমি আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী লোকদের মধ্যে ফায়সালা কর।”দ্বিতীয়: কোন অবস্থাতেই যেন মানুষের প্রবৃত্তি, ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করার পথে প্রতিবন্ধক না হয়।
وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ
“তাদের নফসানী খাহেশাতের অনুসরণ করো না।”তৃতীয়: কম বেশী ও ছোট বড় সকল বিষয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন না করার ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান থাকার নির্দেশ
وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ
“সাবধান থাক, তারা যেন তোমাকে ফেৎনায় নিক্ষেপ করে আল্লাহর নাযিল করা বিধান থেকে সামান্য পরিমাণে বিভ্রান্ত করতে না পারে।”চতুর্থ : আল্লাহর আইন থেকে বিমুখ হওয়া বড় ধরনের অপরাধ এবং কঠিন শাস্তির কারণ:
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ
“আর তারা যদি মুখ ফিরায়ে নেয় তাহলে জেনে রাখ যে আল্লাহ তাদের কিছু গুনাহের শাস্তিস্বরূপ কঠিন বিপদে নিক্ষেপ করতে চান।”পঞ্চম: আল্লাহর আইন থেকে বিমুখদের আধিক্য দেখে অহমিকা প্রদর্শনের ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান করা হয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কৃতজ্ঞদের সংখ্যা কমই হয়ে থাকে।
وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ
“বস্তুত মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসেক।”ষষ্ঠ: আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইন অনুযায়ী শাসন করাকে জাহেলী শাসন বলা হয়েছে।
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ
“তারা কি জাহেলী আইন কানুন চায়?”সপ্তম: আল্লাহর আইন ও বিধান সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান ও সবচেয়ে ইনসাফপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا
“আল্লাহ থেকে উত্তম ফায়সালাকারী আর কে হতে পারে?”অষ্টম: আল্লাহর প্রতি ইয়াকীন ও বিশ্বাসের অনিবার্য দাবী হলো এ কথা অনুধাবন করা যে, আল্লাহর আইন সর্বশ্রেষ্ঠ, পরিপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশী ইনসাফপূর্ণ। এ আইনকে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করা এবং এর প্রতি অনুগত হওয়া অত্যাবশ্যক।
وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
“যারা আল্লাহর প্রতি ইয়াকীন ও বিশ্বাস রাখে তাদের নিকট আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী আর কে হতে পারে? ”অনুরূপ বক্তব্য কুরআনের আরও অনেক আয়াত এবং রাসূলের অনেক হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন এরশাদ হয়েছে।
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অতএব যারা তাঁর (রাসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের এ বিষয়ে সতর্ক
থাক উচিত যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি
তাদেরকে গ্রাস করবে। (আন-নুর :৬৩)।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ
“ না কক্ষনো না, তোমার প্রভুর শপথ, তারা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ
তারা নিজেদের বিরোধমূলক বিষয়ে তোমাকে ফায়সালাকারী না মানে” (আন-নিসা ৬৫)।
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ
“তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা মেনে চলো” (আল আরাফ : ৩)।
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ
“কোন মুমিন পুরুষ ও কোন মুমিন নারীর এ অধিকার নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল যখন কোন বিষয়ে ফায়সালা করে দিবেন তখন সে ব্যাপারে নিজে কোন ফায়সালা
করবার ইখতিয়ার রাখবে? (আল আহযাব: ৩৬)।রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন:
(لا يؤمن أحدكم حتي يكون هواه تبعا لما جئت به )
“তোমাদের কেউ ইমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ না আমি যে আদর্শ নিয়ে এসেছি তার প্রবৃত্তি সে আদর্শের অনুসারী হয়।”ইমাম নাওয়ায়ী বলেছেন, উক্ত হাদীস (ছহীহ)। আমি কিতাবুল হুজ্জাতে ছহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদী বিন হাতিমকে (রা) বলেছেন: ( أليس يحرمون ما أحل الله فتحر مونه ويحلون ما حرم فتحلونه )
“তারা (আহবার ও রোহবান) আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল ঘোষণা দেয় অতঃপর তোমরা কি তাকে হালাল মনে কর না? অনুরূপ আল্লাহর হালাল করা বিষয়কে তারা হারাম ঘোষণা দেয় অতঃপর তোমরা কি তা হারাম মনে কর না? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: “ইহাই তাদের ইবাদত”।
(فتلك عبادتهم)
ইবন আব্বাস কিছু মাসআলায় তাঁর সাথে বিতর্ককারীদেরকে বললেন:
(ويوشك أن تنزل عليكم حجارة من السماء أقول قال رسول الله وتقولون قال أبو بكر وعمر )
“শীঘ্রই তোমাদের উপর আকাশ হতে পাথর বর্ষিত হবে। আমি বলছি আল্লাহর রাসূল বলেছেন, আর তোমরা বলছ আবু বকর ও উমর বলেছেন”।এর অর্থ হলো বান্দার দায়িত্ব হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বক্তব্যের সামনে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁদের কথাকে অন্য সকলের কথার উপর প্রাধান্য দেয়া। দ্বীনের ব্যাপারে এটাই চূড়ান্ত কথা।