শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন – ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ

“এবং তোমরা সেই দিবসের ভয় কর- যেদিন এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি হতে কিছুমাত্র উপকৃত হবে না এবং কোন ব্যক্তি হতে কোন সুপারিশও গৃহীত হবে না, কোন ব্যক্তি হতে কোন বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না।” [সূরা বাকারাহঃ ৪৮]
নিয়ামতসমূহের বর্ণনার পর এখন শাস্তি হতে ভয় দেখান হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে, কেউ কারও কোন উপকার করবে না। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেছেনঃ ‘কেউ কারও বোঝা বহন করবে না। আর এক জায়গায় বলেছেনঃ ‘সেদিন প্রত্যেক লোক এক বিস্ময়কর অবস্থায় পড়ে থাকবে।’ অন্য স্থানে আছেঃ ‘ হে লোকেরা ! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর, ঐদিনকে ভয় কর যেদিন পিতা পুত্রের এবং পুত্র পিতার কোন উপকার করতে পারবে না।’ আরও বলেছেনঃ ‘না কোন কাফিরের জন্যে কেউ সুপারিশ করবে, না তার সুপারিশ কবূল করা হবে।’ আর এক জায়গায় আছেঃ ‘ঐ কাফিরের জন্যে সুপারিশকারীর সুপারিশ কোন উপকারে আসবে না।’ অন্য এক জায়গায় আছে জাহান্নামবাসীদের এ উক্তি নকল করা হয়েছেঃ ‘আফসোস ! আমাদের না আছে কোন সুপারিশকারী এবং না আছে কোন বন্ধু।’
এক স্থানে আছেঃ ‘মুক্তিপণও গ্রহণ করা হবে না।’ আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ ‘যে ব্যক্তি কুফরীর অবস্থায় মারা যায় সে যদি শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে পৃথিবীপূর্ণ সোনা প্রদান করে তবে তাও গ্রহণ করা হবে না।’
মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ ‘কাফিরদের নিকট যদি সারা পৃথিবীর জিনিস এবং ওর মত আরও থাকে, আর কিয়ামতের দিন সে ঐ সমুদয় জিনিস মুক্তিপণ হিসেবে প্রদান করে শাস্তি হতে বাঁচতে চায়, তাহলেও কবুল করা হবে না এবং তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির মধ্যে জড়িত থাকবে।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন, ‘তারা মোটা রকমের মুক্তিপণ দিলেও তা গ্রহণ করা হবে না।’ আর এক জায়গায় বলেন,” আজ না তোমাদের নিকট হতে বিনিময় গ্রহণ করা হবে, না কাফিরদের নিকট হতে, তোমাদের আবাসস্থল জাহান্নাম, ওর আগুনই তোমাদের প্রভু।” ভাবার্থ এই যে, ঈমান ছাড়া শুধুমাত্র সুপারিশের উপর নির্ভর করলে তা কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না। কুরআন মাজীদের অন্যত্র আছেঃ “তোমরা ঐ দিন আসার পূর্বে পুণ্য কামিয়ে নাও যেদিন না ক্রয় বিক্রয় হবে, না কোন বন্ধুত্ব থাকবে।’ এখানে ‘আদল’ শব্দের অর্থ বিনিময় এবং বিনিময় ও মুক্তিপণের একই অর্থ।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ‘শাফায়াত’ এর অর্থ নফল এবং ‘আদল’ এর অর্থ ফরয। কিন্তু এখানে এ কথাটি গরীব বা দুর্বল, প্রথম কথাটিই সঠিক। একটি বর্ণনায় আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়ঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল ! ‘আদল’ এর অর্থ কি?’ তিনি বলেনঃ ‘মুক্তিপণ’। ‘তার সাহায্য করা হবে না’-এর অর্থ এই যে, তার কোন সাহায্যকারী থাকবে না, আত্মীয়তার বন্ধন কেটে যাবে, তার জন্যে কারও অন্তরে দয়া থাকবে না এবং তার নিজেরও কোন শক্তি থাকবে না।
কুরআন মাজীদের আর এক জায়গায় আছেঃ ‘তিনি আশ্রয় দিয়ে থাকেন এবং তাঁর পাকড়াও হতে আশ্রয়দাতা কেউই নেই।” অন্যত্র আছেঃ ‘সেদিন না কেউ আল্লাহর শাস্তি প্রদানের ন্যায় শাস্তি প্রদানকারী হবে, আর না তাঁর বন্ধনের ন্যায় কেউ বন্ধনকারী হবে।’ আর এক জায়গায় আছেঃ “তোমাদের কি হল যে, তোমরা একে অপরকে সাহায্য করছো না?’ বরং তারা সেদিন সবাই নতশির থাকবে। অন্য স্থানে রয়েছেঃ ‘ আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা তাঁর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পূজা করতো, আজ সেই পূজনীয়গণ তাদের পূজকদের সাহায্য করছে না কেন?’ বরং তারা তাদেরকে হারিয়ে ফেলেছে। ভাবার্থ এই যে, প্রমাণাদি নষ্ট হয়ে গেছে,ঘুষ কেটে গেছে, সুপারিশ বন্ধ হয়েছে, পরস্পরের সাহায্য সহানূভূতি দূর হয়ে গেছে।
আজ মোকদ্দমা চলে গেছে সেই ন্যায় বিচারক, মহাপ্রতাপান্বিত সারাজাহানের মালিক আল্লাহর হাতে, যাঁর বিচারালায়ে সুপারিশকারীদের সুপারিশ এবং সাহায্যকারীদের সাহায্য কোন কাজে আসবে না, বরং সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হবে। তবে বান্দার প্রতি তাঁর পরম করুণা ও দয়া এই যে, তাদেরকে তাদের পাপের প্রতিদান ঠিক পাপের সমানুপাতেই দেয়া হবে, আর পুণ্যের প্রতিদান দেয়া হবে কমপক্ষে দশগুণ বাড়িয়ে। আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদের মধ্যে অন্য এক জায়গায় বলেছেনঃ ;‘থামাও তাদেরকে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখন তোমাদের কি হলো যে, একে অপরকে সাহায্য করছো না? বরং সেদিন তারা সবাই নতশিরে থাকবে।’
মূলঃ তাফসীর ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ ; সূরা বাকারাহ, আয়াত-৪৮

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন