কিতাবুত তাওহীদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কিতাবুত তাওহীদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আল্লাহর জিকির, কুরআন এবং রাসূল সম্পর্কিত কোন বিষয় নিয়ে খেল- তামাশা করা

  •  আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা খেল- তামাশা করছিলাম৷” (ফুসসিলাত . ৫০)
 ইবনে ওমর, মুহাম্মদ বিন কা’ব, যায়েদ বিন আসলাম এবং কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত আছে, [তাদের একের কথা অপরের কথার মধ্যে সামঞ্জস্য আছে] তাবুক যুদ্ধে একজন লোক বলল, এ কারীদের [কুরআন পাঠকারীর] মত এত অধিক পেটুক, কথায় এত অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর সাক্ষাতে এত অধিক ভীরু আর কোন লোক দেখিনি৷ অর্থাৎ লোকটি তার কথা দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; এবং তাঁর সাহায্যকারী সাহাবায়ে কেরামের দিকে ইঙ্গিত করেছিলো৷ আওফ বিন মালেক লোকটিকে বললেন, ‘তুমি মিথ্যা কথা বলেছ৷ কারণ, তুমি মুনাফেক৷’ আমি অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ খবর জানাবো৷ আওফ তখন এ খবর জানানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে চলে গেলেন৷ গিয়ে দেখলেন কুরআন তাঁর চেয়েও অগ্রগামী [অর্থাত্‍ আওফ পৌঁছার পূর্বেই ওহির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপারটি জেনে ফেলেছেন] এ ফাঁকে মুনাফেক লোকটি তার উটে চড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে চলে আসল৷ তারপর সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল, চলার পথে আমরা অন্যান্য পথচারীদের মত পরস্পরের হাসি, রং- তামাশা করছিলাম’ যাতে করে আমাদের পথ চলার কষ্ট লাঘব হয়৷ ইবনে ওমর রা. বলেন, এর উটের গদির রশির সাথে লেগে আমি যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম৷ পাথর তার পায়ের উপর পড়ছিল, আর সে বলছিল, ‘আমরা হাসি ঠাট্টা করছিলাম৷’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা কি আল্লাহ; , তাঁর আয়াত [কুরআন] এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিলে?
ব্যাখ্যা
আল্লাহর জিকির, কুরআন ও রাসূল সম্পর্কিত বিষয়ে যে ব্যক্তি হাসি-তামাশা করে
তার পরিণাম হচ্ছে এই যে, তার এ কাজটি সম্পূর্ণরূপে ঈমানের পরিপন্থী৷ এ কাজ
মানুষকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়৷ কারণ, দ্বীনের মূল বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ
তাআলার তাঁর যাবতীয় ঐশী গ্রন্থাবলি এবং রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করা্ [তাই
এ মূল বিষয় নিয়ে তামাশা করার নামই কুফরি]
এসব বিষয়গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ঈমানের অন্তর্ভুক্ত৷ আর এগুলো নিয়ে ঠাট্টা
বিদ্রূপ করা এবং হাসি তামাশা করা কুফরি করার চেয়েও জঘন্য৷ এ কথাগুলো জানা
থাকা আমাদের জন্য অতীব প্রয়োজন৷ এ রকম করা নিঃসন্দেহে কুফরি কাজ৷ তদুপরি
এতে রয়েছে মানুষকে হেয় প্রতিপন্নকরা এবং অবজ্ঞা প্রদর্শন করার মানসিকতা৷
কাফের দু ধরনের .
এক .  (মু’ রিদূন) যারা আল্লাহ; ও রাসূলকে অস্বীকার করে৷
দুই . [মুআ’রিদুন] যারা আল্লাহএবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে৷
আল্লাহ, তাঁর দীন এবং তাঁর রাসূলের দোষ ও দুর্নাম গায়৷ এরা জঘন্য রকমের কুফরি করে, চরম অশান্তির সৃষ্টি করে৷ যারা আল্লাহ, রাসূল এবং কুরআন নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ এবং রং তামাশা করে তারাও এর শ্রেণিভুক্ত৷ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার দিকে [মুনাফেকের দিকে] দৃষ্টিও দেননি৷ এর অতিরিক্ত কোন কথাও বলেননি৷
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় :
১৷ এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একথা অনুধাবন করা যে, আল্লাহ, কুরআন ও রাসূলের সাথে যারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করে তারা কাফের৷
২৷ এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট; আয়াতের তাফসীর ঐ ব্যক্তির জন্য যে, এ ধরনের কাজ করে অর্থাত্‍ আল্লাহ; , কুরআন ও রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে৷
৩৷ চোগলখুরী এবং আল্লাহ; ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে নসিহতের মধ্যে পার্থক্য৷
৪৷ এমন ওজরও রয়েছে যা গ্রহণ করা উচিত নয়৷
_________________________________
৪৮ তম অধ্যায়
তাওহীদের মর্মকথা

