লেখক: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. মোঃ আবদুল কাদের
আল্লাহ তা’আলা সবরকে এমন এক যন্ত্র দিয়েছেন যা কখনো ব্যর্থ হয় না, এমন তীর বানিয়েছেন যা লক্ষ ভ্রষ্ট হয় না, এমন বিজয়ী সৈনিক বানিয়েছেন যে কখনো পরাজিত হয় না, এমন সুরক্ষিত দূর্গ বানিয়েছেন যা কখনো ধ্বংস হয় না। এই সবর আর বিজয় দুই সহোদরের মতো। মানুষ তার দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে সবরের মতো এমন কোনো অস্ত্রে সজ্জিত হয় না, যা তার নফস ও শয়তানকে নিশ্চিতভাবে হারিয়ে দেয়। সেই বান্দার কোনো শক্তিই নেই, যার গুণাবলির মধ্যে সবর তথা ধৈর্য নেই। সেই বান্দা বিজয়ও ছিনিয়ে আনতে পারে না যে সবরকারী বা ধৈর্যশীল নয়। তাইতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انْقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةَ ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ (11)
سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (21)
সবর বা ধৈর্য আল্লাহর পরিপূর্ণ মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা’আলা যাকে এই গুণ দেন; সেই এই গুণে সুসজ্জিত হয়। আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসূল আলাইহিস সালামদের এই বিরল গুণে বিভূষিত করেছিলেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা নব্বই জায়গায় সবরের কথা বলেছেন। অতএব ভেবে দেখুন সবর কত গুরুত্বপূর্ণ! আল্লাহ তা’আলা বিভিন্নভাবে সবরের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। নিচে তার কয়েকটি তুলে ধরা হল :
• আল্লাহ তা’আলা তাঁর পবিত্র গ্রন্থে সাবের তথা ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদেরকে হিসাব ছাড়া প্রতিদান দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ (10)
وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ (46)
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآَيَاتِنَا يُوقِنُونَ (24)
وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ (126)
وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (120)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)
وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ (146)
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (155) الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (156) أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (157)
إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُونَ (111)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ الْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِنِعْمَةِ اللَّهِ لِيُرِيَكُمْ مِنْ آَيَاتِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (31)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآَيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (5)
فَقَالُوا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا وَظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (19)
إِنْ يَشَأْ يُسْكِنِ الرِّيحَ فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلَى ظَهْرِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (33)
. আলে-ইমরান : ২০০।
. হজ : ১১।
. সূরা আল-হাদীদ : ২১।
. সূরা আয-যুমার : ১০।
. সূরা আল-আনফাল : ৪৬।
. সূরা আস-সাজদাহ : ২৪।
. সূরা আন-নাহল, আয়াত : ১২৬।
. আলে-ইমরান, আয়াত : ১২০।
. আলে-ইমরান, আয়াত : ২০০।
. আলে-ইমরান, আয়াত : ১৪৬।
. সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭।
. সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত : ১১১।
. সূরা লুকমান, আয়াত : ৩১।
. সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৫।
. সূরা আস-সাবা, আয়াত : ১৯।
. সূরা আশ-শূরা, আয়াত : ৩৩।
সম্পাদনা : ড. মোঃ আবদুল কাদের
আল্লাহ তা’আলা সবরকে এমন এক যন্ত্র দিয়েছেন যা কখনো ব্যর্থ হয় না, এমন তীর বানিয়েছেন যা লক্ষ ভ্রষ্ট হয় না, এমন বিজয়ী সৈনিক বানিয়েছেন যে কখনো পরাজিত হয় না, এমন সুরক্ষিত দূর্গ বানিয়েছেন যা কখনো ধ্বংস হয় না। এই সবর আর বিজয় দুই সহোদরের মতো। মানুষ তার দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে সবরের মতো এমন কোনো অস্ত্রে সজ্জিত হয় না, যা তার নফস ও শয়তানকে নিশ্চিতভাবে হারিয়ে দেয়। সেই বান্দার কোনো শক্তিই নেই, যার গুণাবলির মধ্যে সবর তথা ধৈর্য নেই। সেই বান্দা বিজয়ও ছিনিয়ে আনতে পারে না যে সবরকারী বা ধৈর্যশীল নয়। তাইতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)
‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।’এই সবর মুমিনের জন্য তার ভাইয়ের মতো। আপন ভাই অনেক সময় রাগ করে ছেড়ে যায়; কিন্তু বিপদের সময় সে-ই সবার আগে এগিয়ে আসে। এই সবর ঈমানের শাখা স্বরূপ, নালা না থাকলে ঈমানের অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখীন হবে। যার ধৈর্য নাই তার ঈমান নাই। সবর ছাড়া যদি ঈমান থাকেও, তবে তা বড় দুর্বল ঈমান। এমন ঈমানদার আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধা ও সংশয়ের সঙ্গে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা সুন্দর বলেছেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انْقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةَ ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ (11)
‘মানুষের মধ্যে কতক এমন রয়েছে, যারা দ্বিধার সাথে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি তার কোনো কল্যাণ হয় তবে সে তাতে প্রশান্ত হয়। আর যদি তার কোনো বিপর্যয় ঘটে, তাহলে সে তার আসল চেহারায় ফিরে যায়। সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি হল সুস্পষ্ট ক্ষতি।’এ ব্যক্তি আসলে সবর হারিয়ে শুধু তার দুর্ভাগ্যই কামাই করে যাবে। পক্ষান্তরে যে সবর করে। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে সে ভাগ্যবান। পৃথিবীতে যারা সৌভাগ্যবান তারা কিন্তু সবর ও ধৈর্য গুণেই ভাগ্যবান। এরা দুঃসময় এলে ধৈর্য ধরে আর সুসময় এলে আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করে। এভাবে তারা জান্নাতের নেয়ামতের অধিকারী হয়। সত্যিই এরা সৌভাগ্যবান। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (21)
‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। তা প্রস্তত করা হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে তাদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।’সবরের গুরুত্ব
সবর বা ধৈর্য আল্লাহর পরিপূর্ণ মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা’আলা যাকে এই গুণ দেন; সেই এই গুণে সুসজ্জিত হয়। আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসূল আলাইহিস সালামদের এই বিরল গুণে বিভূষিত করেছিলেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা নব্বই জায়গায় সবরের কথা বলেছেন। অতএব ভেবে দেখুন সবর কত গুরুত্বপূর্ণ! আল্লাহ তা’আলা বিভিন্নভাবে সবরের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। নিচে তার কয়েকটি তুলে ধরা হল :
• আল্লাহ তা’আলা তাঁর পবিত্র গ্রন্থে সাবের তথা ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদেরকে হিসাব ছাড়া প্রতিদান দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ (10)
‘বল, ‘হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।’• আল্লাহ তা’আলা বলেছেন তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন, তাদের জন্য হেদায়েত ও সুস্পষ্ট বিজয় নিয়ে। ইরশাদ হয়েছে,
وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ (46)
‘আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’• আল্লাহ তা’আলা সবর ও ইয়াকিন তথা ধৈর্য ও ঈমানের বদৌলতে মানুষকে নেতৃত্ব দেন। তিনি ইরশাদ করেছেন,
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآَيَاتِنَا يُوقِنُونَ (24)
‘আর আমি তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা করেছিলাম, তারা আমার আদেশানুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখত।’• আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন সবরই মানুষের জন্য কল্যাণকর। ইরশাদ হয়েছে,
وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ (126)
‘আর যদি তোমরা সবর কর, তবে তাই সবরকারীদের জন্য উত্তম।’• আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, কারও সাথে যদি সবর থাকে তাহলে যত বড় শত্রুই হোক তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। ইরশাদ হয়েছে,
وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (120)
‘আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছু ক্ষতি করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টনকারী।’• আল্লাহ তা’আলা বিজয় ও সফলতার জন্য সবর ও তাকওয়া অবলম্বনের শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)
‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।’• আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যশীলকে ভালোবাসেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? ইরশাদ হয়েছে,
وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ (146)
‘আর কত নবী ছিল, যার সাথে থেকে অনেক আল্লাহওয়ালা লড়াই করেছে। তবে আল্লাহর পথে তাদের ওপর যা আপতিত হয়েছে তার জন্য তারা হতোদ্যম হয়নি। আর তারা দুর্বল হয়নি এবং তারা নত হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’• আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যশীলদের তিনটি বিষয়ে সুসংবাদ দিয়েছেন, যার প্রতিটি পাবার জন্য দুনিয়াবাসী একে অপরের সঙ্গে ইর্ষা করেন। ইরশাদ হয়েছে,
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (155) الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (156) أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (157)
‘আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’• ধৈর্যশীলদের জন্য রেখেছেন জান্নাত লাভের কামিয়াবী আর জাহান্নাম থেকে মুক্তির সাফল্য। ইরশাদ হয়েছে,
إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُونَ (111)
‘নিশ্চয় আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম; নিশ্চয় তারাই হল সফলকাম।’• আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের চার চারটি স্থানে উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর নিদর্শনাবলি থেকে ধৈর্যশীল ও শুকরগুযার বান্দারাই উপকৃত হয় এবং এরাই সৌভাগ্যবান বটে। যেমন ইরশাদ করেছেন,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ الْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِنِعْمَةِ اللَّهِ لِيُرِيَكُمْ مِنْ آَيَاتِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (31)
‘তুমি কি দেখনি যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তাঁর কিছু নিদর্শন তোমাদের দেখাতে পারেন। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآَيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (5)
‘আর আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছি যে, ‘তুমি তোমার কওমকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আন এবং আল্লাহর দিবসসমূহ তাদের স্মরণ করিয়ে দাও।’ নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন।’আরও ইরশাদ করেছেন,
فَقَالُوا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا وَظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (19)
‘কিন্তু তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমাদের সফরের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিন’। আর তারা নিজদের প্রতি যুলম করল। ফলে আমি তাদেরকে কাহিনী বানালাম এবং তাদেরকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’অন্যত্র ইরশাদ করেন,
إِنْ يَشَأْ يُسْكِنِ الرِّيحَ فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلَى ظَهْرِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ (33)
‘তিনি যদি চান বাতাসকে থামিয়ে দিতে পারেন। ফলে জাহাজগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে গতিহীন হয়ে পড়বে। নিশ্চয় এতে পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’চলবে ইনশা’আল্লাহ।
. আলে-ইমরান : ২০০।
. হজ : ১১।
. সূরা আল-হাদীদ : ২১।
. সূরা আয-যুমার : ১০।
. সূরা আল-আনফাল : ৪৬।
. সূরা আস-সাজদাহ : ২৪।
. সূরা আন-নাহল, আয়াত : ১২৬।
. আলে-ইমরান, আয়াত : ১২০।
. আলে-ইমরান, আয়াত : ২০০।
. আলে-ইমরান, আয়াত : ১৪৬।
. সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭।
. সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত : ১১১।
. সূরা লুকমান, আয়াত : ৩১।
. সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৫।
. সূরা আস-সাবা, আয়াত : ১৯।
. সূরা আশ-শূরা, আয়াত : ৩৩।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন