শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আদর্শিক নির্বাসিতদের জন্য শুভ সংবাদ

نْ أبِيْ هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سِلَّمَ- بَدَأَ الِإسْلَامُ غَرِيْبًا، وَ سَيَعُوْدُ كَمَا بَدَأَ
غَرِيْبًا، فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءَ. رواه مسلم



আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,


ইসলামের সূচনা হয়েছে অপরিচিত নির্বাসিতের মত। পুনরায় একদিন তা নির্বাসিতে পরিণত হবে। নির্বাসিতদের জন্য সু-সংবাদ। (মুসলিম-১৪৬)

আভিধানিক আলোচনা :


غَرِيْبً :নির্বাসন দু প্রকার : একটি হচ্ছে বাহ্যিক বা অনুভবনীয়—যেমন নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে একাকী জীবন-যাপন। অপরটি হচ্ছে আদর্শিক। আদর্শের দিক দিয়ে সে যেন নির্বাসিত, অপরিচিত, সমাজে তার আদর্শ তেমন গ্রহণযোগ্য নয়। আলোচ্য হাদিসে দ্বিতীয়টিই উদ্দেশ্য। অর্থ হচ্ছে—কোন মানুষ তার অবস্থান, এবাদত-বন্দেগি, ধর্ম পরায়ণতা, পাপাচার হতে মুক্ত থাকার দরুন আদর্শিকভাবে সমাজ হতে বিচ্ছিন্ন ও নির্বাসিত হয়ে পড়া।

এ নির্বাসন ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা খুবই আপেক্ষিক ব্যাপার : সময় ও অবস্থান-ভেদে নির্বাসনের অনুভূতি মানুষের মাঝে নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

بَدَأَ الِإسْلَامُ غَرِيْبًا : প্রাথমিকভাবে ইসলাম বীজ আকারে ছড়িয়ে ছিল ব্যক্তিদের মাঝে। অত:পর ধীরে ধীরে তা নৈর্ব্যক্তিক ও সামাজিক রূপ লাভ করে। কিন্তু ক্রমে তাকে আক্রান্ত করে বিভিন্ন অপভ্রংশ, ফলে সূচনাকালের মত আজ তা কেবল ব্যক্তিক রূপে ফিরে এসেছে, হারিয়েছে তার সামাজিক যাবতীয় মূল্য।

فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءَ : অতএব নির্বাসিতদের জন্য শুভ সংবাদ। এ বাক্যটির অর্থ নির্ধারণে আলেমদের বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তূবা-এর অর্থ আনন্দ, দৃষ্টির শীতলতা। কেউ বলেন, বাক্যটির অর্থ হচ্ছে—তাদের কী সৌভাগ্য ! কিংবা—তাদের কী ঈর্ষণীয় সাফল্য ! কারো মত এই যে, এর অর্থ—কল্যাণ ও মহানুভবতা তাদেরই। কেউ বলেন, তূবা অর্থ জান্নাত, অথবা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। উল্লেখিত হাদিসে এর যে কোন একটি অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে।



আহকাম ও ফায়দা :


  • সাহাবিদের মহত্ত্ব ও মহানুভবতার প্রমাণ বহন করে হাদিসটি। কারণ, নবুয়্যতি জ্ঞান ধারার সূচনাকালেই তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন—এর ফলে, পুরোপুরি বৈরী একটি সমাজ ব্যবস্থার সাথে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে লড়াই করে টিকিয়ে রাখতে হয়েছিল তাদের আকিদা ও বিশ্বাস। আক্ষরিক অর্থে নয়, তাদের এ নির্বাসন ও বিচ্ছিন্নতা ছিল মানসিক ও আদর্শিক। শিরক ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে তারা অবতীর্ণ হয়েছিলেন স্বজাতির বিরোধিতায়।
  • আল্লাহর দ্বীনকে আকড়ে থাকা, তাতে দৃঢ় ও অটল থাকা, সর্বান্তঃকরণে নবী মোহাম্মদ সা.-এর অনুসরণে আত্মনিয়োগ করা—এগুলো হচ্ছে সেই প্রকৃত মোমিনের চারিত্রিক ভূষণ ও বৈশিষ্ট্য, যারা আদর্শিক নির্বাসনের পুন্যলাভে প্রয়াসী—যদিও সমাজের বৃহৎ একটি শ্রেণি তার বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। অধিকাংশ মানুষ কি মতামত পোষণ করছে—তাকে ভিত্তি করে নয় ; মূলত: ফলাফল নিরূপিত হবে সত্যকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে থাকার বিবেচনায়। আল্লাহ তাআলা বলেন—

আর আপনি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। (আনআম : ১১৬)
হাদিসটি আদর্শিক ও সামাজিক নির্বাসিতদের মহান প্রাপ্তি ও তাদের উচ্চ মর্যাদার ঘোষণা দিচ্ছে। নির্বাসিত দ্বারা এখানে ধর্মের কারণে নির্বাসিত হওয়া উদ্দেশ্য। যারা জাগতিক কারণে স্বদেশ হতে নির্বাসিত, তারা কোনভাবেই উদ্দেশ্য নয়।
  • কয়েকটি হাদিসে উক্ত নির্বাসিতদের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে—


যারা মানুষের বিশৃঙ্খলার মাঝে শৃঙ্খল থাকে। (তিরমিজি)
কিংবা—


যারা মানুষের বিশৃঙ্খলতাকে শৃঙ্খলা দান করে। বা কলুষিত সমাজকে যারা সংস্কার করে। (আহমদ)
এ উক্তিগুলো প্রমাণ করে যে, কেবল ব্যক্তি-শুদ্ধি একজন প্রকৃত মোমিনের জন্য যথেষ্ট নয় ; বরং প্রজ্ঞা, বিনয়-বিনম্র আচরণের মাধ্যমে যারা বিপথে চালিত, তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবেই একজন মোমিন উক্ত হাদিসে বর্ণিত নির্বাসিতের গুণ অর্জনে সক্ষম হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন