রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭

কাযা নামাজ আদায়ে তারতীব রক্ষা কর কি আবশ্যক? কাযা নামজ আদায় করতে হয় এর কোন দলীল আছে কী? ৩/৩


আমি জান্তে চাই যে,
1. কাজা নামাজ আদায়ের এই নিয়মগুলো কি আসলেই সঠিক ?
2. কুরআন বা হাদিসের আলোকে এ নিয়ম গুলোর দলীল অথবা
রেফারেন্স কি ?
3. কুরআন বা হাদিসে যদি না থাকে,তাহলে ইজমার আলোকে
কি এগুলোর রেফারেন্স আছে ?
4. অনেকে বলে থাকেন,কাজা নামাজ বলতে ইসলামে কিছু
নাই,সে ব্যাপারে আপ্নার মতামত কি ?
5. কুরআন,হাদীস অথবা ইজমার আলোকে নিয়মগুলোর ভিত্তি
যদি সঠিক হয়,তবে আমার এই সমস্যার কোন সমাধান আপনার
কাছে জানা আছে কি ?
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
উত্তরঃ ( ১ ও ৫ ) সহেবে তারতীব অর্থাৎ বালেগ হবার পর থেকে
যার জিম্মায় কোন কাজা নামাজ নেই। তার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ ও বেতের নামাজের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
আবশ্যক।(আদ্দুররুল মুখতার-২/৫২৩)
ﻓﻴﺎﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ ‏( 2/523 ‏): ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻔﺮﻭﺽ ﺍﻟﺨﻤﺴﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ ﺃﺩﺍﺀ ﻭﻗﻀﺎﺀ ﻻﺯﻡ ﻳﻔﻮﺕ
ﺍﻟﺠﻮﺍﺯ ﺑﻔﻮﺗﻪ ،
প্রশ্নে বর্ণিত নিয়মগুলো ঠিকই আছে তবে ৫নং নিয়মটা এমন
হবে। কাযা হওয়া নামাজের সংখ্যা ছয়টি হয়ে ষষ্ঠ নামাজের
সময় শেষ হয়ে যায়। তখন আর ধারাবাহিকতা রক্ষা করার
আবশ্যকতা থাকেনা।
ﻓﻲ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ ‏( 2/525 527- ‏) : ﻓﻼ ﻳﻠﺰﻡ ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﺇﺫﺍ ﺿﺎﻕ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺍﻟﻤﺴﺘﺤﺐ ﺣﻘﻴﻘﺔ ..…
‏( ﺃﻭ ﻧﺴﻴﺖ ﺍﻟﻔﺎﺋﺘﺔ ‏) ﻷﻧﻪ ﻋﺬﺭ ‏( ﺃﻭ ﻓﺎﺗﺖ ﺳﺖ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩﻳﺔ ‏) ﻟﺪﺧﻮﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﺣﺪ ﺍﻟﺘﻜﺮﺍﺭ ﺍﻟﻤﻘﺘﻀﻲ
ﻟﻠﺤﺮﺝ ‏( ﺑﺨﺮﻭﺝ ﻭﻗﺖ ﺍﻟﺴﺎﺩﺳﺔ ‏) ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺻﺢ ﻭﻟﻮ ﻣﺘﻔﺮﻗﺔ ﺃﻭ ﻗﺪﻳﻤﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﺘﻤﺪ
আপনি অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছে করে নামাজ কাজা করেন বলে
উল্লেখ করেছেন,যা মোটেও উচিৎ না। হাদীস শরীফে এসেছে,
ﻋﻦ ﺃﻡ ﺃﻳﻤﻦ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﺘﺮﻙ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻣﺘﻌﻤﺪﺍ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻣﺘﻌﻤﺪﺍ ﻓﻘﺪ ﺑﺮﺋﺖ ﻣﻨﻪ ﺫﻣﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻓﻲ ﻣﺴﻨﺪﻩ ، ﺭﻗﻢ : 27364 )
উম্মে আইমান রা.হতে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,তোমরা ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করোনা।
কেননা যে ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করে,আল্লাহ ও তদীয় রাসূল
তার থেকে জিম্মা মুক্ত হয়ে যান। (মুসনাদে আহমদ,হাদীস নং
২৭৩৬৪)
নামাজকে যদি নিজের উপর বোঝা মনে করা হয় তাহলে তা
আদায় করতে অনেক কষ্ট হবে। নামাজকে মাওলা পাকের সাথে
নিজের সাক্ষাৎ মনে করলে কষ্ট অনেক লাঘব হবে। আপনি
এব্যপারে কোন হক্কানী পীর মাশায়েখের সাথে পরামর্শ
করতে পারেন, কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
আরেকটি বিষয় হল, আপনি কাযা করার ভয়ে পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ ছেড়ে দেন যাতে আর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না
হয়। অথচ কারো যদি এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা থাকে
এমতাবস্থায় ছয়টি নামাজের ওয়াক্ত অতিক্রান্ত হয়ে যায়। তখন
আর সে সাহেবে তারতীব থাকেনা। তার জন্য ধারাবাহিকতা
রক্ষা করা আবশ্যক না। তাই আপনার জিম্মায় যদি কোন নামাজ
কাযা থেকে থাকে তাহলে সেগুলো আদাই করা শুরু করুন। যথা
সম্ভব চেষ্টা করবেন নামাজ যেন সময় মত পড়া হয়। কষ্ট হলেও
সময়ের নামাজ সময়ে আদায় করবেন। এই জামানায় কোন নামাজ
কাযা নেই এমন লোকের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য। যারা এই
সৌভাগ্যের অধিকারী আপনার কোন নামজ কাযা না থেকে
থাকলে আপনিও সেই সৌভাগ্যশীলদের মাঝে একজন। আল্লাহ
প্রদত্ব এই নেয়ামতের মূল্যায়ন করা উচিত।
(২ ও ৩ ) নামাজ না পড়ে ছেড়ে দেয়ার কথা আল্লাহর রাসূল ও
তার সাহাবীদের যুগে মানুষ কল্পনাও করতে পারতনা। হাদীস
শরিফে এসেছে,
ﺳﻤﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺇﻥ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻭﺍﻟﻜﻔﺮﺗﺮﻙ ﺍﻟﺼﻼﺓ ‏( ﺭﻭﺍﻩ
ﻣﺴﻠﻢ، ﺑﺮﻗﻢ 82 )
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. হতে বর্ণিত,তিনি
বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছি,একজন মুসলিম ও শিরক-কুফরের মাঝে পার্থক্য হল
নামাজ ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ নামাজ ছেড়ে দেয়া মুসলিম
ব্যক্তিকে কুফর ও শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।(সহীহ
মুসলিম,হাদীস নং ৮২)
ঘটনা চক্রে যদি কখনো কারো নামাজ কাজা হত স্মরণ হবার
সাথে সাথেই পড়ে নিতেন। কখনো দেরী করতেন না।
ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যকতার ব্যাপারে স্বয়ং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের
আমল পাওয়া যায়।
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺎ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺤﺒﺴﻨﺎ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻈﻬﺮ
ﻭﺍﻟﻌﺼﺮ ﻭﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻭﺍﻟﻌﺸﺎﺀ ﻓﺎﺷﺘﺪ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻲ ﻓﻘﻠﺖ ﻓﻲ ﻧﻔﺴﻲ ﻧﺤﻦ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺄﻣﺮ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻼﻻ ﻓﺄﻗﺎﻡ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻨﺎ ﺍﻟﻈﻬﺮ
ﺛﻢ ﺃﻗﺎﻡ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻨﺎ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﺛﻢ ﺃﻗﺎﻡ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻨﺎ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﺛﻢ ﺃﻗﺎﻡ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻨﺎ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ ﺛﻢ ﻃﺎﻑ ﻋﻠﻴﻨﺎ
ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻋﺼﺎﺑﺔ ﻳﺬﻛﺮﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻏﻴﺮﻛﻢ ﻭﻗﺘﻬﺎ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﺭﻗﻢ621 )
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাথে ছিলাম। যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এই চার ওয়াক্তের
নামাজ আদায় করা হতে আমরা বাঁধাপ্রাপ্ত হলাম। এটা আমার
নিকট কষ্টদায়ক হলো। মনে মনে ভাবলাম আমরা তো রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থেকে আল্লাহর
পথে জিহাদ করছি (এরপরও কি আমাদের এরূপ দুর্ভাগ্য?) তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রা.)
কে ইকামত দিতে আদেশ করলেন। ইকামত বললে আমাদের নিয়ে
যোহরের সালাত আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে আসরের
নামাজ আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে মাগরিবের নামাজ
আদায় করলেন। পুনরায় ইকামত বললে ইশার নামাজ আদায়
করলেন। তারপর আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেনঃ ভূ-পৃষ্ঠে
তোমাদের ছাড়া এমন কোন জামাত নেই যারা আল্লাহ
তাআলাকে স্মরণ করে। (নাসায়ী শরীফ;৬২১ নং হাদীস)
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﻋﻦ ﻗﺎﻝ ﺷﻐﻠﻨﺎ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻮﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺨﻨﺪﻕ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻈﻬﺮ ﺣﺘﻰ ﻏﺮﺑﺖ ﺍﻟﺸﻤﺲ
ﻭﺫﻟﻚ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺘﺎﻝ ﻣﺎ ﻧﺰﻝ ﻓﺄﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ }ﻭﻛﻔﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺍﻟﻘﺘﺎﻝ { ﻓﺄﻣﺮ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻼﻻ ﻓﺄﻗﺎﻡ ﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻈﻬﺮ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻟﻮﻗﺘﻬﺎ ﺛﻢ
ﺃﻗﺎﻡ ﻟﻠﻌﺼﺮ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﻭﻗﺘﻬﺎ ﺛﻢ ﺃﺫﻥ ﻟﻠﻤﻐﺮﺏ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ
ﻭﻗﺘﻬﺎ ‏(ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ، ﺭﻗﻢ 660 )
হযরত আবু সাইদ রা. হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে
মুশরিকরা আমাদের যোহরের নামাজ থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া
পর্যন্ত বিরত বিরত রেখেছিল। সেটা যুদ্ধের সময় সালাতুল খওফ
সম্পর্কিত আযাত অবতীর্ণ হবার আগের ঘটনা। তারপর আল্লাহ
তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “যুদ্ধে মুমিনদের জন্য
আল্লাহই যথেষ্ট”। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ ২৫)
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল
রা.কে ইকামত দেয়ার আদেশ করেন। তিনি যোহরের সালাতের
ইকামত দেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নামাজের আসল ওয়াক্তে আদায় করার মত যোহরের কাযা
নামাজ আদায় করেন। পরে আসরের জন্য ইকামত বলা হয়। নবী
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নামাজের
আসল ওয়াক্তের মত আসরের কাযা নামাজ আদায় করেন। তারপর
মাগরিবের আযান দেয়া হয় এবং তা নির্ধারিত সময়ে আদায়
করার মত আদায় করেন। (নাসায়ী শরিফ;৬৬০ নং হাদীস)
হাদীসের বহু প্রসিদ্ধ কিতাবে এ ঘটনার উল্লেখ আছে। এই
হাদীসে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও সাহাবায়ে কেরামের নামাজ ছুটে যাবার পর তারা সকলে
ধারাবাহিক ভাবে ছুটে যাওয়া নামাজ পড়েছেন। ২য় হাদীস
দ্বারা এটাও বুঝা যাচ্ছে সূর্য ডুবার পরও পূর্বের কাযা নামাজ
পড়ে এরপর মাগরিবের নামাজ পড়েছেন। এই হাদীস থেকেই
গবেষক মুজতাহিদ ইমামগণ ছুটে যাওয়া নামাজে ধারাবাহিকতা
রক্ষা করা আবশ্যক, একথা বলে থাকেন।
হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ উলামায়ে
কেরামের নিকটই নামাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক।
ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ ﺍﻟﻜﻮﻳﺘﻴﺔ ‏( 164 /11 ‏( ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﻓﻲ ﻗﻀﺎﺀ ﺍﻟﻔﻮﺍﺋﺖ: ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻣﻦ
ﺍﻟﺤﻨﻔﻴﺔ ﻭﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴﺔ ﻭﺍﻟﺤﻨﺎﺑﻠﺔ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺑﻮﺟﻮﺏ ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻔﺎﺋﺘﺔ، ﻭﺑﻴﻨﻬﺎ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ
ﺍﻟﻮﻗﺘﻴﺔ ﺇﺫﺍ ﺍﺗﺴﻊ ﺍﻟﻮﻗﺖ. ﻓﻤﻦ ﻓﺎﺗﺘﻪ ﺻﻼﺓ ﺃﻭ ﺻﻠﻮﺍﺕ ﻭﻫﻮ ﻓﻲ ﻭﻗﺖ ﺃﺧﺮﻯ، ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺃﻥ ﻳﺒﺪﺃ
ﺑﻘﻀﺎﺀ ﺍﻟﻔﻮﺍﺋﺖ ﻣﺮﺗﺒﺔ ،
(৪) কাযা নামাজ বলতে ইসলামে কিছুই না থাকলে
রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
সাহাবাগণ (রাযি.) কেন কাযা নামাজ আদায় করলেন? তাদের
সকলের আমলও কী ইসলামের কোন বিষয় হিসেবে গণ্য হবেনা?
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﻧﺒﻰ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ‏« ﻣﻦ ﻧﺴﻰ ﺻﻼﺓ ﺃﻭ ﻧﺎﻡ ﻋﻨﻬﺎ
ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻬﺎ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺫﻛﺮﻫﺎ ‏». ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ، ﺭﻗﻢ597 ، ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﺭﻗﻢ 584 )
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে
ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে থাকে, তার
কাফফারা হল যখন তার নামাজের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায়
করা। (সহিহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং
৫৮৪)
সহীহ মুসলিমের অন্য এক হাদীসে এসেছে,
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺭﻗﺪ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﻭ
ﻏﻔﻞ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﻠﻴﺼﻠﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺫﻛﺮﻫﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﻗﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻟﺬﻛﺮﻱ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ، ﺭﻗﻢ684 )
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যখন
তোমাদের কেউ নামাজ ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা নামাজ থেকে
গাফেল হয়ে যায় তো যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা
আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ﺃﻗﻢ
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻟﺬﻛﺮﻱ “আমাকে স্মরণ হলে নামাজ আদায় কর”[সূরা তহাঃ ১৪]
।(হাদীস নং ৬৮৪)
এই হাদীস গুলো দিয়ে বুঝা যাচ্ছে নামাজ কাযা হয়ে গেলে তা
আদায় করে নিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজে তা করেছেন ও করতে বলেছেন, সাহাবীরাও
তা করেছেন। এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল কুরআনের আয়া্তাংশটি উল্লেখ করেছেন,
যাতে বুঝাগেল এই আয়াতেও কাযা নামাজ আদায় করার
বিধানটি অন্তরভুক্ত আছে। অর্থাৎ ‘আমাকে স্মরণ হলে নামাজ
আদায় কর’। যখন এই ফরজ দায়িত্বের ব্যাপারে বোধোদয় হবে
তখন তা আদায় করা তার জন্য অত্যাবশ্যক। আর এক জন মুমিন
কখনো আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল থাকতে পারে না। তাই
কাযা নামাজ আদায় করে নেয়া একজন মুমিনের কর্তব্য।
ইবনে আব্দুল বার এব্যপারে উম্মতের ইজমা নকল করেছেন,
ﻓﻲ ﺍﻻﺳﺘﺬﻛﺎﺭ ‏( /1 ‏(302 303- ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺪﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺼﻠﻰ ﻭﺗﻘﻀﻰ ﺑﻌﺪ ﺧﺮﻭﺝ ﻭﻗﺘﻬﺎ
ﻛﺎﻟﺼﺎﺋﻢ ﺳﻮﺍﺀ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺇﺟﻤﺎﻉ ﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺃﻣﺮ ﻣﻦ ﺷﺬ ﻣﻨﻬﻢ ﺑﺎﻟﺮﺟﻮﻉ ﺇﻟﻴﻬﻢ ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﺨﺮﻭﺝ
ﻋﻦ ﺳﺒﻴﻠﻬﻢ ﻳﻐﻨﻲ ﻋﻦ ﺍﻟﺪﻟﻴﻞ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ …………
ফরজ রোজার মত ফরজ নামাজেরও সময় অতিবাহিত হবার পর
কাযা করতে হয়। এ ব্যাপারে যদিও উম্মতের ইজমাই দলিল
হিসেবে যথেষ্ট।যার অনুসরণ করা ঐ সকল বিচ্ছিন্ন মতের
প্রবক্তাদের জন্যও অপরিহার্য ছিল- তারপরও কিছু দলিল
উল্লেখ করা হল।………(আল ইসতিযকার ১/৩০২-৩০৩) এরপর তিনি
হাদীসের দলীল উল্লেখ করেন।
এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল কুরআন সুন্নাহ ও ইজমার আলোকে
কাযা নামাজের বিষয়টি সুপ্রমানিত। এর অস্বীকার করার কোন
সুযোগ নেই। আশা করি “কাজা নামাজ বলতে ইসলামে কিছু নাই”
এরকম উদ্ভট কথা বিশ্বাস করার আর কোন যৌক্তিকতা নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক।
আমীন।
প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীঃ
১) আল কুরআন, সূরা তহা, আয়াতঃ ১৪
২)আল কুরআন, সূরা আহযাব:আয়াতঃ ২৫
৩)সহিহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭
৪)সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২, ৫৮৪ ও ৬৮৪
৫)সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৬২১ও ৬৬০
৬)মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৩৬৪
৭)আল ইসতিযকার ১/৩০২-৩০৩
৮)আদ্দুর রুল মুখতার ২/৫২৩ ও ২/৫২৫-৫২৭
৯)আল মাওসূয়াতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়া ১১/১৬৪
১০) ফাতাওয়া তাতারখানিয়্যা ২/৪৪০-৪৪৫
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
উত্তর প্রদানে .
মাওলানা মুহাম্মাদ আরমান সাদিক.
ইফতা বিভাগ .
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া.
সত্যায়ন ও সার্বিক তত্তাবধানে
মুফতী হাফীজুদ্দীন দা. বা.
.প্রধান মুফতী
জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া

ইমামের পেছনে নামাজ পড়লে কী কোনো সূরা পড়তে হবে?

বিশেষজ্ঞের উত্তর: ইমাম যখন নামাজে আওয়াজ দিয়ে
কেরাত পড়েন তখন মোক্তাদির শুধু কেরাত শুনলে চলবে (ফজর,
মাগরিব, এশার নামাজে)। আর নীরবে কেরাত শোনার সময়
মোক্তাদি শুধু সূরা ফাতিহা আস্তে আস্তে পড়বেন। এরপর আর
কোনো সূরা পড়তে হবে না। নামাজের অন্য কাজ ইমামের মতই
করবেন। তাকবির দিয়ে নামাজ শুরু করে ছানা পড়া, রুকু
সিজদার দোয়া, তাশাহুদ, দুরুদশরীফসহ সকল কিছুই মোক্তাদির
করতে হবে ইমামকে অনুসরণ করে। ইমামের আগে করা যাবে না।
জামাতে নামাজ পড়াকালীন কোনো রাকাআতের রুকুতে
গিয়ে যদি এক তাসিবহ পরিমাণ সময় আপনি পান তাহলে ঐ
রাকাআতকে এক রাকাআত হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ- আপনি
বাহির থেকে এসে দেখলেন ইমাম সাহেব রুকুতে গেছেন,
আপনিও তার সাথে রুকুতে গিয়ে একবার তাসবিহ পাঠ করতে
পারলেন। এরমধ্যে ইমাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে
আপনি পুরো এক রাকাআত পেয়ে গেলেন।
এখন আপনি যদি নামাজের প্রথম রাকাআত মিস করেন তাহলে
ইমাম সালাম ফিরানো শেষ করার পর দাঁড়িয়ে এক রাকাআত
নামাজ আদায় করবেন। এই এক রাকাআত নামাজে আপনি সূরা
ফাতিহা ও অন্য সূরা বা আয়াত পড়বেন। রুকু করবেন, সিজদা
করবেন এরপর বসে তাশাহুদ, দুরুদ ও দোয়া পড়ে সালামের
মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।
প্রথম দুই রাকাআত না পেলে আপনি দুই রাকাআত নামাজ
ফাতিহা ও সূরা মিলিয়ে পড়বেন। আগের মতো রুকু সিজদা
করবেন। দ্বিতীয় রাকাআতের সিজদার পর তাশাহুদ ইত্যাদি
পড়ে নামাজ শেষ করবেন।
তিন রাকাআত নামাজ ছুটে গেলে:
প্রথম এক রাকাআত সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলিয়ে রুকু
করবেন। দুই সিজদার পর বসে যাবেন। এরপর তাশাহুদ পড়ে
দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়াবেন। পরে আবার সূরা
ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়ে রুকু করবেন। দুই সিজদাহ দিয়ে
দাঁড়িয়ে যাবেন। এরপর শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে আরো এক
রাকাআত নামাজ পড়ে শেষ বৈঠকের মাধ্যমে নামাজ শেষ
করবেন।
আর যদি চার রাকাআত নামাজ মিস করেন। অর্থাৎ- আপনি
জামাতে শরিক হয়েছেন চার রাকাআতের রুকুর পর। এতে
আপনি ইমামের সাথে জামাতে যুক্ত হলেন। কিন্তু চার
রাকাআত নামাজ আপনার ছুটে গেছে। এই অবস্থায় ইমাম
সালাম ফিরানোর পর পুরো চার রাকাআত নামাজ আপনি পড়ে
নিবেন। প্রথম দুই রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা এবং
শেষ দুই রাকাআতে শুধু সূরা ফাতিহা দিয়ে নামাজ পড়বেন।
মাগরিবের প্রথম দুই রাকাআত ছুটে গেলে করণীয়:
ইমাম নামাজ শেষ করলে আপনি দাঁড়িয়ে প্রথম এক রাকাআত
সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলিয়ে রুকু করবেন। এরপর দুই
সিজদাহ করার পর দাঁড়িয়ে যাবেন না। তাশাহুদ পড়ে তারপর
দাঁড়াবেন এবং আবারো সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলিয়ে
পড়ে আরো এক রাকাআত নামাজ পড়বেন এবং শেষ বৈঠক
দিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
এখানে চার রাকাআত ওয়ালা নামাজের প্রথম দুই রাকাআত
ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় এবং তিন রাকাআত ওয়ালা
(মাগরিব) নামাজের প্রথম দুই রাকাআত ছুটে যাওয়া নামাজ
আদায়ের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। মাগরিবের ছুটে যাওয়া
দুই রাকাআতেই বৈঠক দিতে হয়। প্রথম রাকাআতের পর শুধু
তাশাহুদ পরের রাকাআত শেষে শেষ বৈঠকে দিয়ে শেষ করতে
হয়। শুকরিয়া

পরামর্শ দিয়েছেন :
মুহাম্মদ আমিনুল হক
সহযোগী অধ্যাপক
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

পিএইচডি গবেষক
কিং আব্দুল আজীজ ইউনিভারর্সিটি জেদ্দা
সৌদি আরব।

ইসলামে ক্যামেরায় ছবি তোলা কী জায়েজ আছে?

বিশেষজ্ঞের উত্তর:

ক্যামেরার সামনে আসা অথবা ছবি
তোলা ইসলামে জায়েজ আছে। আয়না আর ক্যামেরা একই
জিনিস। পার্থক্য হলো, আয়নায় শুধু চেহারা দেখা যায় আর
ক্যামেরা আপনার চেহারা রেকর্ড করে আপনাকে দেয়।
আপনি তা প্রিন্ট করতে পারেন অথবা সংরক্ষণ করতে পারেন।
তবে প্রাণ আছে এমন কিছুর ছবি আঁকা জায়েজ নেই। কেননা
কেউ আল্লাহর সৃষ্টি হুবহু আঁকতে পারেন না। তিনি তাতে
প্রাণও দিতে পারেন না। শুকরিয়া

পরামর্শ দিয়েছেন :
মুহাম্মদ আমিনুল হক
সহযোগী অধ্যাপক
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

পিএইচডি গবেষক
কিং আব্দুল আজীজ ইউনিভারর্সিটি জেদ্দা
সৌদি আরব।

ক্বাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ১/৩

ক্বাযা নামাজ আদায় সমম্পর্কে কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যাঃ

ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ, পবিত্র
কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ
আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজ আদায়ের গুরুত্ব বর্ণনা
করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে এরশাদ করেন, ‘নির্দিষ্ট
সময়ে নামাজ আদায় করা মোমিনের ওপর একান্ত
অপরিহার্য।’ (সূরা নিসা : ১০৩)। তবে ভুল-ত্রুটি, নিদ্রা,
শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে মানুষের নামাজ কাজা
হয়ে যেতে পারে, আর কারও কোনো নামাজ কাজা হয়ে গেলে
তা মাফ হয়ে যায় না বরং স্মরণ হওয়ার পর সে নামাজের কাজা
আদায় করে নিতে হয়।
কেননা কোনো রাজা-বাদশাহ যদি কাউকে কোনো কাজের
নির্দেশ দেন তাহলে নির্দেশিত ব্যক্তি ওই কাজ সম্পন্ন করা
কিংবা নির্দেশদাতা তাকে সে কাজের দায়িত্ব থেকে
অব্যাহতি দেয়া ছাড়া ওই ব্যক্তি সে দায়িত্ব পালন থেকে
অব্যাহতি পেতে পারে না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর
বান্দাদের নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন, বান্দা নামাজ
আদায় করা ছাড়া এ নির্দেশ পালনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি
পেতে পারে না। তাই বহু হাদিসে কাজা নামাজ আদায়ের গুরুত্ব
বর্ণিত হয়েছে, এ সম্পর্কে হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.)
থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কোনো
ব্যক্তি নামাজ আদায়ের কথা ভুলে যায় তাহলে যখন স্মরণ হয়
তখন সে যেন তার কাজা আদায় করে নেয়, এছাড়া তার ওপর অন্য
কোনো কাফফারা নেই।’ কারণ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
‘তোমরা আমার স্মরণের জন্য নামাজ কায়েম করো।’ (বোখারি :
৫৭২, মুসলিম : ১৫৯৮)।
অপর এক হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.)
থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি
কোনো নামাজ আদায়ের কথা ভুলে যায় অথবা নামাজের সময়
ঘুমিয়ে থাকে তাহলে তার কাফফারা হচ্ছে যখন স্মরণ হবে তখন
কাজা আদায় করে নেয়া।’ (মুসলিম : ১৬০০)। অনুরূপভাবে হজরত
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, লোকেরা নামাজের কথা
ভুলে ঘুমিয়ে থাকা সম্পর্কে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কে
জিজ্ঞেস করেন তখন তিনি উত্তরে বলেন, ‘নিদ্রার ক্ষেত্রে
কোনো কঠোরতা নেই। কঠোরতা হলো জাগ্রত অবস্থায় নামাজ
না পড়ার ক্ষেত্রে, তোমাদের কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে
যায় তাহলে সে যেন স্মরণ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে কাজা আদায়
করে নেয়।’ (তিরমিজি : ১৭৭)।
উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলোতে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি
মূলনীতি বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে, যদি কারও কোনো নামাজ
কাজা হয়ে যায় তাহলে স্মরণ হওয়ার পর তাকে সে নামাজের
কাজা আদায় করে নিতে হবে।
কাজা নামাজের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) এর আমল : হজরত জাবের
ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধের দিন হজরত
ওমর ইবনে খাত্তাব সূর্যাস্তের পর এসে কোরাইশ কাফেরদের
গালমন্দ করে রাসুল (সা.) কে বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো
নামাজ আদায় করতে পারিনি, সূর্য তো ডুবে গেল। রাসুলুল্লাহ
(সা.) বললেন, আমিও নামাজ আদায় করতে পারিনি, অতঃপর
আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে বুতহান নামক স্থানে অবতরণ
করলাম। তিনি নামাজের জন্য অজু করলেন, আমরাও (তার সঙ্গে)
নামাজের জন্য অজু করলাম, সূর্যাস্তের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)
আসরের নামাজ আদায় করলেন, তারপর মাগরিবের নামাজ
আদায় করলেন।’ (বোখারি : ৪১১২)। উল্লেখিত হাদিস দ্বারা
প্রমাণিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম যদি
কোনো নামাজ সময় মতো আদায় করতে না পারতেন তাহলে
তারা সে নামাজের কাজা আদায় করে নিতেন।
অতএব যারা দাবি করে যে, উমরি কাজা বলতে শরিয়তে কোনো
বিধান নেই, তাদের কথা সঠিক নয়। কেননা ছুটে যাওয়া
নামাজের কাজা আদায় না করে রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু তওবা
করে নিতে বলেননি, একথাও বলেননি যে, নামাজের সংখ্যা এ
পরিমাণ হলে কাজা আদায় করতে হবে, এর বেশি হলে কাজা
আদায় করতে হবে না।
তাই সব ফুকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, কাজা
নামাজের সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, ছুটে যাওয়া
জীবনের সব নামাজের কাজা ধীরে ধীরে আদায় করে নিতে
হবে। বিশিষ্ট হানাফি ফকিহ আল্লামা ইবনে নুজাইম (রহ.)
থেকে বর্ণিত, ‘কাজা নামাজ আদায়ের বিধানের ক্ষেত্রে
মূলনীতি হচ্ছে, ওয়াজিব হওয়ার পর যত নামাজ ছুটে যাবে সব
নামাজের অবশ্যই কাজা আদায় করতে হবে। চাই সেসব নামাজ
ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা হোক কিংবা ভুলবশত কাজা হোক। কাজা
নামাজের সংখ্যা কম হোক কিংবা বেশি হোক।’ (বাহরুর
রায়িক : ২/১৪১)।
কাজা নামাজ আদায়ের বিধান প্রসঙ্গে আল্লামা মুরাদি
হাম্বলি মাজহাবের ফতোয়া বর্ণনা করে বলেন, ‘যার বহু নামাজ
কাজা হয়ে গেছে, তার ওপর আবশ্যক হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
ওইসব নামাজের কাজা আদায় করে নেয়া।’ (আল-ইনসাফ : ৪৪২)।
ইমাম শাফিয়ি (রহ.) বলেন, ‘যদি কারও এক ওয়াক্ত কিংবা তার
চেয়ে বেশি নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে তার ওপর
অপরিহার্য হচ্ছে কাজা নামাজ আদায় করে নেয়া।’ (ফাতহুল
জওয়াদ : ১/২৩৩)।
কাজা নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)
ফুকাহায়ে কেরামের মতামত উল্লেখ করার পর তাদের সঙ্গে
ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, ‘যার (জিম্মায়) কাজা নামাজ
রয়েছে, তার ওপর কর্তব্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব কাজা নামাজ
আদায় করে নেয়া। চাই সেসব নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করুক
কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাজা করুক।’ (ফতওয়ায়ে ইবনে
তাইমিয়া : ২৩/২৫৯)। ধন্যবাদ

পরামর্শ দিয়েছেন :
মাওলানা মিরাজ রহমান
ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক।

কিভাবে কায্বা নামাজ আদায় করবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন।