কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা – অধ্যায় ৫৯
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুল্লাহ)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, “সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে ইবনে উমারের জীবন, তাদের(তাকদীর অস্বীকারকারীদের) কারও কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে”। (*১)
অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী দ্বারা তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে দলীল পেশ করেন, “ঈমান হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর সকল ফেরেশতা, তাঁর যাবতীয় [আসমানী] কিতাব,তাঁর সমস্ত রাসূল এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখবে। সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮)
ইমাম আহমেদের অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। এরপরই তিনি কলমকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘লিখ’। কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সে মুহুর্ত থেকে কলম তা লিখতে শুরু করে দিল।” (মুসনাদে আহমাদ, ৫/৩১৮)
ইবনে ওয়াহাবের একটি বর্ণনা মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ” যে ব্যক্তি তাকদীর এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ বিশ্বাস করে না, তাকে আল্লাহ পাক জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন।” (ইবনে ওয়াহাব এর আল-কাদর:২৬; ইবনে আবী আসেম এর কিতাবুস সুন্নাহ; হাদীস নং ১১১)
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুল্লাহ)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, “সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে ইবনে উমারের জীবন, তাদের(তাকদীর অস্বীকারকারীদের) কারও কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে”। (*১)
অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী দ্বারা তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে দলীল পেশ করেন, “ঈমান হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর সকল ফেরেশতা, তাঁর যাবতীয় [আসমানী] কিতাব,তাঁর সমস্ত রাসূল এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখবে। সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮)
উবাদা বিন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন, “হে বৎস, তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে, ‘তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটারই ছিল। আর তোমার জীবনে যা ঘটেনি তা কোনোদিন জীবনে ঘটার ছিল না।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি একথা বলতে শুনেছি, “সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। সৃষ্টির পরই তিনি কলমকে বললেন, ‘লিখ’।(*২)কলম বলল, ‘হে আমার রব্ব, আমি কী লিখব?’ তিনি বললেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সব জিনিসের তাকদীর লিপিবদ্ধ কর।”হে বৎস আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ” যে ব্যক্তি [তাকদীরের উপর] বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যুবরণ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং ৪৭০০)
ইমাম আহমেদের অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে ‘কলম’। এরপরই তিনি কলমকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘লিখ’। কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সে মুহুর্ত থেকে কলম তা লিখতে শুরু করে দিল।” (মুসনাদে আহমাদ, ৫/৩১৮)
ইবনে ওয়াহাবের একটি বর্ণনা মতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ” যে ব্যক্তি তাকদীর এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ বিশ্বাস করে না, তাকে আল্লাহ পাক জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন।” (ইবনে ওয়াহাব এর আল-কাদর:২৬; ইবনে আবী আসেম এর কিতাবুস সুন্নাহ; হাদীস নং ১১১)
ব্যাখ্যাঃ তাকদীর তথা ভাগ্যের প্রতি ঈমান বলতে বুঝায় যে, প্রত্যেক বিষয়েই আল্লাহর পূর্ব হতেই জ্ঞান আছে বিশ্বাস করা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তার সবকিছুই তিনি লাওহে মাহফুজ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তা বিশ্বাস করা। একথা বিশ্বাস করা যে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করতে পারেন এবং তিনি বান্দার সমস্ত কর্মের স্রষ্টা। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা’। আল্লাহ বান্দা ও তাদের কর্মের স্রষ্টা। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ তার সমস্ত কিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাকে মু’মিন বলা হবে না, কেননা এক্ষেত্রে অনেক অনেক দলীল রয়েছে। তাকদীরকে অস্বীকার করা কখনও ইসলাম থেকে বহিষ্কারের কারণ হয়। যেমন কেউ যদি আল্লাহর পূর্ব হতে জ্ঞান রাখেন অস্বীকার করে অথবা আল্লাহর লাওহে মাহফুজে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখেন তা অস্বীকার করে। তাকদীরকে অস্বীকার করা কখনও বিদ’আতের পর্যায় যা তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থী; যেমন- আল্লাহর ইচ্ছা বা তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে যে ব্যাপকতা, কেউ যদি তা অস্বীকার করে।ইবনু দাইলামী থেকে বর্ণিত আছে , কাতাদাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘আমি ইবনে কা’ব এর কাছে গেলাম। তারপর তাকে বললাম, ‘তাকদীরের ব্যাপারে আমার মনে কিছু কথা আছে। আপনি আমাকে তাকদীর সম্পর্কে কিছু উপদেশমূলক কথা বলুন। এর ফলে হয়ত আল্লাহ তা’আলা আমার অন্তর থেকে উক্ত জমাটবাঁধা কাদা [কথা] দূর করে দেবেন। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যদি উহুদ [পাহাড়] পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় দান কর, আল্লাহ তোমার এ দান ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। আর এ কথা জেনে রাখ, তোমার জীবনে যা ঘটেছে তা ঘটতে কখনো ব্যতিক্রম হত না। আর তোমার জীবনে যা ঘটার ছিল না, তা কখনো ঘটত না। তাকদীর সম্পর্কিত এ বিশ্বাস পোষণ না করে মৃত্যুবরণ করলে, তুমি অবশ্যই জাহান্নামী হবে।’ তখন তিনি বললেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান এবং যায়েদ বিন সাবিত (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর নিকট গেলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ জাতীয় হাদীস এর কথাই উল্লেখ করলেন। (সুনান আবী দাঊদ, হাদীস নং ৪৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, ৫/১৮৫,১৮৯)
————————————
(*১) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এভাবে বলার কারণ হল, আল্লাহ তা’আলা শুধু মুসলমানের নিকট থেকেই সৎ আমলসমূহ কবুল করেন। যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখে না বরং অস্বীকার করে সে নিশ্চয়ই মুসলমান নয়। যদিও সে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করে, তার থেকে গ্রহণ করা হবে না। তিনি তাঁর কথার সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উক্ত হাদীস পেশ করেন। তাকদীরের ভাল-মন্দ বলতে বান্দার স্বার্থে ভাল-মন্দের কথা বলা হয়েছে। যদিও আল্লাহর কর্ম সবই ভাল এবং হিকমতের অন্তর্গত ও অনুযায়ী।(*২) তাকদীরের ব্যাপারে উবাদাহ বিন সামেতের হাদীসের মর্ম হল- তাকদীরের সব কিছু লিখা হয়ে গেছে। তাকদীরের প্রতি ঈমানের তাৎপর্য হল, মানুষ কার্যাবলী সম্পাদন করার ক্ষেত্রে বাধ্য নয় বরং তার স্বাধীনতা রয়েছে, সে তার ইচ্ছামত ভাল বা মন্দ কাজ করতে পারে। এ জন্যেই তাকে নেকী করার আদেশ ও গুনাহ থেকে বাঁচার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি বাধ্যই হতো তবে তাকে নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। ‘আল্লাহ তাকে(কলমকে) বললেন লেখ’। অত্র হাদীস দ্বারা লেখার গুরুত্ব প্রমাণিত হয় এবং ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা যা সৃষ্টি করলেন তা হচ্ছে কলম’। গবেষক উলামাদের এ ব্যাপারে সঠিক অভিমত হচ্ছে যে, আল্লাহ যখন কলম সৃষ্টি করলেন তখন তাকে এ কথা বললেন। এমন নয় যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম কলমই সৃষ্টি করেছেন। কেননা তাঁর প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১ তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা ফরয, এর বর্ণনা ।
২ তাকদীরের প্রতি কিভাবে ঈমান আনতে হবে, এর বর্ণনা ।
৩ তাকদীরের প্রতি যার ঈমান নেই, তার আমল বাতিল ।
৪ যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে না সে ঈমানের স্বাদ অনুধাবন করতে অক্ষম ।
৫ সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি হয়েছে তার উল্লেখ ।
৬ কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সৃষ্টির পরক্ষণেই কলম দ্বারা তা উক্ত সময়ে লিখা হয়ে গেছে ।
৭ যে ব্যক্তি তাকদীর বিশ্বাস করে না, তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িত্বমুক্ত ।
৮ সালফে সালেহীনের রীতি ছিল, কোন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনে প্রশ্ন করে জেনে নেয়া ।
৯ উলামায়ে কেরাম এমনভাবে প্রশ্নকারীকে জবাব দিতেন যা দ্বারা সন্দেহ দূর হয়ে যেত। জবাবের নিয়ম হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের কথাকে শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের [কথা ও কাজের] দিকে সম্পৃক্ত করতেন।
২ তাকদীরের প্রতি কিভাবে ঈমান আনতে হবে, এর বর্ণনা ।
৩ তাকদীরের প্রতি যার ঈমান নেই, তার আমল বাতিল ।
৪ যে ব্যক্তি তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে না সে ঈমানের স্বাদ অনুধাবন করতে অক্ষম ।
৫ সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি হয়েছে তার উল্লেখ ।
৬ কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে, সৃষ্টির পরক্ষণেই কলম দ্বারা তা উক্ত সময়ে লিখা হয়ে গেছে ।
৭ যে ব্যক্তি তাকদীর বিশ্বাস করে না, তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িত্বমুক্ত ।
৮ সালফে সালেহীনের রীতি ছিল, কোন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনে প্রশ্ন করে জেনে নেয়া ।
৯ উলামায়ে কেরাম এমনভাবে প্রশ্নকারীকে জবাব দিতেন যা দ্বারা সন্দেহ দূর হয়ে যেত। জবাবের নিয়ম হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের কথাকে শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের [কথা ও কাজের] দিকে সম্পৃক্ত করতেন।
উৎসঃ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা – অধ্যায় ৫৯
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুল্লাহ)
মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী(রাহিমাহুল্লাহ)
ব্যাখ্যাকারঃ শায়খ সালেহ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আলে শায়েখ
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ আবদুর বর আফফান, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ আবদুর বর আফফান, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন