মুসলিম উম্মাহ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মুসলিম উম্মাহ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭

আল-ওয়াহান; মুসলিমদের একটি ঘাতক ব্যাধি

১৯৯৫ সাল। বসনিয়ার সারাজেভোতে মুসলিমদের মৃতদেহ পড়ে আছে

আমরা এমন জাতি যারা নিতান্ত তুচ্ছ, নীচু জাত ছিলাম, আল্লাহ আমাদের মর্যাদা উঁচু করে দিয়েছেন ইসলামের মাধ্যমে। আমরা যদি অন্য কোন উপায়ে সম্মান কামনা করি, তবে আল্লাহ আবারো আমাদের নীচু করে দেবেন”। ~ উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু

‘যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে,অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য’। (3:139)
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে।’
জিজ্ঞেস করা  হলো, তখন কিআমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.),আল– ওয়াহ্হান কি?’ তিনি বললেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতালকে অপছন্দ করা (মুসনাদে আহমদ, খন্ডঃ ১৪, হাদিস নম্বরঃ ৮৭১৩, হাইসামী বলেছেনঃ হাদিটির সনদ ভালো, শুয়াইব আল আর নাউতের মতে হাদিসটি হাসান লি গাইরিহি)
সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছেঃ
حُبُّ الْحَيَاةِ وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ
‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ, হাদিস হাসান)
এই হাদিস নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় আসলেই রাসুল(সা.)-কে ‘অল্পকথায় অনেক কথা প্রকাশ করা’র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিলো। “আমাকে এমন কথা (বলার ক্ষমতা) দেয়া হয়েছে যা সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অর্থ ব্যাপক ” [বুখারী মুসলিম]
ওয়াহহান সম্পর্কিত আলোচ্য হাদীসে মাত্র কয়েকটি বাক্য রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যেই মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অবস্থা, তাদের মূল সমস্যা এবং তার সমাধান নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো:-
(১) তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য লোকজন একে অন্যকে আহবান করবে, যেভাবে খাবারের জন্য আহবান করা হয়।’
এই হাদীসের অসাধারণ একটি বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রোতাদের মনের সামনে যেন একটি বাস্তব স্পষ্ট ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। এখানে, মুসলিম উম্মাহকে প্রথমে তুলনা করা হয়েছে, কিছু ক্ষুধার্ত লোকের সামনে রাখা সুস্বাদু খাবারের সাথে। কিন্তু, যেহেতু তারা ভাগাভাগি করে খাবে একারণে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অংশ থেকে ভাগ নিতে চাইবে, ফলে খাদ্যটি ভাগ হয়ে যাবে ‘আমন্ত্রিত অতিথি’র মর্যাদা ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে।
খিলাফত পতনের অল্প কিছু সময় পর থেকেই, মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে দেয়া হল বিভিন্ন রাষ্ট্রে, ইউরোপিয় দখলদারি শক্তি এটা করেছিল। এবং তাদের প্রত্যেকেই এরপর নজর দিল মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ যে প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়েছেন সেদিকে।
সত্যিই বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ দলে দলে বিভক্ত, আল- কুরআনও সুন্নাহ হতে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। এই অবস্থায় দুনিয়ার অন্যান্য জাতি, মুসলিম উম্মাহর উপর সরাসরি আক্রমণ চালাচ্ছে এবং একে অন্যকে আক্রমণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে, একদেশের মুসলিমদের আরেক দেশের মুসলিমদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে এবং যুদ্ধ সৃষ্টি করেছে। যেমন : ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ফিলিস্তান, কাশ্মীর ইত্যাদি-সেটা তাদের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য হোক অথবা খনিজ সম্পদ দখলের জন্য হোক অথবা অর্থনৈতিক বাজার দখল করার জন্য হোক।
কেউ আক্রমণ করছে সরাসরি আগ্রাসী সেনাবাহিনী পাঠিয়ে, কেউবা কুটনৈতিক (diplomacy) এর মাধ্যমে, কেউবা আদর্শিকভাবে (ideologically), কেউবা সংবাদ মাধ্যম, প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে, কেউবা তাদের আবিস্কৃত শিক্ষা-ব্যবস্থা রপ্তানী করে তাদের মানসিক দাস তৈরির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই মানসিক দাসেরা পশ্চিমা দেশের অপ সংস্কৃতিকে মনে করে আধুনিকতা আর ইসলামের পবিত্রতা আর সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে মনে করে পশ্চাদপদতা, তারা কুফফারদের পরিচালিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানব রচিত মতবাদ গ্রহণ করতে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে আর ইসলামের শিক্ষা অনুসারে দেশ, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে বাধা দেয় ।আর এক্ষেত্রে তারা ‘গণতন্ত্র রক্ষা, মানবতা, নারী-মুক্তি, শিশু-অধিকার, সবার জন্য শিক্ষা, সামাজিক-উন্নয়ন’ ইত্যাদি বিভিন্ন মনভুলানো চটকদার শব্দের মোড়কে তাদের এই দালালী কার্যক্রমকে ঢেকে নিয়েছে।
বস্তুতঃ ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করার পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উপর এই আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত, এটা যারাই আল-কুরআনে বর্ণিত আনআম (গবাদি-পশু) এর মতো নয়, তারাই জানেন ও বুঝেন।
(২) দ্বিতীয় : ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা তখন অগণিত হবে।’

এখান থেকে বুঝা যায়, বেশি সংখ্যক হওয়া ইসলামের কোন পূর্বশর্ত নয়। ইসলাম চায় মানসম্পন্ন মুসলিম,যারা আল্লাহর দীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সংখ্যা এখানে মূখ্য নয়। আল্লাহ চেয়েছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমলে উত্তম’ (আ’মালুন সালিহান), এটা চাননি যে, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমলে বেশি’ (আ’মালুন কাছিরান)।
বদরের যুদ্ধে কাফিরদের সংখ্যা ছিলো মুসলিমদের তিনগুণ। ইয়ারমুকের যুদ্ধে কাফিররা ছিলো মুসলিমদের ৭০ গুণ। উভয় যুদ্ধেই মুসলিমরা বিজয়ী হয়। অপরদিকে, হুনায়ুনের যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো, কাফিরদের চেয়ে বেশি। কিন্তু সে যুদ্ধে তারা পরাজয়ের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর রহমতে বিজয় আসে। আফসোস, বর্তমান মুসলিম উম্মাহ, তাদের সংখ্যাধিক্যের পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যস্ত, কোন ধর্ম সবচেয়ে বেশি গতিতে বেড়ে চলেছে, কোনদেশে মুসলিম Growth rate কত ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে তারা ব্যস্ত; কিন্তু মুসলিমদের মান নিয়ে কোন চিন্তা হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ আল-কুরআনে বারবার বলেছেন, বিজয় শুধুমাত্র তাঁর কাছ থেকে আসে, আর তাঁর বিজয় দানের ওয়াদা শুধু মুমিনদের জন্য।
দেড়শ কোটি মুসলিমের এত বিশাল সংখ্যাও কোন কাজে আসছে না, কারণ অধিকাংশ জনতা মানসিকভাবে পশ্চিমা দেশ ও তাদের আদর্শের দাসত্ব করে আসছে। রাখাল যেভাবে তার খেয়াল খুশি মত পালের ভেড়াদের যেদিকে খুশি সেদিকে নিয়ে যায়, এই পশ্চিমাদেশগুলোও আমাদের মুসলিমদের সেভাবে পালের ভেড়া বানিয়ে রেখে মানসিকভাবে গোলামে পরিণত করে রেখেছে।
(৩) তৃতীয়ত : ‘তোমরা হবে সমুদ্রের ফেনা রাশির মতো, যা স্রোতে সহজেই ভেসে যায়।’

এটা হচ্ছে, বেশি সংখ্যক হওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর এই অবস্থার একটি অসাধারণ বর্ণনা।
-সাগরের ফেনা বিপুল পরিমাণ পানির উপর ভেসে থাকে ঠিকই, বিপুল জলরাশি নিয়ে সে গর্ব করে, এই জলরাশি তার কোন কাজে আসে না। তার নিজের কোন দৃঢ় অবস্থান নেই।
-সাগরের ফেনার যেভাবে কোন শক্তি নেই, শুধু উপর থেকে দেখতে অনেক মনে হয়, অন্যদিকে নিচের পানির স্রোত তাকে যেদিকে ইচ্ছা নিয়ে যায়।
-ফলে এই সংখ্যা নিয়ে গর্ব করা এক প্রকার মিথ্যা আত্মতুষ্টি অনুভব করা।
-নিজেকে চালিত বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ফেনারাশির নেই, সাগরের ফেনাকে নিয়ন্ত্রণ করে নিচের জলরাশি।
মুসলিম উম্মাহও সংখ্যায় বেশি, কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই তাদের কোন ভূমিকা কিংবা অবস্থান নেই। তাদের প্রতিটি দেশই সুদভিত্তিক অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত, আল- কুরআন সুন্নাহ বিবর্জিত পশ্চিমাবাদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদী-
রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তাদের দেশগুলি পরিচালিত হচ্ছে। আর ইসলামের গন্ডি শুধুমাত্র মসজিদ ও কতিপয় পারিবারিক আইনে সীমাবদ্ধ। এ যেন সংখ্যায় বেশি হয়েও তারা সংখ্যালঘু. কাফের-মুশরিক-ইসলামের শত্রুরা ঔদ্ধত্যের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের একটি কথাও বলতে পারে না। অথচ সমুদ্রের ফেনা রাশির মতোই মুসলিম উম্মাহ ও সংখ্যাধিক্য নিয়ে আনন্দিত, উল্লাসিত, গর্বিত।
(৪) চতুর্থত : ‘আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের মধ্যে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’

এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়।
. মুসলিমদের শত্রু আছে, মিত্র আছে। ইসলাম কোন বৈরাগ্যবাদী ধর্ম নয়, কিংবা ‘অহিংস পরমধর্ম’ প্রকৃতির গৌতমীয় বাণীতে বিশ্বাস করে না। বরং, ইসলামে ভালোবাসা ও ঘৃণা (আন ওয়ালা ওয়াল বা’রা)একটি গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট। অনেক আধুনিকএবং পরাজিত মন মানসিকতার অধিকারী মুসলিম যাদের মন-মগজ পশ্চিমা শিক্ষা-ব্যবস্থা, ডিস, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে সঠিক ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে, তারা যতই এ ব্যাপারটায় তাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েন না কেন। আল্লাহর রহমত, তিনি আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসকে অবিকৃত রেখেছেন। না হলে এরা ইসলামকে বিকৃত করে কোথায় নিয়ে যেতো। আল্লাহ বলেন :
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা-মায়েদা : ৫১)
মুসলিমদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বাদ দিয়ে, বিজাতীয় প্রভুদেরকে বন্ধু অভিভাবক করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
মুসলিমদের উচিত তাদের শত্রুদেরকে ভীত সন্ত্রস্থ রাখা। আর তাদের অন্তরে আমাদের ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক । যদি না থাকে, বুঝতে হবে, কোন সমস্যা আছে। কারণ রাসুল (সা.), আমাদের দুরবস্থার একটি কারণ হিসেবে তাদের মনে, আমাদের ভয় না থাকাকে উল্লেখ করেছেন।
আর আল্লাহ তো পবিত্র কুরআনে ঘোষণাই দিয়েছেন, যা বেশির ভাগ মুসলিম সেনাবাহিনী তাদের কুচকাওয়াজে না বুঝে মন্ত্রের মতো পাঠ করে থাকে।
‘আর তাদেরকে মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী সদা প্রস্তুত রাখবে যদ্দ্বারা তোমরা ভয় দেখাতে থাকবে আল্লাহর শত্রু আর তোমাদের শত্রুকে, আর তাদের ছাড়াও অন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন।তোমরা আল্লাহর পথে যা খরচ করো তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে, আর তোমাদের সাথে কখনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা-আনফাল : ৬০)
তাই কাফিরদের মনে ভয়-ত্রাস সৃষ্টি করা মুসলিমদের উপর আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ। কে আছে এমন যে আল্লাহর এই হুকুমকে অস্বীকার করতে পারে। আর এক্ষেত্রে মুসলিমরা শুধু ‘চোরের কাছে পুলিশ যে রকম ত্রাস সৃষ্টি করে’ যা ডা. জাকির নায়েক বলে থাকেন, সে রকম ত্রাস সৃষ্টিকারী নয়, বরং ‘সুলায়মান (আ.) যেভাবে বিলকিসের রাজত্বে তার শিরকের কারণে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন’ সে রকমও ত্রাস সৃষ্টিকারী।
এটা ছিলো, আমাদের প্রথম সমস্যা, আর দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, আল্লাহ আমাদের মাঝে ‘ওয়াহ্হান’ ঢুকিয়ে দিবেন।
(৫)পঞ্চমত :‘জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), ওয়াহ্হানকি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতালকে অপছন্দ করা’ অথবা মৃত্যুকে অপছন্দ করা।

সিরিয়ান মুজাহিদদের ট্রেনিং
এখানে সমস্যা এবং সমাধান দুটোই চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে, পুঁজিবাদী ও সমাজাতান্ত্রিক বস্তুবাদী আদর্শ যখন মুসলিম দেশগুলোতে রপ্তানি করা হল, তখন থেকে মুসলিমরা নিজেদের স্বভাববিরুদ্ধ রকমের বস্তুবাদী ও ভোগবাদী হয়ে গেল, দুনিয়ার সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে লাগল। আখিরাতের জীবনের কথা বেমালুম ভুলে গেল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরেকটি হাদীসে বলেছেন,
“সুখ শান্তি বিনষ্টকারী মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করো’ (তিরমিযি)
আল্লাহ বলেন,    “(হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না।  তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও”। [সূরা নিসা ৭৭-৭৮]
.
(৬)ষষ্টত: উপরোক্ত দুটি সমস্যার সমাধান, এমন কি মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিসের মধ্যে।
তিনি বলেছেন :
‘যখন মানুষ দিনার এবং দিরহামের মধ্যে ডুবে যাবে, এবং যখন ঈনা নামক (সুদী) ব্যবসায় জড়িত হয়ে যাবে, আর গরুর লেজ-এ সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর লাঞ্চনা চাপিয়ে দিবেন, তিনি তা উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের দ্বীনে ফিরত না যাবে।’
[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ (২/২৮), তাবরানী (১২/৪৩৩), বায়হাকী (শুয়াবুল ঈমান ৭/৪৩৪), আবু ইয়ালা (১০/২৯)]
তাই আমাদের সমস্যা কোন টাকা-পয়সার, প্রযুক্তি, ব্যবসা এর কমতি নয়, গরুর লেজ অর্থাৎ কৃষিকাজ-এর কমতি নয়, যা অনেক তথাকথিত ইসলামী বুদ্ধিজীবীরা মনে করে থাকেন। বরং আমাদের সমস্যা অন্য কোথাও। আমাদের লাঞ্চনার কারণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দেয়া, ক্বিতাল করতে গিয়ে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুকে ভয় করা আর দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে বেশী ভালোবাসা।
যখন মুসলিমরা অনুধাবন করবে যে, মৃত্যু আসলে সমাপ্তি নয়, বরং নতুন জীবনের শুরুমাত্র, আর আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন তখন এই উম্মাহর অবস্থা নিশ্চিতভাবেই বদলাতে শুরু করবে ।
এর আগ পর্যন্ত আল্লাহ বলছেন: “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।”[আর রাদ ১১]

[Taken from www.IISCA.org]

“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”


খুতবার প্রথম অংশ,
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে,
হে মুসলিম উম্মাহ,
সত্য আর মিথ্যার মধ্যেকার লড়াই চলছে, লড়াই চলছে আলো এবং অন্ধকারের, লড়াই চলছে হেদায়াত ও গোমরাহীর, সঠিক পথের ও ভ্রান্ত পথের, এ লড়াই চলছে ইসলাম ও কুফরের মাঝে…আর এটা চলবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত। আর এটা এমন এক লড়াই যেখানে ঈমানদার লোকেরাই অধিকাংশ সময়েই বিজয় লাভ করবে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদেরকেও পরাজয় স্বীকার করানো হবে…আর এটা তো শুধু এমন এক সাময়িক পরাজয়, এমন কিছু ঘটনা যা কেবল আশু বিজয়ের আগমনের বিলম্ব ঘটায়।
আর এ লড়াইয়ের ফলাফলস্বরূপ,
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের তিনি অধিক পছন্দ করেন তাদের নির্বাচন করেন। আমাদের মাঝেই আছেন সেসব লোকেরা যারা আল্লাহর কারণে শাহাদাত বরণ করে সফলতা লাভ করেছেন, আমাদের মাঝেই আছেন সেসব লোকেরা যারা আল্লাহর কারণে নিজেরা আহত হয়েছেন, আর আমাদের মাঝেই আছেন সেসব লোকেরা যারা আল্লাহর কারণে নিজেদের অংগ হারিয়েছেন, তারা আল্লাহর রাস্তায় যা হারিয়েছেন তা তাদেরকে জান্নাতের পথে অগ্রগামী করে।
এবং আমাদের মাঝে আরো আছেন সেই সকল ভাই বোনেরা যাদেরকে বন্দী করা হয়েছে শত্রুদের হাতে, আর এটা সকল লড়াইয়ের একটি সাধারণ ফলাফল। যদি কেউ ইতিহাসের পাতা উলটে দেখতে চায়, সে দেখবে এ ধরণের আটক, নির্যাতন,বন্দীত্ব একটি সাধারণ ঘটনা যা অনেকটা নিয়মের মতই হয়ে গেছে এবং এতে অবাক হবার কিছু নেই।
কতজন বীর মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন? কত শত মানুষ আহত হয়েছেন, কত শত যোদ্ধাদের কারাবন্দী হিসেবে আটক করা হয়েছে? কিন্তু এসবের ভয়ে কি তাদের অন্তর দূর্বল হয়ে পড়েছিল? তাদের অন্তরগুলো কি ভয়ে জরাগ্রস্ত হয়েছিল? আমরা ভাবি, চিন্তা করে দেখি, বন্দীত্বের কারণে কি তাদের অন্তরে দুর্বলতা ও কাপুরুষতা সৃষ্টি হয়েছিল?
আমাদের আছে খুবাইব বিন আদি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মত উদাহরণ সৃষ্টিকারী মানুষ, 
যিনি মুশরিকদের হাতে আটকা পড়েছিলেন, তারা তাকে ঘেরাও করে মসজিদুল হারামে নিয়ে আসল হত্যা করার উদ্দেশ্যে। তিনি তাদেরকে বললেন, “আমাকে দু রাকাত সালাত আদায় করতে দাও”।
যখন তিনি সালাত শেষ করলেন তিনি বললেন, তোমরা যদি একথা মনে না করতে যে আমি মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে সালাত দীর্ঘ করছি তাহলে আমি আমার সালাত আরও দীর্ঘ করতাম তিনিই প্রথম সেই ব্যক্তি যিনি ফাঁসির পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায়ের রীতি চালু করেছেন। এরপর তিনি দুয়া করলেন, “হে আল্লাহ ! তুমি তাদের এক এক করে গণনা করে রাখ, তাদের এক এক করে হত্যা করো! এবং তাদের একটাকেও বাঁচিয়ে রেখো না!” এরপর তিনি বললেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমি একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর কারণে নিহত হলাম, আমি পরোয়া করি না আমার মৃতদেহ কোন দিকে ঢলে পড়ল। এর পুরোটাই আল্লাহর জন্যে; যদি তিনি ইচ্ছা করেন তাহলে তিনি আমার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহখানা আবার একত্রিত করে অনুগ্রহ করবেন”, শেষ পর্যন্ত তিনি উকবাহ বিন আল-হারিস এর হাতে খুন হলেন।
নিশ্চয়ই, আল্লাহই এমন বন্দীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে পারেন এবং যা তাদের অন্তরে প্রশান্তি দান করে তা প্রদান করতে পারেন। খুবাইব এর কথাই ধরুন, যখন তাকে আটক করে ফাঁসির জন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তিনি আল্লাহ কর্তৃক এতটাই প্রশান্ত ছিলেন যে একজন প্রত্যক্ষদর্শী মহিলা বর্ণণা করছেন,“আমি আমার জীবনে খুবাইবের চেয়ে উত্তম প্রশান্ত অবস্থায় আর কোন বন্দীকে দেখিনি। আমি দেখেছি সেদিন তিনি মক্কায় (সেই মওসুমে) যে আঙ্গুর ও ফল পাওয়া যেত না, তা ভক্ষণ করেছেন-আর এ সবই হয়েছিল যখন তাকে লোহার শিকলে করে বেঁধে রাখা হয়েছিল- আর একমাত্র আল্লাহই পারেন এমন রিযিক প্রদান করতে”।
পক্ষান্তরে, একজন বন্দীকে অসহ্য নির্যাতন করা হতে পারে, সম্মানহানিকর কিছু করা হতে পারে কিংবা কঠিন পরীক্ষার মাঝে তাকে পতিত হতে পারে। যাই হোক না কেন, এসবের কারণে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে দেন।
আল্লাহ বলছেন, “মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে”। [সূরা আল আনকাবুত ২-৩]
ও মুসলিম উম্মাহঃ
এই হল শত্রুদের হাতে যারা বব্দী হয়েছেন তাদের কথাঃ ফিলিস্তিন, কিউবা, গুয়ানতানামো কিংবা দুনিয়ার অন্য যে কোন প্রান্তে।
এরাই সেসব লোক, যারা তাদের ভাইদের সাহায্যে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন, তারা এসেছিলেন মুসলিম ভূমির পবিত্রতা রক্ষার্থে, এমন একটি সময়ে যখন বাকিরা হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল। যখন তারা নিজেরা এগিয়ে এসেছিলেন উম্মাহর বিপদের সময়ে, আজকে তাদের এই দুর্দিনে সারা উম্মাহর প্রতি তাদের হক অধিকার আছে যেন আমরাও তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাই, তাদের এই পরীক্ষায় পাশে থাকি। আর এভাবেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাহর প্রতি আদেশ করেছেন, “ তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর !” [বুখারী]
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ “মানুষের উপর এটা বাধ্যতামূলক যে তাদের যা কিছু আছে সব মুক্তিপণ দিয়ে কারাবন্দীদের মুক্ত করবে, আর এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই(ফুকাহাদের মধ্যে),কারণ রাসুলুল্ললাহ বলেছেন, “ তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর !” [বুখারী]

উলামায়ে ইসলাম যথার্থই বলেছনঃ “যদি শত্রুদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করতে গিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রের কোষাগার পুরোটাই খালি হয়ে যায়, তবু এ বিষয়ে ঢিলেমি করার অবকাশ নেই। আর এটাই সঠিকঃ এ ক্ষতিকেও বেশি বড় করে দেখার অবকাশ নেই, পারে যখন আমরা দেখি লুটেরা আমেরিকানদের হাতে মুসলিমরা তাদের সম্মান হারাচ্ছে, বেইজ্জতি হচ্ছে আর তারা তা ঘৃণার চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর উপভোগ করছে, আর কি বিপর্যয় আছে যা এর থেকেও বেশি ?
এ দৃশ্য আপনারাও দেখেছেন নিশ্চয়ই, যেমনি দেখেছে সারা বিশ্বের মানুষ, কি নির্মম অমানবিক ট্রাজেডির শিকার হয়েছে আমাদের ভাইয়েরা কিউবা (গুয়ানতানামো) তে। বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের অনেকেই এসেছেন পাকিস্তান থেকে –একটি কার্গো বিমানে করে চালান করে দেয়া হয়েছে, তাদের দাড়ি কামিয়ে দিয়েছে, মাথা ন্যাড়া করা, কাপড় ছিড়ে ফেলা হয়েছে, কমলা রঙয়ের পোশাকে আপাদমস্তক, চোখ বাঁধা এবং সকল অনুভূতি ইন্দ্রিয় থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের সম্মান কোথায়? লোহার খাঁচার আবদ্ধ মানুষগুলোকে দেখে কি মনে হয় ? তারা কি নূন্যতম মানবিক সম্মানটুকুও পেয়েছেন নাকি চিড়িয়াখানার পশুদের চেয়েও বাজে অবস্থায় আবদ্ধ রাখা হয়েছে তাদের? একটি চিড়িয়াখার পশুও খাঁচার ভেতর যতটুকু জায়গা পায় তাদের ভাগ্যে ততটুকুও নেই।
তাদেরকে খাঁচা থেকে বের হবার কোন সুযোগ দেয়া হয় না দিনে একটিবার ছাড়া, আর সেটি হল যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে বের করা হয়। হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায়, মাথা নিচু করে রাখা, কালো কাপড়ে মোড়ানো, তাদের আত্মসম্মানকে ধবংস করে দেয়া হচ্ছে, সব সময় তাদের মনে যে চিন্তা দানা বাঁধছে তা অনেকটা এরকম নয় কিঃ  মুসলিমদের সেই সম্মানের দিনগুলো কোথায়? বিজয়ীদের সেই দীন কোথায়? আর কোথায় তোমরা আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা?
আমাদের ভাইয়েরা আছে কিউবার গা ঝলসানো সূর্যের নিচে, আর এটা শীতকালের অবস্থা, ভাবুন গ্রীষ্মকালে কি অবস্থায় থাকেন তাঁরা? এমনকি যে রাতকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিশ্রাম ও ঘুমের জন্যে তৈরি করেছেন সেই রাতেও অত্যাচারী সৈনিকেরা চোখ ধাঁধানো ফ্লাস লাইটের আলো জ্বেলে রাখেন তাদের খাঁচাগুলোর দিকে। দিনে তারা উত্তপ্ত সূর্যের নিচে আর রাতে চোখ ধাঁধানো ফ্লাস লাইটের কারণে তারা দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে থাকছেন।
তো এই অবস্থায় কিভাবে তারা ঘুমের স্বাদ পেতে পারেন,
কিভাবে তারা এই যন্ত্রণাদায়ক অবস্থায় খাদ্য-পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন? বস্তুতঃ তাদের এই যন্ত্রণা দু ধরণের।
প্রথমত,
 বন্দীদশায় অত্যাচারী আমেরিকানদের হাতে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করার কষ্ট, আর দ্বিতীয়তআজকে আমরা যারা মুসলমান হয়েও তাদেরকে ত্যাগ করেছি, ছেড়ে দিয়েছি আর তাদের কথা ভুলে গেছি সেই কষ্ট। কেউ নেই আজকে তাদের প্রতি যে অত্যাচার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলবার, বরং আমরা তাদের কথা ভুলে গেছি এবং এমনভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন কাটাচ্ছি যেন কিছুই ঘটেনি, যেন সব কিছু ঠিকঠাক মতই চলছে।
কিভাবে আজকে মুসলমানেরা আরাম আয়েশে বিভোর থাকতে পারে?
কিভাবে আজকে আমরা পানাহারে মত্ত আছি যখন আমাদের ভাইয়েরা শত্রুদের হাতে বন্দী?
কিভাবে আজকে আমরা শান্তিতে ঘুমাই যখন আমাদের শান্তিতে রাখার জন্যে যারা উঠে দাঁড়িয়েছিলেন
তাদেরকে ভোগ করতে হচ্ছে নির্ঘুম জীবন, অত্যাচারী আমেরিকানদের হাতে?
কিভাবে একজন মানুষের চোখ শুকনো থাকতে পারে যখন সে তার ভাইদেরকে এইরূপ অত্যাচার ও যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখে ?
মুসলিমেরা কিভাবে সন্তুষ্ট থাকতে পারে নিজেদের সন্তানদেরকে কুফফার শত্রুদের হাতে তুলে দিয়ে,
তাদেরকে তারা পাঠিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর দূরতম একটি প্রান্তে অথচ তাদের অন্তরে কোন কিছুই জাগ্রত হয় না,
কোন হাহাকার জেগে উঠে না, আমরা একটি শন্দও উচ্চারণ করতে শুনি না, একটি আর্ত চিৎকারও শুনিনি,কেন?
আমাদের রাষ্ট্রগুলো কি অবস্থানে আছে? গোত্রগুলোর অবস্থান কি? আর তাদের পরিবার আর আত্মীয়েরা?
তাদের উপর কি বাধ্যতামূলক হয়ে যায়নি কিছু একটা করার এবং তাদের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার?
তাদের উচিত আমেরিকানদের জানিয়ে দেয়া এই বন্দীলোকেরা সারা দুনিয়া থেকে শিকড় কাটা হয়ে যায়নি, তাদের উচিত এটা জানিয়ে দেয়া যে এখনো এমন কেউ আছে যারা তাদের ব্যাপারটিতে নজর রাখছে। তাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত, যে বন্দীদের বিষয়টি শেষ হয়ে যায়নি, বরং কেবল শুরু হয়েছে।
যারা মুখ বন্ধ করে আছে, তারা কেউ ক্ষমা পেতে পারে না, বিশেষত যখন আমরা দেখছি কি নির্মমভাবে দমন নীপিড়ন করা হচ্ছে সেই লোকেদের প্রতি যারা এই উম্মাহর মাথা উঁচু করার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে, দেশে দেশে তাদের আটক,বন্দী,নির্যাতন করা হচ্ছে।
ইসলাম ও মুসলিমের তরে
সমাহিত, যারা শহীদ
আল্লাহর ‘পরে করেছে আত্ম বিক্রয়
তারাই বীর মুজাহিদ ।
ঠিকানা তাদের স্থায়ী, জান্নাতের বিশালতায়
পেয়েছেন তাঁরা, করেছেন যার পাবন্দী,
আমরা প্রতীক্ষায় তার আজও
বন্দী কারাগারে তুমি, মুসলিম কারাবন্দী।
কে তুমি আজ ভাই, বন্দী
পড়ছো এই চিঠি
আর এদিকে মুক্তির স্বাদে
জমীনে চলছি মোরা নিরবধি
হে মুসলিম ভাই, তোমার কাছে একটু সময় চাই
কারাবন্দী তুমি, তোমাকে আমার অন্তরের খবর জানাই?
অন্তরে জ্বলছে বজ্র অনল
আছে অপমান , কষ্ট অনর্গল।
হায় ! জেনে রেখো তুমি, তোমার অপমান তো শুধু লোহার শিকল আর ইটের দালানে নয় ! হে বন্দী ভাই আমার ! তোমার সবচেয়ে বড় অপমানের কারণ আমরা, যাদেরকে পিছনে ফেলে আজ তুমি এই কারাগারে এসেছ ! তুমি তো সাহায্য করেছ সেই দীনকে যা এসেছে অদৃশ্যের জ্ঞানী থেকে,আর মরতবা মর্যাদা; অবশ্যই তুমি তা অর্জন করেছ। অন্তরের অন্তস্তল থেকে আমি জানি, তুমিই সম্মানিত । আমাদের কারাবন্দীরা, আমরা তোমাদের ভুলে গেছি; না , আসলে আমরা তোমাদের পরিত্যক্ত করেছি ! এমনকি সিংহের গর্জনেও আমাদের এই ঘুম ভাঙ্গবে না , এই দুনিয়া কতকাল ধরে ঘুমিয়ে আছে আজ আর এই লোকেরা, ক্রুশ এর পূজারীরা, যেন তারাই আছে সত্য পথের উপরে ! এই দৃশ্য দেখার থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে ও আমার মুসলিম ভাইয়েরা !
হে মুসলিম উম্মাহ ! নিশ্চিতভাবেই আমাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীনগণ আমাদের জন্যে উদাহরণ ও অনুসরণীয় নীতি রেখে গেছেন; রেখে গেছেন কিভাবে শত্রুদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করতে হয় তার দৃষ্টান্ত।
যখন মানসুর বিন আবি আমির উত্তর আন্দালুসিয়ার জিহাদ থেকে ফিরে আসলেন, তিনি করডোভার একটি ফটকে একজন মুসলিম নারীর সাক্ষাত লাভ করলেন। মহিলাটি তাকে বললেন, হায় ! আমি নিশ্চিত আমার সন্তানকে খ্রিস্টানরা বন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে- আর তুমি মুক্তিপণ দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনো মানসুর শহরের ফটক থেকেই ফিরে গেলেন, করডোভাতে প্রবেশ পর্যন্ত করলেন না। বরং, তিনি মুজাহিদিনদের সাথে করে ফিরে গেলেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে আনতে পারলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরে এলেন না, আর এ সবই মাত্র একজন মুসলিম বন্দীকে মুক্ত করে আনার জন্যে।
আর স্মরণ করুন আন্দালুসিয়ার সেই শাসকের কথা,
তিনি আল হাকিম বিন হিশাম, যখন জানলেন একজন মুসলিম নারীকে বন্দী হিসেবে তুলে নেয়া হয়েছে তিনি শুনলেন, ও আল হাকাম ! আমাকে উদ্ধার করো ! ঘটনাটির গুরুত্ব তাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলল। কাজেই তিনি লোকজন জড়ো করলেন, নিজে এবং তার সৈন্যদলকে প্রস্তুত করলেন এবং ১৯৬হিজরী (৮১২ সাল) এ শত্রুদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। তিনি তাদের দেশে নিজের বাহিনী চালিয়ে দিলেন, একের পর এক দূর্গ জয় করলেন। তিনি সারা দেশ তছনছ করে দিলেন, সমস্ত সম্পদ আটক করলেন। যুদ্ধে শত্রুপক্ষের পুরুষেরা নিহত হলো, নারীরা যুদ্ধবন্দী হলো…আর এসব কি জন্যে? একজন মুসলিম নারীর সম্মান রক্ষার্থে। তার মুক্তি নিশ্চিত করার পরেই তিনি ফিরে এলেন করডোভাতে বিজয়ীর বেশে।
মুতাসিমের নিকট এই মর্মে আরো সংবাদ পৌঁছুল যে, উমুরিইয়াহ নামক স্থানে একজন খ্রিস্টান ব্রুট (brute) কর্তৃক একজন মুসলিমাহকে বন্দী করা হয়েছে। আরো সংবাদ এল, তাকে বন্দী করে নির্যাতন করা হচ্ছিল এবং গালে থাপ্পড় মারা হচ্ছিল, একজন গুপ্তচর খলিফা মুতাসিমের নিকট জানাল যে নির্যাতনের সময় মহিলাটি “ওহে মুতাসিম !” বলে ডাকছিল, এবং কিভাবে একজন খলিফা বর্তমান অবস্থায় শত্রুদের হাতে মুসলমান নারী নির্যাতনের শিকার হয় তা নিয়ে চিৎকার করছিল। এ ঘটনা শুনে খলিফা মুতাসিম যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হলেন, প্রমাণ করে দিলেন একজন মাত্র একজন মুসলমানের মর্যাদা কত বেশি, যাকে মুক্ত করার জন্যে তিনি নিজে সেনাদলের প্রধান হিসেবে সত্তর হাজার সৈন্যের বাহিনী নিয়ে উমুরিয়াহ নামক স্থানে পৌঁছুলেন এবং তা জয় করলেন, এরপর সেই বিধর্মী অত্যাচারী খ্রিস্টানকে খুঁজে বের করলেন, তার শিরচ্ছেদ করলেন এবং সেই সম্ভ্রান্ত মুসলিমাহ কে মুক্ত করে একজন যথাযথ শাসকের দায়িত্ব পালন করলেন।
আবু গালিব হাম্মাম বিন আল মুহাযিব আল মা’রি তার ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ করছেন,
সাইফ আল দৌলা তার সমস্ত কোষাগার খালি করে অর্থ খরচ করেছেন রোমানদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্তিপণ হিসেবে, আরো উল্লেখ করেছেন আবুল আব্বাস আল খুজাই, শ্যাম দেশের যিনি গভর্ণর ছিলেন তিনি তুর্কিদের থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার জন্যে সেই আমলে এক মিলিয়ন দিরহাম পর্যন্ত ব্যয় করেছেন !
এই ছিল সেই সব মুসলিম দেশের শাসকেরা যারা গত হয়েছেন, যখনই তারা কোন সাহায্যের আর্তচিৎকার শুনেছেন, তারা তীরের মত সেখানে সাড়া দিতে ছুটে গেছেন, সাহায্য করেছেন এবং মযলুমকে যালিমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। আর হ্যাঁ, এজন্যেই খলিফা উমর বিন আবদুল আযীযে (রাহিমাহুল্লাহ) এর মত মহান ব্যক্তিরা তাঁর মন্ত্রীকে এই মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছিলেন যে, যদি একজন মাত্র মুসলিম কারাবন্দীকে মুক্ত করার জন্যে সমগ্র ইসলামিক রাষ্ট্রের কোষাগার খালি করে দিতে হয় তবে তাই কর
যদি অর্থের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্ত করা না যায়, তাহলে চূড়ান্ত সতর্কতা এবং মৌখিক হুমকির ব্যবহার করা আবশ্যক।
যখন কুতায়বা (আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি রহমত নাযিল করুন) সুমানের শাসকের সাথে বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন, তখন তিনি নাইজাক টারখানের নিকট মুসলিম বন্দীদের ব্যাপারে চরমপত্র প্রেরণ করেছিলেন এবং এর ভাষা ও হুমকির ধরণ দেখে শাসক নাইজাক ভীত হয়ে তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে গিয়েছিল এবং মুসলিম কারাবন্দীদের মুক্ত করে দিয়েছিল।
জনসাধারণের মাঝে মুসলিম যুদ্ধবন্দী ও কারাবন্দীদের মুক্ত করার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে আলেমগণ সর্বদাই সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন, এটা তারা করেছেন নিজেদের দেশের মুসলিম শাসকের নিকট চরমপত্র প্রেরণ করে কিংবা শত্রুদেশের শাসকের সাথে সাক্ষাত করে কিংবা কমপক্ষে তাঁরা আল্লাহ্‌র দরবারে দুয়া মোনাজাত করে হলেও চেষ্টা করেছেন যেন মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করে দেয়া হয়। আমরা জানি, ইবন তাইমিয়া ‘বুলাই’ এর সাথে সাক্ষাতের জন্যে গিয়েছিলেন, সে ছিল একজন মঙ্গোলীয় জেনারেল এবং ইবনে তাইমিয়ার দাবীর প্রেক্ষিতে সে সময় মঙ্গোলদের হাত থেকে অনেক মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করা সম্ভবপর হয়েছিল।
ইবন তাইমিয়া সাইপ্রাসের সম্রাটের নিকট নিম্নলিখিত পত্রটি প্রেরণ করেনঃ
“হে সম্রাট! এটা কেমন কাজ হল, তুমি রক্তপাতের অনুমতি দিচ্ছ, মহিলাদের বন্দীনি হিসেবে ধরে নিয়ে যাচ্ছ, মানুষের সম্পদ দখল করছ অথচ তুমি কিনা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে কোন অনুমতি বা বৈধতা দিলে না? আমরা কি ধরে নিব যে সম্রাট জানে না এই আমাদের দেশে অগণিত খ্রিস্টানেরা শান্তি এবং নিরাপত্তার সাথে বাস করে আসছে? তাদের সাথে আমাদের আচরণের স্বরূপ সবাই জানে। তাহলে এটা কেমন ঘটনা হল যে তুমি আমাদের বন্দীদের সাথে এমন আচরণ করছ যে একজন নীতিবোধ সম্পন্ন মানুষ, বিবেকমান মানুষ কিংবা একজন ধার্মিক লোকও কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না!!?
বরং, অনেকের প্রতিই অত্যচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে বন্দী অবস্থায়, অথচ বন্দীদের নির্যাতন সকল ধর্মে, আইনে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ। কিভাবে তুমি সেই সকল লোকদের আটক করে রেখেছে যাদের নির্যাতন করার জন্যে বন্দী হিসেবে তুমি ধরে নিয়ে গেছ? কেবল অত্যাচার চালানোর জন্যে? তুমি কি মনে করেছ তুমি এতকিছুর পরে নিরাপদে থাকবে, এতকিছুর পরে যখন তুমি মুসলিমদের মুখোমুখি হবে, যে অত্যাচার তুমি চালাচ্ছো এরপরে কি পরিণতি হবে তোমার তা কি ভেবে দেখেছ?
আল্লাহ্‌ তাদের সহায়তা করবেন এবং তাদের বিজয় দান করবেন, বিশেষত এটা এমন এক সময় যখন মুসলিম জাতি নিজেদের সম্মানার্থে জেগে উঠছে এবং সামনের লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত হয়েছে। ন্যায়সংগত লোকেরা এবং সর্বশক্তিমানের সহযোগীরা তাঁর আদেশ মেনে তোমাদের এই আচরণে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলছে। উপকূলবর্তী ঘাঁটিগুলোতে পুরুষ লোকের সমাবেশ ঘটছে, সাহসী এবং বীর পুরুষেরা, তারা যোদ্ধা এবং তাদের সক্ষমতা আমরা দেখেছি এবং তার কারণে তাদের মর্যাদাও উত্তোরত্তর বেড়ে চলছে।
আরও আছে, তোমার অবগতির জন্যে জানাই, এখানে নিয়োজিত আছে এমন সকল লোক যারা তাদের দীনের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও নিষ্ঠাবান। সেখানে নিয়োজিত নতুন এবং পুরাতন সকল লোকের সক্ষমতার কথাই তোমার জানা উচিত।
তাদের মাঝে আছেন এমন সকল ন্যায়পরায়ণ মানুষ যাদের প্রার্থনা আল্লাহ্‌ ফিরিয়ে দেন না , আর তাদের চাহিদার কথাও তিনি অবজ্ঞা করেন না। হ্যাঁ, এরাই হচ্ছেন এমন লোক যারা খুশি হলে আল্লাহও খুশি থাকেন আর তারা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন।
হে সম্রাট, জেনে রেখ সে সকল মুসলিম সীমান্তের কথা যা তোমার রাজ্যের নানাদিকে বেষ্টন করে আছে, কি কল্যাণ আর মঙ্গলের আশা তুমি করতে পার যখন কিনা আমাদের সাথে তোমাদের আচরণে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ সন্তুষ্ট নয় এবং জানি না আর কোন মুসলিম কিংবা আমাদের মুসলিমদের সাথে যারা শান্তি চুক্তি করেছে তারা এতে তোমাদের সাথে আপোস করতে রাজি হবে কি না ?”
আবু সাঈদ আল থা’লাবী বর্ণনা করেন, যখন বিখ্যাত আব্বাসীয় খলীফা আবু জাফর আল মানসুরের বিরুদ্ধে ইব্রাহীম এবং মুহাম্মদ বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন, খলিফা চেয়েছিল যেন সীমান্তবর্তী সৈনিকেরা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করে। এরপর, তারা তা প্রত্যাখান করল এবং তাদের অনেকেই রোমানদের হাতে বন্দী হল, তখন রোমানরা বন্দীদের বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবীকরে বসল। কিন্তু খলীফা তাদের মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করলেন।
এহেন অবস্থায়, ইমান আল আউযাই (রাহিমাহুল্লাহ) খলীফার নিকট চরমপত্র লিখে পাঠালেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মহাপবিত্র, মহামহিম তোমাকে উম্মাহর ভালোমন্দ দেখভালের জন্যে ক্ষমতা দান করেছেন, নির্বাচিত করেছেন- এ কারণে এটা আশা করা হয় যে, তুমি ন্যায়নিষ্ঠার সাথে তোমার দায়িত্ব পালন করবে এবং অনুসরণ করবে তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা, লোকেদের সাথে বিনম্র আচরণ করবে এবং বিনয়ের সাথে অবনত হবে। আমি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট এ মর্মে আবেদন পেশ করছি যেন তিনি আমীরুল মুমিনিনকে শান্ত করেন এবং উম্মাহর জনসাধারণের ব্যাপারে সদয় হবেন এবং তাদেরকে বিজয় দান করবেন।
কার্যতই প্রথম বর্ষে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের আক্রমণ সফল হয়েছে এবং মুসলিমদের সীমানার ভিতরে তারা অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে-তারা মুসলিম নারীদের নিকট পৌঁছে গেছে এবং শিশু ও বৃদ্ধদেরকে দূর্গ হতে বের করে দিয়েছে। এ সবই ঘটেছে মুসলিমদের পাপের কারণে, যদিও যে অপরাধ আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তা আরও বৃহৎ ছিল। এটা ছিল মুসলমানদের অপরাধ যে তাদের শিশু ও বৃদ্ধদের দূর্গ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে- তারা কোন সাহায্যকারী পায়নি কিংবা তাদের রক্ষার্থেও কেউ এগিয়ে আসেনি। নারীদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তাদের মাথা আর পা অনাবৃত ছিল, আল্লাহ্‌ দেখলেন কিভাবে আমরা তাঁর থেকে সরে গিয়েছিলাম।
তাই বিশ্বাসীদের নেতার জন্য মানানসই আচরণ হল যে তিনি আল্লাহকে ভয় করবেন এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশিত পথের অনুসরণ করবেন মুক্তিপণ প্রদানের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করার দ্বারা। এই নির্যাতিত লোকদেরকে তিনি আল্লাহ্‌র ভালোবাসার কসম করে মুসলিম উম্মাহ থেকে আলাদা করে রাখতে পারেন না, আল্লাহ্‌ বলেন, “আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও”। [নিসা ৭৫]
আমি আল্লাহ্‌র কসম করে বলছি, হে আমিরুল মুমিনিন, বন্দীদের কাছে না আছে কোন জমাকৃত মাল (গণীমত) না আছে কর দেয়ার মত কোন সম্পত্তি-কেবল তাদের নিত্য ব্যবহার্য সম্পদ ছাড়া। নিশ্চয়ই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আমি (জামাতে ইমামতি) সালাতরত অবস্থায় আমার পিছনে কোন শিশুর কান্না শুনি তখন আমার সালাতের দৈর্ঘ্য সংক্ষিপ্ত করি, কারণ শিশুর কান্নার ফলে মায়ের মনে কষ্ট হয়
কাজেই কিভাবে তাদেরকে আপনি শত্রুদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেন হে আমিরুল মুমিনিন? তাদের উপর ফিতনা পতিত হয়েছে, তাদের দেহগুলো এভাবে উন্মুক্ত করে রাখা আছে যার কোন অনুমতি নেই কেবলমাত্র বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যেকার আন্তরিক অবস্থা ছাড়া, আর এরাই তো দুনিয়াতে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি। আপনার উপরে আছেন আল্লাহ্‌, তিনি আপনাকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন শেষ বিচারের দিনে তার পূর্ণ হিসাব নিবেন- যেদিন কারো প্রতি অত্যাচার করা হবে না, যদিও একটি সরিষা দানা পরিমান কাজও হয়। তাঁর সিদ্ধান্তই আমাদের জন্য যথেষ্ট
যখন পত্রটি আবু জাফরের নিকট পৌঁছুল, তিনি আদেশ করলেন মুসলিমদের মুক্ত করার জন্যে মুক্তিপণ প্রদান করতে।
সম্মানিত উলামায়ে কেরাম এই নির্যাতিত লোকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন সর্বদাই, তারা আপনজন হারানো মায়ের হাহাকার কিংবা একজন পিতার বুকের শূন্যতা ও আর্তনাদ ঠিকই অনুভব করতেন আর একারণেই তাঁরা তাদের দুয়ায় মুসলিম বন্দীদের কথা স্মরণ করতেন।
ইবন কাসীর রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, একজন মহিলা এসে ইমাম বাকি বিন মুকাল্লাদ রাহিমাহুল্লাহ’র নিকট পেশ করলেন,
“নিশ্চয়ই আমার সন্তানকে ফ্রাঙ্কের লোকজনেরা ধরে নিয়ে গেছে এবং আমি সন্তান হারানোর ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার একটি সামান্য বাড়ী আছে যা আমি আমার সন্তানের মুক্তিপণ হিসেবে বিক্রি করে দিতে চাই, আপনি কি আমাকে এমন কোন ক্রেতার সন্ধান দিতে পারেন যিনি আমার এই বাড়িটি ক্রয় করবেন আর আমি সেই টাকা দিয়ে আমার সন্তানকে মুক্ত করাতে পারি? আর আমার অবস্থা তো এমন যে, আমার নিজের দিন আর রাত একাকার হয়ে গেছে, চোখে ঘুম নাই, মনে শান্তি নেই, নেই কোন বিশ্রাম”। (আর এ অবস্থা কি আজকের মায়েদেরও নয়?-কিভাবে তারা ঘুমাতে পারেন যখন তারা জানেন তাদের প্রিয় সন্তানেরা বন্দী হয়ে আছে শত্রুদের হাতে- আল্লাহ্‌র নিকটই তারা ফরিয়াদ পেশ করে যাচ্ছেন)
এভাবে ইমাম বাকি বললেন, “ আচ্ছা, তুমি এখন যাও, আমি দেখছি আল্লাহর অনুমতিতে আমি এই ব্যাপারে কি করতে পারি ”। তিনি তাঁর মাথা অবনত করলেন, আল্লাহর কাছে দুয়া করলেন যেন তিনি সেই মহিলার সন্তানকে ফ্রাঙ্ক এর কবল থেকে মুক্ত করে দেন। এরপর বেশিদিনের কথা নয়, যখন সেই মহিলাটি আবার আলেমের কাছে এলেন, এবার সাথে এলেন তার সন্তান ! তার সন্তান মুক্তি লাভ করেছে ! মহিলাটি বললেন, “এর আজব ঘটনাটি শুনুন, আল্লাহ যেন তার উপর দয়া করেন”।
বালকটি বলল, “আমি ছিলাম তাদের মধ্যে একজন যারা রাজার খেদমত করত-আমাকে সর্বদাই শিকলে বেঁধে রাখা হত, একদিন যখন আমি হাঁটছিলাম, আমার পায়ে জড়ানো শিকল ছিঁড়ে গেল। কাজেই আমার পাহারাদার এসে আমাকে গালাগালি করল এবং প্রশ্ন করল, ‘তুমি কেন তোমার পায়ের শিকল ভেঙ্গেছ?”আমি বললাম, ‘না, আমি আল্লাহ্‌র শপথ করে বলছি, আমি তো এটা স্পর্শও করিনি। এটা এমনিতেই খুলে গেছে, আমি টের পাইনি’। কাজেই সে কামারকে ডেকে পাঠাল, সে আবার আমার পায়ে শিকল জড়িয়ে দিল, স্ক্রুগুলো শক্ত করে বেঁধে দিল। যখন আমি উঠে দাঁড়ালাম তখন আবার আমার পায়ের শিকল ভেঙ্গে গেল, এটা দেখে সে আবার শিকল শক্ত করে বেঁধে দিল, আবার আরো ভালোভাবে কিন্তু এবারেও এটা খুলে গেল। তাই দেখে তারা তাদের পুরোহিতের কাজে এ বিষয়ে জানতে চাইল, সে বলল, ‘বালকটির কি মা জীবিত আছে?’ আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ’। তারা বলল, ‘নিশ্চয়ই তোমার মা তোমার জন্যে প্রার্থনা করেছে আর তা কবুল হয়েছে। তাকে ছেড়ে দাও’। তাই তারা আমাকে ছেড়ে দিল এবং ইসলামিক রাজ্যে প্রবেশ পর্যন্ত আমাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে এল”।
বাকি বিন মুকাল্লাদ আরও জানতে চাইলেন বালকটির কাছে ঠিক কখন তার পায়ের শিকল ছিঁড়ে যাবার এই ঘটনাটি ঘটছিল এবং অবাক হয়ে গেলেন, এটা ছিল সেই সময় যখন তিনি বন্দীদের মুক্তির জন্যে মুনাজাত করেছিলেন।
আজকের মুসলিম উলামারা কি সেই অনন্য পথ অনুসরণ করছেন এবং তাদের ভূমিকা পালন করছেন বন্দীদের মুক্ত করার ব্যাপারে শত্রুদের হাত থেকে? যারা দায়িত্বশীল তাদেরকে কি আজকের উলামারা উপদেশ দিচ্ছেন ? তাদের কি উৎসাহিত করছেন যেন তারা বিষয়টী সত্যিকারের গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন? হে আল্লাহ্‌ !
আমি কি আমার বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি? হে আল্লাহ্‌ আপনি সাক্ষী থাকুন ! আল্লাহ্‌ আমাকে এবং আপনাকে এই বরকতময় কুর’আন দ্বারা উপকৃত করুন।

খুতবার দ্বিতীয় অংশঃ
হে উম্মতে ইসলাম ! এটি হচ্ছে তেমনি একটি চিঠি তাদের প্রতি যারা প্রত্যেকে দায়ী, যারা প্রত্যেকে নীরব রয়েছে, প্রত্যেক আলেম, প্রত্যেক মুসলমানের কাছে…নারী কিংবা পুরুষ……ও মুসলমানেরা !
হে আল্লাহ ! তোমার কাছে আমি অভিযোগ জানাই আমার অসহায়ত্বের ব্যাপারে, আমার কাজের দুর্বলতার কারণে, আর মানুষের সামনে আমার মর্যাদাহানির বিষয়ে। তুমিই তো তাদের রব, যারা মযলুম ! তুমিই আমার মালিক ! সে যেই হোক না কেন, যার উপরে আমাকে তুমি ন্যস্ত করেছ, সে যেখানেই থাকুক না কেন, যত দূরের কোন দেশেই থাকুক না কেন, আমি পরোয়া করি না, তার ভয় আমি করি না,আমার শত্রু উপর ভ্রু কুঁচকে আছে না আমার উপরে এমন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে যে আমার শত্রু, আমি এসব পরোয়া করি না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার উপর সন্তুষ্ট, সেটাই আমার জন্যে যথেষ্ট”।
“ নিশ্চয়ই আমি পরীক্ষার সময় পার করছি। অসুস্থতা আমাকে আক্রান্ত করেছে আর ক্লান্তি আমাকে বিধ্বস্ত করেছে। সারা দিন গনগনে সূর্য আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা পর্যন্ত, সাথে আছে আটককারীদের কর্কশ আচরণ। প্রতিবার আমি আমার খাঁচায় প্রবেশ করি কিংবা বের হই, আমার হাতে পায়ে শিকল জড়ানো থাকে। মনে হয় যেন, ভারী লোহার শিকলগুলোর ওজন আমার ওজনের চেয়ে বেশি, ফুটন্ত পানির মতো শত্রুদের সাথে আটক থাকার চেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা আর কি হতে পারে? এর থেকে আর অপমানের কি আছে হে মুসলিম ভাইয়েরা আমার, লুটেরা আমেরিকানদের সামনে আমাকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করা হচ্ছে, অপমানিত করা হচ্ছে। যাই হোক, আমি আমার সব আকুতি পেশ করি মহান আল্লাহর দরবারে,
তোমার ক্ষমা আমার জন্যে যথেষ্ট হে রব, আমি তোমার কাছে সেই নূর এর মাধ্যমে আশ্রয় চাই যা অন্ধকার দূর করে দেয়, যার মাধ্যমে এই দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কাজকে তুমি ভারসাম্য দান করেছ। আমি যেন কখনো তোমার অসন্তুষ্টি জাগানো কোন কাজ না করি। আর নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া আর কারও কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই, তোমাকে ছাড়া আর কারও কাছে কোন আশ্রয়ও নেই ।
আজকে যিনি আমাদের এই চিঠি পড়ছেন, আমার কষ্ট,অবসাদ,দুঃখ কিছুই না
আমার মাথায় যা হচ্ছে তা যদি আপনারা জানতেন ! যখন চিন্তা করি যে মুসলিম উম্মাহর জন্যে কাজ করে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আজকে আমাদের এই অবস্থা আর আপনারা সবাই আমাদের কথা ভুলে গেছেন তখন আমাদের শারীরিক কষ্ট মানসিক কষ্টের তুলনায় তুচ্ছ হয়ে যায়। কিভাবে সবাই আমাদের কথা ভুলে গেলেন !
কিভাবে আমাদের ইস্যু হয়ে গেল গুরুত্বহীন, কিভাবে আমাদের ব্যাপারে কোন সচেতনতা গণ জাগরণের প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করলো না … যেন আমরা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী…কিংবা যেন আমরা মুসলিম নই ! এর চেয়ে লজ্জাজনক, মাথা হেট হতে আসার মতন ঘটনা কি আদৌ হতে পারে?? আজকে পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলো পর্যন্ত আমাদের পক্ষে কথা বলছে, নির্যাতন বন্ধের কথা বলছে, কারাগারগুলো উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবী জানাচ্ছে আর আমাদের মুসলিমরা কাপুরুষ, নপুংসক হয়ে আমাদের ভুলে গেছে ! 
কিভাবে অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকান সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হল কারাবন্দী নিয়ে, কিংবা দেখুন কিভাবে কয়েকজন ব্রিটিশ বন্দীর জন্যে এংলো-আমেরিকান সম্পর্কেও ভাটা সৃষ্টি হল, হায় ! আমাদের জন্যে কেউ নেই, অথচ আমাদের সংখ্যা ছয় শত জন। বরং, যদি এমন হত যে আমেরিকানরা আমাদের জাতীয়তা ঘোষনা না করত, আরব দেশগুলো আমাদের উপেক্ষা করেই যেত, আমাদের অস্তিত্ব কিংবা জাতীয়তা পর্যন্ত অস্বীকার করত।
হ্যাঁ, আপনাকেই বলা হচ্ছে যিনি এই লেখাটি পড়ছেন, …আমরা কারাবন্দী…আমরা আপনাদের সবাইকে শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে দাঁড় করাবো…আমরা বলব, ‘এই লোকগুলো, এরা জানত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারাবন্দীদের মুক্ত করার ব্যাপারে কি আদেশ করে গেছেন, এরা সেই আদেশ শুনেনি কিংবা আমাদের মুক্ত করার জন্যে যা করণীয় ছিল তাও গ্রহণ করেনি’
নিশ্চয়ই আমরা এর মাধ্যমে সেই সব লোকদের সবাইকে আহবান জানাই যারা তাদের দীন নিয়ে গর্বিত, আমরা আপনাকে ঈমানের বন্ধনের কারণে ডাক দিচ্ছি, যাতে আপনারা আমাদের এই ইস্যুটিকে জীবন্ত আলোচিত করে তুলেন। আইনজীবীদের মাধ্যমে আমাদের মুক্তির দাবী জানিয়ে, আমাদের করুণ অবস্থার কথা মিডিয়ায় প্রকাশ করে, আমেরিকার উপর চাপ প্রয়োগ করে, তাকে এভাবে সতর্ক করে দিয়ে যে, তারা যদি মুসলিম কারাবন্দীদের ছেড়ে না দেয় তাহলে তাদের স্বার্থে আঘাত আসবে। আর যদি আপনি নিজেকে এমন অসহায় মনে করেন যে, আপনার কিছুই করার নেই, তাহলে আপনার উচিত অন্তত দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে কাতর কন্ঠে দুয়া করা, এই যালিমদের বিপক্ষে, মযলুমদের পক্ষে আপনি রাতের শেষ ভাগে দুয়া করুন, আল্লাহর কাছে দুয়া করুন যেন তিনি আমাদেরকে কষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে দেন, যেন আমাদের বোঝা অপসারণ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘যে একজন মুসলিমকে সাহায্য করতে সক্ষম হওয়ার পরেও তাকে পরিত্যাগ করে, এরপর এমন এক সময় আসবে যখন সেই সক্ষম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে, আর আল্লাহও তাকে পরিত্যাগ করবেন”। তিনি আরও বলেন, “ যদি কেউ কোন মুসলিমের একটি কষ্ট দূর করে দেয়, শেষ বিচারের দিনে আল্লাহও তার একটি কষ্ট দূর করে দিবেন”।
হতে পারে আজকে তোমরা আমাদের ভুলে গেছ- কিন্তু অনুরোধ তোমাদের কাছে, আমাদের স্ত্রী-সন্তানদেরকে ভুলে যেও না, তাদের দেখাশোনা কর, নিরাপত্তা দিও, আর আমরা যেন দৃঢ়পদ থাকতে পারি সেই জন্যে দুয়া করো, আমরা আমদের অভিযোগ তো কেবল আল্লাহ্‌র কাছেই পেশ করি। আর শেষ কথা বলতে চাই, আমাদের প্রাণপ্রিয় আম্মা ও আব্বাদের জন্য, সবর করুন, আল্লাহ্‌র নিকট হতে পুরষ্কার তালাশ করুন এবং বলুন, “আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই”, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, যেভাবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
আউফ বিন মালিক আল আশজাই এসেছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের কাছে এবং বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! শত্রুরা আমার সন্তানকে ধরে নিয়ে গেছে এবং তার মাতা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আপনি এ অবস্থায় আমার জন্যে কি উপদেশ দিবেন?’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাকে আর তোমার স্ত্রীকে একটি বাক্য বলার উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা যত পার তত বেশি করে পড়বে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ মহিলা একথা শুনে তাঁর স্বামীকে বললেন, “কি বরকতময় একটি বাক্য তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন !’ আর তারা এই বাক্যটি পুনঃপুন পড়তে লাগলেন যে পর্যন্ত না শত্রুরা তার সন্তানের দিকে একসময় বেখেয়াল হয়ে পড়ল এবং তাদের সন্তান সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পারল, সে সাথে করে চার হাজার ভেড়ার পাল নিয়ে আসল, এরপর সে তার পিতাকে তা উপহার দিল। এরপরেই কুর’আনের সেই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল যেখানে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করেআল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন [সূরা তালাক :২-৩]
চূড়ান্ত কথা বলছি, আমাদের দুরাবস্থা ভুলে যাবেন না।
আমরা কারাবন্দী—আমরা আপনাদের সন্তান কিউবাতে, আমাদের কষ্ট ভুলে যাবেন না…আমাদের কষ্টের কথা ভুলে যাবেন না…
হে মুসলমানেরা,
এই চিঠিগুলো দিয়ে আমি সবার প্রথমে আলেমদেরকে সম্বোধন করছি…হ্যাঁ, সেই আলেমগণ যারা নবীদের উত্তরাধিকারী। তাদের কাঁধে যে দায়িত্ব তা অন্য কারো প্রতি নেই। আপনারা দেখেছেন আমাদের পূর্বসূরীরা কারাবন্দীদের মুক্ত করার জন্যে কি না করেছেন, আমরা দেখেছি তারা এই দাবী দাওয়াহ নিয়ে কত কষ্ট করেছেন। আপনারা দেখেছেন শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া কি করেছিলেন, দেখেছেন ইমাম আল আয-যাওয়ী কি করেছেন এবং তাদের পথে আরও কত জন ছিলেন।
আপনি কি দায়িত্ব পালন করছেন কারাবন্দীদের ইস্যুটিকে নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে কি যোগাযোগ করেছেন?
তাদের মুক্ত করার কথা যদি না বলতে পারেন অন্তত তাদের সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে তা বন্ধ করার ব্যাপারেও কি আপনারা কথা বলতে পারেন না ? মিডিয়াতে কথা বলে, মানুষের মাঝে আলোচনা বক্তব্য দিয়ে কি আপনারা সাধারণ মানুষের মাঝে সাবধান করে দিতে পারেন না, তাদের জানিয়ে দিন কারাবন্দী মুসলিম ভাইদের কথা ভুলে গিয়ে তারা কিভাবে নিজেদের উপর বিপদ ডেকে আনছে।
তাই আল্লাহকে ভয় করুন, হে উলামায়ে ইসলাম, শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারীদের ন্যায় আচরণ করুন যাতে পূর্ববর্তী যমানার শেষ্ঠ উলামাদের মাঝে শামিল হতে পারেন।
দ্বিতীয় পত্রটি কারাবন্দীদের পরিবারের প্রতি, সেই সকল বীর নায়কদের পরিবারের প্রতি, তাদের প্রতি যাদের কারণে আমরা মাথা উঁচু করে আছি…আপনারা স্মরণ করবেন আপনাদের সন্তানেরা জেল খাটছে কোন নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে নয়, কোন অপরাধের কারণেও নয় যে কারণে মানুষের কাছে আপনাদের মাথা নিচু হয়ে যাবে। বরং, সারা দুনিয়ার মানুষ আপনাদের সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে, তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কারণ তারা দীনের শীর্ষচূড়ায় অবস্থান করছিল, মুসলমানদের ইজ্জত সম্মান রক্ষা করা’ এটাই ছিল তাদের অপরাধ। তাদের মর্যাদার কারণে আপনাদের আনন্দিত হওয়া উচিত, সম্মানিত বোধ করা উচিত, আপনাদের নয়ন জুড়িয়ে যাক মুবারকবাদ আপনাদের প্রতি যারা এই সকল নায়কদের পরিবারের সদস্য।
আর তৃতীয় পত্রটি আমাদের ভাইদের জন্য…আমাদের প্রিয় বন্ধুদের জন্য…যাদের সাথে আমরা আমাদের দুঃখ ভাগ করি যাদের সহানুভূতি আমরা অনুভব করি…সেই ভাইয়েরা যারা বন্দী আছেন…হে ইসলামের নায়কেরা…সবর, দৃঢ়তা ও একাগ্রতা ! হে তুমি যে অপমানের সময়েও মর্যাদাও শির উঁচু করে আছ, তোমার তরে আমি কিছু কবিতার বাণী শোনাচ্ছি, যেন তোমার চেতনা জাগ্রত থাকে,
হে বীরেরা,
আমার প্রিয় ভাইয়েরা, তোমাদের যারা আফগানিস্তানে কিংবা পাকিস্তান থেকে ধরে নিয়ে কিউবাতে প্রেরণ করা হয়েছে, তোমাদের সবার প্রতি, আমি এই কথাগুলো নিবেদন করছি ; আর আল্লাহ্‌র সাথে যে সৎ থাকে, তার মতামতকে আল্লাহ্‌ ভুল পথে চালিত করেন না !!
( এক কারাবন্দী ভাই এর পত্র থেকে)
আমি বেঁচে থাকব সম্মানের সাথে, আমার সাথীদের মাঝে
আর এতে চিরদিন জ্বলতে থাকবে মুনাফিকদের অন্তর
এই যাত্রা আমার চলতে থাকবে এক চির গৌরবের দিকে
আমার শত্রুরা নিক না কেটে আমার হাত কিংবা পা
শাহাদাতের দিকে অটল চালু থাকব আমি।
কারণ আমি ও মৃত্যু একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করি
আর আমার মৃত্যুতেও জানি, শেষ হবেনা কুফরের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ
তো কি হয়েছে? আফসোস নেই কারণ
জানি এই দীন আল্লাহর, সুরক্ষিত ও চিরস্থায়ী।
কাজেই যারা আমার পরিচিত, ভাই
আফসোস করো না, দৃঢ়তা চাই
একথা বলোনা, বলোনা তুমি,
“কেন তুমি নিজেকে ঠেলে দিলে বন্দীত্বের এর দিকে?”
কারণ আমি একজন মুমিন, আমি উচ্চভিলাষী
আর এই অপমান বা অত্যাচার আমাকে দমাতে পারবে না
কারণ, আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য আমার রবকে সন্তুষ্ট করা
আর সফলতা অর্জন করা আমার সর্বোচ্চ লক্ষ্য
আমার সর্বোচ্চ ইচ্ছা, অসীমের পথে যাত্রা।
কারণ আমি ব্যাকুল সেই কুমারী জান্নাতের জন্য।
হে আমার পিতা, যদি তুমি আমার সেই অবস্থা দেখতে
তারা আমার কাঁধে শিকল পড়িয়ে রেখেছে
আমার হাতকে তারা বেঁধে দিয়েছে ইস্পাতের যুলুম দিয়ে
আমার মাথাকে তারা নুইয়ে দিয়েছে অক্ষমের মত
বিনা অপরাধে ছিনিয়ে নিয়েছে আমার পোশাক, করেছে বিবস্ত্র
আমার দিকে কুচকাওয়াজ করতে করতে এসেছে আমার চোখে অশ্রু দেখতে
আর আমার উপরে অত্যাচারের চাবুকে করেছে ক্ষত
যেন আমি এক শিকারী জন্তুর পায়ের নিচে দলিত শিকার।
আমাকে দেখছো তুমি, দেখলে শুধু আমার চেহারার রক্ত?
দেখনি দক্ষ রাজনীতিকের হাতে আমারই রক্তের দাগ?
তাই বলছি, হে আমার পিতা, লা তাহযান, দুঃখ করবেন না
কারণ আমি আশ্রয় চাই আমার রবের, তাঁরই কাছে আমার শেষ
আরে এই শত্রুরা আমার কিইবা করতে পারে?
কারণ আল্লাহ নিজেই ইসলামের রক্ষাকর্তা
তাই যদি চায় তারা ঝরাতে আমার রক্ত
ঝরুক না প্রতিদিন !
হয়তো বা তারা গড়ে তুলেছে এক বাধার প্রাচীর
আমার এবং আমার ভাইদের মাঝে ।
হয়তো বা তারা আমার এই জীবনকে জাহান্নামে পরিণত করেছে
সারা দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এল, যেন চিরকালের এই অন্ধকার
এমনকি যেন তারা আমাকে শ্বাসরোধ করে রেখেছে, দম নিতে দিতেও তারা চায় না
যেন তারা আমার রগে শিরায় দড়ি লটকিয়ে দিয়েছে
যেন তারা গলিত তামায় আমাকে ফেলতে চায়
অথচ জানে কি তারা ?
এগুলো আমার দেহে, আমার চামড়ার শীতলতা ছড়ায়
এরা কখনো আমার কাছে পৌঁছতে পারবে না, হে পিতা !
আমার অন্তরে, তারা কখনো পারবে না পোঁছতে
তারা কখনো পারবে না নুইয়ে দিতে আমার উদ্দেশ্যকে
আমি থাকব চির বিজয়ী, কারণ আমার সহায় আমার এই কিতাব
আর শ্রেষ্ঠ নবীর কথা, সেখানেই আছে আমার যত অনুপ্রেরণা
আমি রইব চির দুর্ভেদ্য দুর্গের মত, হে আমার পিতা !
আমি রইব চির উন্নত, গৌরবের আকাশে উন্নত
আর ফিরিয়ে আনব সেই হারানো দিন,
সালাহউদ্দীনের ন্যায় অবশিষ্ট সিংহদের স্মৃতিতো আজও অমলিন
আসিতেছে সেই দিন, আশু অনুভব তাদের চির দুর্দশার
যারা অত্যাচারী ও প্রধান মুনাফিকদের
দুনিয়া কামনার রিপু তাদের চিন্তামুক্ত করে রেখেছে
অথচ তাদের কেউ জ্বলবে আগুনে
কিন্তু আমি বাঁচি চির বিশুদ্ধ চিত্তে
স্বাদ পাই, সম্মানের,
স্বাদ পাই চির প্রতীক্ষিত মৃত্যুর
মৃত্যুর স্বাদে চরম পুলকিত হই আমি ।
হে মুসলিমেরা ! এই দীর্ঘ আলোচনার পরে, আমি আমাদের বক্তব্যকে কিছু পয়েন্টে তুলে ধরতে চাই এবং এই উপদেশ দিতে চাই যে,
১- মিডিয়াতে কারাবন্দীদের নির্যাতনের ঘটনা প্রচার করতে থাকুন, এর উপর প্রয়োজনীয় আলোকপাত করুন এবং মুসলমানদের প্রতি আমেরিকান রাজনীতির চিত্র তুলে ধরুন।
২- মানবাধিকার সংলগ্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন, যেন তারা কারাগারের অত্যাচারের মাত্রা হ্রাস করে যা মুজাহিদিনদের সাথে করা হচ্ছে।
৩-সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করুন যেন তারা বন্দীদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে যায় এবং যেন তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠায়।
৪- দেশ ও বিদেশে যোগ্য আইনজীবিদের সমন্বয়ে একটি সংস্থা গড়ে তুলুন।
ইয়া আল্লাহ্‌ ! ইয়া হাইয়্যুল কাইয়ুম, (চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী) !
ইয়া আল্লাহ্‌, মুসলিম কারাবন্দীদের মুক্ত করে দিন !
ইয়া আল্লাহ্‌, মুসলিম কারাবন্দীদের মুক্ত করে দিন !
ইয়া আল্লাহ্‌, আমাদের কারাবন্দীদের মুক্ত করে দিন এবং বাকি মুসলিম বন্দীদেরকেও !
ইয়া আল্লাহ্‌, ফিলিস্তিনে আমাদের বন্দীদের মুক্ত করে দিন, কাশ্মীরে, ফিলিপাইনে এবং কিউবাতে !
হে আল্লাহ ! দ্রুত একটি সমাধানের মাধ্যমে তাদের দুর্দশা দূর করে দিন !
হে আল্লাহ ! তাদের বন্দীদশার অবসান ঘটিয়ে দিন !
হে আল্লাহ ! দুর্বলদের উপর সদয় হোন !
হে আল্লাহ ! তাদের অন্তরে দৃঢ়তা দান করুন !
হে আল্লাহ ! তাদের অন্তরে ঈমানী দৃঢ়তা দান করুন !
হে আল্লাহ ! তাদেরকে অটল অবিচলতার মাধ্যমে রহমত দান করুন !
হে আল্লাহ ! তাদেরকে দৃঢ়তা দান করুন, হে চিরঞ্জীব, হে চিরজীবী !
হে আল্লাহ ! তাদের দুর্বলদের উপর রহমত ! আর তাদের দুর্বলদেরকে আপনি সবল করে দিন !
হে আল্লাহ ! আপনার শত্রুদের বিরুদ্ধে আপনার শক্তি প্রয়োগ করুন !
হে আল্লাহ ! আপনার শত্রুদের বিরুদ্ধে আপনার শক্তি প্রয়োগ করুন !
হে আল্লাহ ! আপনার শত্রুদের বিরুদ্ধে আপনার শক্তি প্রয়োগ করুন !
হে আল্লাহ ! তাদেরকে অভিশপ্ত করুন, ভয়ানক অভিশপ্ত !
হে আল্লাহ ! আপনার কুদরত আর ক্ষমতা দেখিয়ে দিন !
হে আল্লাহ ! আপনার উপর মুনাফিকরা বিশ্বাসঘাতকেরা ক্ষমতা দেখাচ্ছে !
হে আল্লাহ ! তাদেরকে একত্রিত হতে দিবেন না ! আর তাদেরকে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে দিয়েন না !
আর তাদেরকে পরবর্তীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত, শিক্ষা ও নমুনা বানিয়ে দিন !
হে আল্লাহ ! প্রতিটি স্থানে মুসলিমদের সাহায্য করুন !
হে আল্লাহ ! এই উম্মাহকে সতকর্মশীল বানিয়ে দিন!
আপনার আনুগত্যের দিকে
আপনার নাফরমানীর দিকে নয় !
আমর বিল মারুফ ও নাহিয়ানিল মুনকারের দিকে!
হে মহান রব ! সমস্ত সম্মান আপনারই !
হে আল্লাহ ! আমাদের দেশ ও ঘরবাড়ি রক্ষা করুন !
আর আমাদের নেতাদের সংশোধন করে দিন ! হে মহান, সবচেয়ে ক্ষমাশীল তুমি !
সুবহানাল্লাহ ! হে আল্লাহ ! সমস্ত সম্মানের মালিক, আপনি তা থেকে পবিত্র যা ওরা আপনার উপর আরোপ করে,
শান্তি বর্ষিত হোক সকল আম্বিয়াগণের উপর, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন।
দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবী ও তাঁর পরিবারের উপর।
_____________
শাইখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল হাবদান, সৌদি আরবে রিয়াদের আল ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম মসজিদের ইমাম, তিনি জুমার খুতবায় এই বক্তব্যটি প্রদান করেন, সেদিন ছিল ১৬ আগস্ট ২০০২ সাল ১৪২৩ হিজরী।
খুতবার শিরোনাম ছিল, “মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”
এটি ছিল এক অসাধারণ খুতবা, আশা করা যায় সেদিন যারা উপস্থিত থেকে সরাসরি খুতবাটি শুনেনি তারাও এর লিখিত রূপ থেকে উপকৃত হতে পারবেন, বিশেষতঃ যখন মুসলিম কারাবন্দীদের এই বিষয়টি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ বেখবর ও গাফেল হয়ে গেছে, এমনকি অনেক ইসলামিক দায়ীগণও এই বিষয়টিকে উপেক্ষা করে চলছেন।

মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ এর মোটরসাইকেল – তালিবানদের যেভাবে উত্থান ঘটেছিল

১৯৯৪ সালের গ্রীষ্মকাল। মধ্য এশিয়ার একটি দেশে দুজন আরোহী মোটর সাইকেলে করে ছুটে চলেছেন। বাহনটিতে দুজন আরোহী। কিছুদিন আগেই তারা কয়েকজন মিলে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন।

একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ, একটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।
তিনি কাজটি করার জন্য যাদের সহায়তা পেয়েছিলেন তারা সবাই মাদ্রাসার ছাত্র। সুশীল সমাজের বিশিষ্ট জনদের কর্মব্যস্ততা এতই বেশি যে তাদের ফুসরত নেই মানুষের বিপদাপদে এগিয়ে যাবার। আরো কিছু লোক এগিয়ে এসেছিলেন সেই মোটর সাইকেল আরোহীদ্বের আহবানে সাড়া দিয়ে, তাদের কেউ স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা স্বচ্ছল কৃষক। তাদের ছোট্ট দলটি গঠিত হয়েছিল মাদ্রাসার শরীয়াহ বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্র, মৌলভী এদের নিয়ে।

গ্রামের লোকদের জন্য সময়টি ছিল উৎসবের। বিয়ের অনুষ্ঠান, বরযাত্রী চলছে দলবেঁধে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির হাইওয়েতে কোন নিরাপত্তা নেই, ডাকাত আর চোরের দলের উৎপাত এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, রাস্তার পাশে মরা লাশ পড়ে থাকলেও তা লোকজনের কাছে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এতটাই স্বাভাবিক যে, কেউ গাড়ি থামিয়ে লাশটিকে কবর দেয়া দূরে থাক, পথচারীরা পর্যন্ত দুবার ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না।

এহেন পরিস্থিতিতে, যে বিপদের আশংকা ছিল, ঘটলো তাই। বরযাত্রীদের দল হাইওয়ে ডাকাতদলের খপ্পরে পড়ল, হতাহতের ঘটনা ঘটল, মহিলাদের উঠিয়ে নেয়া হল অপহরণ আর ধর্ষণের জন্য। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের গণ্ডারের চামড়ায় সাধারণত ময়না তদন্তের আগে অনুভূতি হয় না। মাদ্রাসার একজন মোল্লা এই ঘটনায় ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলেন, তিনি বের হলেন “আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহিয়ানিল মুনকার” এর ডাকে, সাথে ছিলেন আরো মাদ্রাসার ছাত্ররা, যাদের বলা হয় তালেব। তালেবের বহুবচন ‘তালেবান’ মানে অনেকগুলো ছাত্র।

কিছু মহিলাদের উদ্ধার করা সম্ভব হলো, আবার অনেকে ইতোমধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। গ্রামের লোকজনের আবেদনে যে প্রশাসন নির্বিকার ছিল সেই প্রশাসনকে বসিয়ে রাখার কোন মানে হয় না। কাবুলের শাসক রব্বানীর অনুগত গভর্ণর ও তার প্রশাসনকে কান্দাহার প্রদেশের গ্রামের লোকেরা বের করে দিল। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সাথে তারা স্বেচ্ছায় তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তুলে দিল যে লোকটির হাতে তাঁর নাম মোল্লা মুহাম্মদ ওমর, মুজাহিদ। যিনি সবার আগে এগিয়ে গিয়েছিলেন চোর আর ডাকাতদলের হাত থেকে মুসলিম নারীদের ইজ্জত রক্ষা করার ডাকে সাড়া দিয়ে।
কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, একা এভাবে এগিয়ে যাবার শক্তি তিনি কোথায় পেলেন?
কিভাবে তিনি বাকি লোকদেরকেও সাহসী অগ্রযাত্রার সাথী করে নিলেন?

আসুন শুনি তাঁর নিজের জবানীতে,

“তখন আমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করি, মাদ্রাসাটি ছিল “সানজ সার” শহরে, কান্দাহারে। আমার সাথে আরও প্রায় ২০ জনের মত সহপাঠী ছিল। এরপর দেশে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ল, খুন হত্যা, লুটতরাজ, ডাকাতি এগুলো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল, আর দেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্নীতবাজ, বাজে সমাজপতিদের হাতে। ‘এই সমাজের অবস্থার উন্নতি ঘটবে, আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে’ ; সবচেয়ে আশাবাদী লোকেরাও এমন আশা করা ছেড়ে দিয়েছিল। এমনকি আমি নিজেও তাদের মতই ভাবছিলাম, এরপর নিজেকেই বললাম, “আল্লাহ তায়ালা কখনো কাউকেই তার শক্তি সামর্থের বাইরে কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না” (বাকারাহ ২৮৬)
এরপর আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য এই আয়াতটিই যথেষ্ট মনে হল, নইলে আমি হয়তো এই বিষয়গুলো ছেড়ে দিতাম, কারণ কোন কিছুই আমার সামর্থ্যের মধ্যে ছিল না। কিন্তু আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম, খাঁটি ভরসা, আর যেকেউ আল্লাহর উপর এ ধরণের তাওয়াক্কুল করে, তার আশা কখনো হতাশায় পরিণত হয় না।

মানুষ হয়তো ভাবতে পারেঃ কখন এই আন্দোলন শুরু হল? কারা এর পিছনে ছিল? অর্থায়ন কারা করল? পরিচালনা করল কারা আর নিয়ন্ত্রণ করল কারা?
আমি তাদের বলব, এই আন্দোলন তো শুরু হয়েছে সেদিন, যেদিন আমি আমার মাদ্রাসাতে বইটি ভাঁজ করে রেখে দিলাম, আমি আমার সাথে আরেকজন ভাইকে নিয়েছিলাম, এরপর আমরা দুজনে মিলে পায়ে হেঁটে যানযাওয়াত এলাকার দিকে গেলাম। এরপর সেখান থেকে আমি একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিলাম, যে আমাকে ভাড়া দিয়েছিলেন তার নাম ছিল ‘শুরুর’, এরপর আমরা তালুকান এলাকায় গেলাম। আর, এভাবেই আমাদের আন্দোলন শুরু হল, আপনাদের মনে যদি অন্য কোন চিন্তা উঁকি দিয়ে থাকে তাহলে সেগুলো ঝেড়ে ফেলুন !

এরপর আমরা এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে দেখা সাক্ষাত শুরু করলাম, ছাত্রদের যে সকল হালাকা (স্টাডি সার্কেল) ছিল সেগুলোতে যেতাম, একদিনের ঘটনা, সেদিন সকাল বেলায় আমরা একটি স্টাডি সার্কেলে যাওয়ার পর দেখলাম সেখানে ১৪ জনের মতন ছাত্র অবস্থান করছে, এরপর আমি তাদেরকে একত্রিত করলাম আমার চারপাশে, আর বললাম, “আল্লাহর দীন এখন মানুষের পায়ের নিচে, মানুষ প্রকাশ্যে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা করছে, খারাপ কাজ করছে, আর অপরদিকে যারা দীন মেনে চলার চেষ্টা করছে তারা তাদের দীনকে গোপন করে আছে, আর অসৎ লোকেরা পুরো এলাকায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে আছে, তারা মানুষের সম্পদ চুরি করে, রাস্তায় তারা মানুষের ইজ্জত হানি করে, খুন করে, এমনকি যদি কারো মরা লাশ রাস্তার উপর পড়েও থাকে, তাহলে মানুষ নির্বিকার চিত্তে তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যায়, গাড়ি চালিয়ে চলে যায় আর দেখে রাস্তার উপর একটা মরা পড়ে আছে, এমনকি কোন লোক যে এসে লাশটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাফন করবে তাও খুঁজে পাওয়া যায় না”।

আমি তাদেরকে আরও বললাম, “এই রকম জরুরী অবস্থার মধ্যে শুধুমাত্র পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকা সম্ভব না, চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব না, আর এই সমস্যাগুলো স্লোগান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব না, যার পিছনে কোন সমর্থন নেই। আমরা, তালেবে ইলম (ইলমের ছাত্ররা), এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে চাই। যদি তোমরাও সত্যি সত্যি চাও আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করতে, তাহলে আমাদের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ততা থেকে অবসর নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আর আমি তোমাদেরকে খুলে বলছি, একটা মানুষও আমাদেরকে একটা পয়সা দিয়ে সাহায্য করার ওয়াদা করেনি, তাই তোমাদের এরকম মনে করার কোন কারণ নেই, আমরা আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করব আর বিনিময়ে অন্য কেঊ আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। বরং, মানুষের কাছ থেকেই অনুরোধ করে আমাদের নিজেদের খাদ্য ও সাহায্য চেয়ে নিতে হবে”।
আমি বলেছিলাম, “এটা একদিনের কাজ নয়, এক সপ্তাহ , এক মাস কিংবা এক বছরের কাজও নয়, বরং এতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তোমরা কি সেটা করতে তৈরি আছ নাকি না ?”
“গ্রীষ্মের সেই দিনগুলো ছিল খুব গরমের, মনে হতো যেন কালো রঙয়ের কেটলীতে কেউ পানি গরম করছে , আর আমি তাদেরকে উৎসাহিত করতে লাগলাম আর বলেছিলাম, ‘আজ এই রকম পরিস্থিতিতে তোমরা নিজ নিজ কেন্দ্রে বসে থাকতেই বেশি পছন্দ করছো ! অথচ তারা সরাসরি আল্লাহর দীনের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আর আমরা কিনা দাবী করছি আমরা আল্লাহর দীনের লোক! শরীয়াহর ছাত্র, অথচ আমরা শরীয়াহর সমর্থনে কোন কাজ করছি না” !

তাদেরকে আমি বললাম, “আমরা যদি কোন একটি এলাকা জয় করতে পারি, তাহলে সেটি রক্ষা করব, আর সেই অবস্থায় কেউ এ ধরণের কথা বলো না, হায় এখন কোন পড়ার ব্যবস্থা নেই, টাকা পয়সার অভাব, অস্ত্র নেই…; কাজেই তোমরা বলো তোমরা কি এই কাজগুলো করতে তৈরি আছো ?”
এরপর সেই চৌদ্দ জনের মাঝে একজনও খুঁজে পাওয়া গেল না, যে এই সকল কাজ করতে তৈরি আছে, তারা বলল, ‘জুমার দিনে হয়তো আমরা এই কাজগুলোর কিছু কিছু কাজ করতে পারি’, উত্তর শুনে আমি বললাম, “তাহলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে কে এই কাজগুলো করবে?”
আমি আল্লাহকে আমার সাক্ষী মেনে বলছি, এটাই ছিল বাস্তবতা, আর আমি যাবতীয় ইজ্জতের মালিক আল্লাহর সামনে শেষ বিচারের দিনে এই ঘটনার সাক্ষ্য দিব।

আমাদের এই আন্দোলন ছিল আল্লাহর উপর খাঁটি তাওয়াক্কুলের একটি ফলাফল, কেননা সেদিন যদি আমি ঐ কয়েকজন ছাত্রের উপর ধারণা করে বাকি মাদ্রাসা, স্টাডি সার্কেলের প্রতিও একই রকম ধারণা করে বসে থাকতাম, তাহলে হয়তো আমি নিজেও আমার পড়ালেখায় মন দিতাম, মাদ্রাসায় ফেরত যেতাম। কিন্তু আমি আমার নিজের উপর আল্লাহর জন্যে যে শপথ করেছিলাম তা পূর্ণ করার দিকে মন দিলাম, আমি যে শপথ নিয়েছিলাম তা পূর্ণ করেছি, আর আল্লাহও আমাকে সেইভাবেই চালিত করেছেন যেমনটা আজকে আপনারা দেখছেন। এরপর আমি আরেকটি পাঠশালাতে গেলাম, সেখানে প্রায় সতের জন ছাত্র ছিল, তো আমি তাদেরকে বিষয়টা উপস্থাপন করলাম যেভাবে প্রথম হালাকাতে আমি উপস্থাপন করেছিলাম (যারা ছিল তালেবে ইলম বা ইলমের ছাত্র তথা মাদ্রাসার ছাত্র), এবারে এই হালাকার সতের জনের সবাইকেই পাওয়া গেল যারা আমাদের প্রস্তাবে আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করতে রাজী ছিল।

তারা প্রত্যেকেই ছিল যেন একটি জাতি সমতূল্য, তাদের মাঝে যুবক-বৃদ্ধ কোন পার্থক্য ছিল না, শিশু কিংবা যুবক, আর না নারী না পুরুষের উপর ভিত্তি করে কোন পার্থক্য ছিল, বরং এই (আল্লাহর দীনের) কাজটি ছিল আল্লাহ আমাদের যে ইলম জ্ঞান দান করেছেন তার উপর। তাই এ কাজের শুরু থেকেই আমাকে একের পর এক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এরপর আমরা যে একটি মোটর সাইকেল ভাড়া করেছিলাম, সেটিতে চড়ে একের পর এক মাদ্রাসা, স্কুল ও স্টাডি সার্কেলে ভ্রমণ করতে লাগলাম আসরের সালাতের সময় হওয়া পর্যন্ত । আর সে সময় দেখা গেল তিপ্পান্ন জন লোক আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে কাজের জন্য তৈরি আছে। এরপর আমি আমার মাদ্রাসায় ফেরত আসলাম আর তাদেরকে বললাম, “আগামীকাল সকালে এসো”, কিন্তু তারা রাতের বেলায় সবাই একসাথে সানয সার’এ এসে হাজির হল, আর এটাই ছিল শুরু।

আমাদের আইডিয়ার বয়স চব্বিশ ঘণ্টা পার হবার আগেই আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেল। আর আমার একজন বন্ধু তাদের সালাতে ইমামতি করল, ফযরের সালাতে ইমামতি করার পর সেখানে উপস্থিত একজন বলল, “আজকে রাতে আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম, আমি দেখলাম ফেরেশতারা সানয সার’এ প্রবেশ করছে, আর কি কোমল ছিল তাদের হাতের পরশ, তাই আমি তাদেরকে অনুরোধ করলাম যেন তারা আমার মুখমণ্ডলে বরকতের জন্য মাসেহ করে দেয়”।

পরদিন সকাল দশটার দিকে, আমরা ‘আল-হাজ বিশর’ থেকে দুটা গাড়ি চেয়ে নিলাম, তিনি একজন এলাকার ব্যবসায়ী, তিনি আমাদেরকে দুটি গাড়ি দিলেন, একটা ছোট কার, আরেকটা বড় কার্গো ট্রাক। এরপর আমরা সব ছাত্রদের “কাশক নুখুদ” এলাকার দিকে সরিয়ে নিলাম, এরপর বাদবাকি অন্যান্যরাও আমাদের সাথে যোগ দিল। আর যখন একসাথে অনেক লোক জমায়েত হল, আমরা লোকদের কাছ থেকে অস্ত্র ধার করলাম, আর এভাবেই শুরু হয়েছিল আমাদের প্রতিরোধ আন্দোলন, যেভাবে আজকে পর্যন্ত তা চলে আসছে…” তাঁর বক্তব্যের শেষ- আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন, বিজয় দান করুন এবং মুজাহিদিনদের সাহায্য করুন। আমিন।
হ্যাঁ, এটাই ছিল আন্দোলনের সূত্রপাত যতক্ষণ না আমেরিকা ইসলামিক আমিরাতের উপর হামলে পড়ল। যখন আমেরিকা এই ইসলামিক রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তারা ইতিহাসকে যেন পালটে দিল, যেন তারা সাম্প্রতিক অতীতের এই বাস্তবতাকেও পালটে দিতে চাইল। ‘তালাবাহ’ দের নাম দেয়া হল বিদেশী এজেন্ট, পাকিস্তানী ইন্টিলেজেন্সের দেশীয় রক্তপিপাসু দোসর, একদল লুটেরা, হাইওয়ে ডাকাত, খুনী যারা কিনা যমীনে নিজেদের কর্তৃত্ব ও অনাচার প্রতিষ্ঠা করতে চায় !!!

আর কত সহস্র বই, বিশ্লেষণ, অভিযোগ, ধোঁকা, চক্রান্ত ইত্যাদি করা হল এই ইসলামিক ইমারাহ’র বিরুদ্ধে যা চায় শুধুমাত্র ইসলাম। এই বইগুলো লাইব্রেরী স্থান নিয়েছে, বইয়ের অক্ষরগুলো যেমন কালো যারা এগুলো লিখেছে তাদের অন্তরগুলোও তেমনি কালো। মিথ্যা, অতিরঞ্জন, প্রতারণা, এবং বিশুদ্ধ নির্বুদ্ধিতা যার কোন ভিত্তি নেই, এদের কোন স্থিতিশীল অবস্থান নেই, যেমন বাতাসে একটা গাছের ডাল দোল খায় কিংবা একটা পালক ভেসে বেড়ায় এরাও তেমনি ভাসমান, পরজীবি।

আর এখন যারা কাছে কিংবা দূরে যেখানেই আছে, তারা জানেন, তালাবাহরা কোনদিনই পাকিস্তানী ইন্টিলিজেন্স এর খেলনা ছিল না। এখন আমেরিকা এবং পাকিস্তান সরকার উভয়েই তাদের দিকে এক তীরে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করছে। আর এখন তালাবাহ সারা দুনিয়ার কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে-যে, তারাও রাজনীতি বুঝে, তারা আমেরিকানদের ট্রিকস এর ফাঁদে পড়ে না, আরব কিংবা নন আরব মুনাফিকদের ফাঁদে পড়ে না, বাকি সারা দুনিয়ার মানুষের ফাঁদেও না।

আমরা পুনরায় ফেরত যাচ্ছি সেই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহের দিকে,
“কান্দাহারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগল, দলে দলে তালেবে ইলম’দের বহর আসতে লাগল, কান্দাহারের সীমানাবর্তী দক্ষিণ পশ্চিম প্রদেশগুলো থেকে জনসাধারণ আসতে লাগল, তারাও এই তালেবে ইলমদের কাছে অনুরোধ জানাল যেন তাদের প্রদেশের কর্তৃত্ব নেয়া হয় এবং সেখানেও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারা সেই প্রদেশগুলোতে কর্তৃত্ব ও শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সহায়তা করতে লাগলেন। আর এভাবেই, ‘তালিবান’- ‘তালেব’ শব্দটির পশতু বহুবচন, যার অর্থ ইসলামী শরীয়াহ’র ছাত্রবৃন্দ- আফগানিস্তানের এক পঞ্চমাংশ অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল, কোন ধরণের লড়াই ছাড়াই, বরং এখানে মানুষের নিরাপত্তা কামনা ও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছাই ছিল প্রধান শক্তি।
আলেম, মৌলভী, মোল্লাহদের সামাজিক মর্যাদার কারণে; শরীয়াহ ইলমের ছাত্রদের প্রতি মানুষের সম্মানবোধের কারণে কোন রকম বড় বাধা ছাড়াই তালাবাহরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। উত্তরের প্রদেশ, পূর্বে সবদিকে, আর কাবুলের শাসক রব্বানী এর কাছে এই খবর পৌঁছেছিল যে, তার প্রতিদ্বন্দী হিকমাতায়ার এর লোকেরা নিজেদের কাবুল থেকে পৃথক করে নিয়েছে, তাই তিনি তালাবাহদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোন অফিসিয়াল অবস্থান ঘোষণা করেননি বরং তিনি শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সাহায্য করেন যেখানে মানুষের কাজের জবাবদিহিতা আছে। কিন্তু হিকমাতায়ার তার ফোর্সদের আদেশ করেন যেন তারা তালাবাহদের কাছে আত্মসমর্পণ না করে। তাই গযনী এলাকাতে কিছু সংঘর্ষ হল, এরপর উত্তর দিকে এভাবে কাবুলের দিকে একের পর এক এলাকা প্রায় উল্লেখযোগ্য কোন লড়াই ছাড়াই পতন হতে লাগল। এমনকি, বিভিন্ন দল গোষ্ঠী, যেমন চোর হাইওয়ে ডাকাত দল এরা পর্যন্ত শরীয়াহ ইলমের তালাবাহ বা ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দ্বন্দে ভুগতে লাগল।

অন্যান্য দল যেমন, ‘ইউনুস খালিস’ এরপর ‘হাক্কানী’ ফোর্স বাতকিয়াতে,খোস্তে তাদের ভূমি সমর্পণ করল, সায়াফে অধিকাংশ ফোর্স লড়াই থেকে বিরত থাকলো, নানকারহার এর রাজধানী জালালাবাদ এর লোকজন যখন তালাবাহদের সামনাসামনি দেখল, তাদের শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার কথা জানলো, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহিয়ানিল মুনকার এর কথা জানতে পারল, তাদের নিরাপত্তা, হাইওয়ে চোর ডাকাত নিধনের কথা ইত্যাদি জানতে পারল তারাও তালাবাহদের সমর্থনে এগিয়ে এল।
এরপর তালাবাহরা কাবুলের কাছাকাছি পৌঁছে গেল, সেখানে একটি সাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। ১৫০০ আলেমের উপস্থিতিতে ৩১ মার্চ হতে ৩রা এপ্রিলের সেই বৈঠকে মোল্লাহ মুহাম্মদ ওমর কে আনুষ্ঠানিকভাবে তালাবাহদের আমির নিযুক্ত করা হল এবং উপাধি প্রদান করা হল ‘আমির আল-মুমিনিন’, আর সেদিন থেকেই তালাবাহদের কাছে শরয়ী আমির হিসেবে তিনি গৃহীত হয়ে আসছেন আর তাদের মতে তাকে একজন খলীফার যাবতীয় দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

তালাবাহরা কাবুলের সীমান্তে পৌঁছে গেলেন আর রব্বানীর কাছে কিছু অনুরোধ নিয়ে গেলেন যার মধ্যে প্রধান চারটি হচ্ছে-
১-শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে
২- সরকার হতে কমুনিষ্ট ও তাদের অনুসারীদের অপসারণ করতে হবে
৩- স্টেট ভবন হতে নারীদের অপসারণ করতে হবে
৪-দুর্নীতি, পতিতালয়, সিনেমা, গান-বাজনা, অশ্লীল ভিডিও ইত্যাদি নির্মূল করতে হবে
কাবুলের শাসক রব্বানী তালাবাহদের সাথে আলোচনা করার জন্য দূত পাঠাতে বললেন, তাই তারা আলেমদের দূত হিসেবে প্রেরণ করলেন, কিন্তু তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফোর্সদের দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হলেন, এমনকি তারা তাদের অস্ত্র সোপর্দ করবেন, মারামারি বন্ধ করবেন আর আলোচনা শুরু করবেন এই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও তারা প্রেরিত দূতদের একটি অংশকে হত্যা করে আর বাকীদের ফেরত পাঠায়। যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াইশ জন। এরপর, এ ধরণের বিশ্বাসঘাতকতার পরে তালাবাহদের পক্ষ হতে কাবুল আক্রমণ করা ছাড়া আর কোন পথই খোলা রইল না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৬তম রজনীতে কাবুলের পতন হল।
তালাবাহরা ১৯৯৭ সালে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল জয় করল, আর বামিয়ান- আফগানিস্তানে রাফেদিদের কেন্দ্র-এর পতন হল ১৯৯৮সালে, আর এর পূর্বে কায়ান উপত্যকা-যার নিয়ন্ত্রণে ছিল (শিয়া) আগা খানি ইসমাইলী সৈন্যরা-এরও পতন হল। আর এখানে তালেবানেরা যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গনীমতের মাল হিসেবে লাভ করল তা গণনা করা কোন সহজ কাজ ছিল না। আর বলা হয়ে থাকে আহল সুন্নাহ গত ৮০০ বছরে এই উপত্যকায় কখনো প্রবেশ করেনি।

আর এভাবেই, মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে তালাবাহরা আফগানিস্তানের ৯৫ ভাগ এলাকাতে নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা করতে পারল-যার শুরু হয়েছিল সেই সেদিনের মুল্লা মুহাম্মদ ওমর-আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন-এবং তাঁর ভাইদের একটি অন্যায়ের প্রতিবাদের থেকে, যখন তারা একতাবদ্ধ হয়েছিলেন একদল মুসলিম নারীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্যে যাদেরকে অপহরণ করেছিল কিছু চোর আর হাইওয়ে ডাকাতদল।


হুসাইন বিন মাহমুদ
২৯ জিলকদ, ১৪২৬

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

শিয়ারা কী কখনো ইসলাম ও মুসলিমের পক্ষাবলম্বন করে প্রতিরোধ করেছে.....?

রাফেযীরা সর্বদা মুসলিম উম্মার পিঠে ছুরি ও বিষাক্ত বর্শার মতই ছিল, এখনো আছে। খ্রিস্টানরা যখন কোনো ইসলামি  রাষ্ট্রকে পদানত করতে চেয়েছে তাদেরকে ব্যাবহার করেছে। আমরা সকল রাফেযীদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি: আমাদেরকে একজন শিয়া নেতার নাম বল, যে কোনো একটি মুসলিম রাষ্ট্র বিজয় করেছে!!
  • উম্মতে মুসলিমার সাথে শিয়াদের কতক গাদ্দারি:
এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, শিয়ারা তাদের ধর্মীয় কেন্দ্র ‘কুম’ ব্যতীত কাউকে আনুগত্য প্রদান করে না। তারা তেহরান সরকার ব্যতীত কারো সাথে রাজনৈতিক সখ্যতা গড়ে না। শিয়া নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা যারা জানে, তাদের নিকট বিষয়গুলো স্পষ্ট।[1]
ইয়াহূদী এরিয়েল শেরুন স্বীয় ডাইরিতে বলেন: “দীর্ঘ ইতিহাসে কখনো দেখিনি শিয়াদের সাথে ইসরাইলের শত্রুতা রয়েছে”।[2]
এ থেকে আমরা উত্তর পাই যে, কেন ইসরাইল হিযবুল্লাহর পিছু নেয় না, যেরূপ পিছু নেয় হামাস ও অন্যান্য ইসলামি সংগঠনের। যেমন তারা শায়খ আহমদ ইয়াসিনকে অপহরণ করেছে, ড. আব্দুল আজিজ রানতিসি ও ইয়াহইয়াহ আইয়াশকে গুম করেছে এবং ড. খালেদ মিশআলকে অপহরণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। (কিন্তু তারা কখনো কোনো শিয়া নেতাকে হত্যা করে নি)
শিয়াদের গাদ্দারির আলোচনা আমি দীর্ঘ করব না, বরং তাদের গাদ্দারির দিকে ইশারা করব এবং অনুসন্ধিৎসুর জন্য তার স্থান বাতলে দিব:

১. আমিরুল মোমেনিন আলি ইবনে আবি তালিবের সাথে তারা গাদ্দারি করেছে, ফলে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের তিরস্কার করেছেন ও তাদের কর্ম থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন।[3]

২. হাসান ইবনে আলির সাথে তারা গাদ্দারি করেছে। শিয়ারা তাকে বর্শা মেরেছে ও তার নামকরণ করেছে مذلَّ المؤمنين তথা ‘মোমেনদের অপমানকারী’।

. হুসাইন ইবনে আলির সাথে তারা গাদ্দারি করেছে। তারা তাকে চিঠির মাধ্যমে আহ্বান করে তার হাতে বায়আত করার ঘোষণা দেয়, কিন্তু যখন তিনি আগমন করেন, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ও তাকে হত্যা করে।[4] হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের গাদ্দারির কারণে তাদের উপর বদদোয়া করেন।[5]

 ৪. শিয়া মন্ত্রী আলি ইবনে ইয়াকতিন হারুনুর রশিদের যুগে জেলখানার ছাদ ফেলে ৫০০-সুন্নী মুসলিমকে হত্যা করেছে।[6]

৫. ফাতেমি সরকারগুলো সুন্নত ধ্বংস ও শিয়া মাজহাব প্রচারের ক্ষেত্রে গাদ্দারির আশ্রয় নিয়েছে।[7]

৬. শিয়া কারামাতাহ সম্প্রদায় হাজিদের হত্যা করে তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে।[8]

৭. শিয়া ‘বুওয়াইহী’দের গাদ্দারি ও আহলে সুন্নাহর উপর তাদের জবরদস্তি মূলক আধিপত্য অনেকেরই জানা।[9]

. আব্বাসিয়া খিলাফতের রাজধানী বাগদাদে তাতারিদের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে শিয়া মন্ত্রী আবু তালিব মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আলকামি রাফেযীর সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও গাদ্দারি ঐতিহাসিকদের নিকট প্রসিদ্ধ।[10]


৯.তাতারিরা যখন দামেস্কে প্রবেশ করে, তখন রাফেযীরা তাদের পক্ষ নেয় এবং তাদের অধীনে কাজ করে।[11]
১০. হালাকু যখন হালবে (আলেপ্পো) প্রবেশ করে অনেক মুসলিম হত্যা করে, তখন রাফেযীরা মুসলিমদেরকে হালাকুর নিকট আত্মসমর্পণ ও তার সাথে যুদ্ধ না করার দাবি জানায়।[12]
১১. নাসিরুদ্দিন তুসি রাফেযী খিয়ানত করে আহলে সুন্নাহকে হত্যা করেছে, তাদের সম্পদ দখল করেছে ও তাদের ঐতিহ্যকে নিঃশেষ করেছে।[13]
১২. ইমাম মুজাহিদ সালাহুদ্দিনকে[14] হত্যার পরিকল্পনায় শিয়াদের খিয়ানত ও প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না।[15]
১৩. সালাজেকা সুন্নী সরকারের সাথে শিয়ারা খিয়ানত করেছে ও তাদের বিপক্ষে ক্রুসেডদের সাহায্য করেছে।[16]
১৪. শিয়া দ্বাদশ ইমামিয়াদের লেবাননে আহলে সুন্নার বিরুদ্ধে গাদ্দারি করা ও তাদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের সাহায্য করার ঘটনা প্রসিদ্ধ।[17]
১৫. শিয়া সরকার ইউরোপে খিলাফতে উসমানিয়ার বিজয়কে বয়কট করেছিল। তারা খিলাফতের উসমানিয়ার বিপক্ষে খ্রিস্টানদের সাথে জোট গঠন ও পরামর্শ করেছে।[18]
১৬. শিয়া দ্বাদশ ইমামিয়ারা আরব উপসাগরীয় দেশে খ্রিস্টানদের সাথে মিলে ইরাকের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র করেছে, যা তাদের আলেম সিসতানি ও হাকিম প্রমুখদের মুখের স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত।[19]
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ইরাকে আমেরিকার প্রতিনিধি ‘পল ব্রেমার’ গ্রন্থ عام قضيته في العراق ‘ইরাকে আমার এক বছর’ থেকে ইরাক দখলে শিয়া ইমামিয়া কর্তৃক আমেরিকাকে সাহায্য করা র লোমহর্ষক কাহিনী জানা যায়। তিনি বলেন:
“অনেক শিয়া আমেরিকার উপর অসন্তুষ্ট যে, আমেরিকা এখনো হত্যাযজ্ঞ বন্দ করেনি, এতদ সত্যেও শিয়া নেতৃবৃন্দ, যাদের মধ্যে আয়াতুল্লাহ সিসতানিও আছেন, তাদের অনুসারীদেরকে ইরাককে সাদ্দাম মুক্ত করার আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমেরিকাকে সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরাও তাদের সাহায্য হারানোর ঝুঁকি নিতে পারি না”।
ইরাকে ইসলামি (শিয়া) বিপ্লব পরিষদের সর্বোচ্চ নেতা আব্দুল আজিজ হাকিম সম্পর্কে তিনি বলেন: “আব্দুল আজিজ তার রঙিন চশমা দিয়ে আমার দিকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দৃষ্টি দেন ও বলেন: মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি বলেছেন নতুন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, কারা হবে সে কর্মকর্তা? তার আরবি উপাধি উল্লেখ করে আমি তাকে বললাম: আপনাকে ওয়াদা দিচ্ছি যে, নতুন এ বাহিনীর প্রধান হবে শিয়া। অতঃপর বলেন: নিশ্চয় আমেরিকা তার ওয়াদা পুরোপুরি পূর্ণ করেছে”।
তিনি আরো বলেন: “সিসতানি আমেরিকার সৈন্যদের সাথে একযোগে কাজ করে, কিন্তু সে প্রকাশ্যে আমেরিকার কোনো বাহিনীর সাথে মিলতে নারাজ। আমেরিকার প্রতি তার সাহায্য ও যোগাযোগ অব্যাহত থাকার কারণে প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি তার ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন: “ইরাককে সাদ্দাম মুক্ত করার পর আয়াতুল্লাহ উজমা এক টিভি চ্যানেলে বলেন: তিনি আমেরিকার সাথে কোনো সমঝোতায় যাবেন না। এ কথা শুনে আমিও তাকে কোনো প্রকার চাপ দেইনি, কারণ আমার ইচ্ছা ছিল তার সাথে সাক্ষাত করা, যখন তার সাথে সাক্ষাত করলাম সকল সংশয় দূর হয়ে গেলো। নিশ্চয় সে ইসলাম ও আরব বিশ্বকে ভালো করেই জানে। এ জন্য তার পক্ষে সম্ভব ছিল না দখলদার আমেরিকার সৈন্যদের প্রকাশ্যে সাহায্য করা, এ ক্ষেত্রে ১৯২০ই. সাল ও তার পরবর্তী কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও ছিল। আবার মুকতাদা সদরের ন্যায় উগ্রপন্থীদের থেকেও তার দূরে থাকা জরুরি ছিল। মুদ্দাকথা: আয়াতুল্লাহ আমাদের সাথে কাজ করবে, আর আমরা উভয়ে মিলে নিজেদের স্বার্থ ভাগ করে নিব”।
রাফেযীদের নিফাক ও মুসলিম উম্মার সাথে তাদের প্রতারণার সাক্ষী দেখুন, ‘পুল ব্রেমার’ বলছেন: “যখন আরবি ও পশ্চিমা মিডিয়াগুলো আয়াতুল্লাহ সিসতানি ও আমেরিকার সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দিচ্ছে, তখনো আমি ও আয়াতুল্লাহ সিসতানি প্রতিনিধির মাধ্যমে ইরাকি বিষয়গুলো সুরাহা করতাম, ইরাকে আমেরিকার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তার সাহায্য ও সহযোগিতা বহাল ছিল।
গ্রীষ্মের প্রথম দিকে সব সন্দেহ দূর হয়ে যায়, যখন সে আমাকে চিঠি লিখে জানায় যে, আমি আমার অবস্থান গ্রহণ করেছি আপনাদের সাথে দুশমনির কারণে নয়, বরং আমি আয়াতুল্লাহ বিশ্বাস করি, বাহ্যিকভাবে সম্পর্ককে এড়িয়ে চলে গোপন সম্পর্ক কায়েম রাখা আমাদের উভয়ের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অধিক উপকারী। দখলদার আমেরিকার সাথে যদি প্রকাশ্য সম্পর্ক রাখি, তাহলে আমাদের অনেক উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। যেভাবে অনেক শিয়া ও কমিউনিস্ট সুন্নী আপনাদের সাহায্য করছে। আর শিয়াদের বড় বড় নেতৃবৃন্দ তো আপনাদের সাথে আছেই”
গ্রন্থকার বলেন: এরপরও কি খিয়ানত হতে পারে!
প্রিয়পাঠক, দেখলেন তো, রাফেযীদের বড় আলেম প্রকাশ্যে মানুষকে দেখাচ্ছে আমেরিকা বিরোধী, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে, তারাও তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে নিয়মিতভাবে, কারণ তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য ইরাকের উপর কর্তৃত্ব হাসিল করা ও তার সম্পদকে বণ্টন করে নেওয়া। এ জাতীয় আচরণ শিয়াদের পক্ষে অসম্ভব নয়, তাদের পিতামহ ইবনে আলকামিও এরূপ করেছে, যেমন ইরাকে এ যুগে করেছে আব্দুল মজিদ খুঈ, মুহাম্মদ বাকের হাকিম ও আলি সিসতানি। তারা দখলদার আমেরিকাকে ইরাকে সাহায্য করেছে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশেও তাকে যুদ্ধ করার পথ সুগম করে দিয়েছে। আল্লাহই সাহায্যকারী।

[1] এ কথার স্পষ্ট সাক্ষী হচ্ছে মিসরের প্রেসিডেন্টের বাণী: তিনি ৮/৪/২০০৬ই. তারিখে আরবি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন: শিয়াদের বন্ধুত্ব একমাত্র ইরানের সাথে, তাদের নিজ দেশের সরকারের জন্য নয়। এভাবে শিয়াদের থেকে সতর্ক করেছেন জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সৌদ ফায়সাল।
[2] দেখুন: শারুনের ডাইরি: (পৃ.৫৮৩)
[3] নাহজুল বালাগায় প্রদত্ত আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ভাষণ দেখুন, ড. মুহাম্মদ আবদাহ (পৃ.১৪৮), খুতবা নং: (৬৯)
[4] দেখুন: মুহসিন আমিন রচিত: أعيان الشيعة (পৃ.১/৩২)
[5] দেখুন: মুফিদ রচিত: «الإرشاد»  (২/১১০-১১১)
[6] দেখুন  নিয়ামাতুল্লাহ জাজায়েরি রচিত «الأنوار النعمانية»  (পৃ.২/৩০৮)
[7] এর উদাহরণ অনেক, আরো জানার জন্য দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.৪৭)
[8] এর উদাহরণ অনেক, আরো জানার জন্য দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.৬৩)
[9] এর উদাহরণ অনেক, আরো জানার জন্য দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.৭৩)
[10] এর উদাহরণ অনেক, আরো জানার জন্য দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.৮১), আরো দেখুন: শায়খ সুলাইমান আওদাহ রচিত دور الشيعة في سقوط بغداد على أيدي التتار কিতাব।
[11] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.৯২)
[12] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.৯৭)
[13] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.১০১)
[14] ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ও সালাহুদ্দিন আইউয়ুবি রাহিমাহুল্লাহকে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় করার তৌফিক দান করেছেন, তারা দু’জনই শিয়াদের নিকট কাফের।
[15] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.১০৯)
[16] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.১১৭)
[17] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.১৪৫)
[18] আরো অধিক জানার জন্য দেখুন: «الصفويون والدولة العثمانية»  আলাবি ইবনে হাসান আতরাজি রচিত।
[19] দেখুন ইমাদ হুসাইন রচিত «خيانات الشيعة وأثرها في هزائم الأمة الإسلامية» (পৃ.১৬৭)
________________
মূলঃ হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কী জানেন?
 হিযবুল্লাহ সম্পর্কে কী  1.1 MB    ভাষা:বাংলা
সংকলন:আলী আস-সাদেক
অনুবাদক:সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক:আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
প্রকাশনায়:ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদবর্তমান শিয়া-রাফেযিরা মুসলিম উম্মার ত্রাতা বনেছে, যাদের ধর্ম আহলে বায়তের কথিত মহব্বতে সীমালঙ্ঘন করা, কুরআনুল কারিমে বিকৃতিতে বিশ্বাস করা, সাহাবিদের অভিসম্পাত করা, উম্মুল মোমেনিনদের উপর অপবাদ আরোপ করা, রাত-দিন সাহাবিদের থেকে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেওয়া ও মুসলিম জাতির সাথে প্রতারণা করা। তারা আজও ‘হিযবুল্লাহ’ ও তার মিথ্যা শ্লোগানের আড়ালে মুসলিমদের গালমন্দ করে বিশ্বসভাকে জানান দিচ্ছে যে, তারাই মুসলিম উম্মার ত্রাতা ও অভিভাবক। অনেক নাদান মুসলিমকে আমরা জানি, যারা লেবাননি শিয়া সংগঠন ‘হিযবুল্লাহ’র আসল স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞ, বরং ধোঁকায় লিপ্ত। তাদের কারো অজ্ঞতা এতো প্রকট যে, তারা ‘হিযবুল্লাহ’র প্রধান হাসান নাসরুল্লাকে হিরো জ্ঞান করে, তাকে বাহবা দিয়ে তার মাথায়-হাতে চুমু খায় ও খেতে বলে। তারা হিযবুল্লাহ, হিযবুল্লার উদ্দেশ্য, হিযবুল্লার আকিদা ও নিষ্পাপ  মানুষের রক্তে রঞ্জিত তার কালো ইতিহাস সম্পর্কে চরম অন্ধকারে কোনো সন্দেহ নেই।