রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মুসলিম মা ও বোনদের প্রতি আহবান

চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদনা : ইকবাল হোছাইন মাছুম
পবিত্র কালামে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥْ
ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ ﴿ 59 ﴾
হে নবী তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে
বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর
টেনে নেয়, এতে করে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে
তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ তাআলা
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)
প্রিয় মুসলিম বোনেরা….
ইসলাম নারী জাতিকে দান করেছে এক বিশেষ মর্যাদা।
একমাত্র ইসলামই প্রতিষ্ঠা করেছে নারীর পূর্ণ অধিকার। তাকে
দিয়েছে তার নিজস্ব গন্ডিতে ব্যাপক স্বাধীনতা। মহান রবের
পক্ষ থেকে নারী পুরুষের মাঝে সাওয়াব ও প্রতিদানের
ক্ষেত্রে কোন প্রকার তারতম্য সৃষ্টি করা হয়নি। আল-কুরআনে
ইরশাদ হচ্ছে :
ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﻠَﻨُﺤْﻴِﻴَﻨَّﻪُ ﺣَﻴَﺎﺓً ﻃَﻴِّﺒَﺔً ﻭَﻟَﻨَﺠْﺰِﻳَﻨَّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﺄَﺣْﺴَﻦِ
ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴿ 97 ﴾
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক
কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। এবং
প্রতিদানে তাদেরকে তাদের আমলের প্রাপ্য পুরস্কার দিব।
(সূরা নহল : ৯৭)
অভিশপ্ত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল নারীদেরকে
পৌঁছে দিয়েছে পতন ও ধ্বংসের চূড়ান্ত স্তরে। যে নারী ছিল
সম্মান ও মর্যাদার আবরণে আবৃত, সে নারী আজ নগ্ন কিংবা
অর্ধনগ্ন। যে নারী ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মর্যাদাকর
বেষ্টনীতে, সে নারী আজ নিরাপত্তাহীনতা ও লাঞ্চনাকর
আতংকের খোলা ময়দানে। যে নারী ছিল কন্যা, জায়া, জননীর
সম্মানজনক আসনে, সে নারী আজ হোটেল ও শপিং মলের
রিসিপশনে।
আমার বোনেরা…
পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নারীরা আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে
তাদের স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ। ঐ সংস্কৃতি তাদেরকে দিয়েছে
এমন এক স্বাধীনতা যা বাহ্যিকভাবে স্বাধীনতা মনে হলেও
প্রকৃত অর্থে পরাধীনতার অক্টোপাস।
বর্তমান দুনিয়ার যাবতীয় নোংরা ও নিকৃষ্ট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে
নারী। হোটেল-রেস্তোঁরায় আগন্তুকদের মনোরঞ্জন, দোকানে
ক্রেতা আকর্ষণ, অফিস আদালতে বসদের সঙ্গে অবকাশ
যাপন, এটাই তাদের স্বাধীনতা ও সম্মানের রূপ। স্বাধীনতার কি
আজব সংজ্ঞা!
নারী পুরুষের উম্মুক্ত মেলা-মেশা, অশ্লীল বিনোদন, চরিত্র
বিধ্বংসী শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চার কারণে পাশ্চাত্য সমাজ
এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, পশুত্বকেও হার মানিয়েছে
তারা। কামনার আগুন সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে, উম্মাদ পশুর আচরণ
করছে। প্রতিদিন শুধু প্যারিস শহরে দশ হাজার সতী নারী
সম্ভ্রম হারাচ্ছে। তার চেয়েও লজ্জার কথা হলো, ফ্রান্সের
মেডিকেল বোর্ড ঘোষণা দিয়েছে, “ফ্রান্সবাসীকে এ জন্য
গর্ব করা উচিৎ যে, অচিরেই ফ্রান্সে আর কোন সতী নারী
পাওয়া যাবেনা”। তাদের মনুষত্ববোধ কত নিচে নেমে গেছে
তা কল্পনাও করা যায়না। এরূপ নারী স্বাধীনতাকে ধিক্কার শত
ধিক্কার।
প্রিয় বোনেরা আমার………
পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রবক্তারা ইসলামী সংস্কৃতিকে নারীদের
জন্যে অত্যাচার বলে প্রচার করছে। ইসলামকে প্রগতির পথে
অন্তরায় বলে চিৎকার চেচামেচি করছে।
কিন্তু ইসলমের স্বর্ণোজ্জল অবদান আজও ইতিহাসের বাঁকে
বাঁকে নারীদের প্রেরণা যোগায়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.
একাই ২২১০টি হাদিস বর্ণনা করে হাদিসের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ
করেছেন। অসংখ্য জটিল মাসআলার সমাধান দিয়ে উম্মতকে
দ্বীনের পথে চলা সহজ করে দিয়েছেন। খলীফা হারুরুর রশীদের
স্ত্রী যুবাইদা শিক্ষা-দীক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে
নারীকূলের জন্য আজও অনুকরণীয় হয়ে আছেন। এরকম হাজার
হাজার দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে নারীরা পরিপূর্ণ ইসলামের
গন্ডিতে অবস্থান করে বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর
রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বোনেরা আমার…..