আল্লাহর জিকির, কুরআন এবং রাসূল সম্পর্কিত কোন বিষয় নিয়ে খেল- তামাশা করা


  •  আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা খেল- তামাশা করছিলাম৷” (ফুসসিলাত . ৫০)
 ইবনে ওমর, মুহাম্মদ বিন কা’ব, যায়েদ বিন আসলাম এবং কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত আছে, [তাদের একের কথা অপরের কথার মধ্যে সামঞ্জস্য আছে] তাবুক যুদ্ধে একজন লোক বলল, এ কারীদের [কুরআন পাঠকারীর] মত এত অধিক পেটুক, কথায় এত অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর সাক্ষাতে এত অধিক ভীরু আর কোন লোক দেখিনি৷ অর্থাৎ লোকটি তার কথা দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; এবং তাঁর সাহায্যকারী সাহাবায়ে কেরামের দিকে ইঙ্গিত করেছিলো৷ আওফ বিন মালেক লোকটিকে বললেন, ‘তুমি মিথ্যা কথা বলেছ৷ কারণ, তুমি মুনাফেক৷’ আমি অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ খবর জানাবো৷ আওফ তখন এ খবর জানানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে চলে গেলেন৷ গিয়ে দেখলেন কুরআন তাঁর চেয়েও অগ্রগামী [অর্থাত্‍ আওফ পৌঁছার পূর্বেই ওহির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপারটি জেনে ফেলেছেন] এ ফাঁকে মুনাফেক লোকটি তার উটে চড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে চলে আসল৷ তারপর সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল, চলার পথে আমরা অন্যান্য পথচারীদের মত পরস্পরের হাসি, রং- তামাশা করছিলাম’ যাতে করে আমাদের পথ চলার কষ্ট লাঘব হয়৷ ইবনে ওমর রা. বলেন, এর উটের গদির রশির সাথে লেগে আমি যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম৷ পাথর তার পায়ের উপর পড়ছিল, আর সে বলছিল, ‘আমরা হাসি ঠাট্টা করছিলাম৷’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা কি আল্লাহ; , তাঁর আয়াত [কুরআন] এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিলে?
ব্যাখ্যা
আল্লাহর জিকির, কুরআন ও রাসূল সম্পর্কিত বিষয়ে যে ব্যক্তি হাসি-তামাশা করে
তার পরিণাম হচ্ছে এই যে, তার এ কাজটি সম্পূর্ণরূপে ঈমানের পরিপন্থী৷ এ কাজ
মানুষকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়৷ কারণ, দ্বীনের মূল বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ
তাআলার তাঁর যাবতীয় ঐশী গ্রন্থাবলি এবং রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করা্ [তাই
এ মূল বিষয় নিয়ে তামাশা করার নামই কুফরি]
এসব বিষয়গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ঈমানের অন্তর্ভুক্ত৷ আর এগুলো নিয়ে ঠাট্টা
বিদ্রূপ করা এবং হাসি তামাশা করা কুফরি করার চেয়েও জঘন্য৷ এ কথাগুলো জানা
থাকা আমাদের জন্য অতীব প্রয়োজন৷ এ রকম করা নিঃসন্দেহে কুফরি কাজ৷ তদুপরি
এতে রয়েছে মানুষকে হেয় প্রতিপন্নকরা এবং অবজ্ঞা প্রদর্শন করার মানসিকতা৷

কাফের দু ধরনের .
এক .  (মু’ রিদূন) যারা আল্লাহ; ও রাসূলকে অস্বীকার করে৷
দুই . [মুআ’রিদুন] যারা আল্লাহএবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে৷

আল্লাহ, তাঁর দীন এবং তাঁর রাসূলের দোষ ও দুর্নাম গায়৷ এরা জঘন্য রকমের কুফরি করে, চরম অশান্তির সৃষ্টি করে৷ যারা আল্লাহ, রাসূল এবং কুরআন নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ এবং রং তামাশা করে তারাও এর শ্রেণিভুক্ত৷ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার দিকে [মুনাফেকের দিকে] দৃষ্টিও দেননি৷ এর অতিরিক্ত কোন কথাও বলেননি৷
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় :
১৷ এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একথা অনুধাবন করা যে, আল্লাহ, কুরআন ও রাসূলের সাথে যারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করে তারা কাফের৷
২৷ এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট; আয়াতের তাফসীর ঐ ব্যক্তির জন্য যে, এ ধরনের কাজ করে অর্থাত্‍ আল্লাহ; , কুরআন ও রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে৷
৩৷ চোগলখুরী এবং আল্লাহ; ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে নসিহতের মধ্যে পার্থক্য৷
৪৷ এমন ওজরও রয়েছে যা গ্রহণ করা উচিত নয়৷
_________________________________
৪৮ তম অধ্যায়
তাওহীদের মর্মকথা

যাদু – কিতাবুত তাওহীদ

কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা – অধ্যায় ২৩
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুমুল্লাহ)
 
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর তারা অবশ্যই অবগত আছে, যে ব্যক্তি যাদু অবলম্বন করে তার জন্যে পরকালে সামান্যতমও কোন অংশ নেই’। (*১) (সূরা বাকারাহঃ১০২)
আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেছেন, “তারা জিবত ও তাগুতের প্রতি বিশ্বাস করে”।(*২) (সূরা নিসাঃ৫১)
হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘জিবত’ হচ্ছে যাদু, আর ‘তাগুত’ হচ্ছে শয়তান। (ত্বাবারানী,৫৮৩৪)
হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘তাগুত’ হচ্ছে গণক। তাদের উপর শয়তান অবতীর্ণ হতো। আর সাধারণত প্রত্যেক গোত্রের জন্যই একজন করে গণক নির্ধারিত ছিল।(*৩) (ইবনে আবী হাতিম, ২/২২; সহীহ বুখারী, ৮/৩১৭)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাকো’। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি?’ তিন জবাবে বললেন, ‘১ আল্লাহর সাথে শিরক করা ২যাদু করা ৩অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ তায়ালা হারাম করে দিয়েছেন ৪সুদ খাওয়া ৫এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা ৬যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ৭ সতী সাধ্বী মু’মিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।(*৪) (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৬৬,৫৭৬৪; সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ৮৯)
জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ‘মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে, “যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তলোয়ারের আঘাতে তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া(মৃত্যুদণ্ড)”।(*৫) (জামে’ তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৬)
সহীহ বুখারিতে বাজালা বিন আবাদাহ থেকে বর্ণিত আছে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম গভর্ণরদের কাছে পাঠানো নির্দেশ নামায় লিখেছিলেন, “তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর”। বাজালা বলেন, ‘এ নির্দেশের পর আমরা তিনজন যাদুকরকে হত্যা করেছি’। (*৬)(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৫৬, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩০৪৩, মুসনাদ আহমাদ, ১/১৯০,১৯১)
হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসে আছে, ‘তিনি তাঁর অধীনস্থ একজন ক্রীতদাসীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে দাসী তাঁকে যাদু করেছিল। অতঃপর উক্ত নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’ (মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদীস নং৪৬; একই রকম হাদীস জুনদুব থেকে বর্ণিত রয়েছে। ইমাম আহমাদ (রাহি) বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিনজন সাহাবী থেকে একথা সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে।) (*৭)
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়,
১ সূরা বাকারাহর ১০২ নং আয়াতের তাফসীর
২ সূরা নিসার ৫১ নং আয়াতের তাফসীর
৩ ‘জিবত’ ও ‘তাগুত’ এর তাফসীর এবং উভয়ের মধ্যে পার্থক্য
৪ ‘তাগুত’ কখনো জ্বিন আবার কখনো মানুষ হতে পারে
৫ ধ্বংসাত্মক এমন সাতটি বিশেষ বিষয়ের জ্ঞান যে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে
৬ যাদুকরকে কাফের ঘোষণা দিতে হবে
৭ তাওবার সুযোগ ছাড়াই যাদুকরকে হত্যা করতে হবে
৮ যদি ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালার যুগে যাদুবিদ্যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর পরবর্তী যুগের অবস্থা কি দাঁড়াবে [অর্থাৎ তাঁর পরবর্তী যুগে যাদুবিদ্যার প্রচলন অবশ্যই আছে]

ব্যাখ্যা– যাদু শিরকে আকবার তথা বড় শিরকের অন্যতম এবং তা তাওহীদের মূলনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যাদুর বাস্তবতা হচ্ছে তা কার্যকর এবং ক্রিয়াশীল করতে হলে শয়তানকে ব্যবহার এবং নৈকট্য লাভ করতেই হয়। আর শুধুমাত্র তার নৈকট্য লাভের মাধ্যমেই জিন-শয়তান যাদুকৃত ব্যক্তির শরীরে যাদুর ক্রিয়া শুরু করে। শয়তানের নৈকট্য লাভ ছাড়া কোন যাদুকরের পক্ষেই যাদুকর হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং যুক্তিসঙ্গত কারণেই আমরা বলব যে, যাদু শিরক এর পর্যায়ভুক্ত। আল্লাহ পাক বলেন, ‘(বলুন যে আমি পরিত্রাণ কামনা করছি) গিরা তথা বন্ধনে অধিক ফুঁ দান কারিনীদের অনিষ্ট হতে’।نفاثات শব্দটি نفاثةএর বহুবচন। نفاثة /نفتথেকে মুবালাগা তথা অতিমাত্রায় ফুঁ দান করার অর্থ বহন করে এবং তা দ্বারা  নিসন্দেহে যাদুকারিনী বুঝানো হয়েছে এবং সরাসরি যাদুকারিনী না বলে অতিমাত্রায় ফুঁ দানকারিনী বলা হয়েছে । কেননা তারা অতিমাত্রায় ফুঁ দান করত এবং ঝাড় ফুঁক ও বিভিন্ন রকমের তন্ত্র মন্ত্র দ্বারা ফুঁ দিত এবং সে ফুঁ এর মাধ্যমে জ্বিন সেই গিরা বন্ধনে কাজ করত যাতে যাদুকৃত ব্যক্তির শরীরের কিছু একটা থাকত অথবা এমন কিছু থাকত যার সাথে যাদুকৃত ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে । এভাবে যাদু ক্রিয়াশীল হয়ে যেত।
(*১)আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘আর তারা নিশ্চয়ই অবগত আছে যে, যে ব্যক্তি যাদু ক্রয়(অবলম্বন) করল’ এর সঠিক অর্থ হচ্ছে যাদুকর ব্যক্তি যাদু ক্রিয়া করল এবং বিনিময়ে তাওহীদ প্রদান করল, ফলে মূল্য হচ্ছে তাওহীদ আর পণ্য হচ্ছে যাদু’ । যাদুকর ব্যক্তির পরকালে কোন অংশ থাকবে না , ঠিক এইরুপ অবস্থা মুশরিকদেরও হবে। পরকালে তাদের ভাগ্যেও কিছুই জুটবে না।
(*২)আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘তারা জিবত ও তাগুতে বিশ্বাস করে’। উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন, জিবত হচ্ছে যাদু। উল্লেখিত আয়াতে আহলে কিতাবদের দোষারোপ ও ভর্ৎসনা করা হয়েছে। কেননা তারা যাদুতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আর এটা সাধারণত ইহুদীদের ক্ষেত্রে অধিক দেখা যায়। এ কথা সুস্পষ্ট বলা যায় যে, যাদুবিদ্যা চর্চা ও তা অবলম্বনের কারণে আল্লাহ তাদের দুর্নাম করেছেন ও তাদের প্রতি লা’নত বর্ষণ করেছেন এবং তাদের প্রতি ভীষণ ক্রোধ প্রকাশ করেছেন। সুতরাং এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, সুনিশ্চিত এটা হারাম ও কবীরা গুনাহ। আর যদি তাতে শিরকী কথা থাকে তবে অবশ্যই সেটা শিরক বলেই গণ্য হবে। এভাবেই তার সমস্ত প্রকারের এক নির্দেশ।
তাগুত হচ্ছে শয়তান এবং জিবত ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ হলেও ইহুদী সম্প্রদায়ের নিকট তা যাদু অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তারা যাদু ও শয়তানের উপর বিশ্বাস স্থাপন ও আনুগত্য প্রকাশ করে হক থেকে দূরে সরে গেছে।
(*৩) জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর অভিমত, ‘তাগুত’ দ্বারা গণককে বুঝানো হয়েছে। এ বিষয়ের আলোচনা সামনে করা হবে।
(*৪) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক’। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ ! ঐ জিনিসগুলো কি কি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শিরক করা, যাদু করা ‘ ইত্যাদি। উপর্যুক্ত পাপগুলির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নিসন্দেহে এগুলো মহাপাপ। সুতরাং যাদু শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
(*৫) জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে যে, যাদুকরের হদ তথা শাস্তি হচ্ছে তরবারি দ্বারা হত্যা করা(মৃত্যুদণ্ড)। (তিরমিযী) ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, সঠিক অর্থে হাদীসটি মওকুফ। শাস্তির ব্যাপারে মূলত যাদুকরগণের মধ্যে কোন পার্থক্য রাখা হয়নি। যে কোন প্রকার যাদু হোক না কেন যাদুকরকে হত্যা করতে হবে এবং বাস্তবতা হচ্ছে যাদুকরের শাস্তি এবং মুরতাদের শাস্তি একই কেননা যাদুতে শিরক থাকেই। ফলে যে ব্যক্তি শিরক করল সে মুরতাদ হয়ে গেল এবং তার জানমাল বৈধ হয়ে গেল (হত্যাযোগ্য হয়ে গেল)।
(*৬) বাজালা বিন আবদুল্লাহ থেকে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ফরমানজারী করেছিলেন যে, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর এবং যাদুকারিনীকে হত্যা কর, তিনি বলেন, ফলে আমরা তিনজন যাদুকারিনীকে হত্যা করেছিলাম’। এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যাদুকর এবং যাদুকারিনীকে হত্যার ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই।
(*৭) হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার অধীনস্ত একজন ক্রীতদাসীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে দাসী তাকে যাদু করেছিল, অতঃপর উক্ত দাসীকে হত্যা করা হয়েছিল। একই রকম হাদীস জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, তিনজন সাহাবী থেকে যাদুকরকে হত্যার ব্যাপারে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম যাদুকরকে হত্যার ফতোয়া ও আদেশ প্রদান করেছেন, এ মর্মে সেখানে কোন রকম পার্থক্য করেননি এবং এটাই ওয়াজিব যে, যেন কোন প্রকার পার্থক্য করা না হয়। প্রত্যেক মুসলমানদের প্রতি ওয়াজিব যে, তারা যাদুর সকল প্রকার থেকে সাবধান থাকবে এবং এই বিধান অর্থাৎ সাবধান থাকার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং এই গর্হিত কাজের বিরোধিতা করবে যেমন ইমামগণ বলেছেন যে, যখনই কোন যাদুকর কোন নগরীতে প্রবেশ করবে তখনই সেখানে অশান্তি, অত্যাচার সীমালংঘন এবং সন্ত্রাস বিরাজ করবে।
—————————————————————————–
উৎসঃ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা – অধ্যায় ২৩
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুমুল্লাহ)
ব্যাখ্যাকারঃ শায়খ সালেহ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আলে শায়েখ
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ আবদুর বর আফফান, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

তাকদীর অস্বীকারকারীদের পরিচিতি – কিতাবুত তাওহীদ

কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা – অধ্যায় ৫৯
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুল্লাহ)



আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, “সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে ইবনে উমারের জীবন, তাদের(তাকদীর অস্বীকারকারীদের) কারও কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে”। (*১)
অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী দ্বারা তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে দলীল পেশ করেন, “ঈমান হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর সকল ফেরেশতা, তাঁর যাবতীয় [আসমানী] কিতাব,তাঁর সমস্ত রাসূল এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখবে। সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮)
উবাদা বিন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন, “হে বৎস, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে, ‘তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটারই ছিল। আর তোমার জীবনে যা ঘটেনি তা কোনোদিন জীবনে ঘটার ছিল না।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি একথা বলতে শুনেছি, “সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। সৃষ্টির পরই তিনি কলমকে বললেন, ‘লিখ’।(*২)কলম বলল, ‘হে আমার রব্ব, আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের তাকদীর লিপিবদ্ধ কর।”
হে বৎস আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ” যে ব্যক্তি [তাকদীরের উপর] বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং ৪৭০০)
ইমাম আহমেদের অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। এরপরই তিনি কলমকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘লিখ’। কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সে মুহুর্ত থেকে কলম তা লিখতে শুরু করে দিল।” (মুসনাদে আহমাদ, ৫/৩১৮)
ইবনে ওয়াহাবের একটি বর্ণনা মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ” যে ব্যক্তি তাকদীর এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ বিশ্বাস করে না, তাকে আল্লাহ পাক জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন।” (ইবনে ওয়াহাব এর আল-কাদর:২৬; ইবনে আবী আসেম এর কিতাবুস সুন্নাহ; হাদীস নং ১১১)
ইবনু দাইলামী থেকে বর্ণিত আছে , কাতাদাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘আমি ইবনে কা’ব এর কাছে গেলাম। তারপর তাকে বললাম, ‘তাকদীরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু কথা আছে। আপনি আমাকে তাকদীর সম্পর্কে কিছু উপদেশমূলক কথা বলুন। এর ফলে হয়ত আল্লাহ তা’আলা আমার অন্তর থেকে উক্ত জমাটবাঁধা কাদা [কথা] দূর করে দেবেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যদি উহুদ [পাহাড়] পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান কর, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। আর এ কথা জেনে রাখ, তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটতে কখনো ব্যতিক্রম হত না। আর তোমার জীবনে যা ঘটার ছিল না, তা কখনো ঘটত না। তাকদীর সম্পর্কিত এ বিশ্বাস পোষণ না করে মৃত্যুবরণ করলে, তুমি অবশ্যই জাহান্নামী হবে।’ তখন তিনি বললেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং যায়েদ বিন সাবিত (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর নিকট গেলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ জাতীয় হাদীস এর কথাই উল্লেখ করলেন। (সুনান আবী দাঊদ, হাদীস নং ৪৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, ৫/১৮৫,১৮৯)
————————————
ব্যাখ্যাঃ তাকদীর তথা ভাগ্যের প্রতি ঈমান বলতে বুঝায় যে, প্রত্যেক বিষয়েই আল্লাহর পূর্ব হতেই জ্ঞান আছে বিশ্বাস করা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তার সবকিছুই তিনি লাওহে মাহফুজ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তা বিশ্বাস করা। একথা বিশ্বাস করা যে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন এবং তিনি বান্দার সমস্ত কর্মের স্রষ্টা। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা’। আল্লাহ বান্দা ও তাদের কর্মের স্রষ্টা। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ তার সমস্ত কিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাকে মু’মিন বলা হবে না, কেননা এক্ষেত্রে অনেক অনেক দলীল রয়েছে। তাকদীরকে অস্বীকার করা কখনও ইসলাম থেকে বহিষ্কারের কারণ হয়। যেমন কেউ যদি আল্লাহর পূর্ব হতে জ্ঞান রাখেন অস্বীকার করে অথবা আল্লাহর লাওহে মাহফুজে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখেন তা অস্বীকার করে। তাকদীরকে অস্বীকার করা কখনও বিদ’আতের পর্যায় যা তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থী; যেমন- আল্লাহর ইচ্ছা বা তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে যে ব্যাপকতা, কেউ যদি তা অস্বীকার করে।
(*১) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এভাবে বলার কারণ হল, আল্লাহ তা’আলা শুধু মুসলমানের নিকট থেকেই সৎ আমলসমূহ কবুল করেন। যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখে না বরং অস্বীকার করে সে নিশ্চয়ই মুসলমান নয়। যদিও সে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করে, তার থেকে গ্রহণ করা হবে না। তিনি তাঁর কথার সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উক্ত হাদীস পেশ করেন। তাকদীরের ভাল-মন্দ বলতে বান্দার স্বার্থে ভাল-মন্দের কথা বলা হয়েছে। যদিও আল্লাহর কর্ম সবই ভাল এবং হিকমতের অন্তর্গত ও অনুযায়ী।
(*২) তাকদীরের ব্যাপারে উবাদাহ বিন সামেতের হাদীসের মর্ম হল- তাকদীরের সব কিছু লিখা হয়ে গেছে। তাকদীরের প্রতি ঈমানের তাৎপর্য হল, মানুষ কার্যাবলী সম্পাদন করার ক্ষেত্রে বাধ্য নয় বরং তার স্বাধীনতা রয়েছে, সে তার ইচ্ছামত ভাল বা মন্দ কাজ করতে পারে। এ জন্যেই তাকে নেকী করার আদেশ ও গুনাহ থেকে বাঁচার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি বাধ্যই হতো তবে তাকে নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। ‘আল্লাহ তাকে(কলমকে) বললেন লেখ’। অত্র হাদীস দ্বারা লেখার গুরুত্ব প্রমাণিত হয় এবং ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে কলম’। গবেষক উলামাদের এ ব্যাপারে সঠিক অভিমত হচ্ছে যে, আল্লাহ যখন কলম সৃষ্টি করলেন তখন তাকে এ কথা বললেন। এমন নয় যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম কলমই সৃষ্টি করেছেন। কেননা তাঁর প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ।

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১ তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ফরয, এর বর্ণনা ।
২ তাকদীরের প্রতি কিভাবে ঈমান আনতে হবে, এর বর্ণনা ।
৩ তাকদীরের প্রতি যার ঈমান নেই, তার আমল বাতিল ।
৪ যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে না সে ঈমানের স্বাদ অনুধাবন করতে অক্ষম ।
৫ সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি হয়েছে তার উল্লেখ ।
৬ কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সৃষ্টির পরক্ষণেই কলম দ্বারা তা উক্ত সময়ে লিখা হয়ে গেছে ।
৭ যে ব্যক্তি তাকদীর বিশ্বাস করে না, তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িত্বমুক্ত ।
৮ সালফে সালেহীনের রীতি ছিল, কোন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনে প্রশ্ন করে জেনে নেয়া ।
৯  উলামায়ে কেরাম এমনভাবে প্রশ্নকারীকে জবাব দিতেন যা দ্বারা সন্দেহ দূর হয়ে যেত। জবাবের নিয়ম হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের কথাকে শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের [কথা ও কাজের] দিকে সম্পৃক্ত করতেন।
উৎসঃ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা – অধ্যায় ৫৯
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুল্লাহ)


ব্যাখ্যাকারঃ শায়খ সালেহ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আলে শায়েখ
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ আবদুর বর আফফান, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে কসম করার পরিণতি

১৷ জুনদুব বিন আব্দুলহ রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“এক ব্যক্তি বলল, “আল্লাহর কসম, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না৷ তখন আল্লাহর তাআলা বললেন, ‘আমি অমুককে ক্ষমা করবোনা’ একথা বলে দেয়ার আস্পর্ধা কার আছে? আমি তাকেই ক্ষমা করে দিলাম৷ আর তোমার [কসম কারীর] আমল বাতিল করে দিলাম৷”(মুসলিম)


আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি কসম করে উল্লেখিত কথা বলেছিল, সে ছিল একজন আবেদ৷ আবু হুরায়রা বলেন ঐ ব্যক্তি একটি মাত্র কথার মাধ্যমে তাঁর দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়টাই বরবাদ করে ফেলেছে৷”

আলোচিত অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় :
১৷ আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে মাতব্বরি করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা৷ [অর্থাত্ মাতব্বরি না করা]
২৷ আমাদের কারো জাহান্নাম তার জুতার ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী৷
৩৷ জান্নাতও অনুরূপ নিকটবর্তী৷ [হযরত ইব্ন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেনঃ “জান্নাত তোমাদের প্রত্যেকের জন্য তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে। আর দোযখও
তাই।“ (বুখারী, রিয়াদুস সালেহীন-১০৫)]
৪৷ এ অধ্যায়ে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, একজন লোক মাত্র একটি কথার মাধ্যমে তার দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে ফেলেছে৷
৫৷ কোন কোন সময় মানুষকে এমন সামান্য কারণেও মাফ করে দেয়া হয়, যা তার কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়৷

৬৪ তম অধ্যায় .
তাওহীদের মর্মকথা