রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আদর্শ জননী রূপে একজন নারী

মা’ কথাটি বা শব্দটি এই পৃথিবীর সবচেয়ে আপন। এই ধরনীর সকলে
মায়ের আদরেই বেড়ে উঠতে চায়। সন্তানের প্রতি মায়েরই থাকে
অকুন্ঠ ভালবাসা- সন্তানরে জন্য ব্যাকুল থাকে মায়ের মন। ঠিক
তেমনি ভাবে মায়ের আদর, স্নেহ, আর অকুন্ঠ ভালবাসা সকলের
মানব হৃদয়কে উদ্বলেতি করে তোলে। একজন মা অনেক চড়াই উৎরাই
পাড়ি দিয়ে সন্তানকে আদর, মমতা আর সোহাগে মানুষ করার
প্রানান্তকর চেষ্টা করে থাকেন। মা ইচ্ছা করলে স্বীয় সন্তানকে
ইসলামের পথে ধাবিত করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে অন্য
কোন বাতিল ধ্যান-ধারণার উপর গড়ে উঠাতে পারনে। নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করনে :
ﻛﻞ ﻣﻮﻟﻮﺩ ﻳﻮﻟﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻔﻄﺮﺓ ﻓﺄﺑﻮﺍﻩ ﻳﻬﻮﺩﺍﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﻨﺼﺮﺍﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﻤﺠﺴﺎﻧﻪ .
প্রতিটি নবজাতক ইসলামের সুন্দর প্রকৃতির উপর জন্মগ্রহণ
করে অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদি বানায়, অথবা
খ্রীষ্টান কিংবা অগ্নিপূজক বানায়।
একজন মা তাঁর সন্তান জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারেন,
আবার তাকে আদর-যত্নের মাঝে দ্বীনি পথে পরচালনা করে
জান্নাতুল ফেরদাউসে স্বীয় পদতলে স্থান দিতে পারেন। তাই
আসুন আদর্শ জননী হওয়ার জন্য আমরা মায়ের দায়িত্ব-কর্তব্য
সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করি।
পারিবারিক জীবনে মায়ের দায়িত্ব ও র্কতব্য
মুসলিম পারিবারিক কাঠামো পিতৃতান্ত্রিক হলেও বাস্তবে
নারী-পুরুষ যেন একই বৃক্ষমূলের দুটি শাখা। মহান আল্লহ বলনে-
ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺟَﻌَﻞَ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻢْ ﺳَﻜَﻨًﺎ ‏(ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺤﻞ : ৮০)
“আল্লহ তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরকে শান্তির আবাসস্থল
বানিয়েছেন।” (নাহল-৮০)
অন্যদিকে আদর্শ পরবিার গঠনে মহান আল্লাহর সাহায্য
প্রার্থনার বাণী ও মহান আল্লাহই শিখিয়েছেন-
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻨَﺎ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ ﴿
৭৪ ﴾ ( ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ )
“আর তারা বলেঃ হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এমন
স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।”
(ফুরকান-৭৪)
পারিবারিক জীবনের পূর্ণতা আসে সন্তনের জন্ম ও লালন-
পালনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গের দায়িত্ব ও র্কতব্য সচেতনতার
নির্দেশ দিয়ে প্রিয় নবী (সাঃ) বলনে,
“কারো সন্তান হলে তার উত্তম নাম রাখবে, উত্তম শিক্ষা
দিবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ে দিবে।” (বায়হাকী) এ
প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সাঃ) আরো বলনে,
“তোমরা সন্তানের বিপক্ষে কখনো বদ-দুআ করো
না।” (মুসলিম)
পারিবারিক জীবনে মাতার ভূমিকা অত্যন্ত তাৎর্পযমন্ডিত।
সন্তান গর্ভে ধারণ ও লালন-পালনের সামগ্রিক দায়িত্ব মাতার
একার ওপর নির্ভরশীল। মহান আল্লাহ বলনে-
ﺣَﻤَﻠَﺘْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻭَﻫْﻨًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻫْﻦٍ ‏(ﺳﻮﺭﺓ ﻟﻘﻤﺎﻥ : ১৪)
“মাতা সন্তানকে অতি কষ্টরে পর কষ্ট সহ্য করে র্গভে ধারণ
করেন এবং প্রসব করেন।” (লুকমান-১৫)
এখানইে শেষ নয়। মায়ের দায়িত্ব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺍﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﺍﺕُ ﻳُﺮْﺿِﻌْﻦَ ﺃَﻭْﻟَﺎﺩَﻫُﻦَّ ﺣَﻮْﻟَﻴْﻦِ ﻛَﺎﻣِﻠَﻴْﻦِ ‏(ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ২৩৩)
“মা সন্তানকে র্পূণ দু’বৎসর মাতৃদুগ্ধ দান
করবে।” (বাকারা-২৩৩)
ইসলামী পরিবার ব্যবস্থা দায়ত্বিবোধ ও র্কতব্য চেতনায়
সুসমন্বিত। এখানে ভাইবোন পারস্পরিক সম্পর্কেও অত্যন্ত গুরুত্ব
দেয়া হয়েছে। এজন্যই হাদীসে আছে-
“ছোট ভাইদের ওপর বড় ভাই-এর অধকিার ঠিক তেমন যেমন
সন্তানের ওপর পিতার।” (বায়হাকী)
অন্যদিকে পারস্পরিক সম্মান ও র্মযাদার গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রয়ি
নবী (সাঃ) এর বিখ্যাত বাণী-
“যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের
সম্মান করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।”
বস্তুতঃ পাররিবারিক জীবন র্দশন মানবিক পূর্ণতা ও
শ্রেষ্ঠত্বের অনুপম নিদর্শন। আর ইসলাম এ ব্যবস্থাকে আদর্শ
শিক্ষায় করেছে পবিত্রতম।
একজন আর্দশ জননীকে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি তীক্ষ্ম
দৃষ্টি রাখতে হবে :
১।মা সন্তানকে যে আদর্শে বড় করতে চান প্রথমে তাঁকে সে
আদর্শে গড়ে উঠতে হব।
র্সবদা সন্তানদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাবে।(তাকওয়া)
২।সন্তানের সাথে মায়ের সম্পর্ক নীবিড় হওয়া উচিত।
মাকে সন্তান যেমন শ্রদ্ধা-সম্মান দেখাবে, তেমনি মায়েরও
উচিত সন্তানের ব্যক্তিত্বের প্রতি লক্ষ্য রাখা।
৩।ছেলে-মেয়েদেরেকে ইসলামী সহীহ আকিদা শেখাবে।
৪।ছেলে-মেয়েদেরেকে নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থা সর্ম্পকে
গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৫।খারাপ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে সন্তানদেরকে
হেফাযত করতে হবে।
৬।ছেলে-মেয়েদেরেকে উপস্থিতিতে কখনো স্বামীর সাথে
তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়া করবে না।
৭।ঘরে কোন কুকুর অথবা খারাপ ছবি ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।
৮।মাঝে মাঝে সন্তানদের নিয়ে চরিত্রগঠনমূলক সত্য ও উন্নত
কাহিনীর মাধ্যমে গল্প করবে।
৯।ছেলেদেরেকে বাবা, ভাই অথবা বন্ধুদরে সাথে
পাঁচওয়াক্ত নামাজে মসজিদে পাঠাবে।
১০।স্নেহ, মমতা, আদর ও ভালবাসা আদান-প্রদানের জন্য সময়
নির্ধারণ করে তাদের নিয়ে বসবে। এ ব্যাপারে কোনো
ভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
১১।বিভিন্ন ব্যাপারে পরকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে পরস্পরের
মধ্যে মত-বিনিময় হওয়া উচিত। অনেক মা আছেন, যিনি
নিজের সন্তান বলে, কিংবা ছোট্টবেলা থেকে বড়ো করে
তু্লেছেন বলে সন্তানকে বড়ো ভাবতে নারাজ। কেবল
নারাজই নন, বরং কখনো কখনো এমনও বলে ব্সেন ‘‘সেদিনের
ছেলে তুই,কী আর জানিস” “বড়োদের ব্যাপারে নাক
গলাবেনা” ইত্যাদি। এরকম আচরণের ফলে সন্তানের
ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে। পরিণতিতে মাকে সে অশ্রদ্ধা
করে বসতে পারে। অথচ উচিত হলো, সন্তানের ব্যক্তিত্ব-
বিকাশে মায়ের আচরণে ছেলের যেন সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। এ
বয়সটা সন্তানের চিন্তার স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের
বয়স।
১২।সন্তান যত ছোটই হোকনা কেন, সেও কিন্তু পরিপূর্ণ একটি
মানুষ। তার বোধ-বুদ্ধি, মেধা-মনন, চিন্তা ও বিবেক এবং
স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব রয়েছে । তার ঐ ব্যক্তিত্ব তথা
সত্ত্বাকে কোনভাবেই খাটো করে দেখা ঠিক নয়। সন্তানের
ব্যক্তিত্বকে খর্ব করা হলে সন্তানও মায়ের ব্যক্তিত্ব খর্ব
করতে দ্বিধা করবে না। ফলে সন্তান হয়ে যাবে মায়ের
অবাধ্য।
১৩।মাকে এমনভাবে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সন্তান
র্ধমীয় বিধি-বিধান, আইন-অনুশাসন পুরো মেনে চলে।
সন্তানের সকল সঙ্গতি-অসঙ্গতির ব্যাপারে প্রথমতঃ মা-ই
দায়ী। ফলে সন্তানের পরিশুদ্ধি, ধর্মের অনুশীলন ইত্যাদির
ব্যাপারে প্রথমে মাকেই পরিশুদ্ধ হতে হবে, তাকে র্ধম র্চচা
করতে হবে। মা যদি র্ধমীয় ব্যাপারে উদাসীন হন তাহলে
সন্তান কিছুতেই এ ব্যাপারে মায়রে নির্দেশ মানবে না।
তাই মায়ের মধ্যে র্ধমীয় ব্যাপারে কোন ত্রুটি থাকলে দ্রুত
তা ঠিক করে ফলো উচিত। নিজেরা ত্রুটিমুক্ত হলে সন্তানও
ত্রুটিমুক্ত হবে। আর এটা তো খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার
যে, মা যা করে না, তা সন্তানকে করতে বললে সন্তান সাথে
সাথেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সন্তানের এই প্রতিক্রিয়া
দেখানো থেকে মুক্ত থাকা প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। কারণ
এই প্রতিক্রিয়া না সন্তানের জন্যে মঙ্গলজনক, না মায়ের
জন্য।
মায়ের উচতি সন্তানের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে
তোলা। তাদের সাথে আচার আচরণ, কথাবার্তা, চলাফেরায়
সচেতন ও সতর্ক হওয়া। আর এই সচেতনতার জন্যে মাকে
সন্তানের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। সন্তানের মন-
মানসকিতা বুঝতে হবে। তাদের চাহিদাগুলো পূরণের
ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। তাদের ব্যক্তিত্বকে
সম্মানের সাথে দেখতে হবে। তবেই সন্তানও মাকে শ্রদ্ধা
করবে, তাঁর প্রতি নির্ভরতা, বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করবে।
নিজের মনের কথা, সমস্যা, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি সকল
ব্যাপারে মায়ের সাথে আলাপ আলোচনা করবে পরার্মশ
করবে ।
মহান আল্লাহ আমাদের সমাজের সকল মা জননীকে ইসলামী
আর্দশ সমুন্নত রাখার শক্তি দান করুন। আমীন।

বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে আকেলার উপদেশ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন
ছিল, তাদের ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যার
স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান না।
তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার দাস হবে।
১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার অনুসরণ করবে ও তার
সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩-৪. তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে। তার অপছন্দ
হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয় গন্ধ শরীরে রাখবে না।
৫-৬. তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে। মনে
রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার
কারণে বিষন্নতার সৃষ্টি হয়।
৭-৮. তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও বৃদ্ধ
আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে, সব কিছুর মূল হচ্ছে
সম্পদের সঠিক ব্যবহার, সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

মুসলিম মা ও বোনদের প্রতি আহবান

চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদনা : ইকবাল হোছাইন মাছুম
পবিত্র কালামে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥْ
ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ ﴿ 59 ﴾
হে নবী তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে
বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর
টেনে নেয়, এতে করে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে
তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ তাআলা
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)
প্রিয় মুসলিম বোনেরা….
ইসলাম নারী জাতিকে দান করেছে এক বিশেষ মর্যাদা।
একমাত্র ইসলামই প্রতিষ্ঠা করেছে নারীর পূর্ণ অধিকার। তাকে
দিয়েছে তার নিজস্ব গন্ডিতে ব্যাপক স্বাধীনতা। মহান রবের
পক্ষ থেকে নারী পুরুষের মাঝে সাওয়াব ও প্রতিদানের
ক্ষেত্রে কোন প্রকার তারতম্য সৃষ্টি করা হয়নি। আল-কুরআনে
ইরশাদ হচ্ছে :
ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﻠَﻨُﺤْﻴِﻴَﻨَّﻪُ ﺣَﻴَﺎﺓً ﻃَﻴِّﺒَﺔً ﻭَﻟَﻨَﺠْﺰِﻳَﻨَّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﺄَﺣْﺴَﻦِ
ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴿ 97 ﴾
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক
কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। এবং
প্রতিদানে তাদেরকে তাদের আমলের প্রাপ্য পুরস্কার দিব।
(সূরা নহল : ৯৭)
অভিশপ্ত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল নারীদেরকে
পৌঁছে দিয়েছে পতন ও ধ্বংসের চূড়ান্ত স্তরে। যে নারী ছিল
সম্মান ও মর্যাদার আবরণে আবৃত, সে নারী আজ নগ্ন কিংবা
অর্ধনগ্ন। যে নারী ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মর্যাদাকর
বেষ্টনীতে, সে নারী আজ নিরাপত্তাহীনতা ও লাঞ্চনাকর
আতংকের খোলা ময়দানে। যে নারী ছিল কন্যা, জায়া, জননীর
সম্মানজনক আসনে, সে নারী আজ হোটেল ও শপিং মলের
রিসিপশনে।
আমার বোনেরা…
পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নারীরা আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে
তাদের স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ। ঐ সংস্কৃতি তাদেরকে দিয়েছে
এমন এক স্বাধীনতা যা বাহ্যিকভাবে স্বাধীনতা মনে হলেও
প্রকৃত অর্থে পরাধীনতার অক্টোপাস।
বর্তমান দুনিয়ার যাবতীয় নোংরা ও নিকৃষ্ট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে
নারী। হোটেল-রেস্তোঁরায় আগন্তুকদের মনোরঞ্জন, দোকানে
ক্রেতা আকর্ষণ, অফিস আদালতে বসদের সঙ্গে অবকাশ
যাপন, এটাই তাদের স্বাধীনতা ও সম্মানের রূপ। স্বাধীনতার কি
আজব সংজ্ঞা!
নারী পুরুষের উম্মুক্ত মেলা-মেশা, অশ্লীল বিনোদন, চরিত্র
বিধ্বংসী শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চার কারণে পাশ্চাত্য সমাজ
এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, পশুত্বকেও হার মানিয়েছে
তারা। কামনার আগুন সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে, উম্মাদ পশুর আচরণ
করছে। প্রতিদিন শুধু প্যারিস শহরে দশ হাজার সতী নারী
সম্ভ্রম হারাচ্ছে। তার চেয়েও লজ্জার কথা হলো, ফ্রান্সের
মেডিকেল বোর্ড ঘোষণা দিয়েছে, “ফ্রান্সবাসীকে এ জন্য
গর্ব করা উচিৎ যে, অচিরেই ফ্রান্সে আর কোন সতী নারী
পাওয়া যাবেনা”। তাদের মনুষত্ববোধ কত নিচে নেমে গেছে
তা কল্পনাও করা যায়না। এরূপ নারী স্বাধীনতাকে ধিক্কার শত
ধিক্কার।
প্রিয় বোনেরা আমার………
পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রবক্তারা ইসলামী সংস্কৃতিকে নারীদের
জন্যে অত্যাচার বলে প্রচার করছে। ইসলামকে প্রগতির পথে
অন্তরায় বলে চিৎকার চেচামেচি করছে।
কিন্তু ইসলমের স্বর্ণোজ্জল অবদান আজও ইতিহাসের বাঁকে
বাঁকে নারীদের প্রেরণা যোগায়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.
একাই ২২১০টি হাদিস বর্ণনা করে হাদিসের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ
করেছেন। অসংখ্য জটিল মাসআলার সমাধান দিয়ে উম্মতকে
দ্বীনের পথে চলা সহজ করে দিয়েছেন। খলীফা হারুরুর রশীদের
স্ত্রী যুবাইদা শিক্ষা-দীক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে
নারীকূলের জন্য আজও অনুকরণীয় হয়ে আছেন। এরকম হাজার
হাজার দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে নারীরা পরিপূর্ণ ইসলামের
গন্ডিতে অবস্থান করে বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর
রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বোনেরা আমার…..
এ যুগে প্রয়োজন এমন একজন নিবেদিতপ্রাণ নারীর, যিনি
স্বামীভক্তিতে হবেন উম্মুল মুমিনীন খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ
রা. এর ন্যায়, যে মহিয়সী দ্বীন ও ইসলামের উন্নতিকল্পে
সহায়তা করেছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে সর্বস্ব উজাড় করে। ধৈর্য, সংযম ও আল্লাহ প্রেমে
হবেন ফাতেমা বিনতে খাত্তাবের ন্যায়, যার ঈমানী দৃঢ়তা
দেখে ওমরের মত অগ্নি পুরুষও ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত
হয়েছিলেন। প্রাণ উৎসর্গে হবেন সুমাইয়ার ন্যায়, যিনি ঈমান
ত্যাগ না করার কারণে আবু জাহেলের বর্শার আঘাতে ইসলামের
প্রথম শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
প্রিয় বোনেরা……..
আমরা চাই আপনিও তাদের অনুসরণ করে জান্নাতুল ফিরদাউসের
চিরস্থায়ী অধিবাসী হবেন। স্মরণ করুন নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বানী :
ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﺖ ﺧﻤﺴﻬﺎ، ﻭﺻﺎﻣﺖ ﺷﻬﺮﻫﺎ، ﻭﺃﺣﺼﻨﺖ ﻓﺮﺟﻬﺎ، ﻭﺃﻃﺎﻋﺖ ﺑﻌﻠﻬﺎ، ﻓﻠﺘﺪﺧﻞ ﻣﻦ ﺃﻱ
ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺷﺎﺀﺕ .
নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে, মাহে রমজানে
রোজা রাখলে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করলে এবং স্বামীর
আনুগত্য করলে, (আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতের
সবগুলো দরজা উম্মুক্ত করে দিবেন।) জান্নাতের যে কোনো
দরজা দিয়ে তার ইচ্ছা অনুযায়ী প্রবেশ করতে পারবে।
একজন মুসলিম নারী হিসাবে আপনাকে সর্বপ্রথম নামাজের
ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা
বলেন,
ﺇﻧﻲ ﺍﻓﺘﺮﺿﺖ ﻋﻠﻰ ﺃﻣﺘﻚ ﺧﻤﺲ ﺻﻠﻮﺍﺕ، ﻓﻤﻦ ﺣﺎﻓﻆ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﻟﻮﻗﺘﻬﻦ ﺃﺩﺧﻠﺘﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻲ ﺫﻣﺘﻲ،
ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺤﺎﻓﻆ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﻓﻠﻴﺲ ﻟﻪ ﻋﻨﺪﻱ ﺫﻣﺔ ﺇﻥ ﺷﺌﺖ ﻏﻔﺮﺕ ﻟﻪ ﻭﺇﻥ ﺷﺌﺖ ﻋﺬﺑﺘﻪ .
হে নবী, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
ফরজ করেছি, যে ব্যক্তি সময়মত গুরুত্ব সহকারে তা আদায়
করবে আমি তাকে নিজ জিম্মায় বেহেশতে প্রবেশ করাব,
আর যে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হবেনা তার প্রতি
আমার কোন দায়-দায়িত্ব নেই। ইচ্ছা করলে ক্ষমা করব, নচেৎ
শাস্তি দিব।
নামাজের পরপরই একজন মুসলমানের জন্য মাহে রমজানের
রোজা পালন করা একান্ত জরুরী। রোজার ফজিলত সম্পর্কে নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় মাহে
রমজানের রোজা পালন করবে, তার পিছনের সব গুনাহ
ক্ষমা হয়ে যাবে। (বুখারী)
নামাজ ও রোজার সাথে সাথে পর্দার ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব
দিতে হবে। হিজাব তথা পর্দার বিধান গ্রহণ করার মাধ্যমেই
একজন নারী তার সম্মান ও মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে পারে।
এরশাদ হচ্ছে:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥْ
ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ ﴿ 59 ﴾
হে নবী তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে
বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর
টেনে নেয়, এতে করে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে
তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ তাআলা
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৯)
আধুনিক নারীরা মনে করছে পাশ্চাত্যের স্রোতে গা ভাসিয়ে
দিতে পারলেই বুঝি উন্নতির উচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে পারবে।
একবারও কি তারা ভেবে দেখেছেন, যে পথে তারা চলছেন সে
পথ থেকে কখনও ফিরে আসতে পারবেন কি-না? আপনারা কি
কখনো ভেবে দেখেছেন কোথায় গিয়ে থামবে আপনাদের
জীবনভেলা?
চিন্তা করে দেখুন, কোন পথ গ্রহণ করবেন। এখনও সময় আছে।
এখনও আপনারা অতীতের গৌরবদ্বীপ্ত কীর্তিসমূহের
পূনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেন। আজও আপনাদের থেকে জন্ম নিতে
পারে দ্বিগ্বিজয়ী বীর সেনানী, যুগের সাহসী নকীব, মুহাদ্দিস,
মুফাসসির। আপনাদের কোল থেকে তৈরী হতে পারে মুসলিম
জাতির কান্ডারী। তাই আসুন, আমরা সে পথিই অগ্রসর হই।
আল্লাহ সকলের প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন।।

বোন! তুমি কি পুরুষের সঙ্গে কাজ করছ?

মূলঃ পুরুষের মাঝে কর্মরত নারীর প্রতি আহ্বান
আবু সারা
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
বোন! আমি মর্মাহত, আমি ব্যথিত এবং খুবই দুঃখিত আমি। না,
আমার কোন কারণে নয়, শুধু তোমার জন্য এবং শুধু তোমার
কল্যাণের কথা চিন্তা করেই। তুমি কাজ করছ! তাও আবার
পুরুষের সঙ্গে এবং তাদের মাঝে থেকেই। কারণ, এটা তোমার
দীনদারি খতম করে দিবে, তোমার চরিত্রের ওপর কলঙ্কের ছাপ
এঁটে দিবে। এটা আমার মায়াকান্না নয়, আমার কথাগুলো তুমি
নাক সিঁট্কে ফেল দিও না এবং মনে কর না আমি খুব বাড়াবাড়ি
করছি, বরং আমার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে। আছে এর যুক্তি
সংগত কারণ। মনে রেখো, ইসলামের সম্পর্ক ছাড়া তোমার সঙ্গে
আমার আর কোন সম্পর্কই নেই। এবং এর সঙ্গে আমার কোন
ইহজাগতিক স্বার্থও সংশ্লিষ্ট নয়। বরং এর দ্বারা আমার সময় ও
শ্রম ব্যয় হচ্ছে, মেধার ক্ষয় হচ্ছে। আশা করছি আমার এ
কথাগুলোর মূল্য তুমি দিবে। আমি যা বলছি তুমি তা বারবার
চিন্তা করবে। তবে অবশ্যই তুমি আমাকে তোমার একান্ত
হিতাকাঙ্ক্ষী জ্ঞান করবে।
জেনে রখো, পুরুষের সঙ্গে যে কোন সহাবস্থানে নারী সঙ্কুচিত
ও নির্যাতিত থাকে। যদি না তার সঙ্গে তার মাহরাম থাকে।
কারণ, পুরুষরা সাধারণত নারীর দিকে প্রবৃত্তি ও কামভাব
নিয়েই তাকায়। এর বিপরীত যে বলবে সে মিথ্যুক। কারণ,
আল্লাহ তাআলা পুরুষের মধ্যে নারীর প্রতি মোহের সৃষ্টি
করেছেন এবং নারীর মধ্যে দিয়েছেন পুরুষের প্রতি গভীর
আগ্রহ। অধিকন্তু নারীর মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা ও কোমলতা। ফলে
নারী-পুরুষের সহাবস্থানে শয়তান স্নায়ুতন্ত্র ও অনুভূতিগুলোকে
প্ররোচিত করার মোক্ষম সময় মনে করে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে
নারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত বেশী হয়। কারণ, সৃষ্টিগতভাবে নারীরা
পুরুষের থেকে ভিন্ন। সহাবস্থানের ফলে নারীরা যে ধরনের
ক্ষতির সম্মুখীন হয়, পুরুষরা সে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় না।
যেমন নারীদের অনেক সময় গর্ভ সঞ্চার হয়, কখনো গর্ভপাত
করতে গিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয় নারী। এসব কারণেই শরিয়ত
নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিষিদ্ধ করেছে। আমি এখানে নারী-
পুরুষ সহাবস্থান নিষিদ্ধ করার কিছু দলিল উল্লেখ করছি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{ ﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ }ﺍﻟﻨﻮﺭ 30: .
মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখবে এবং
তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। (নুর : ৩০)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা পুরুষের দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ
দিয়েছেন। যেহেতু নারী-পুরুষ পাশাপাশি কর্মরত থাকলে দৃষ্টি
অবনত রাখা সম্ভব নয়, তাই শরিয়ত তাদের সহাবস্থান নিষিদ্ধ
করেছে।
নারীর পুরোটাই সতর বা পর্দার বস্তু। তার দিকে দৃষ্টি দেয়া
হারাম।
রাসূল সা. বলেন, হে আলী, বারবার নজর দিবে না, প্রথম নজর
তোমার কিন্তু দ্বিতীয় নজর তোমার নয়। (তিরমিজি)
অর্থাৎ হঠাৎ প্রথম যে দৃষ্টি নারীর প্রতি পড়ে যায় তাতে কোন
গুনা নেই, কিন্তু দ্বিতীয়বার স্বেচ্ছায় দৃষ্টি দেয়া গুনা বা
অপরাধ।
হাদিসে এসেছে যে, চোখের যেনা দৃষ্টি দেয়া, কানের যেনা
শ্রবণ করা, মুখের যেনা কথা বলা, হাতের যেনা স্পর্শ করা,
পায়ের যেনা পথ চলা। (মুসলিম)
চোখের যেনা দৃষ্টি। এর মাধ্যমে ব্যক্তি নারীর সৌন্দর্য ও রূপ
উপভোগ করে। পরবর্তীতে তার সঙ্গে অন্তরের ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি
হয়। আর এ পথ ধরেই শুরু হয় অশ্লীলতা। এতে সন্দেহ নেই যে, নারী-
পুরুষের সহাবস্থানে দৃষ্টি হেফাজত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।
রাসূল সা. বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর পুরুষের জন্য নারীই সব
চেয়ে ক্ষতিকর ফিতনা। (বুখারি)
সে হিসেবে উভয়ের একত্রে জব করা বা কর্মরত থাকা কোন
অবস্থাতেই নিরাপদ নয়।
রাসুল সা. যখন মসজিদ নিমার্ণ করেন, তখন নারীদের জন্য
আলাদা দরজা তৈরি করেন এবং তিনি বলেন, আমরা কি এ
দরজাটি নারীদের জন্য রেখে দিতে পারি না? (আবুদাউদ)
ওমর রা. মসজিদে নারীদের দরজা দিয়ে পুরুষদের প্রবেশ করতে
নিষেধ করতেন। অতএব যেখানে শুধু দরজাতেই নারী-পুরুষ
একত্রিত হওয়া নিষেধ, সেখানে একই অফিসে নারী-পুরুষের
সহাবস্থান কীভাবে বৈধ?
রাসূল সা. নারীদের রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে নির্দেশ
দিয়েছেন। যাতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে না হাঁটে এবং পুরুষের
সঙ্গে তাদের মিশ্রণ না ঘটে।
রাসূল সা. সালাতে শেষে সালাম ফিরিয়ে কেবলা মুখি হয়ে
বসে থাকতেন তার সঙ্গে পুরুষরাও বসে থাকত। যতক্ষণ না
নারীরা চলে যেত এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করত। অতঃপর তিনি
বের হতেন এবং তার সঙ্গে অন্যান্য পুরুষরা বের হত। যাতে
নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টি না পড়ে।
এসব আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারী-পুরুষের
সহাবস্থান হারাম। হারাম পুরুষের সঙ্গে নারীর জব করা ও
চাকরি করা। এ ব্যাপারে আলেমদের কোন দ্বিমত নেই।
বোন! নারীরা ঘরে বসে থাকার জন্য আদিষ্ট। জান এটা কেন?
এর কারণ হচ্ছে নারীরা যাতে পুরুষের দৃষ্টির শিকার না হয় এবং
তাদের সঙ্গে নারীদের মিশ্রণ না ঘটে।
এটা সুবিদিত যে, নারী-পুরুষের সহাবস্থান ইজ্জত ও সম্মানের
ওপর আঘাত, পরিবার ধ্বংস, যুবতীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট ও পর্নোছবির
ছড়াছড়ির জন্য একমাত্রদায়ী।
নারী-পুরুষের সহাবস্থানে কি সমস্যার জন্ম হতে পারে এটা যদি
তুমি ভাল করে জানতে চাও, তবে পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রতি
দৃষ্টি দাও এবং দেখ যে তারা এ কারণে কি কি সমস্যার
সম্মুখীন হয়েছে, এখন তাদের কি চিন্তা? তারা তো এখন
সহাবস্থানের শিক্ষাও বন্ধ করতে চাচ্ছে। আমেরিকা ও
অন্যান্য দেশে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা স্কুল,
কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হচ্ছে। জেনে রেখো,
তারা সহাবস্থানের অশুভ পরিণতি ও তার ক্ষতির সম্মুখিন না
হয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। আমরা কি এসব বাস্তবতা থেকে
শিক্ষা নিব না!?
এটা কি অশুভ বুদ্ধির কথা নয় যে, তারা যে ভুল করেছে আমরাও
তা করব? অথচ তারা তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে।
বোন!
তুমি আমাদের কাছে সব চেয়ে দাবি ও সম্মানের।
তুমি বোন, তুমি মেয়ে, তুমি স্ত্রী এবং তুমি মা।
আমরা তোমাকে রক্ষা করতে চাই, আমরা তোমাদের হেফাজত
করতে চাই, তোমার উচিত আমাদের কাজে সহযোগিতা করা।
তুমি সমাজের অর্ধেক, তুমি অন্যদের জন্ম দাও।
আমরা আশা করছি, তুমি আমাদের জন্য এমন ব্যক্তিত্ব জন্ম
দিবে, যে এ জাতির নেতৃত্ব দিবে।
তুমি যদি ঘর ত্যাগ কর, তুমি যদি ঘরের কাজ ও সন্তানের লালন ও
পালন ছেড়ে দাও আর পুরুষের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় নেমে
পড়, তবে তোমার দ্বারা এটা কি সম্ভব?
জেনে রেখো, আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন, আল্লাহ তোমাকে
তোমার কল্যাণের জন্যই ঘরে অবস্থান করার নিদের্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন,
{ ﻭﻗﺮﻥ ﻓﻲ ﺑﻴﻮﺗﻜﻦ ﻭﻻ ﺗﺒﺮﺟﻦ ﺗﺒﺮﺝ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﺍﻷﻭﻟﻲ }
আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী
যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। (আহজাব : ৩৩)
কারণ, যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে তখনই পুরুষরা তোমার প্রতি
লালায়িত হবে। তুমি এর সত্যতা যাচাই করার জন্য পাশ্চাত্যে
নারীর অবস্থার দিকে একটু দৃষ্টি দাও। তারা সর্বদা পুরুষের
নির্যাতনের কথা বলছে, তারা সবখানে অপহরণ ও ধর্ষণের
শিকার হচ্ছে। তারা সহবস্থান থেকে বাঁচার জন্য শত চেষ্টার
পরও সক্ষম হচ্ছে না। কারণ, তারা যদি কর্ম ত্যাগ করে, তবে
তাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে। তারা খুব দুঃখে রয়েছে, তাদের
অবস্থা খুবই খারাপ।
পক্ষান্তরে তুমি! আল্লাহ তোমাকে ইসলাম দ্বারা ইজ্জত দান
করেছেন। এ ইসলাম তোমাকে পিতা, স্বামী, ভাই ও সন্তান
উপহার দিয়েছে। যারা তোমার ভরণপোষণ করছে, তাদের ওপর
আল্লাহ এ দায়িত্ব ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তোমাকে কখনো
পানাহার ও বাসস্থানের জন্য কর্মে যোগ দিতে বলেনি ইসলাম।
এটা একটা বড় নেয়ামত, যা আল্লাহ তোমাকে তোমার কষ্ট
ছাড়াই দান করেছেন। কি চমৎকার! রানীর মত ঘরে থাকবে আর
অন্যরা তোমার জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করবে। এটা কি বড়
নেয়ামত নয়?
খবরদার! দুনিয়ার চাকচিক্য এবং বাইরে বের হওয়া ও কাজে
যোগদানের শয়তানি প্ররোচনায় ধোঁকা খাবে না। তুমি যদি
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাও, তবে ঘরে অবস্থান কর।
রাসূল সা. বলেন, নারী সতর। যখন সে বের হয় শয়তান তাকে
চোখ তুলে দেখে। নারী ঘরের মধ্যে অবস্থানকালেই
আল্লাহর বেশি নৈকট্য প্রাপ্ত থাকে। (তিরমিজি ও ইবনে
হিব্বান)
বোন! তোমাকে বলছি, তোমার নিকট সবচেয়ে দামি জিনিস
হচ্ছে তোমার ইমান ও তোমার সতিত্ব। তুমি যখন পুরুষের সঙ্গে
অবস্থান করবে তখন এ দুটো সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাদের থেকে দূরে থাক। স্বামী বা মাহরাম ব্যতীত অন্য কোন
পুরুষের মুখোমুখি হয়ো না। জেনে রেখো! ঘরে বসেই তুমি
পুতচরিত্র ও অহমিকা সম্পন্ন পুরুষ লাভে ধন্য হবে। আর যদি তুমি
ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাও এবং তাদের সঙ্গে অবস্থান কর, তবে
তুমি পুরুষত্ব সম্পন্ন ও ব্যক্তিত্বর অধিকারী স্বামী থেকে
বঞ্চিত হবে।
বোন! এ কথা বলো না, পুরুষের সঙ্গে থাকলেও আমি নিজেকে
নিজে হেফাজত করতে সক্ষম।
মনে রেখো! আল্লাহ তাআলা দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ এবং
নারী-পুরুষকে আলাদা থাকার নিদেশ খামাখা দেইনি। তিনি
জানেন, নারী-পুরুষের মাঝে যৌন সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর।
আল্লাহ তাআলা মুসলমানকে এসব ফেতনার জায়গা থেকে দূরে
থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তার জন্য বৈধ নয় যে, সে নিজকে
নিজেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। মানুষ ক্ষুধার্থ হলে খানা
থেকে বিরত থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে তদ্রূপ মানুষ যৌন
ক্ষুধায়ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মোদ্দাকথা : আমাদের এসব দলিল দ্বারা প্রমাণিত হল যে,
নারী-পুরুষের সহাবস্থান হারাম এবং নারী-পুরুষের একে অপরের
পাশে কর্মরত থাকা অবৈধ। যদিও তারা পরহেজগার হয়। যৌন
কামনা থাকা বা না-থাকার কোন কথা নেই অথবা এরও কোন
গ্রহণযোগ্যতা নেই যে, নারী তার হেফাজতের জন্য সক্ষম।
বোন! তোমার যদি একান্ত কাজ করতেই হয়, তবে পুরুষের থেকে
আলাদা কাজ কর।
বোন! আমি জানি না, আমার এ কথাগুলো তোমার অন্তরে কোন
প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে কি না?
বোন! আমি জানি না, আমার এ কথাগুলো তোমার হৃদয়ের গভীরে
পৌঁছতে সক্ষম হবে কি না?
আমি অন্তর থেকে তোমার জন্য দোয়া করছি। আরও দোয়া
করছি যে, আল্লাহ তোমাকে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে
হেফাজত করে। যারা তোমাকে যে কোন হালাতে কর্মে
যোগদানের জন্য পরিকল্পনা করে। তারা তোমাকে ঘরের
বাইরে ও পুরুষদের সঙ্গে দেখে খুব খুশি।
কারণ, তারা খুব ভাল করেই জানে যে, তুমি প্রতিভাবান ও মহা
ব্যক্তিদের জন্মদানকারী ও লালন-পালনকারী। তুমি বিপদগামী
হলে মহান ব্যক্তিরা শৈশবেই ঝড়ে পড়বে। তখন পুরো জাতি
তাদের তল্পিবাহক ও দাসে পরিণত হবে। আমি আশা করছি, তুমি
খুব গভীর ভাবে আমার কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং তোমার
অবস্থানের ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হবে।
আর যদি এমন হয় যে, তুমি আমার কথায় কোন ভ্রূক্ষেপ করছ না
(যদিও আমি তোমার থেকে এমনটি আশা করি না) আমি সকাল-
সন্ধ্যা তোমার জন্য দোয়া করব। আমি এ দোয়া থেকে কখনই
বিরত হবো না।
যাই হোক! তুমি আমার বোন, আমার বিশ্বাস তুমি একদিন না
একদিন ফিরে আসবেই। আমার বিশ্বাস আল্লাহ তাআলা আমার
এ প্রচেষ্টা বিফলে যেতে দিবেন না। সব তওফিকের মালিক
একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
আমি তোমার থেকে আশা করছি, তুমি আমার এ কথাগুলো
বারবার পড়বে এবং বারবার চিন্তা করবে।
আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমুতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ
সমাপ্ত