এ যুগে প্রয়োজন এমন একজন নিবেদিতপ্রাণ নারীর, যিনি
স্বামীভক্তিতে হবেন উম্মুল মুমিনীন খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ
রা. এর ন্যায়, যে মহিয়সী দ্বীন ও ইসলামের উন্নতিকল্পে
সহায়তা করেছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে সর্বস্ব উজাড় করে। ধৈর্য, সংযম ও আল্লাহ প্রেমে
হবেন ফাতেমা বিনতে খাত্তাবের ন্যায়, যার ঈমানী দৃঢ়তা
দেখে ওমরের মত অগ্নি পুরুষও ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত
হয়েছিলেন। প্রাণ উৎসর্গে হবেন সুমাইয়ার ন্যায়, যিনি ঈমান
ত্যাগ না করার কারণে আবু জাহেলের বর্শার আঘাতে ইসলামের
প্রথম শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
প্রিয় বোনেরা……..
আমরা চাই আপনিও তাদের অনুসরণ করে জান্নাতুল ফিরদাউসের
চিরস্থায়ী অধিবাসী হবেন। স্মরণ করুন নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বানী :
ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﺖ ﺧﻤﺴﻬﺎ، ﻭﺻﺎﻣﺖ ﺷﻬﺮﻫﺎ، ﻭﺃﺣﺼﻨﺖ ﻓﺮﺟﻬﺎ، ﻭﺃﻃﺎﻋﺖ ﺑﻌﻠﻬﺎ، ﻓﻠﺘﺪﺧﻞ ﻣﻦ ﺃﻱ
ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺷﺎﺀﺕ .
নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে, মাহে রমজানে
রোজা রাখলে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করলে এবং স্বামীর
আনুগত্য করলে, (আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতের
সবগুলো দরজা উম্মুক্ত করে দিবেন।) জান্নাতের যে কোনো
দরজা দিয়ে তার ইচ্ছা অনুযায়ী প্রবেশ করতে পারবে।
একজন মুসলিম নারী হিসাবে আপনাকে সর্বপ্রথম নামাজের
ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা
বলেন,
ﺇﻧﻲ ﺍﻓﺘﺮﺿﺖ ﻋﻠﻰ ﺃﻣﺘﻚ ﺧﻤﺲ ﺻﻠﻮﺍﺕ، ﻓﻤﻦ ﺣﺎﻓﻆ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﻟﻮﻗﺘﻬﻦ ﺃﺩﺧﻠﺘﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻲ ﺫﻣﺘﻲ،
ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺤﺎﻓﻆ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﻓﻠﻴﺲ ﻟﻪ ﻋﻨﺪﻱ ﺫﻣﺔ ﺇﻥ ﺷﺌﺖ ﻏﻔﺮﺕ ﻟﻪ ﻭﺇﻥ ﺷﺌﺖ ﻋﺬﺑﺘﻪ .
হে নবী, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
ফরজ করেছি, যে ব্যক্তি সময়মত গুরুত্ব সহকারে তা আদায়
করবে আমি তাকে নিজ জিম্মায় বেহেশতে প্রবেশ করাব,
আর যে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হবেনা তার প্রতি
আমার কোন দায়-দায়িত্ব নেই। ইচ্ছা করলে ক্ষমা করব, নচেৎ
শাস্তি দিব।
নামাজের পরপরই একজন মুসলমানের জন্য মাহে রমজানের
রোজা পালন করা একান্ত জরুরী। রোজার ফজিলত সম্পর্কে নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় মাহে
রমজানের রোজা পালন করবে, তার পিছনের সব গুনাহ
ক্ষমা হয়ে যাবে। (বুখারী)
নামাজ ও রোজার সাথে সাথে পর্দার ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব
দিতে হবে। হিজাব তথা পর্দার বিধান গ্রহণ করার মাধ্যমেই
একজন নারী তার সম্মান ও মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে পারে।
এরশাদ হচ্ছে:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥْ
ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ ﴿ 59 ﴾
হে নবী তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে
বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর
টেনে নেয়, এতে করে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে
তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ তাআলা
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)
আধুনিক নারীরা মনে করছে পাশ্চাত্যের স্রোতে গা ভাসিয়ে
দিতে পারলেই বুঝি উন্নতির উচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে পারবে।
একবারও কি তারা ভেবে দেখেছেন, যে পথে তারা চলছেন সে
পথ থেকে কখনও ফিরে আসতে পারবেন কি-না? আপনারা কি
কখনো ভেবে দেখেছেন কোথায় গিয়ে থামবে আপনাদের
জীবনভেলা?
চিন্তা করে দেখুন, কোন পথ গ্রহণ করবেন। এখনও সময় আছে।
এখনও আপনারা অতীতের গৌরবদ্বীপ্ত কীর্তিসমূহের
পূনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেন। আজও আপনাদের থেকে জন্ম নিতে
পারে দ্বিগ্বিজয়ী বীর সেনানী, যুগের সাহসী নকীব, মুহাদ্দিস,
মুফাসসির। আপনাদের কোল থেকে তৈরী হতে পারে মুসলিম
জাতির কান্ডারী। তাই আসুন, আমরা সে পথিই অগ্রসর হই।
আল্লাহ সকলের প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন।।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন