ধৈর্য্যধারণ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ধৈর্য্যধারণ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আমি যদি দূর থেকে কোনো নারীকে ভালোবাসি তাহলে কি গুনাহ হবে?

শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ:

 আলহামদুলিল্লাহ

গুনাহ ও দুষ্কর্মের দরজাগুলো বন্ধ করার জন্য শরিয়ত এসেছে। যা কিছু মানুষের মনোজগৎ ও বিচার-বিবেচনা শক্তিকে নষ্ট করে দেয়ার মাধ্যম তা বন্ধ করার জন্য শরিয়ত সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে। আর প্রেম-ভালোবাসা, নরনারীর সম্পর্ক, সব থেকে বড় ব্যাধি ও মারাত্মক আপদ।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রা. বলেন ‘ইশক বা প্রেম একটি মানসিক ব্যাধি। আর যখন তা প্রকট আকার ধারণ করে শরীরকেও তা প্রভাবিত করে। সে হিসেবে তা শরীরের পক্ষেও ব্যাধি। মস্তিষ্কের জন্যও তা ব্যাধি। এ-জন্যই বলা হয়েছে, এটা একটা হৃদয়জাত ব্যাধি। শরীরের ক্ষেত্রে এ ব্যাধির প্রকাশ ঘটে দুর্বলতা ও শরীর শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে’।-[ দ্র: মাজমুউল ফাতওয়া: ১০/১২৯]

তিনি আরও বলেন, ‘পরনারীর প্রেমে এমন সব ফাসাদ রয়েছে যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেও গুনে শেষ করতে পারবে না। এটা এমন ব্যাধির একটি যা মানুষের দীনকে নষ্ট করে দেয়। মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে নষ্ট করে দেয়, অতঃপর শরীরকেও নষ্ট করে’। [দ্র: মাজমুউল ফাতওয়া: ১০/১৩২]
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রেম-ভালোবাসার ক্ষতি জানার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এটা হলো হৃদয়ের বন্দিদশা, আর প্রীতিভাজনের জন্য দাসত্ব, প্রেম-ভালোবাসা অসম্মান, অপদস্থতা ও কষ্টের দরজা। এগুলো একজন সচেতন মানুষকে এই ব্যাধি থেকে দূরে সরাতে যথেষ্ট।
images (3)
ইবনে তাইমিয়াহ রা. বলেন: ‘পুরুষের হৃদয় যদি কোনো নারীর সাথে এঁটে যায়, যদিও সে নারী তার জন্য বৈধ হয়, তাহলেও তার হৃদয় থাকে ওই নারীর কাছে বন্দি। নারী তার অধিপতি হয়ে বসে, পুরুষ তার ক্রীড়নকে পরিণত হয়, যদিও সে প্রকাশ্যে তার অভিভাবক; কেননা সে তার স্বামী। তবে বাস্তবে সে নারীর কাছে বন্দি, তার দাস। বিশেষত নারী যদি জানতে পারে যে পুরুষ তার প্রেমে মুগ্ধ। এমতাবস্থায় নারী তার উপর আধিপত্য চালায়, জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক যেমন তার মাজলুম, নিষ্কৃতি পেতে অপারগ দাসের উপর শাসন চালায়, ঠিক সেভাবেই নারী তার প্রেমে হাবুডুবু-খাওয়া পুরুষের উপর শাসন চালায়। বরং এর থেকেও বেশি চালায়। আর হৃদয়ের বন্দিদশা শরীরের বন্দিদশা থেকে মারাত্মক। হৃদয়ের দাসত্ব শরীরে দাসত্বের চেয়েও কঠিনতর’। [ দ্র: মাজমুউল ফাতওয়া: ১০/১৮৫]
আর বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা ওই হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে না যে হৃদয়ে আল্লাহর ভালোবাসা ভর্তি রয়েছে। সে-তো কেবল ওই হৃদয়েই স্থান পায় যা শূন্য, দুর্বল, পরাস্ত। এধরনের হৃদয়েই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা স্থান পায়। আর এটা যখন শক্তিশালী পর্যায়ে পৌঁছে, প্রকট আকার ধারণ করে তখন কখনো আল্লাহর ভালোবাসাকেও অতিক্রম করে যায় এবং ব্যক্তিকে শিরকের দিকে ঠেলে দেয়। এজন্যই বলা হয়েছে, প্রেমপ্রীতি (হল) শূন্য হৃদয়ের আন্দোলন।
হৃদয় যখন আল্লাহর মহব্বত ও স্মরণ থেকে শূন্য হয়ে যায়, আল্লাহর কাছে দুয়া-মুনাজাত ও আল্লাহর কালামের স্বাদ গ্রহণ করা থেকে যখন শূন্য হয়ে যায় তখন নারীর ভালোবাসা, ছবির প্রতি আগ্রহ, গান-বাজনা শোনার আগ্রহ তার জায়গা দখল করে।
শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ রা. বলেন: ‘হৃদয় যদি একমাত্র আল্লাহকে ভালবাসে, দীনকে একমাত্র তার জন্য একনিষ্ঠ করে, তাহলে অন্য কারও ভালোবাসার মুসীবত তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রেম-ভালোবাসার কথা তো বহু দূরে। প্রেম-ভালোবাসায় লিপ্ত হওয়ার অর্থ, হৃদয়ে আল্লাহর মহব্বতের অপূর্ণতা। এ-কারণে ইউসুফ আলাইহিস সালাম, যিনি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে মহব্বত করতেন, তিনি এই মানবীয় ইশক-মহব্বত থেকে বেঁচে গেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: (এমনি ভাবেই হয়েছে যাতে আমি তার থেকে মন্দ ও নির্লজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনোনীত বান্দাদের মধ্যে একজন ছিল।) [ সূরা ইউসূফ: ২৪] পক্ষান্তরে মিসরের প্রধানের স্ত্রী ও সম্প্রদায় ছিল মুশরিক। ফলে সে প্রেম-ভালোবাসায় আক্রান্ত হয়’।-[দ্র:মাজমুউল ফাতওয়া: ১০/১৩৫]
তাই একজন মুসলমানের উচিত এই ধ্বংসের পথ থেকে সরে আসা। এ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। যদি এ-ক্ষেত্রে ঢিল দেয়, বা কোতাহি করে এবং প্রেমের নদীতে তরী ভাসায় – যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হারাম তাকে বার বার দেখে দেখে, যা শোনা হারাম তা বার বার শোনে শোনে, বিপরীত লিঙ্গের সাথে কথা বলাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে করে, আর এভাবেই ডুবে যায় প্রেম-ভালোবাসায়, তাহলে সে নিশ্চয় গুনাগার, পাপী, শাস্তি ও আযাবে উপযোগী।
images (2)
এমন অনেক মানুষ আছে যে শুরুতে ঢিল দিয়েছে, মনে করেছে যখন ইচ্ছে করবে ফিরে আসতে পারবে, নিজেকে মুক্ত করতে পারবে, অথবা বিশেষ সীমানা পর্যন্তই যাবে। তবে যখন ব্যাধি রগশিরায় অনুপ্রবেশ করেছে, তখন না কাজে এসেছে কোনো ডাক্তারে আর না কোনো ওষুধে।
কবি বলেন:
প্রেম প্রেম খেলেছে
এক পর্যায়ে বনে গেছে প্রেমিক,
তারপর   প্রেম যখন তাকে করেছে বিজয়
হয়েছে সে অপারগ,
ভ্রম হয়েছে বিশাল ঢেউকে ছোট্ট বলে,
ফলে  যখন দাঁড়িয়েছে তাতে শক্তভাবে,
গিয়েছে সে চির নিমজ্জনে।
রাওজাতুল মুহিব্বিন গ্রন্থে ইবনেল কাইয়েম রা. বলেন :‘যখন কারণটা তার ইচ্ছায় সংঘটিত হয়েছে, তখন এর থেকে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা জন্ম নেবে সে ব্যাপারে সে মাযুর নয়, তথা উযর পেশ করার অধিকার সে হারিয়ে ফেলে। আর এতে সন্দেহ নেই যে বার বার দৃষ্টিনিক্ষেপ করা এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করে যাওয়া মাদক সেবনের মতোই, অর্থাৎ ব্যক্তিকে কারণ সংঘটিত করার অপরাধেই কেবল অভিযুক্ত করা হয়’।-[ দ্র:পৃষ্ঠা: ১৪৭]
ব্যক্তি যদি এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে দূরে থাকার জন্য আগ্রহী হয়, অতঃপর সে হারাম জিনিস দেখা থেকে দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখে, হারাম জিনিস শোনা থেকে কান বন্ধ করে রাখে, মনের মধ্যে শয়তান যে কুমন্ত্রণা দেয় তা দূরে সরিয়ে দেয়, এর পরেও যদি এই ব্যাধির অগ্নিকণা তাকে স্পর্শ করে-ক্ষণিক দৃষ্টির কারণে, অথবা এমন কোনো লেনদেনের কারণে যা মূলতঃ বৈধ ছিল- অতঃপর এভাবে যদি কোনো নারীর প্রতি মহব্বত জন্মে যায়, তাহলে আশা করা যায়  কোনো গুনাহ হবে না, ইনশাআল্লাহ।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: (আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না) [ সূরা আল বাকারা: ২৮৬]
ইবনে তাইমিয়াহ রা. মাজমুউল ফাতওয়ায় বলেন: [ দ্র:১১/১০]’ যদি ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন না হয়, তাহলে, তাকে যা পেয়ে বসল তাতে গুনাহ হবে না।‘
images (1)
ইবনেল কাইয়েম রা. বলেন: [ দ্র: রাউযাতুল মুহিব্বিন:১৪৭]’যদি, অবৈধ নয় এমন কারণ হেতু প্রেম জন্ম নেয়, তাহলে ব্যক্তিকে দোষারোপ করা হবে না। যেমন কেউ তার স্ত্রী অথবা দাসীর  প্রেমাক্রান্ত ছিল, অতঃপর যেকোনো কারণে তাদের বিচ্ছেদ ঘটল, কিন্তু প্রেমের ভাব থেকে সে নিষ্কৃতি পেল না, এমতাবস্থায় তাকে দোষারোপ করা হবে না। অনুরূপভাবে যদি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যায় এবং সে সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবেই তার হৃদয় প্রেমাক্রান্ত হয়, তাহলেও তাকে দোষারোপ করা যাবে না। তবে তাকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে দমন করার জন্য এবং তা থেকে সরে আসার জন্য।‘
ব্যক্তিকে চেষ্টা করে যেতে হবে তার হৃদয়ের চিকিৎসার জন্য প্রীতিভাজনের  সকল স্মৃতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে- আল্লাহর মহব্বত দিয়ে নিজ হৃদয়কে ভরপুর করে, আল্লাহর মহব্বত আঁক্‌ড়ে ধরে নিজেকে অমুখাপেক্ষী করে। আর যারা বুদ্ধিমান ও আমানতদার নসিহতকারী এমন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিতেও সঙ্কোচবোধ করবে না, অথবা মনোচিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতেও ভুলবে না। তাদের কাছে হয়তো কোনো এলাজ পাওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি সে হবে ধৈর্যশীল, আল্লাহর কাছে ছাওয়াব প্রার্থী, পবিত্রতা অবলম্বনকারী, গোপনকারী। এরূপ করলে আল্লাহ তার জন্য ছাওয়াব লিখবেন ইনশা আল্লাহ।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রা. বলেন: [ দ্র: মাজমুউল ফাতওয়া:১০/১৩৩]’যদি ব্যক্তি প্রেমাক্রান্ত হয়, অতঃপর সে পবিত্রতা অবলম্বন করে, ধৈর্য ধরে, তাহলে আল্লাহ তার তাকওয়ার জন্য ছাওয়াব দেবেন। কেননা শরিয়তের দলিল থেকে জানা যায়, ব্যক্তি যদি দৃষ্টি-কথা-কর্মের ক্ষেত্রে হারাম বিষয় থেকে বেঁচে থাকে, আর ব্যাপারটা ফাঁস্‌ করে না দিয়ে গোপন করে, কোনো মাখলুকের কাছে শিকায়েত করতে গিয়ে হারাম কথায় জড়িয়ে না যায়, সে যদি কোনো নির্লজ্জ বিষয় ফাঁস্‌ না করে দেয়, প্রীতিভাজনের  অন্বেষণে বের না হয়, আল্লাহর আনুগত্য ও পাপ থেকে  ধৈর্য ধরে, তার হৃদয়ে যে প্রেমযন্ত্রণা রয়েছে তার ক্ষেত্রেও  ধৈর্য ধরে, যেভাবে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি বিপদে ধৈর্য ধরে, তাহলে আল্লাহকে ভয়কারী ও ধৈর্যধারণকারীদের মধ্যে সে শামিল হবে। ইরশাদ হয়েছে: (নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে ও সবর করে, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের  প্রতিদান  বিনষ্ট করেন না।‘

আল্লাহই ভালো জানেন



সমাপ্ত

কারো বিপদে সমবেদনা জানানো – ইমাম আযযাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্তের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে, তাহলে স্বয়ং ঐ বিপন্ন ব্যক্তি সবর করলে যে সওয়াব পায়, সেও অনুরূপ সওয়াব পাবে”। (তিরমিযী)



হযরত আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে বলেছেন, “সন্তানহারা মায়ের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও সান্ত্বনা দান করলে আল্লাহ জান্নাতের মূল্যবান পোশাক পরিধান করাবেন”। (তিরিমিযী)
হযরত ওমর ইবন হাযম রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘মুমিন তার কোন ভাইয়ের বিপদের সময় সহানুভূতি জানায়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সম্মানজনক জান্নাতী পোশাক পরিধান করাবেন’। (ইবনে মাজাহ)
হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘তোমাকে কোন বস্তু তোমার ঘর থেকে বের করেছে। তিনি বললেন, আমি এক মৃতের আত্মীয়-স্বজনকে সান্ত্বনা জানাতে গিয়েছিলাম। (আবু দাউদ, নাসায়ী) (এখানে সান্ত্বনা দেয়ার অর্থ সবরের পরামর্শ দেয়া। তাই তা দাফনের পূর্বে বা পরে উভয় অবস্থাতে দেয়া মুস্তাহাব।) ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুমুল্লাহ এর মতে, মৃত্যুর পর থেকে দাফনের পর তিন দিন পর্যন্ত শোক প্রকাশ করা মুস্তাহাব। অন্যান্য ইমামদের মতে তিন দিন পর তাযিয়া করা মাকরূহ। কেননা , এতে তার বেদনার কথা জাগ্রত হয়।
ইমাম নববী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, শুধু দুটি অবস্থাতে তিন দিন পর তা করা যায়।
এক- তিন দিন পর্যন্ত সে অনুপস্থিত থাকলে।
দুই- তিন দিন পর তার সাক্ষাৎ পেলে সবাই একত্রে শোক প্রকাশ করা মাকরূহ। উল্লেখ্য, শোক ও সমবেদনা প্রকাশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান, ধৈর্য ধারণের উপদেশ দান, তার দুঃখ, শোক ও বিপদের অনুভূতিকে হালকা করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাই এটি মুস্তাহাব। এটি সৎ কাজের আদেশ দান অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা এবং সততা ও আল্লাহভীতির কাজে সহযোগিতার আওতাধীন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক কন্যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এ মর্মে সংবাদ পাঠান, তার এক পুত্র মৃত্যু শয্যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদদাতাকে বললেন, “যাও, একে (কন্যাকে) বল, আল্লাহ যা নেন, তা তাঁর বস্তু, আর যা দেন তাও তাঁর বস্তু। সব কিছু বান্দার কাছে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য গচ্ছিত রয়েছে। তাকে বল সে যেন সবর করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
এক সাহাবীকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরবারে অনুপস্থিত দেখে তাঁর কথা জিজ্ঞেস করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলল, “হে আল্লাহর রাসূল ! তার ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি সমবেদনা জানালেন এবং এরপর বললেন, “শোন, তোমার ছেলে সারা জীবন তোমার কাছে থাকুক-এটা তোমার কি অধিক পছন্দনীয় ! না সে তোমার আগে গিয়ে জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকুক এবং তুমি মৃত্যুবরণ করলে সে তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিক-এটা পছন্দনীয়? সাহাবী বললেন, সে আমার আগে জান্নাতে গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দিক এটাই কাম্য”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তাহলে সেটি তোমার জন্য নির্ধারিত হল। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কি শুধু আমার জন্য? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না, সকল মুসলমানের জন্য”। (আহমদ ও নাসায়ী)
হযরত আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে দেখেন এক মহিলা একটি কবরের ওপর উপুড় হয়ে কাঁদছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “হে আল্লাহর বাঁদী, আল্লাহকে ভয় কর ও সবর কর। মহিলা বলল; হে আল্লাহর বান্দা, আমি এক সন্তানহারা জননী। সুতরাং আমি যা করছি তা আমার জন্য অশোভনীয় কিছু নয়”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বললেন, তুমি সবর কর। মহিলা বলল, “যথেষ্ট হয়েছে। তোমার কথা শুনেছি। এবার তুমি যাও”। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ থেকে চলে গেলেন। এক সাহাবী মহিলাকে দেখে বললেন, এ ব্যক্তি তোমাকে কি বলল ? মহিলা তাঁকে সব কথা জানাল। সাহাবী বললেন, তুমি জান এ ব্যক্তি কে? সে বললঃ না। সাহাবী বললেনঃ সর্বনাশ ! উনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । মহিলা একথা শোনামাত্র দৌড়ে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে দেখা করে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল ! আমি সবর করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “প্রথম আঘাতের সময় সবর করা উচিত।” অর্থাৎ আকস্মিক বিপদ দেখা দেয়ার সময় সবর অবলম্বন করাই উত্তম। পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিকভাবেই মন শান্ত হয়ে যায়।
হযরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু নামক একজন সাহাবীর একটই ছেলে মৃত্যুবরণ করে। তিনি সে সময় বিদেশে ছিলেন এবং ছেলের মৃত্যুর কথা মোটেই জানতেন না। এরপর যখন তিনি বাড়ি এলেন, তাঁর স্ত্রী পরিবারের সবাইকে আগে বলে দিলেন, “তোমরা কেউ ছেলের মৃত্যুর কথা তার কাছে প্রকাশ করো না। যখন যা বলতে হয় আমি তাঁকে জানাব।” এরপর তিনি আবু তালহাকে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করলেন। রাতে শোবার পর তাকে বললেন, হে আবু তালহা ! কেউ যদি কাউকে কোন বস্তু ধার হিসেবে দিয়ে, এরপর তা ফেরত চায়, তাহলে তা ফেরত দিতে অস্বীকার করা কি উচিত ? তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। তখন তাঁর স্ত্রী সকল ঘটনা জানিয়ে বললেন, “তাহলে তোমার ছেলের ব্যাপারে সবর কর”। একথা শুনে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত হয়ে বললেন, তুমি এত বিলম্বে এটা আমাকে জানালে ? এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা জানালে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “গত রাতে তোমাদের আচরণকে আল্লাহ অভিনন্দিত করেছেন”। (বুখারী) হাদীসে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, “সবরের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত কোন বস্তু কাউকে দান করা হয়নি”। (মুসলিম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তাঁর এক ছেলেকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলেন। লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হাসার কারণ কি? তিনি বললেন, আমি শয়তানকে বিমুখ করেছি। যখন হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শত্রুরা আঘাত করে, তখন তাঁর দাড়ির ওপর দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকা অবস্থায় তিনি বলেন, “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতুম মিনায যালিমীন। হে আল্লাহ ! আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমার কাছে সাহায্য চাই এবং সকল বিষয়ে সাহায্য চাই, আর আমাকে তুমি যে পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছ, এতে আমি সবর চাই”।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যার দু’টি শিশু সন্তান মারা যাবে, সে জান্নাতে যাবে”। মুসলিম শরীফে বর্নিত রয়েছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মৃত সন্তানেরা জান্নাতের সর্বত্রই অবাধে ঘুরে বেড়াবে। একথা শুনে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক, যদি কারো একটি সন্তান মারা যায় ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে সেও জান্নাতে যাবে। (তিরমিযি) কিয়ামতের মাঠে তারা তাদের পিতা-মাতাকে পেয়ে জাপটে ধরে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ না করিয়ে ছাড়বে না।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তির জীবিত অবস্থায় তিনজন না বালেগ সন্তান মারা যাবে, সে সন্তান তার জন্যে জাহান্নামের প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ নাজাত পাবে। একথা শুনে হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু নামক এক সাহাবী বললেন, আমার তো দু’জন মারা গেছে, তারাও কি প্রাচীর হবে ? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হ্যাঁ।
হযরত উবাই ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার একজন সন্তান মারা গেছে। একজনও কি নাজাতের উসিলা হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ! একজন হলেও নাজাতের কারণ হবে। তবে তাকে প্রাথমিক অবস্থায় সবর করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কারো ওপর যখন কোন বিপদ মুসিবত দেখা দেয়, তখন তা হয় তাকে এমন এক গুনাহ থেকে পবিত্র করার জন্যে আসে, যাকে আল্লাহ এ বিপদ ব্যতীত আর কোনভাএ ক্ষমা করবেন না বলে স্থির করেছেন, নতুবা তাকে এমন কোন উচ্চ মর্যাদার আসনে সমাসীন করার জন্যে আসে, যার জন্য সে বিপদ ব্যতীত আল্লাহ আর কোন বিকল্প রাখেননি। হযরত উম্মে সালামা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসিবতে পতিত হয়ে “ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বলবে এবং দোয়া করবে যে, “হে আল্লাহ ! আমাকে এ বিপদ থেকে আশ্রয় দাও এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু বিকল্প দান কর” , আল্লাহ তাকে উপযুক্ত পুরষ্কার ও উত্তম প্রতিদান দান করবেন।
হযরত উম্মে সালামা (রা) বলেছন, “এরপর আমার স্বামী আবু সালামা মৃত্যুবরণ করলে আমি অনুরূপ দোয়া করেছিলাম। এর ফলে আল্লাহ আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মত মর্যাদাবান স্বামী দান করলেন”। (মুসলিম)
ইমাম শা’বী বর্ণনা করেন, বিচারপতি হযরত শুরাইহ (রহ) বলতেন, কোন বিপদে পড়লে আমি চারবার আল্লাহর প্রশংসা করি।
প্রথমবার, এজন্য বিপদটা আরো মারাত্মক হতে পারত কিন্তু তা হয়নি।
দ্বিতীয়, যখন আল্লাহ আমাকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দান করেছেন।
তৃতীয়, যখন আমাকে “ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়ার তওফিক দান করেছেন।
চতুর্থবার, যখন দেখি যে বিপদটা আমার ইসলাম থেকে পদচ্যুত হয়নি।
বিপদে যারা ধৈর্যধারণ করে আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ। এর বিপরীতে যদি কেউ বিপদে পতিত হয়ে ধৈর্যহীন, অস্থির হয়ে আপন মৃত্যু ও ধ্বংস কামনা করে এবং এ সংক্রান্ত অস্থিরতা প্রদর্শন করে, তাহলে তার প্রতি আল্লাহ অবশ্যই বিরাগ হন, পরিণামে তার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, বিপদের সময় যে রান চাপড়ায় আল্লাহ তার সৎ কর্ম ব্যর্থ করে দেন। ব্যথিত হৃদয়ে নীরবে অশ্রুপাত করা দূষণীয় নয়। দোষ তখন যখন তা অতিমাত্রায় করা হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকা মানুষের নেককার হওয়ার নিদর্শন। আর আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করা বদকার ও পাপাচারী হওয়ার নিদর্শন।

মূলঃ কবীরা গুনাহ – ইমাম আযযাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ)

বিপদে ধৈর্য্যধারণ (পর্ব:১)

কে আছে এমন, যে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত হয়নি, চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন করেনি; ভর দুপুরেও গোটা পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসেনি; সুদীর্ঘ, সুপ্রশস্ত পথ সরু ও সংকীর্ণ হয়ে যায়নি; যৌবন সত্ত্বেও সুস্থ দেহ নিশ্চল হয়ে পড়েনি; অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রতিরোধ্য ক্রন্দন ধ্বনি তুলতে তুলতে গলা শুকিয়ে আসেনি; অবিশ্বাস সত্ত্বেও মর্মন্তুদ কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়নি; এই বুঝি চলে গেল, চির দিনের জন্য; আর কোন দিন ফিরে আসবে না; কোন দিন তার সাথে দেখা হবে না; শত আফসোস ঠিকরে পড়ে, কেন তাকে কষ্ট দিয়েছি; কেন তার বাসনা পূর্ণ করিনি; কেন তার সাথে রাগ করেছি; কেন তার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
আরো কত ভয়াবহ স্মৃতির তাড়না তাড়িয়ে বেড়ায়, শোকাতুর করে, কাঁদায়। কত ভর্ৎসনা থেমে থেমে হৃদয়ে অস্বস্তির জন্ম দেয়, কম্পনের সূচনা করে অন্তরাত্মায়। পুনঃপুন একই অভিব্যক্তি আন্দোলিত হয় মুখের ভাষা যা ব্যক্ত করতে অক্ষম। হাতের কলম যা লিখতে অপারগ।
হ্যাঁ, এ কঠিনতম মুহূর্ত, হতাশাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে শক্তি, সাহস ও সুদৃঢ় মনোবল উপহার দেয়ার মানসে আমাদের এ প্রয়াস। আমরা মুসলমান। আমাদের মনোনীত রব আল্লাহ। আমাদের পছন্দনীয় ধর্ম ইসলাম। আমাদের একমাত্র আদর্শ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পক্ষান্তরে কাফেরদের জীবন সংকীর্ণ, তারা হতাশাগ্রস্ত, কারণ, আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক, কাফেরদের কোনো অভিভাবক নেই।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জগতে মুমিনদের অবস্থার একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন :


“একজন মুমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মত, থেকে থেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রুপ একের পর এক মুসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মুমিনকে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যতক্ষণ না শিকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে।” [মুসলিম : ৫০২৪]
আবু হুরায়রা (রা.)-র সূত্রে বর্ণিত আরেকটি উদাহরণে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :




“ইমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের নরম ডগার ন্যায়, বাতাস যে দিকেই বয়ে চলে, সেদিকেই তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস যখন থেমে যায়, সেও স্থির হয়ে দাঁড়ায়। ইমানদারগণ বালা-মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীক্ষিত হন। কাফেরদের উদাহরণ দেবদারু (শক্ত পাইন) বৃক্ষের ন্যায়, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ উপড়ে ফেলেন।” [বুখারী : ৬৯১২]
শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে। তার সাথে একাকার হয়ে যায়। যদিও বাতাস শস্যকে এদিক-সেদিক দোলায়মান রাখে। কিন্তু ছুঁড়ে মারতে, টুকরা করতে বা নীচে ফেলে দিতে পারে না। তদ্রুপ মুসিবত যদিও মুমিনকে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ও চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ কিংবা পরাস্ত করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, তার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে, সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে।
এ পার্থিব জগৎ দুঃখ-বেদনা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা, সংহার ও জীবন নাশকতায় পরিপূর্ণ। এক সময় প্রিয়জনকে পাওয়ার আনন্দ হয়, আরেক সময় তাকে হারানোর দুঃখ। এক সময় সুস্থ, সচ্ছল, নিরাপদ জীবন, আরেক সময় অসুস্থ, অভাবী ও অনিরাপদ জীবন। মুহূর্তে জীবনের পট পালটে যায়, ভবিষ্যৎ কল্পনার প্রাসাদ দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে মিশে যায়। অথবা এমন সংকট ও কর্মশূন্যতা দেখা দেয়, যার সামনে সমস্ত বাসনা নিঃশেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় সব উৎসাহ-উদ্দীপনা।
কারণ এ দুনিয়ায় নেয়ামত-মুসিবত, হর্ষ-বিষাদ, হতাশা-প্রত্যাশা সব কিছুর অবস্থান পাশাপাশি। ফলে কোন এক অবস্থার স্থিরতা অসম্ভব। পরিচ্ছন্নতার অনুচর পঙ্কিলতা, সুখের সঙ্গী দুঃখ। হর্ষ-উৎফুল্ল ব্যক্তির ক্রন্দন করা, সচ্ছল ব্যক্তির অভাবগ্রস্ত হওয়া এবং সুখী ব্যক্তির দুঃখিত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
এ হলো দুনিয়া ও তার অবস্থা। প্রকৃত মোমিনের এতে ধৈর্যধারণ বৈ উপায় নেই। বরং এতেই রয়েছে দুনিয়ার উত্থান-পতনের নিরাময় তথা উত্তম প্রতিষেধক।
হাদিসে এসেছে :

“ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি।” [বুখারী : ১৭৪৫]
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :


“মুমিনের ব্যাপারটি চমৎকার, নেয়ামত অর্জিত হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়।” [মুসলিম : ৫৩১৮]
আল্লাহ তাআলা আমাদের ধৈর্য্যধারণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একে তার সাহায্য ও সান্নিধ্য লাভের উপায় ঘোষণা করেছেন। বলা হচ্ছে :


“হে মুমিনগণ, ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা আল-বাকারা : ১৫৩ ]
আরো বিশেষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষাগার, আমি তোমাদেরকে ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র, ধন-সম্পদ, জনবল ও ফল-মূলের স্বল্পতার মাধ্যমে পরীক্ষা করব। হে রাসূল! আপনি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন। এরশাদ হচ্ছে :


“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৭]
বস্তুত নিজ দায়িত্বে আত্মোনিয়োগ, মনোবল অক্ষুণ্ন ও কর্ম চঞ্চলতার জন্য ধৈর্য অপরিহার্য। কেউ সাফল্য বিচ্যুত হলে, বুঝতে হবে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে তার মধ্যে। কারণ ধৈর্য্যের মতো শক্তিশালী চাবির মাধ্যমে সাফল্যের সমস্ত বদ্ধ কপাট উম্মুক্ত হয়। পাহাড়সম বাধার সম্মুখেও কর্মমুখরতা চলমান থাকে।
মানব জাতির জীবন প্রবাহের পদে পদে ধৈর্যের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য বিধায় এ নিবন্ধের সূচনা।
কেন ধৈর্যধারণ করব?
কী তার ফল?
কীভাবে ধৈর্যধারণ করব?
কী তার পদ্ধতি?

…ইত্যাদি বিষয়ের উপর কিছু উপদেশ উল্লেখ করা হবে। যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর বিশেষ উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মুসিবত আর প্রতিকূলতায় নিত্যদিনের মত স্বাভাবিক জীবন উপহার দিবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবে সাফল্যমণ্ডিত জীবন লাভে।

বিপদে ধৈর্য্যধারণ (পর্ব:২)

# যে কোন পরিস্থিতি মেনে নেয়ার মানসিকতা লালন করা
প্রত্যেকের প্রয়োজন মুসিবত আসার পূর্বেই নিজকে মুসিবত সহনীয় করে তোলা,অনুশীলন করা ও নিজেকে শোধরে নেয়া। কারণ ধৈর্য কষ্টসাধ্য জিনিস, যার জন্য পরিশ্রম অপরিহার্য।
খেয়াল রাখতে হবে যে, দুনিয়া অনিত্য, ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী। এতে কোনো প্রাণীর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। আছে শুধু ক্ষয়িষ্ণু এক মেয়াদ, সীমিত সামর্থ্য। এ ছাড়া আর কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবনের উদাহরণে বলেন :



“পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়, যে গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ দিনে যাত্রা আরম্ভ করল, অতঃপর দিনের ক্লান্তময় কিছু সময় একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল, ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায় যাত্রা আরম্ভ করল।” [মুসনাদে ইমাম আহমাদ : ২৭৪৪]
হে মুসলিম! দুনিয়ার সচ্ছলতার দ্বারা ধোঁকা খেওনা, মনে করো না, দুনিয়া স্বীয় অবস্থায় আবহমানকাল বিদ্যমান থাকবে কিংবা পট পরিবর্তন বা উত্থান-পতন থেকে নিরাপদ রবে। অবশ্য যে দুনিয়াকে চিনেছে, এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে, তার নিকট দুনিয়ার সচ্ছলতা মূল্যহীন।
মোট কথা, যে পার্থিব জগতে দীর্ঘজীবি হতে চায়, তার প্রয়োজন মুসিবতের জন্য ধৈর্য্যশীল এক হৃদয়।
# তাকদিরের উপর ঈমান
যে ব্যক্তি মনে করবে তাকদির অপরিহার্য বাস্তবতা এবং তা অপরিবর্তনীয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া সংকটময় ও পরিবর্তনশীল, তার আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে। দুনিয়ার উত্থান-পতন সুখ-দুঃখ স্বাভাবিক ও নগন্য মনে হবে তার কাছে। আমরা দেখতে পাই, তাকদিরে বিশ্বাসী মুমিনগণ পার্থিব মুসিবতে সবচে’কম প্রতিক্রিয়াশীল,কম অস্থির ও কম হতাশাগ্রস্ত হন। বলা যায় তাকদিরের প্রতি ঈমান শান্তি ও নিরাপত্তার ঠিকানা। তাকদির-ই আল্লাহর কুদরতে মুমিনদের হৃদয়-আত্মা নৈরাশ্য ও হতাশা মুক্ত রাখে। তদুপরি চিরসত্যবাদী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বিশ্বাস তো আছেই :


“জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ জড়ো হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায়, কোনও উপকার করতে পারবে না, তবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আবার তারা সকলে মিলে যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, কোনও ক্ষতি করতে পারবে না, তবে যততুটু আল্লাহ তোমার কপালে লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কিতাব শুকিয়ে গেছে।” [তিরমিযী : ২৪৪০]
আমাদের আরো বিশ্বাস, মানুষের হায়াত, রিযিক তার মায়ের উদর থেকেই নির্দিষ্ট। আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:


“আল্লাহ তাআলা গর্ভাশয়ে একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন, পর্যায়ক্রমে সে বলতে থাকে, হে প্রভু জমাট রক্ত, হে প্রভু মাংস পিণ্ড। যখন আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, ফেরেস্তা তখন বলে, হে প্রভু পুঃলিঙ্গ না স্ত্রী লিঙ্গ? ভাগ্যবান না হতভাগা? রিযিক কতটুকু? হায়াত কতটুকু? উত্তর অনুযায়ী পূর্ণ বিবরণ মায়ের পেটেই লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়।” [বুখারি : ৬১০৬ মুসলিম : ৪৭৮৫]
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী উম্মে হাবিবা রাদিআল্লাহু আনহা মুনাজাতে বলেন,
“হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল, আমার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আমার ভাই মুয়াবিয়ার দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :


“তুমি নির্ধারিত হায়াত, নির্দিষ্ট কিছু দিন ও বণ্টনকৃত রিযিকের প্রাথর্না করেছ। যাতে আল্লাহ তাআলা আগ-পাছ কিংবা কম-বেশী করবেন না। এরচে’ বরং তুমি যদি জাহান্নামের আগুন ও কবরের আযাব থেকে নাজাত প্রার্থনা করতে, তাহলে তোমার জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক হত।” [মুসলিম: ৪৮১৪]
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হাদীসের বক্তব্যে সুষ্পষ্ট, মানুষের হায়াত, রিযিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত, তার অবিনশ্বর জ্ঞান অনুযায়ী লিপিবদ্ধ এবং হ্রাস-বৃদ্ধিহীন ও অপরিবর্তনীয়।” [মুসলিম : নববীর ব্যাখ্যা সহ]
ইবনে দায়লামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আসেন এবং বলেন,
আমার অন্তরে তাকদির সম্পর্কে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বর্ণনা করে শোনান। হতে পারে আল্লাহ আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দিবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ আসমান এবং জমিনবাসীদের শাস্তি দিলে, জালেম হিসেবে গণ্য হবেন না। আর তিনি তাদের সকলের উপর রহম করলে, তার রহম-ই তাদের আমলের তুলনায় বেশী হবে। তাকদিরের প্রতি ঈমান ব্যতীত ওহুদ পরিমান স্বর্ণ দান করলেও কবুল হবে না। স্মরণ রেখ, যা তোমার হস্তগত হওয়ার তা কোনভাবেই হস্তচ্যুত হওয়ার সাধ্য রাখে না। এটা ছাড়া অন্য আকিদা নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নাম অবধারিত।
তিনি বলেন, অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর কাছে আসি। তিনিও তদ্রুপ শোনালেন। হুযাইফাতুল য়ামান এর কাছে আসি, তিনিও তদ্রুপ বললেন। যায়েদ বিন সাবিত এর কাছে আসি, তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করে শোনালেন।”
[আবু দাউদ : ৪০৭৭ আহমাদ : ২০৬০৭]

বিপদে ধৈর্য্যধারণ (পর্ব:৩)

# রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আদর্শ পূর্বসূরীদের জীবন চরিত পর্যালোচনা
পরকালে বিশ্বাসী আল্লাহ ভীরু গোটা মুসলিম জাতির আদর্শ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাআলা বলেন :


“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” [সূরা আহযাব : ২১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত চিন্তাশীল, গবেষকদের উপজীব্য ও শান্তনার বস্তু। তার পূর্ণ জীবনটাই ধৈর্য ও ত্যাগের দীপ্ত উপমা। লক্ষ্য করুন, স্বল্প সময়ে মধ্যে চাচা আবু তালিব, যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কাফেরদের অত্যাচার প্রতিহত করতেন; একমাত্র বিশ্বস্ত সহধর্মিনী খাদিজা; কয়েকজন ঔরসজাত মেয়ে এবং ছেলে ইব্রাহিম ইন্তেকাল করেন। চক্ষুযুগল অশ্রসিক্ত, হৃদয় ভারাক্রান্ত, স্মায়ুতন্ত্র ও অস্থিমজ্জা নিশ্চল নির্বাক। এর পরেও প্রভুর ভক্তিমাখা উক্তি


“চোখঅশ্রুসিক্ত, অন্তর ব্যথিত, তবুও তা-ই মুখে উচ্চারণ করব, যাতে প্রভু সন্তুষ্ট, হে ইব্রাহিম! তোমার বিরহে আমরা গভীর মর্মাহত।” [বুখারী : ১৩০৩]
আরো অনেক আত্মোৎর্সগকারী সাহাবায়ে কেরাম মারা যান, যাদের তিনি ভালবাতেন, যারা তার জন্য উৎসর্গ ছিলেন। এত সব দুঃখ-বেদনা তার শক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ধৈর্য-অভিপ্রায়গুলো ম্লান করতে পারেনি।
তদ্রুপ যে আদর্শবান পূর্বসুরীগণের জীবন চরিত পর্যালোচনা করবে, তাদের কর্মকুশলতায় অবগাহন করবে, সে সহসাই অবলোকন করবে, তারা বিবিধ কল্যাণ ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র ধৈর্যের সিঁড়ি বেয়েই হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :

“নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে (ইবরাহীম আ. ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে) উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।” [সূরা মুমতাহিনা : ৬]
উরওয়া ইবনে জুবায়েরের ঘটনা, আল্লাহ তাআলা তাকে এক জায়গাতে, এক সাথে দুটি মুসিবত দিয়েছেন। পা কাটা এবং সন্তানের মৃত্যু। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার সাতটি ছেলে ছিল, একটি নিয়েছেন, ছয়টি অবশিষ্ট রেখেছেন। চারটি অঙ্গ ছিল একটি নিয়েছেন, তিনটি নিরাপদ রেখেছেন। মুসিবত দিয়েছেন, নেয়ামতও প্রদান করেছেন। দিয়েছেন আপনি, নিয়েছেনও আপনি।”
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর একজন ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি তার দাফন সেরে কবরের পাশে সোজা দাঁড়িয়ে, লোকজন চারপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে আছে, তিনি বলেন, “হে বৎস! তোমার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। অবশ্যই তুমি তোমার পিতার অনুগত ছিলে। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে আল্লাহ তোমাকে দান করেছেন, আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্টই ছিলাম। তবে আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে এখানে অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত স্থান কবরে দাফন করে আগেরচে’ বেশি আনন্দিত। আল্লাহর কাছে তোমার বিনিময়ে আমি অধিক প্রতিদানের আশাবাদী।